leadT1ad

গাজা ‘অবাসযোগ্য মরুভূমি’তে পরিণত হতে পারে, হুঁশিয়ারি বিশেষজ্ঞদের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০২
গত ১০ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত এসব বিস্ফোরকে কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত।

যুদ্ধবিরতির পরও গাজা এখনো ফিরে আসা বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকা হয়ে রয়েছে। ইসরায়েলের ফেলা অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ জীবনহানির পাশাপাশি পুনর্গঠনকেও বাধাগ্রস্ত করছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা এখন দ্বিগুণ সংকটের রূপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত এসব বিস্ফোরকে কমপক্ষে ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা একে ‘জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মিশর ও রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক উদ্ধার দল গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেলেও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা উদ্ধারকাজ ব্যাহত করছে।

গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এতে ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি গাজা সিটি ও খান ইউনিসসহ উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পর তারা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্যের মুখোমুখি হয়।

জাতিসংঘের স্যাটেলাইট কেন্দ্র (ইউএনওএসএটি) জানিয়েছে, শুধু খান ইউনিসেই ৪২ হাজারেরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজার পুলিশ বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলেছে। বিশেষ করে সন্দেহজনক বস্তু, বিপজ্জনক বর্জ্য ও অবিস্ফোরিত বোমা থেকে দূরে থাকতে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘাতে গাজাজুড়ে ১০ হাজার টন অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ইসরায়েলের ব্যবহৃত রিমোট-কন্ট্রোলড বিস্ফোরক রোবট।

জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিস (ইউএনএমএএস) এখন পর্যন্ত ৫৬০টি বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধান ঝুঁকি: অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ

সবচেয়ে বড় হুমকি এখন অবিস্ফোরিত বোমা ও ডিভাইস। বিশেষ করে শিশুরা এগুলোকে খেলনা মনে করে কাছে চলে যায়। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. হ্যারিয়েট একে ‘জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়’ বলে সতর্ক করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, অনেক শিশু খেলনা, ক্যান বা ধ্বংসাবশেষ মনে করে এসব বস্তুর কাছে গিয়ে আহত হচ্ছে।

ইউএনএমএএস প্রধান লুক ডেভিড আর্ভিং জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩২৮ জন ফিলিস্তিনি এসব বিস্ফোরকে নিহত বা আহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

গত ২৫ অক্টোবর (শনিবার) গাজা সিটিতে ছয় বছর বয়সী যমজ শিশু ইয়াহিয়া ও নাবিলা শোরবাসি একটি খেলনা সদৃশ বোমার কাছে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। ইয়াহিয়া এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

খান ইউনিসে এক ব্যক্তি তার তাঁবুর নিচে তিন মিটার গভীর ক্ষেপণাস্ত্রের গর্তে চাপা পড়া একটি অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি বোমা খুঁজে পান। আশপাশের বাড়িগুলোতেও একই ধরনের বিপদ ধরা পড়েছে।

২৭ অক্টোবর পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির পর কমপক্ষে ৫৩ জন এসব বিস্ফোরকে প্রাণ হারিয়েছে।

গাজার মেয়র জানিয়েছেন, ভারী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে ‘গুরুতর প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করছে।

ধ্বংসস্তুপের নিচে ইসরায়েলি জিম্মিদের মৃতদেহের সন্ধান চলছে। ছবি: সংগৃহীত।
ধ্বংসস্তুপের নিচে ইসরায়েলি জিম্মিদের মৃতদেহের সন্ধান চলছে। ছবি: সংগৃহীত।

মৃতদেহ ও বন্দিদের সন্ধান

অবিস্ফোরিত বোমার পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপের নিচে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজও চলছে। এতে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি বন্দিদের দেহও রয়েছে।

কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েল কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। ফলে মিশর ইসরায়েলি বন্দিদের দেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ ও ভারী সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। রেড ক্রস দেহ উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার অনুমতি পেয়েছে।

এই উদ্ধার প্রচেষ্টা চলছে এমন সময়ে, যখন গাজা সিটি ও জাবালিয়ায় যুদ্ধবিরতির আগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। ওই হামলায় ব্যবহৃত অনেক বিস্ফোরক রোবট এখনো অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলগুলো, যেমন আবু তামুসের নেতৃত্বাধীন ইউনিট, কেবল বিপদ চিহ্নিত করতে পারছে, নিষ্ক্রিয় করার সরঞ্জাম তাদের নেই।

মানবিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ দ্রুত মাইন অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুরোপুরি মাইনমুক্ত করতে কয়েক বছর ও কয়েক বিলিয়ন ডলার লাগবে।

ওসিএইচএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়া ও ত্রাণ প্রবেশে সীমাবদ্ধতা মানবিক সংকটকে আরও জটিল করছে। বিশেষ করে গাজার নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্বিগুণ আঘাতের শিকার হচ্ছেন।

আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র দূতেরা যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে গঠিত ‘গাজা ট্রাইব্যুনাল’ ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহারের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করেছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ

বিস্ফোরক ঝুঁকির কারণে পুনর্গঠন পরিকল্পনা স্থবির হয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সরঞ্জাম দ্রুত না পৌঁছালে গাজা ‘অবাসযোগ্য মরুভূমি’তে পরিণত হতে পারে।

পুলিশি সতর্কতা সত্ত্বেও মানুষ ঘরে ফিরছে, ফলে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। আর এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত