leadT1ad

আর্জেন্টিনায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট মিলেইর দলের বড় জয়

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

আর্জেন্টিনার মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাভিয়ের মিলেই প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ছবি: বিবিসি।

আর্জেন্টিনার মধ্যবর্তী নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইর দল বড় জয় পেয়েছে। হাভিয়ের যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত একজন ডানপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দুই বছরে তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানো এবং মুক্তবাজারভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম চালান। ধারণা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে তার অবস্থান আরও মজবুত হয়।

তাঁর দল লা লিবার্তাদ আভাঞ্জা মোট ভোটের প্রায় ৪১ শতাংশ পায়। দলটি সিনেটের ২৪টির মধ্যে ১৩টি আসন এবং নিম্নকক্ষের ১২৭টির মধ্যে ৬৪টি আসন জিতে নেয়। এই সাফল্যের ফলে মিলেইর জন্য অর্থনীতি উন্মুক্ত করা ও ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে।

নির্বাচনের আগে মিলেইর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৪০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা নির্ভর করবে মাইলি রাজনৈতিক গতি ধরে রাখতে পারেন কিনা তার ওপর। সমর্থকরা এটিকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখলেও, সমালোচকরা ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে আর্জেন্টিনার নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মিলেই তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সংস্কারের পথে অটল থাকতে হবে। এবার সময় এসেছে আর্জেন্টিনার ইতিহাস ঘুরিয়ে দেওয়ার, আর্জেন্টিনাকে আবার মহান করার।’

এর আগে সিনেটে তাঁর দলের মাত্র ৭টি, আর নিম্নকক্ষে ৩৭টি আসন ছিল। ফলে ব্যয় কমানো ও সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলো সহজে পাস হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ বাড়ানোর বিলগুলোকেও বিরোধীরা উল্টে দেয়।

কিন্তু নির্বাচনের পর রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে শত শত সমর্থক উল্লাসে রাস্তায় নামে। এক তরুণ ভোটার দিয়োনিসিও বলেন, ‘মিলেইর হাতে আগের মতো ১৫ শতাংশ সংসদীয় সমর্থন ছিল না। এখন অনেক বেশি আসন পাওয়ায় তিনি এক বছরের মধ্যেই দেশ বদলে দিতে পারবেন।’

এই নির্বাচন ছিল ২০২৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর জনপ্রিয়তার প্রথম বড় পরীক্ষা। তখন তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘চেইনসো’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি শিক্ষা, পেনশন, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও ভর্তুকির বাজেট কেটে দিয়েছেন এবং হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন।

সমর্থকরা বলেন, এই কঠোর পদক্ষেপে তিনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে, ঘাটতি কমাতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই সংস্কারের মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। চাকরি হারাচ্ছেন অনেকে, উৎপাদন খাত দুর্বল হচ্ছে, সরকারি সেবা ভেঙে পড়ছে এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। শিশুপালন বা প্রতিবন্ধী সহায়তায় কাজ করা জুলিয়ানা বলেন, ‘আমাদের বেতন একই আছে, কিন্তু সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখনো কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখি না।’ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভেরোনিকা বলেন, ‘অবসরভাতা কমে যাওয়ায় জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। দারিদ্র্য বেড়েছে, বেকারত্বও বাড়ছে।’

২০২৩ সালে মাইলি ক্ষমতা গ্রহণ করেন হাতে একটি করাত নিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ছবি: সংগৃহীত।
২০২৩ সালে মাইলি ক্ষমতা গ্রহণ করেন হাতে একটি করাত নিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ছবি: সংগৃহীত।

মিলেই মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে পেসো মুদ্রার মান ধরে রাখছেন, যা রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে। আগামী বছর দেশটির ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা নতুন সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে এবং ৪০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব করে, যাতে মুদ্রা বিনিময়, পেসো কেনা ও বেসরকারি বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত।

নির্বাচনের আগে মিলেইর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গিয়েছিল। তাঁর কৃচ্ছ্রসাধন নীতিতে ক্লান্ত ভোটার এবং দলের ভেতরের দুর্নীতির অভিযোগে আস্থা নড়বড়ে হয়। এবারের ভোটে অংশগ্রহণও ছিল মাত্র ৬৭.৯ শতাংশ—দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

অনেকেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাঁকে ভোট দেন। এক ব্যবসায়ী দার্দো বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা সঠিক পথে আছি, কিন্তু মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ অনেক কষ্টে আছে।’ অন্যদিকে ছাত্র থিয়াগো বলেন, ‘আর্থিক ভারসাম্য দরকার, কিন্তু হাসপাতাল, অবকাঠামো ও প্রতিবন্ধী সহায়তায় বিনিয়োগ না থাকায় বাস্তব পরিবর্তন আসছে না।’

তবুও এই ফলাফল দেখায়, অধিকাংশ আর্জেন্টাইন পুরনো পেরোনবাদী নীতিতে ফিরে যেতে চান না। মাইলি ঘোষণা করেন, ‘আর্জেন্টিনার জনগণ জানিয়ে দিয়েছে—তারা আর ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফিরতে চায় না।’

বাজারও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই জয়ে মিলেইর রাজনৈতিক টিকে থাকা যেমন নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমও নতুন গতি পেয়েছে।

নতুন ম্যান্ডেট তাঁকে আরও সাহসী পরিবর্তন আনার সুযোগ দেবে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—জনগণ কবে বাস্তবে এই পরিবর্তনের সুফল অনুভব করবে। আপাতত দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এখনো তাঁকে সময় দিতে প্রস্তুত।

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত