স্ট্রিম ডেস্ক
মরক্কোতে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত শনিবার থেকে অন্তত ১১টি শহরে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে এসেছে। রাজধানী রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা, মারাকেশ ও আগাদিরে বড় সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই জেনারেশন জেড বা জেন জির সদস্য। এই প্রজন্মই মরক্কোর সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী।
তাদের দাবি, সরকারের অগ্রাধিকার ভুল এবং জনসেবার মান খারাপ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকশ জন গ্রেপ্তার হয়। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। পরে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তারা কাঠামোগত সংস্কার দাবি করছে।
প্রধান কারণ: স্বাস্থ্যখাতে সংকট ও অগ্রাধিকারের ভুল বণ্টন
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আগাদিরের একটি সরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে আটজন গর্ভবতী নারী মারা যান। সেই ঘটনাই এই আন্দোলনের সূচনা ঘটায়।
ওই ঘটনা মরক্কোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ দুরবস্থা প্রকাশ করে। বিক্ষোভকারীদের মতে, স্বাস্থ্য খাত বহুদিন ধরে উপেক্ষিত ও অর্থের ঘাটতিতে ভুগছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের তথ্যমতে, মরক্কোয় প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক ও নার্স মিলে গড়ে মাত্র ৭ দশমিক ৭ জন করে আছেন। আগাদির অঞ্চলে এ সংখ্যা নেমে আসে ৪ দশমিক ৪-এ। কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজন ২৫ জন করে।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের ক্রীড়া অবকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগকে দায়ী করছেন। তাদের স্লোগান ছিল— ‘স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু হাসপাতাল কোথায়?’
ক্রীড়া বিনিয়োগ ও ক্ষোভ
মরক্কো ২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া ২০২৫ সালের আফ্রিকা কাপ অব নেশনসও আয়োজন করবে।
এর জন্য অন্তত তিনটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ হচ্ছে। আরও কয়েকটি সংস্কার বা সম্প্রসারণ চলছে। ব্যয় ধরা হয়েছে কয়েকশ কোটি ডলার।
বিক্ষোভকারীদের মতে, এটি সরকারের ভুল অগ্রাধিকারের প্রতীক। ঝলমলে আন্তর্জাতিক আসরের জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক খাত অবহেলিত।
কাসাব্লাঙ্কার এক ২৭ বছর বয়সী প্রকৌশলী সাংবাদিকদের বলেন— ‘আমি শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সংস্কার চাই না, পুরো ব্যবস্থার সংস্কার চাই। ভালো বেতন, ভালো চাকরি, কম দামে পণ্য, আর একটি উন্নত জীবন চাই।’
বৃহত্তর অসন্তোষ: দুর্নীতি, বেকারত্ব ও বৈষম্য
বিক্ষোভ কেবল স্বাস্থ্যখাতের কারণে নয়। আরও বহু পুরনো সমস্যার সঙ্গে এই ক্ষোভ জড়িত।
দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা: বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকারে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আছে। এতে বৈষম্য বেড়েছে এবং জনগণের প্রয়োজনীয় খাত থেকে সম্পদ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান: তরুণ বেকারত্বের হার প্রায় ৩৬ দশমিক ৭শতাংশ। এতে জেনারেশন জেড প্রজন্ম ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ। তারা ভালো স্কুল, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অর্থবহ চাকরির দাবি করছে।
আঞ্চলিক বৈষম্য ও ভূমিকম্প পুনর্গঠন: ২০২৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অনেক গ্রামীণ এলাকা এখনো পুনর্গঠিত হয়নি। বহু মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছে। এতে সমান অবকাঠামো বিনিয়োগের দাবি জোরদার হয়েছে।
সামাজিক ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা: ‘স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’— এমন স্লোগান উঠে আসছে। এর মাধ্যমে জীবনের ব্যয় কমানো ও জনসেবার মানোন্নয়নের মতো মৌলিক সংস্কারের দাবি স্পষ্ট হয়েছে।
এ ধরনের দাবি মরক্কোয় নতুন নয়। আগের আন্দোলনগুলোতেও একই বিষয় ছিল। তবে এবার তরুণদের নেতৃত্বে এবং ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলনের চরিত্র বদলেছে। আন্দোলনের বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামো সরকারকে কার্যকরভাবে আলোচনায় বসা বা দমন করা কঠিন করে তুলেছে।
আন্দোলনের ধরন: নেতা ছাড়া ও ডিজিটাল সমন্বয়
এই আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বা ইউনিয়নের নেতৃত্বে হয়নি। এটি মূলত নেতৃত্বহীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম— টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও ডিসকর্ড— এর মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে।
‘জিন জি ২১২’ (মরক্কোর কান্ট্রি কোড ২১২) এবং ‘মরোক্কা ইয়ুথ ভয়েস’ নামের কয়েকটি গ্রুপ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গড়ে উঠেছে। তারা শান্তিপূর্ণ ও সভ্য বিক্ষোভের আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকে আরও তীব্র দাবি তুলছে।
আন্দোলন নেপালের সাম্প্রতিক তরুণ নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। এতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জেনারেশন জেড প্রজন্মের প্রভাবও ফুটে উঠছে।
এক্স-এর একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘হাজারো জেনারেশন জেড মৌলিক অধিকার— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার জন্য রাস্তায় নেমেছে।’ তার মতে, দমন-পীড়ন কেবল আরও ক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ভিড়ের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে এবং সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের মাঝেই বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করছে। এতে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আরও বেড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: দমন ও আত্মপক্ষসমর্থন
সরকার বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। সাদা পোশাকে পুলিশ ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মরোক্কান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস এই দমননীতির নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে ‘পদ্ধতিগত সহিংসতা’ ও ‘মুক্ত কণ্ঠর দমন’ বলে উল্লেখ করেছে। শুধু রাবাতেই ১০০ জনের বেশি গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিছু আটক ব্যক্তিকে রাতে মুক্তি দেওয়া হলেও তৃতীয় দিন (সোমবার) পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা বজায় ছিল। এর ফলে নতুন সমাবেশ ব্যাহত হয়েছে।
সরকার অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থা ‘অতীত থেকে পাওয়া সমস্যা।’ প্রধানমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী আজিজ আখান্নুশ, যিনি আগাদিরের মেয়রও, সরকারের সাফল্যের দিক তুলে ধরেন। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বাড়তি ব্যয় ও বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমিন তাহরাউই আগাদির হাসপাতালের পরিচালক ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন। এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, পুলিশের পদক্ষেপ আইনসিদ্ধ ছিল এবং অননুমোদিত বিক্ষোভ ঠেকাতেই তা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রতি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, দমনের বদলে সরকারের উচিত আলোচনায় বসা।
এরপর কী
মরক্কোয় তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে জেনারেশন জেড সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও বৈষম্যের প্রভাব তাদের ওপর বেশি পড়ছে।
মরোক্কান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যানালাইসিস এর বিশ্লেষক মোহাম্মদ মাসবাহ বলেন, আন্দোলন ‘বিকেন্দ্রীভূত, নেতা-বিহীন ও পরিবর্তনশীল।’ এতে আন্দোলন টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি, তবে সমাধান খোঁজা কঠিন।
অনেকে একে ২০১১ সালের আরব বসন্তের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এটি মূলত সংস্কারের দাবি, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়।
জেন জি ২১২ ফেসবুকে লিখেছে, ‘অধিকার পাওয়ার একমাত্র পথ প্রতিবাদ।’ তারা নতুন সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে। এতে ২০১১ সালের মতো সরকারের ওপর ছাড় দেওয়ার চাপ তৈরি হতে পারে।
তবে চলমান দমননীতি উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। এক বিক্ষোভকারীর ভাষায়, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা চাওয়া মানে আসলে জীবন চাওয়া।’
আগামী দিনগুলোই ঠিক করবে— আলোচনায় সমাধান হবে নাকি দমন-পীড়ন আরও বাড়বে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য নিউ আরব, সিএনএন
মরক্কোতে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত শনিবার থেকে অন্তত ১১টি শহরে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে এসেছে। রাজধানী রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা, মারাকেশ ও আগাদিরে বড় সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই জেনারেশন জেড বা জেন জির সদস্য। এই প্রজন্মই মরক্কোর সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী।
তাদের দাবি, সরকারের অগ্রাধিকার ভুল এবং জনসেবার মান খারাপ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকশ জন গ্রেপ্তার হয়। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। পরে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তারা কাঠামোগত সংস্কার দাবি করছে।
প্রধান কারণ: স্বাস্থ্যখাতে সংকট ও অগ্রাধিকারের ভুল বণ্টন
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আগাদিরের একটি সরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে আটজন গর্ভবতী নারী মারা যান। সেই ঘটনাই এই আন্দোলনের সূচনা ঘটায়।
ওই ঘটনা মরক্কোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ দুরবস্থা প্রকাশ করে। বিক্ষোভকারীদের মতে, স্বাস্থ্য খাত বহুদিন ধরে উপেক্ষিত ও অর্থের ঘাটতিতে ভুগছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের তথ্যমতে, মরক্কোয় প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক ও নার্স মিলে গড়ে মাত্র ৭ দশমিক ৭ জন করে আছেন। আগাদির অঞ্চলে এ সংখ্যা নেমে আসে ৪ দশমিক ৪-এ। কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজন ২৫ জন করে।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের ক্রীড়া অবকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগকে দায়ী করছেন। তাদের স্লোগান ছিল— ‘স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু হাসপাতাল কোথায়?’
ক্রীড়া বিনিয়োগ ও ক্ষোভ
মরক্কো ২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া ২০২৫ সালের আফ্রিকা কাপ অব নেশনসও আয়োজন করবে।
এর জন্য অন্তত তিনটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ হচ্ছে। আরও কয়েকটি সংস্কার বা সম্প্রসারণ চলছে। ব্যয় ধরা হয়েছে কয়েকশ কোটি ডলার।
বিক্ষোভকারীদের মতে, এটি সরকারের ভুল অগ্রাধিকারের প্রতীক। ঝলমলে আন্তর্জাতিক আসরের জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক খাত অবহেলিত।
কাসাব্লাঙ্কার এক ২৭ বছর বয়সী প্রকৌশলী সাংবাদিকদের বলেন— ‘আমি শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সংস্কার চাই না, পুরো ব্যবস্থার সংস্কার চাই। ভালো বেতন, ভালো চাকরি, কম দামে পণ্য, আর একটি উন্নত জীবন চাই।’
বৃহত্তর অসন্তোষ: দুর্নীতি, বেকারত্ব ও বৈষম্য
বিক্ষোভ কেবল স্বাস্থ্যখাতের কারণে নয়। আরও বহু পুরনো সমস্যার সঙ্গে এই ক্ষোভ জড়িত।
দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা: বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকারে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আছে। এতে বৈষম্য বেড়েছে এবং জনগণের প্রয়োজনীয় খাত থেকে সম্পদ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান: তরুণ বেকারত্বের হার প্রায় ৩৬ দশমিক ৭শতাংশ। এতে জেনারেশন জেড প্রজন্ম ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ। তারা ভালো স্কুল, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অর্থবহ চাকরির দাবি করছে।
আঞ্চলিক বৈষম্য ও ভূমিকম্প পুনর্গঠন: ২০২৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অনেক গ্রামীণ এলাকা এখনো পুনর্গঠিত হয়নি। বহু মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছে। এতে সমান অবকাঠামো বিনিয়োগের দাবি জোরদার হয়েছে।
সামাজিক ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা: ‘স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’— এমন স্লোগান উঠে আসছে। এর মাধ্যমে জীবনের ব্যয় কমানো ও জনসেবার মানোন্নয়নের মতো মৌলিক সংস্কারের দাবি স্পষ্ট হয়েছে।
এ ধরনের দাবি মরক্কোয় নতুন নয়। আগের আন্দোলনগুলোতেও একই বিষয় ছিল। তবে এবার তরুণদের নেতৃত্বে এবং ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলনের চরিত্র বদলেছে। আন্দোলনের বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামো সরকারকে কার্যকরভাবে আলোচনায় বসা বা দমন করা কঠিন করে তুলেছে।
আন্দোলনের ধরন: নেতা ছাড়া ও ডিজিটাল সমন্বয়
এই আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বা ইউনিয়নের নেতৃত্বে হয়নি। এটি মূলত নেতৃত্বহীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম— টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও ডিসকর্ড— এর মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে।
‘জিন জি ২১২’ (মরক্কোর কান্ট্রি কোড ২১২) এবং ‘মরোক্কা ইয়ুথ ভয়েস’ নামের কয়েকটি গ্রুপ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গড়ে উঠেছে। তারা শান্তিপূর্ণ ও সভ্য বিক্ষোভের আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকে আরও তীব্র দাবি তুলছে।
আন্দোলন নেপালের সাম্প্রতিক তরুণ নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। এতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জেনারেশন জেড প্রজন্মের প্রভাবও ফুটে উঠছে।
এক্স-এর একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘হাজারো জেনারেশন জেড মৌলিক অধিকার— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার জন্য রাস্তায় নেমেছে।’ তার মতে, দমন-পীড়ন কেবল আরও ক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ভিড়ের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে এবং সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের মাঝেই বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করছে। এতে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আরও বেড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: দমন ও আত্মপক্ষসমর্থন
সরকার বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। সাদা পোশাকে পুলিশ ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মরোক্কান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস এই দমননীতির নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে ‘পদ্ধতিগত সহিংসতা’ ও ‘মুক্ত কণ্ঠর দমন’ বলে উল্লেখ করেছে। শুধু রাবাতেই ১০০ জনের বেশি গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিছু আটক ব্যক্তিকে রাতে মুক্তি দেওয়া হলেও তৃতীয় দিন (সোমবার) পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা বজায় ছিল। এর ফলে নতুন সমাবেশ ব্যাহত হয়েছে।
সরকার অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থা ‘অতীত থেকে পাওয়া সমস্যা।’ প্রধানমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী আজিজ আখান্নুশ, যিনি আগাদিরের মেয়রও, সরকারের সাফল্যের দিক তুলে ধরেন। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বাড়তি ব্যয় ও বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমিন তাহরাউই আগাদির হাসপাতালের পরিচালক ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন। এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, পুলিশের পদক্ষেপ আইনসিদ্ধ ছিল এবং অননুমোদিত বিক্ষোভ ঠেকাতেই তা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রতি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, দমনের বদলে সরকারের উচিত আলোচনায় বসা।
এরপর কী
মরক্কোয় তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে জেনারেশন জেড সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও বৈষম্যের প্রভাব তাদের ওপর বেশি পড়ছে।
মরোক্কান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যানালাইসিস এর বিশ্লেষক মোহাম্মদ মাসবাহ বলেন, আন্দোলন ‘বিকেন্দ্রীভূত, নেতা-বিহীন ও পরিবর্তনশীল।’ এতে আন্দোলন টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি, তবে সমাধান খোঁজা কঠিন।
অনেকে একে ২০১১ সালের আরব বসন্তের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এটি মূলত সংস্কারের দাবি, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়।
জেন জি ২১২ ফেসবুকে লিখেছে, ‘অধিকার পাওয়ার একমাত্র পথ প্রতিবাদ।’ তারা নতুন সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে। এতে ২০১১ সালের মতো সরকারের ওপর ছাড় দেওয়ার চাপ তৈরি হতে পারে।
তবে চলমান দমননীতি উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। এক বিক্ষোভকারীর ভাষায়, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা চাওয়া মানে আসলে জীবন চাওয়া।’
আগামী দিনগুলোই ঠিক করবে— আলোচনায় সমাধান হবে নাকি দমন-পীড়ন আরও বাড়বে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য নিউ আরব, সিএনএন
আফগানিস্তানে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রায় পুরো দেশজুড়ে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। সংযোগ নেমে আসে স্বাভাবিক অবস্থার ১ শতাংশেরও নিচে। মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট টিভি ও ল্যান্ডলাইন যোগাযোগও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
১ ঘণ্টা আগে২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য ২০ দফার প্রস্তাব ঘোষণা করেন। প্রস্তাবটি হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করা হয়।
৫ ঘণ্টা আগেচলতি মাসের শুরুতে কাতারের দোহায় চালানো হামালায় দেশটির এক নাগরিক নিহতের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যদিও দোহায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছিল ইসরায়েল।
৮ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য ২০ দফা পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে