স্ট্রিম ডেস্ক
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ডুরান্ড লাইনের বিতর্কিত সীমান্তে সংঘর্ষ চরমে পৌঁছেছে। উভয় দেশই ভারী ক্ষয়ক্ষতি ও সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার জানায়, পাকিস্তানের বিমান হামলার জবাবে তাদের বাহিনী ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে, ৩০ জনকে আহত করেছে এবং ২৫টি সেনা পোস্ট দখল করেছে। অপরদিকে, পাকিস্তান দাবি করে, তারা ১৯টি আফগান সীমান্তচৌকি দখল করেছে, একাধিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং বহু তালেবান যোদ্ধাকে হতাহত করেছে। ইসলামাবাদ কাবুলের দেওয়া পরিসংখ্যানকে ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণা’ বলেও উড়িয়ে দেয়।
এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে উভয় দেশের একে অপরের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয়দানের অভিযোগ, বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ইস্যুতে। সীমান্তের সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ এড়ানো যায়।
এই সংঘাতের মূল কারণ দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ। ২ হাজার ৬১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুরান্ড লাইনকে আফগানিস্তান কখনো স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান অভিযোগ করে, আফগানিস্তান টিটিপি সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটাতে চায়। খোস্ত ও নানগারহারের মতো প্রদেশে তারা অবস্থান নিয়ে ২০২৫ সালেই শতাধিক পাকিস্তানি নিরাপরাধ সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়।
কাবুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের ভূমি কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। বরং তারা পাল্টা অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান আইএসআইএস-খোরাসান সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং আফগান সীমান্তে বারবার অনধিকার প্রবেশ করছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বিমান হামলায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে, আর ২০২৫ সালের অক্টোবরের শুরুতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হামলা তীব্র হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরক রূপ নেয়।
৯ অক্টোবর ২০২৫: পাকিস্তান, অভিযোগ অনুযায়ী, আফগানিস্তানের কাবুল, খোস্ত, জালালাবাদ ও পাকতিকা শহরে বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ। তিনি বেঁচে যান এবং প্রতিশোধের হুমকি দেন। কাবুলের পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণে অন্তত দুই টিটিপি সদস্য নিহত হয়। তালেবান সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
১০–১১ অক্টোবর: টিটিপি পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালায়। এক পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলায় ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। আফগান বাহিনী সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করে।
১১ অক্টোবর রাত: আফগান তালেবান বাহিনী ‘বৃহৎ আক্রমণ’ শুরু করে। খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানের চিত্রাল, বাজাউর, মুহমান্দ, আঙ্গুর আড্ডা, কুররম ও বারামচা এলাকায় পাকিস্তানি অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। ভারী অস্ত্র, ড্রোন ও ট্যাংক ব্যবহারে সংঘর্ষ গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
১২ অক্টোবর সকাল: তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ ‘দৃঢ় অভিযান’ সফল হওয়ার দাবি জানান। পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আফগান পোস্টে আগুন লাগা ও আত্মসমর্পণকারী সেনাদের ফুটেজ প্রচার করে। সব সীমান্তপথ, বিশেষ করে তোরখাম, সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উভয় দেশই বিজয়ের দাবি করছে, যদিও এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। তথ্যযুদ্ধের এই পর্যায়ে সত্য-মিথ্যা মিশে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘসহ কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এখন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
আফগান (তালেবান) পক্ষের দাবি: কান্দাহার, হেলমান্দ, পাকতিকা, খোস্ত, পাকতিয়া, জাবুল, নানগারহার ও কুনার প্রদেশে রাতভর অভিযানে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আফগান তালেবান।
এ ছাড়া ২৫টি পাকিস্তানি সেনা পোস্ট দখলের কথা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি হেলমান্দ প্রদেশে। সেখানে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি। বাহরামচা জেলায় একাধিক পোস্ট ধ্বংস করা হয় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।
নিজেদের ক্ষতি সম্পর্কে নয়জন তালেবান যোদ্ধা নিহত এবং প্রায় এক ডজন আহত হওয়ার কথা জানায় আফগানিস্তান।
এই অভিযানকে পাকিস্তানের ‘অতর্কিত হামলা’ ও ৯ অক্টোবর কাবুলে বিমান হামলার প্রতিশোধ বলা হয়েছে। তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একে ‘সফল পাল্টা আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করে সতর্ক করেছে, ভবিষ্যতে অনুপ্রবেশ হলে আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের দাবি ও অস্বীকার: ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পাল্টা দাবিতে ইসলামাবাদ তালেবানের দেওয়া ৫৮ সেনা নিহতের দাবি ‘ভিত্তিহীন প্রচারণা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, এসব দাবি পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, আফগান দিক থেকে প্রাথমিক গোলাবর্ষণে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে, তবে কুররম জেলার তিরি গ্রামে এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান আরও দাবি করে, তাদের পাল্টা অভিযানে ডজনখানেক আফগান সৈন্য ও টিটিপি/আইএস-কে সদস্য নিহত হয়েছে। প্রাথমিক সংঘর্ষেই ২০ জনের বেশি আফগান সেনা প্রাণ হারায়।
পাকিস্তান ১৯টি আফগান সীমান্তচৌকি দখলের দাবিও করেছে, যার মধ্যে মানোজবা ক্যাম্প, জান্দুসার পোস্ট, তুরকমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার দুর্গ উল্লেখযোগ্য। আর্টিলারি, ট্যাংক, ড্রোন ও বিমানসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে এসব স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।
পিটিভি নিউজের প্রচারিত ভিডিওতে আফগান পোস্টে আগুন, আত্মসমর্পণরত সৈন্য ও পিছু হটা দৃশ্য দেখা গেছে।
পাকিস্তান এসব হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ বলে দাবি করেছে। ইসলামাবাদের বক্তব্য, আফগান বাহিনী বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে টিটিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশে সহায়তা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, এটি ‘গুরুতর উসকানি’, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি ‘যথাযথ জবাব’ ও ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির প্রতিশ্রুতি দেন।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদারের আহ্বান জানান এবং পাকিস্তানকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় অবস্থানরত আইএস-কে সদস্যদের বহিষ্কার করতে বলেন। তার অভিযোগ, এসব জঙ্গি পাকিস্তানি বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সার্বভৌমত্ব পুনরায় লঙ্ঘিত হলে আফগান বাহিনী আরও শক্ত প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আফগান ‘উসকানিমূলক হামলা’র নিন্দা জানান। তিনি তালেবানকে ‘সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনেন এবং বলেন, ‘দেশের প্রতিরক্ষায় কোনো আপস হবে না।’
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লে. জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তান ১০ হাজারের বেশি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়েছে, যেখানে ৯৭০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তবে ৩১১ জন সৈন্যও প্রাণ হারিয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব ক্রসিং পয়েন্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
১২ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত কোনো পক্ষই অপর পক্ষের দাবি স্বীকার করেনি। পাকিস্তান তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বিশ্বশক্তিগুলো সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আবদ্ধ সৌদি আরব, শান্তিপূর্ণ সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছে এবং শান্তি উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের আফগান বিশেষ দূত বাণিজ্য বন্ধের কারণে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়েও সতর্ক করেছেন।
পাকিস্তানের অভিযোগ অনুযায়ী টিটিপিকে সহায়তার কথা অস্বীকার করে ভারত কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে এবং আফগান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
এ সংঘর্ষ ২০২১ সালে তালেবান কাবুলে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে গুরুতর সীমান্ত সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি টিটিপি ও আইএস-কে এর মতো গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান-পরবর্তী স্থিতিশীলতা প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দেখা দিয়েছে। তোরখাম সীমান্ত বন্ধ হয়ে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে, ফলে সীমান্ত অঞ্চলে দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্বিপাক্ষিক সংলাপ না হয়, তবে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। চীন বা কাতার মধ্যস্থতা করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সীমান্তবাসীদের জন্য এই অনিশ্চিত এলাকা প্রাণঘাতী রূপ নিচ্ছে, যেমন আগেও বহু মানুষ সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাই সীমান্ত ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে স্থায়ী সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এখন সবচেয়ে জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যেমন বলেছেন, ‘আমাদের ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে’—যা ইঙ্গিত দেয়, উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ না নিলে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ডন, আল-জাজিরা, এপি
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ডুরান্ড লাইনের বিতর্কিত সীমান্তে সংঘর্ষ চরমে পৌঁছেছে। উভয় দেশই ভারী ক্ষয়ক্ষতি ও সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার জানায়, পাকিস্তানের বিমান হামলার জবাবে তাদের বাহিনী ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে, ৩০ জনকে আহত করেছে এবং ২৫টি সেনা পোস্ট দখল করেছে। অপরদিকে, পাকিস্তান দাবি করে, তারা ১৯টি আফগান সীমান্তচৌকি দখল করেছে, একাধিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং বহু তালেবান যোদ্ধাকে হতাহত করেছে। ইসলামাবাদ কাবুলের দেওয়া পরিসংখ্যানকে ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণা’ বলেও উড়িয়ে দেয়।
এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে উভয় দেশের একে অপরের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয়দানের অভিযোগ, বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ইস্যুতে। সীমান্তের সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ এড়ানো যায়।
এই সংঘাতের মূল কারণ দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ। ২ হাজার ৬১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুরান্ড লাইনকে আফগানিস্তান কখনো স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান অভিযোগ করে, আফগানিস্তান টিটিপি সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটাতে চায়। খোস্ত ও নানগারহারের মতো প্রদেশে তারা অবস্থান নিয়ে ২০২৫ সালেই শতাধিক পাকিস্তানি নিরাপরাধ সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়।
কাবুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের ভূমি কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। বরং তারা পাল্টা অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান আইএসআইএস-খোরাসান সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং আফগান সীমান্তে বারবার অনধিকার প্রবেশ করছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বিমান হামলায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে, আর ২০২৫ সালের অক্টোবরের শুরুতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হামলা তীব্র হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরক রূপ নেয়।
৯ অক্টোবর ২০২৫: পাকিস্তান, অভিযোগ অনুযায়ী, আফগানিস্তানের কাবুল, খোস্ত, জালালাবাদ ও পাকতিকা শহরে বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ। তিনি বেঁচে যান এবং প্রতিশোধের হুমকি দেন। কাবুলের পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণে অন্তত দুই টিটিপি সদস্য নিহত হয়। তালেবান সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
১০–১১ অক্টোবর: টিটিপি পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালায়। এক পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলায় ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। আফগান বাহিনী সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করে।
১১ অক্টোবর রাত: আফগান তালেবান বাহিনী ‘বৃহৎ আক্রমণ’ শুরু করে। খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানের চিত্রাল, বাজাউর, মুহমান্দ, আঙ্গুর আড্ডা, কুররম ও বারামচা এলাকায় পাকিস্তানি অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। ভারী অস্ত্র, ড্রোন ও ট্যাংক ব্যবহারে সংঘর্ষ গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
১২ অক্টোবর সকাল: তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ ‘দৃঢ় অভিযান’ সফল হওয়ার দাবি জানান। পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আফগান পোস্টে আগুন লাগা ও আত্মসমর্পণকারী সেনাদের ফুটেজ প্রচার করে। সব সীমান্তপথ, বিশেষ করে তোরখাম, সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উভয় দেশই বিজয়ের দাবি করছে, যদিও এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। তথ্যযুদ্ধের এই পর্যায়ে সত্য-মিথ্যা মিশে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘসহ কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এখন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
আফগান (তালেবান) পক্ষের দাবি: কান্দাহার, হেলমান্দ, পাকতিকা, খোস্ত, পাকতিয়া, জাবুল, নানগারহার ও কুনার প্রদেশে রাতভর অভিযানে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আফগান তালেবান।
এ ছাড়া ২৫টি পাকিস্তানি সেনা পোস্ট দখলের কথা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি হেলমান্দ প্রদেশে। সেখানে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি। বাহরামচা জেলায় একাধিক পোস্ট ধ্বংস করা হয় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।
নিজেদের ক্ষতি সম্পর্কে নয়জন তালেবান যোদ্ধা নিহত এবং প্রায় এক ডজন আহত হওয়ার কথা জানায় আফগানিস্তান।
এই অভিযানকে পাকিস্তানের ‘অতর্কিত হামলা’ ও ৯ অক্টোবর কাবুলে বিমান হামলার প্রতিশোধ বলা হয়েছে। তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একে ‘সফল পাল্টা আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করে সতর্ক করেছে, ভবিষ্যতে অনুপ্রবেশ হলে আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের দাবি ও অস্বীকার: ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পাল্টা দাবিতে ইসলামাবাদ তালেবানের দেওয়া ৫৮ সেনা নিহতের দাবি ‘ভিত্তিহীন প্রচারণা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, এসব দাবি পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, আফগান দিক থেকে প্রাথমিক গোলাবর্ষণে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে, তবে কুররম জেলার তিরি গ্রামে এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান আরও দাবি করে, তাদের পাল্টা অভিযানে ডজনখানেক আফগান সৈন্য ও টিটিপি/আইএস-কে সদস্য নিহত হয়েছে। প্রাথমিক সংঘর্ষেই ২০ জনের বেশি আফগান সেনা প্রাণ হারায়।
পাকিস্তান ১৯টি আফগান সীমান্তচৌকি দখলের দাবিও করেছে, যার মধ্যে মানোজবা ক্যাম্প, জান্দুসার পোস্ট, তুরকমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার দুর্গ উল্লেখযোগ্য। আর্টিলারি, ট্যাংক, ড্রোন ও বিমানসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে এসব স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।
পিটিভি নিউজের প্রচারিত ভিডিওতে আফগান পোস্টে আগুন, আত্মসমর্পণরত সৈন্য ও পিছু হটা দৃশ্য দেখা গেছে।
পাকিস্তান এসব হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ বলে দাবি করেছে। ইসলামাবাদের বক্তব্য, আফগান বাহিনী বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে টিটিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশে সহায়তা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, এটি ‘গুরুতর উসকানি’, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি ‘যথাযথ জবাব’ ও ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির প্রতিশ্রুতি দেন।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদারের আহ্বান জানান এবং পাকিস্তানকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় অবস্থানরত আইএস-কে সদস্যদের বহিষ্কার করতে বলেন। তার অভিযোগ, এসব জঙ্গি পাকিস্তানি বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সার্বভৌমত্ব পুনরায় লঙ্ঘিত হলে আফগান বাহিনী আরও শক্ত প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আফগান ‘উসকানিমূলক হামলা’র নিন্দা জানান। তিনি তালেবানকে ‘সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনেন এবং বলেন, ‘দেশের প্রতিরক্ষায় কোনো আপস হবে না।’
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লে. জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তান ১০ হাজারের বেশি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়েছে, যেখানে ৯৭০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তবে ৩১১ জন সৈন্যও প্রাণ হারিয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব ক্রসিং পয়েন্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
১২ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত কোনো পক্ষই অপর পক্ষের দাবি স্বীকার করেনি। পাকিস্তান তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বিশ্বশক্তিগুলো সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আবদ্ধ সৌদি আরব, শান্তিপূর্ণ সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছে এবং শান্তি উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের আফগান বিশেষ দূত বাণিজ্য বন্ধের কারণে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়েও সতর্ক করেছেন।
পাকিস্তানের অভিযোগ অনুযায়ী টিটিপিকে সহায়তার কথা অস্বীকার করে ভারত কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে এবং আফগান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
এ সংঘর্ষ ২০২১ সালে তালেবান কাবুলে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে গুরুতর সীমান্ত সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি টিটিপি ও আইএস-কে এর মতো গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান-পরবর্তী স্থিতিশীলতা প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দেখা দিয়েছে। তোরখাম সীমান্ত বন্ধ হয়ে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে, ফলে সীমান্ত অঞ্চলে দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্বিপাক্ষিক সংলাপ না হয়, তবে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। চীন বা কাতার মধ্যস্থতা করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সীমান্তবাসীদের জন্য এই অনিশ্চিত এলাকা প্রাণঘাতী রূপ নিচ্ছে, যেমন আগেও বহু মানুষ সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাই সীমান্ত ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে স্থায়ী সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এখন সবচেয়ে জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যেমন বলেছেন, ‘আমাদের ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে’—যা ইঙ্গিত দেয়, উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ না নিলে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ডন, আল-জাজিরা, এপি
গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়েছে ১১ অক্টোবর থেকে। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া টানা ২৪ মাসের সংঘাত আপাতত থেমেছে। এই চুক্তি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ।
৫ ঘণ্টা আগেআফগান তালেবান সরকার স্বীকার করেছে যে তারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একাধিক স্থানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ঘটে।
৮ ঘণ্টা আগেটানা ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মেক্সিকোতে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে।
২১ ঘণ্টা আগেএ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০২৫) ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পুরস্কার পেয়েছেন ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সাহসী অবস্থান’-এর জন্য। নিঃসন্দেহে নিকোলাস মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ।
১ দিন আগে