বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা গ্রহণকারী এই সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতারা এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু এই বিতর্ক কি সত্যিই যৌক্তিক, নাকি এটি একটি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল?
মো. সফিকুল ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে এনসিপি নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই বক্তব্যের পেছনের প্রেক্ষাপটটি স্পষ্ট নয়। আমার মনে হয়, এনসিপি নেতারা হয়তো উপদেষ্টাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল হিসেবেই বিষয়টি উত্থাপন করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমান উপদেষ্টারা একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে, আদালতের নির্দেশনা ও অনুমোদনের ভিত্তিতেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যেমন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরও তেমন এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রেক্ষাপটে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। আদালতের নির্দেশনা ছিল, রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা ও সাংবিধানিক শূন্যতা এড়াতে উপদেষ্টারা দায়িত্ব নেবেন। তাই এই সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের কাজ হবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন বা প্রয়োজন হলে রেটিফাই করা। ইতিহাসও বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারগুলোর দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারসমূহ স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রশ্নটি এখানে রাজনৈতিকভাবে যতটা প্রচার পাচ্ছে, বাস্তবে ততটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
এনসিপি অভিযোগ করছে, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ নাকি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আমার কাছে এই অভিযোগ আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এখন পর্যন্ত নির্দলীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাজই হলো সরকারকে প্রভাবিত করা—তারা যেভাবেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। প্রতিটি দলের স্বার্থ, আদর্শ ও কর্মসূচি থাকে। তাই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা তারা করবে—এটাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক আচরণ। কিন্তু এটাকে ‘লিয়াজোঁ’ বলা সঠিক নয়। বরং এটা গণতন্ত্রেরই অংশ।
কিছু সমালোচক বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি আওয়ামী লীগের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আর এখন সেই দায় থেকে পালাতে চাইছে। আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। কারণ, বিচারকাজ তো থেমে যায়নি। বরং সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কিংবা গত ১৬ বছরে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের দাবি জনগণেরই ছিল। সেই প্রক্রিয়া এখন চলমান। বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া—তদন্ত, সাক্ষ্য, জেরা, সত্যতা যাচাই—সব মিলিয়ে সময় লাগে। এই সরকার সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত না করে বরং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সংস্কারের ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ ধীর হলেও সুনির্দিষ্ট। বিভিন্ন কমিশন গঠন, বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের মতামত গ্রহণ, ঐকমত্যের চেষ্টা—এসবই একটি গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোকে সকল ক্ষেত্রে একমতে আনা সম্ভব হয়নি। তবুও সরকারের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়। কিছু সিদ্ধান্ত তাদের নিজ উদ্যোগে নিতে হয়—দেশ ও জনগণের স্বার্থে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন একটি অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তারা প্রকৃত অর্থে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই এখন জনমনে প্রধান আকাঙ্ক্ষা—একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচন।
নির্বাচন হলে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই আসবে না, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা—সবক্ষেত্রে আস্থা ফিরে আসবে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা—সবাই যখন জানবে যে, একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে আছে, তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশে শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের গতি উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কারণ তখন সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রশাসনের মধ্যে দৃঢ়তা, আস্থা ও দায়িত্ববোধ ফিরে আসবে।
এনসিপি নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আমি একে ‘ব্যর্থতা’ বলব না, বরং বলব—আংশিক সাফল্যের প্রক্রিয়া। কারণ এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এক বিপর্যস্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছিল ভঙ্গুর অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সরকারের পক্ষে পূর্ণ সক্ষমতা প্রদর্শন করা কঠিন।
তারা হয়তো আইনশৃঙ্খলা বা প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কিছুটা কম সফল হয়েছেন। কিন্তু তার কারণ কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। পাশাপাশি পতিত সরকারের রেখে যাওয়া নানামুখী ষড়যন্ত্র, বিভাজন ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই তাদের এগোতে হচ্ছে।
তাই এই সরকারকে ব্যর্থ বলা নয়, বরং বলা উচিত—তারা সংকটের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে।
মনে রাখা জরুরি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা মূলত একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা—অতীতের ব্যর্থ রাজনীতি ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো, রাষ্ট্রকে নির্বাচনের পথে ফিরিয়ে আনা এবং আইনি ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়া যতই সময়সাপেক্ষ হোক, তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। এখন সময় প্রয়োজন দৃঢ়তা, আস্থা ও দায়িত্ববোধের—যা কেবল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
পরিশেষে বলব, এই সরকারকে মূল্যায়ন করার মাপকাঠি হওয়া উচিত তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ক কর্মতৎপরতা; অর্থাৎ, দেশের সংকটময় মুহূর্তে তারা কতটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে — তা-ই হওয়া উচিত মূল্যায়নের প্রধান মানদণ্ড। রাজনৈতিক চাপ ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণই হোক তাদের প্রধান লক্ষ্য।
লেখক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে এনসিপি নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই বক্তব্যের পেছনের প্রেক্ষাপটটি স্পষ্ট নয়। আমার মনে হয়, এনসিপি নেতারা হয়তো উপদেষ্টাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল হিসেবেই বিষয়টি উত্থাপন করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমান উপদেষ্টারা একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে, আদালতের নির্দেশনা ও অনুমোদনের ভিত্তিতেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যেমন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরও তেমন এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রেক্ষাপটে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। আদালতের নির্দেশনা ছিল, রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা ও সাংবিধানিক শূন্যতা এড়াতে উপদেষ্টারা দায়িত্ব নেবেন। তাই এই সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের কাজ হবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন বা প্রয়োজন হলে রেটিফাই করা। ইতিহাসও বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারগুলোর দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারসমূহ স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রশ্নটি এখানে রাজনৈতিকভাবে যতটা প্রচার পাচ্ছে, বাস্তবে ততটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
এনসিপি অভিযোগ করছে, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ নাকি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আমার কাছে এই অভিযোগ আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এখন পর্যন্ত নির্দলীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাজই হলো সরকারকে প্রভাবিত করা—তারা যেভাবেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। প্রতিটি দলের স্বার্থ, আদর্শ ও কর্মসূচি থাকে। তাই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা তারা করবে—এটাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক আচরণ। কিন্তু এটাকে ‘লিয়াজোঁ’ বলা সঠিক নয়। বরং এটা গণতন্ত্রেরই অংশ।
কিছু সমালোচক বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি আওয়ামী লীগের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আর এখন সেই দায় থেকে পালাতে চাইছে। আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। কারণ, বিচারকাজ তো থেমে যায়নি। বরং সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কিংবা গত ১৬ বছরে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের দাবি জনগণেরই ছিল। সেই প্রক্রিয়া এখন চলমান। বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া—তদন্ত, সাক্ষ্য, জেরা, সত্যতা যাচাই—সব মিলিয়ে সময় লাগে। এই সরকার সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত না করে বরং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সংস্কারের ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ ধীর হলেও সুনির্দিষ্ট। বিভিন্ন কমিশন গঠন, বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের মতামত গ্রহণ, ঐকমত্যের চেষ্টা—এসবই একটি গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোকে সকল ক্ষেত্রে একমতে আনা সম্ভব হয়নি। তবুও সরকারের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়। কিছু সিদ্ধান্ত তাদের নিজ উদ্যোগে নিতে হয়—দেশ ও জনগণের স্বার্থে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন একটি অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তারা প্রকৃত অর্থে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই এখন জনমনে প্রধান আকাঙ্ক্ষা—একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচন।
নির্বাচন হলে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই আসবে না, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা—সবক্ষেত্রে আস্থা ফিরে আসবে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা—সবাই যখন জানবে যে, একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে আছে, তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশে শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের গতি উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কারণ তখন সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রশাসনের মধ্যে দৃঢ়তা, আস্থা ও দায়িত্ববোধ ফিরে আসবে।
এনসিপি নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আমি একে ‘ব্যর্থতা’ বলব না, বরং বলব—আংশিক সাফল্যের প্রক্রিয়া। কারণ এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এক বিপর্যস্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছিল ভঙ্গুর অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সরকারের পক্ষে পূর্ণ সক্ষমতা প্রদর্শন করা কঠিন।
তারা হয়তো আইনশৃঙ্খলা বা প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কিছুটা কম সফল হয়েছেন। কিন্তু তার কারণ কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। পাশাপাশি পতিত সরকারের রেখে যাওয়া নানামুখী ষড়যন্ত্র, বিভাজন ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই তাদের এগোতে হচ্ছে।
তাই এই সরকারকে ব্যর্থ বলা নয়, বরং বলা উচিত—তারা সংকটের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে।
মনে রাখা জরুরি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা মূলত একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা—অতীতের ব্যর্থ রাজনীতি ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো, রাষ্ট্রকে নির্বাচনের পথে ফিরিয়ে আনা এবং আইনি ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়া যতই সময়সাপেক্ষ হোক, তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। এখন সময় প্রয়োজন দৃঢ়তা, আস্থা ও দায়িত্ববোধের—যা কেবল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
পরিশেষে বলব, এই সরকারকে মূল্যায়ন করার মাপকাঠি হওয়া উচিত তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ক কর্মতৎপরতা; অর্থাৎ, দেশের সংকটময় মুহূর্তে তারা কতটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে — তা-ই হওয়া উচিত মূল্যায়নের প্রধান মানদণ্ড। রাজনৈতিক চাপ ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণই হোক তাদের প্রধান লক্ষ্য।
লেখক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক

২০০৭ সালের ‘ওয়ান-ইলেভেন’ থেকে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এই লেখা। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের অভাব, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতার সংকট এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ক্ষত ত
৭ ঘণ্টা আগে
ঢাকার ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভিন্ন আবহে পালিত হয় ৫৪তম মৈত্রী দিবস। এতে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।
১ দিন আগেবাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের এবারের আলোচনার শিরোনাম ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা সবাই এখন এই বিষয়টি নিয়েই ভাবছি।
১ দিন আগে
পেরুর বিচারক লুজ দেল কারমেন ইবানিয়েজ কারাঞ্জর ওপর গত জুনে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, তিনি ২০০৩ সালের পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের অপরাধ তদন্তের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে গত এক বছরে ছয়জন আইসিসি বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১ দিন আগে