স্ট্রিম ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করা হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে সমর্থন জানান। আন্তর্জাতিক মহলেও এর বিস্তৃত সমর্থন মিলেছে। তবে হামাস ও ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।
ট্রাম্প একে ‘শান্তির ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেন, এটি তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করে। লক্ষ্যগুলো হলো—বন্দিদের মুক্তি, হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ধ্বংস এবং ভবিষ্যতে গাজা থেকে কোনো হুমকি না আসা নিশ্চিত করা।
হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি তারা জনসমক্ষে প্রকাশের পর হাতে পেয়েছে এবং তা পর্যালোচনা করছে। তারা স্পষ্ট করেছে যে ইসরায়েল পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা অস্ত্র ছাড়বে না। পাশাপাশি তারা একটি রাজনৈতিক সমাধান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রস্তাবটি ট্রাম্পের আগের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতির ধারাবাহিকতা, বিশেষ করে ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনার ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে। এই সময়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমানভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এদিকে, গাজায় অব্যাহত হামলায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষিত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য হামাসের সম্মতি জরুরি। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, যদি হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ‘কাজ শেষ করার’ পূর্ণ সমর্থন দেবে। এই যুদ্ধ প্রায় দুই বছর ধরে চলছে।
১. গাজাকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত করা হবে। যেন এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য আর কোনো হুমকি না হয়।
২. গাজায় দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত ও কষ্ট সহ্য করে বসবাসরত জনগণের স্বার্থেই অঞ্চলটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে রাজি হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে। জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি সেনারা নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে। এ সময় বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণসহ সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে। পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র অপরিবর্তিত থাকবে। অথাৎ দুই পক্ষই তাদের জায়গায় স্থির থাকবে।
৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে।
৫. জিম্মিদের মুক্তির পর ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর নারী ও শিশুসহ আটক গাজার ১,৭০০ নাগরিককে মুক্তি দেবে। ইসরায়েলি প্রতিজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
৬. সব জিম্মি ফেরতের পর হামাস যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র তুলে রাখতে সম্মত হবে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। আর যাঁরা গাজা ছেড়ে যেতে চাইবে, তাদের নিরাপদে যেতে দেওয়া হবে।
৭. চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ত্রাণ সহায়তা গাজায় পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মানবিক চুক্তির আওতায় যেমন — পানি, বিদ্যুৎ, নিষ্কাষণ ব্যবস্থা, হাসপাতাল, বেকারি পুনর্নির্মাণ এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণ সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছিল, তেমনই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
৮. চুক্তিকারী উভয় পক্ষের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে (যাদের সঙ্গে চুক্তিকারীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই) গাজায় সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মানবিক চুক্তির আওতায়-ই রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংও দুই দিকেই খোলা থাকবে।
৯. গাজা টেকনোক্রেট ও নির্দলীয় ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী প্রশাসন দিয়ে পরিচালিত হবে। তাঁরা দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। এই কমিটি যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হবে এবং এর তত্ত্বাবধান করবে নবগঠিত ‘বোর্ড অব পিস‘ নামের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা। এর নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সদস্যদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন বিশ্বনেতা থাকবেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রস্তাবনা অনুযায়ী (যার মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এবং সৌদি-ফরাসি প্রস্তাব) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি গাজা পুনর্গঠনের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ ও অর্থায়নের দায়িত্বে থাকবে।
সংস্থাটি সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা আধুনিক ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলবে, যেটি গাজাবাসীর সেবা নিশ্চিত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সফল আধুনিক শহরের পরিকল্পনায় কাজ করা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গাজা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিনিয়োগ–প্রস্তাব ও উন্নয়ন–পরিকল্পনা বিবেচনা করা হবে; যাতে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও ভবিষ্যতের আশা তৈরি হয়।
১১. গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হবে।
১২. কাউকেই গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না। তবে যারা যেতে চান তাঁরা স্বাধীনভাবে যেতে পারবেন এবং ইচ্ছানুযায়ী ফিরেও আসতে পারবেন। মানুষকে গাজায় থেকেই অধিক উন্নত ও সমৃদ্ধ গাজা গড়ার সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা হবে।
১৩. চুক্তিতে থাকা হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসন ব্যবস্থায় সরাসরি, পরোক্ষ বা কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। টানেল, অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ সব ধরনের সামরিক, সন্ত্রাসী ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হবে এবং তা পুনর্নির্মাণ করা হবে না।
স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজায় একটি নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া চলবে। এর আওতায় সম্মত পদ্ধতিতে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়িত ‘বাই-ব্যাক ও পুনঃএকত্রীকরণ কর্মসূচি’র মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। ‘নিউ গাজা’ সম্পূর্ণভাবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।
১৪. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। ‘নিউ গাজা’ তার প্রতিবেশী ও নিজ জনগণের জন্য আর কোনো হুমকি সৃষ্টি না করবে সে ব্যাপারে আঞ্চলিক অংশীদাররা গ্যারান্টি দেবেন।
১৫. গাজায় অবিলম্বে মোতায়েনের জন্য অস্থায়ী একটি ইন্টারনেশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) তৈরি করতে আরব এবং অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আইএসএফ ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে। এই কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জর্ডান এবং মিসরের সঙ্গে তারা পরামর্শ করবে। এই বাহিনী দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেবে। আর আইএসএফ নতুন প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীসহ সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত করতে ইসরায়েল এবং মিসরের সঙ্গেও কাজ করবে। গাজায় অস্ত্র প্রবেশ রোধ এবং গাজা পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিতের জন্য পণ্যের দ্রুত এবং নিরাপদ প্রবাহকে সহজতর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিতে থাকা পক্ষগুলি সংঘাত নিরসনে একমত হতে হবে।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা তার সম্প্রসারণ করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে, তখন মান, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রত্যাহার করবে। এটি আইডিএফ, আইএসএফ, গ্যারান্টর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতে হবে। আর এর লক্ষ্য হলো নিরাপদ গাজা তৈরি করা যা ইসরায়েল, মিসর বা তার নাগরিকদের জন্য হুমকি নয়। ইসরায়েলি সেনারা ধাপে ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ আইএসএফের হাতে তুলে দেবে। পুরো সেনা সরানোর পরও শুধু নিরাপত্তা রক্ষায় সামান্য সৈন্য থাকবে; যতক্ষণ না গাজা পুরোপুরি নিরাপদ হয়।
১৭. যদি হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণে বিলম্ব বা প্রত্যাখ্যান করে, তবুও ইসরায়েল যে জায়গা ছাড়বে (যেগুলো ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ করা হয়েছে) সেই জায়গাগুলো আইএসএফের হাতে তুলে দেবে। আর ওই নিরাপদ এলাকায় সাহায্য ও পুনর্গঠনের কাজ চালু হবে।
১৮. ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতা এবং বয়ানে পরিবর্তন আনতে আন্তধর্মীয় সংলাপ চালু হবে। যাতে গাজাবাসী শান্তির সুফল বুঝতে পারেন। সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধকে ভিত্তি করে এ সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯. গাজার পুনর্নির্মাণ কাজ চললে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে এগোলে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে। এটাই ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ শুরু করবে; যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় তারা একমত হতে পারে।
প্রতিক্রিয়া: এই প্রস্তাবকে ঘিরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার হামাসকে এটি মেনে নিয়ে দুর্দশার অবসান ঘটাতে বলেন। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এটিকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলেন। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও কস্তা ‘এই সুযোগ’ কাজে লাগাতে আহ্বান জানান। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ‘ভোগান্তির অবসান’ চান। অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস একে ‘আশার প্রতীক’ বলেন। কাতার ও মিশরসহ আটটি আরব দেশ এ প্রস্তাব হামাসের কাছে পৌঁছে দেয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ‘সৎ প্রচেষ্টা’র প্রশংসা করেছে। চুক্তিতে সহায়তার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা জানান।
ইসরায়েলি অবস্থান
নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ করে। তবে তিনি সতর্ক করেন, হামাস প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল একাই পদক্ষেপ নেবে। লিকুদ দলের সদস্যরা একে ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ বলেছেন। তবে কেউ কেউ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন।
দোহায় হামাস কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করবেন। তবে তারা স্পষ্ট করেন, দখল শেষ না হওয়া ও রাষ্ট্র গঠনের নিশ্চয়তা না থাকলে নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়। তাদের ভাষায়, ‘অধিকার আদায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধের অস্ত্র হাতে থাকবে।’ গাজার অনেক বাসিন্দা এটিকে কেবল বন্দি ফেরত আনার ফাঁদ হিসেবে দেখছেন। প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ একে ‘আঞ্চলিক বিস্ফোরণের রেসিপি’ ও ‘অবিরত আগ্রাসন’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনার একতরফা মার্কিন-ইসরায়েলি কাঠামো ফিলিস্তিনিদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। হামাসের সঙ্গে সরাসরি কোনো পরামর্শ হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে একে ‘ইসরায়েলি কৌশলের ছদ্মবেশ’ বলেছেন। কেউ বাফার জোন ও ব্লেয়ারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন। আবার অনেকে অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে পরিবর্তনের সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।
হামাসের কাছে প্রস্তাব পৌঁছানোর পর থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিতে হবে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দোহায় আলোচনা চলছে।
হামাস গ্রহণ করলে বাস্তবায়ন সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতে পারে। প্রত্যাখ্যান করলে যুদ্ধ তীব্র হতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, প্রত্যাখ্যান হলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
সফল হলে এটি আঞ্চলিক বড় সমঝোতার পথ খুলতে পারে। ব্যর্থ হলে সংকট দীর্ঘায়িত হবে। বিশ্ব দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘হামাস যদি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে, তবে দায় একমাত্র তাদের।’
আগামী কয়েক দিনেই স্পষ্ট হবে— এটি শান্তির পথ খুলবে নাকি অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, মিডল ইস্ট আই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করা হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে সমর্থন জানান। আন্তর্জাতিক মহলেও এর বিস্তৃত সমর্থন মিলেছে। তবে হামাস ও ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।
ট্রাম্প একে ‘শান্তির ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেন, এটি তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করে। লক্ষ্যগুলো হলো—বন্দিদের মুক্তি, হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ধ্বংস এবং ভবিষ্যতে গাজা থেকে কোনো হুমকি না আসা নিশ্চিত করা।
হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি তারা জনসমক্ষে প্রকাশের পর হাতে পেয়েছে এবং তা পর্যালোচনা করছে। তারা স্পষ্ট করেছে যে ইসরায়েল পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা অস্ত্র ছাড়বে না। পাশাপাশি তারা একটি রাজনৈতিক সমাধান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রস্তাবটি ট্রাম্পের আগের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতির ধারাবাহিকতা, বিশেষ করে ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনার ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে। এই সময়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমানভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এদিকে, গাজায় অব্যাহত হামলায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষিত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য হামাসের সম্মতি জরুরি। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, যদি হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ‘কাজ শেষ করার’ পূর্ণ সমর্থন দেবে। এই যুদ্ধ প্রায় দুই বছর ধরে চলছে।
১. গাজাকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত করা হবে। যেন এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য আর কোনো হুমকি না হয়।
২. গাজায় দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত ও কষ্ট সহ্য করে বসবাসরত জনগণের স্বার্থেই অঞ্চলটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে রাজি হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে। জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি সেনারা নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে। এ সময় বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণসহ সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে। পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র অপরিবর্তিত থাকবে। অথাৎ দুই পক্ষই তাদের জায়গায় স্থির থাকবে।
৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে।
৫. জিম্মিদের মুক্তির পর ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর নারী ও শিশুসহ আটক গাজার ১,৭০০ নাগরিককে মুক্তি দেবে। ইসরায়েলি প্রতিজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
৬. সব জিম্মি ফেরতের পর হামাস যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র তুলে রাখতে সম্মত হবে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। আর যাঁরা গাজা ছেড়ে যেতে চাইবে, তাদের নিরাপদে যেতে দেওয়া হবে।
৭. চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ত্রাণ সহায়তা গাজায় পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মানবিক চুক্তির আওতায় যেমন — পানি, বিদ্যুৎ, নিষ্কাষণ ব্যবস্থা, হাসপাতাল, বেকারি পুনর্নির্মাণ এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণ সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছিল, তেমনই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
৮. চুক্তিকারী উভয় পক্ষের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে (যাদের সঙ্গে চুক্তিকারীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই) গাজায় সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মানবিক চুক্তির আওতায়-ই রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংও দুই দিকেই খোলা থাকবে।
৯. গাজা টেকনোক্রেট ও নির্দলীয় ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী প্রশাসন দিয়ে পরিচালিত হবে। তাঁরা দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। এই কমিটি যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হবে এবং এর তত্ত্বাবধান করবে নবগঠিত ‘বোর্ড অব পিস‘ নামের আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা। এর নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সদস্যদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন বিশ্বনেতা থাকবেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রস্তাবনা অনুযায়ী (যার মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এবং সৌদি-ফরাসি প্রস্তাব) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি গাজা পুনর্গঠনের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ ও অর্থায়নের দায়িত্বে থাকবে।
সংস্থাটি সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা আধুনিক ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলবে, যেটি গাজাবাসীর সেবা নিশ্চিত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সফল আধুনিক শহরের পরিকল্পনায় কাজ করা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গাজা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিনিয়োগ–প্রস্তাব ও উন্নয়ন–পরিকল্পনা বিবেচনা করা হবে; যাতে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও ভবিষ্যতের আশা তৈরি হয়।
১১. গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হবে।
১২. কাউকেই গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না। তবে যারা যেতে চান তাঁরা স্বাধীনভাবে যেতে পারবেন এবং ইচ্ছানুযায়ী ফিরেও আসতে পারবেন। মানুষকে গাজায় থেকেই অধিক উন্নত ও সমৃদ্ধ গাজা গড়ার সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা হবে।
১৩. চুক্তিতে থাকা হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসন ব্যবস্থায় সরাসরি, পরোক্ষ বা কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। টানেল, অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ সব ধরনের সামরিক, সন্ত্রাসী ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হবে এবং তা পুনর্নির্মাণ করা হবে না।
স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজায় একটি নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া চলবে। এর আওতায় সম্মত পদ্ধতিতে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়িত ‘বাই-ব্যাক ও পুনঃএকত্রীকরণ কর্মসূচি’র মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। ‘নিউ গাজা’ সম্পূর্ণভাবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।
১৪. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। ‘নিউ গাজা’ তার প্রতিবেশী ও নিজ জনগণের জন্য আর কোনো হুমকি সৃষ্টি না করবে সে ব্যাপারে আঞ্চলিক অংশীদাররা গ্যারান্টি দেবেন।
১৫. গাজায় অবিলম্বে মোতায়েনের জন্য অস্থায়ী একটি ইন্টারনেশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) তৈরি করতে আরব এবং অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আইএসএফ ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে। এই কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জর্ডান এবং মিসরের সঙ্গে তারা পরামর্শ করবে। এই বাহিনী দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেবে। আর আইএসএফ নতুন প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীসহ সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত করতে ইসরায়েল এবং মিসরের সঙ্গেও কাজ করবে। গাজায় অস্ত্র প্রবেশ রোধ এবং গাজা পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিতের জন্য পণ্যের দ্রুত এবং নিরাপদ প্রবাহকে সহজতর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিতে থাকা পক্ষগুলি সংঘাত নিরসনে একমত হতে হবে।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা তার সম্প্রসারণ করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে, তখন মান, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রত্যাহার করবে। এটি আইডিএফ, আইএসএফ, গ্যারান্টর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতে হবে। আর এর লক্ষ্য হলো নিরাপদ গাজা তৈরি করা যা ইসরায়েল, মিসর বা তার নাগরিকদের জন্য হুমকি নয়। ইসরায়েলি সেনারা ধাপে ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ আইএসএফের হাতে তুলে দেবে। পুরো সেনা সরানোর পরও শুধু নিরাপত্তা রক্ষায় সামান্য সৈন্য থাকবে; যতক্ষণ না গাজা পুরোপুরি নিরাপদ হয়।
১৭. যদি হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণে বিলম্ব বা প্রত্যাখ্যান করে, তবুও ইসরায়েল যে জায়গা ছাড়বে (যেগুলো ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ করা হয়েছে) সেই জায়গাগুলো আইএসএফের হাতে তুলে দেবে। আর ওই নিরাপদ এলাকায় সাহায্য ও পুনর্গঠনের কাজ চালু হবে।
১৮. ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতা এবং বয়ানে পরিবর্তন আনতে আন্তধর্মীয় সংলাপ চালু হবে। যাতে গাজাবাসী শান্তির সুফল বুঝতে পারেন। সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধকে ভিত্তি করে এ সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯. গাজার পুনর্নির্মাণ কাজ চললে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে এগোলে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে। এটাই ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ শুরু করবে; যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় তারা একমত হতে পারে।
প্রতিক্রিয়া: এই প্রস্তাবকে ঘিরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার হামাসকে এটি মেনে নিয়ে দুর্দশার অবসান ঘটাতে বলেন। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এটিকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলেন। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও কস্তা ‘এই সুযোগ’ কাজে লাগাতে আহ্বান জানান। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ‘ভোগান্তির অবসান’ চান। অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস একে ‘আশার প্রতীক’ বলেন। কাতার ও মিশরসহ আটটি আরব দেশ এ প্রস্তাব হামাসের কাছে পৌঁছে দেয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ‘সৎ প্রচেষ্টা’র প্রশংসা করেছে। চুক্তিতে সহায়তার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা জানান।
ইসরায়েলি অবস্থান
নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ করে। তবে তিনি সতর্ক করেন, হামাস প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল একাই পদক্ষেপ নেবে। লিকুদ দলের সদস্যরা একে ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ বলেছেন। তবে কেউ কেউ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন।
দোহায় হামাস কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করবেন। তবে তারা স্পষ্ট করেন, দখল শেষ না হওয়া ও রাষ্ট্র গঠনের নিশ্চয়তা না থাকলে নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়। তাদের ভাষায়, ‘অধিকার আদায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধের অস্ত্র হাতে থাকবে।’ গাজার অনেক বাসিন্দা এটিকে কেবল বন্দি ফেরত আনার ফাঁদ হিসেবে দেখছেন। প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ একে ‘আঞ্চলিক বিস্ফোরণের রেসিপি’ ও ‘অবিরত আগ্রাসন’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনার একতরফা মার্কিন-ইসরায়েলি কাঠামো ফিলিস্তিনিদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। হামাসের সঙ্গে সরাসরি কোনো পরামর্শ হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে একে ‘ইসরায়েলি কৌশলের ছদ্মবেশ’ বলেছেন। কেউ বাফার জোন ও ব্লেয়ারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন। আবার অনেকে অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে পরিবর্তনের সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।
হামাসের কাছে প্রস্তাব পৌঁছানোর পর থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিতে হবে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দোহায় আলোচনা চলছে।
হামাস গ্রহণ করলে বাস্তবায়ন সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতে পারে। প্রত্যাখ্যান করলে যুদ্ধ তীব্র হতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, প্রত্যাখ্যান হলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
সফল হলে এটি আঞ্চলিক বড় সমঝোতার পথ খুলতে পারে। ব্যর্থ হলে সংকট দীর্ঘায়িত হবে। বিশ্ব দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘হামাস যদি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে, তবে দায় একমাত্র তাদের।’
আগামী কয়েক দিনেই স্পষ্ট হবে— এটি শান্তির পথ খুলবে নাকি অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, মিডল ইস্ট আই
আফগানিস্তানে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রায় পুরো দেশজুড়ে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। সংযোগ নেমে আসে স্বাভাবিক অবস্থার ১ শতাংশেরও নিচে। মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট টিভি ও ল্যান্ডলাইন যোগাযোগও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
১ ঘণ্টা আগেমরক্কোতে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত শনিবার থেকে অন্তত ১১টি শহরে হাজারো তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে এসেছে। রাজধানী রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা, মারাকেশ ও আগাদিরে বড় সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই জেনারেশন জেড বা জেন জির সদস্য।
৩ ঘণ্টা আগেচলতি মাসের শুরুতে কাতারের দোহায় চালানো হামালায় দেশটির এক নাগরিক নিহতের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যদিও দোহায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছিল ইসরায়েল।
৮ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য ২০ দফা পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে