leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় বড় অগ্রগতি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

২৬ অক্টোবর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাষণ দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে রবিবার অনুষ্ঠিত আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা একটি সম্ভাব্য চুক্তির দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

এতে আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আসন্ন বৈঠকে বাণিজ্য বিরোধ কমাতে একটি চুক্তি করতে পারেন। ২০১৯ সালের পর এটি হবে তাদের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।

ট্রাম্প ও শি আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজুতে এপেক সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করবেন। ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর এটি হবে তার প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বড় বৈঠক।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের বলেন, দুই পক্ষ একটি ‘চুক্তির কাঠামো’ তৈরি করেছে, যা ট্রাম্প ও শি দক্ষিণ কোরিয়ায় বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

বেসেন্ট এনবিসি নিউজকে জানান, তিনি আশা করছেন দুই দেশ এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে, যার ফলে চীন বিরল ধাতু রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিবে এবং যুক্তরাষ্ট্রও চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে।

এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট আরও বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন, বিপুল পরিমাণে কেনার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এতে মার্কিন কৃষকেরা উপকৃত হবেন।

চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বাণিজ্য আলোচক হে লিফেং জানান, দুই পক্ষ ‘মৌলিক ঐক্যমত্যে’ পৌঁছেছে এবং উভয়ের উদ্বেগ মোকাবিলায় ‘যৌথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা এখন ‘নির্দিষ্ট বিষয়গুলো চূড়ান্ত’ করবে এবং ‘দেশীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া’ সম্পন্ন করবে। এই তথ্য চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়।

সোমবার এ খবরে এশীয় শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন ঘটে, কারণ বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা কমার আশায় আশাবাদী হয়েছেন।

জাপানের নিক্কেই ২২৫ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক সোমবার দুপুরের পর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। নিক্কেই সূচক বেড়েছে প্রায় ২.১ শতাংশ এবং কসপি ২.৩ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেন্গ সূচকও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা প্রায় ০.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপানের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর বুধবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, তবে চীনের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমাবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে এমন পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াবে।

এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যখন বেইজিং ঘোষণা করে—চীনা উৎসের খনিজ বা চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিরল ধাতব চুম্বক ও কিছু সেমিকন্ডাক্টর উপকরণ রপ্তানির আগে কোম্পানিগুলোকে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে।

ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিয়মগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিরল ধাতু বা ‘রেয়ার আর্থ’ হলো ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি গোষ্ঠী, যার মধ্যে হোলমিয়াম, সেরিয়াম ও ডিসপ্রোসিয়াম উল্লেখযোগ্য। এগুলো স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও যুদ্ধবিমানসহ বহু আধুনিক প্রযুক্তিপণ্যে অপরিহার্য উপাদান।

বেইজিংয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ উভয় পক্ষের আলোচনায় প্রভাব বিস্তারের কৌশল, যা ট্রাম্প-শি বৈঠকের আগে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত