leadT1ad

ট্রাম্প ও শি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তেজনা কমলো

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ০৪
৩০শে অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানের গিমহে বিমান ঘাঁটিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং করমর্দন করছেন। ছবি: সংগৃহীত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এ সমঝোতার ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত হয়েছে। এই সমঝোতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চাপ কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুই নেতা দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে এক বছরের জন্য এই বাণিজ্য চুক্তি করেন। এটি ছিল ২০১৯ সালের পর তাদের প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ।

তবে এই চুক্তি বিদ্যমান শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তেমন অগ্রগতি আনেনি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ওয়াইল্ডার বলেন, ‘এটি মূলত একধরনের বিরতি, পুরো সমাধান নয়। উভয় পক্ষ গুলি না করার শর্তে তাদের বাণিজ্য অস্ত্র নামিয়ে রাখছে, তবে ফেলে দিচ্ছে না।’

চুক্তি অনুযায়ী, চীন তার পরিকল্পিত বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এক বছর স্থগিত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রও চীনা পণ্যের ওপর ঘোষিত ১০০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করবে।

ট্রাম্প আরও জানান, চীন ফেন্টানিল নামের কৃত্রিম মাদক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে সম্মত হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবেন।

ট্রাম্প এই বৈঠককে ‘অসাধারণ’ বলে আখ্যা দেন এবং জানান, বিরল খনিজ নিয়ে ‘সব বাধা দূর হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আপাতত শব্দভাণ্ডার থেকে মুছে যাবে।’

ট্রাম্প আরও জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন কেনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

শি জিনপিং বলেন, দুই দেশ ‘সমস্যাগুলোর সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।’ তিনি উভয় পক্ষকে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান, যাতে জনগণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতি আশ্বস্ত হয়।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরে নিশ্চিত করে যে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এক বছর স্থগিত থাকবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও চীনা কোম্পানির ওপর প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। উভয় দেশ পাল্টা বন্দর ফিও স্থগিত রাখবে।

এশিয়ার শেয়ারবাজারে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি; হংকং, সাংহাই ও সিডনির সূচক নিচে নেমেছে, আর জাপানের বাজার স্থিতিশীল থেকেছে।

চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি লাইসেন্সের পরিকল্পনা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারত। কারণ স্মার্টফোন থেকে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত নানা পণ্য তৈরিতে এসব খনিজ অপরিহার্য।

সাংহাইয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হুটং রিসার্চের অংশীদার শান গু বলেন, ফেন্টানিল শুল্ক কমানো প্রত্যাশিতই ছিল। তিনি বলেন, ‘চীন বরাবরই এটি চেয়ে আসছিল এবং এবার বিরল খনিজকে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে’।

চুক্তি সত্ত্বেও বেশিরভাগ শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো বহাল রয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে গড় মার্কিন শুল্ক প্রায় ৪৭ শতাংশ এবং চীনের শুল্ক ৩২ শতাংশে থাকবে।

সিঙ্গাপুরের হিনরিচ ফাউন্ডেশনের ডেবোরা এলমস এই সমঝোতাকে ‘আংশিক স্থগিতাবস্থা’ বা ‘ক্ষুদ্র অগ্রগতি’ বলে উল্লেখ করেন।

সাংহাইভিত্তিক টাইডালওয়েভ সলিউশন্সের ক্যামেরন জনসন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের জন্য এটিই ছিল সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।’তবে তিনি উল্লেখ করেন, চুক্তিটি প্রতি বছর পুনর্বিবেচনা করা হবে, যা দুই দেশের সম্পর্ক ও প্রভাব পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ দেবে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত