.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা সিবিএসের সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই দাবি করেন।
এই অতিরঞ্জিত মন্তব্যটি আসে তাঁর সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশের পক্ষে যুক্তি দেওয়ার সময়। ওই আদেশে ১৯৯২ সালের পর প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ট্রাম্প মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে ‘অবিলম্বে’ মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৩ বছর পর আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাবে।
ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো গোপনে এমন পরীক্ষা চালাচ্ছে। তাই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক উত্তেজনা আরও বাড়াবে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য আসে বিশ্ব শক্তিগুলোর পারমাণবিক প্রতিযোগিতা ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে। যদিও ট্রাম্পের দেওয়া সংখ্যা আনুমানিকভাবে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে মিলে (যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় ওয়ারহেড রয়েছে), ‘১৫০ বার ধ্বংস’ মন্তব্যটি মূলত অতিরঞ্জন—যা তাঁর প্রশাসনের আগ্রাসী পারমাণবিক আধুনিকায়ন নীতির প্রতিফলন।
সিবিএসের সংবাদদাতা নোরা ও’ডোনেলের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটি ছিল ট্রাম্পের ২০২০ সালের বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের পর প্রথম মুখোমুখি আলাপ। আলোচনায় উঠে আসে নানা বিষয়—যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, অভিবাসন সংকট ও দেশে চলমান সরকারি অচলাবস্থা।
পারমাণবিক অংশটি শুরু হয় ও’ডোনেলের এক প্রশ্নে, যেখানে তিনি ট্রাম্পের ৩০ অক্টোবরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টের প্রসঙ্গ তোলেন। সেই পোস্টে ট্রাম্প পারমাণবিক পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দেন।
এই আদেশ জারি হয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের ঠিক আগে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ১৯৯২ সালের নেভাদা টেস্ট সাইটে শেষ বিস্ফোরণের পর থেকে চলমান স্বেচ্ছা পরীক্ষা-নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দেয়।
এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা (সাবমেরিন, বোমারু বিমান, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র) শক্তিশালী করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সামরিক ব্যবধান কমানো।
প্রথম মেয়াদে (২০১৭–২০২১) ট্রাম্প পারমাণবিক আধুনিকায়নে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে সে সময় লাইভ বা সরাসরি বিস্ফোরণ পরীক্ষা করা হয়নি।
এই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের সময় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়া সম্প্রতি পারমাণবিক শক্তিচালিত ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে এবং চীনের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো নির্মাণের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অনিচ্ছুক প্রতিযোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
মূল বক্তব্য
নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের কাছে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। রাশিয়া দ্বিতীয়, আর চীন অনেক দূরে। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা সমান হয়ে যাবে। তারা দ্রুত অস্ত্র তৈরি করছে, তাই নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে কিছু করা দরকার। আমি এই বিষয়টি পুতিন ও শি—দুজনের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। আমাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা দিয়ে পৃথিবী ১৫০ বার ধ্বংস করা যায়।’
এরপর তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন যুক্তরাষ্ট্রকে আবার পরীক্ষা চালাতে হবে, ‘আপনাকে জানতে হবে এগুলো কীভাবে কাজ করে। রাশিয়া ও চীন তাদের অস্ত্র পরীক্ষা করছে, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করে না। আমরা একমাত্র দেশ যারা পরীক্ষা করি না, এবং আমি সেটা চাই না।’
তিনি রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানকে গোপন ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘অস্ত্র তৈরি করে যদি পরীক্ষা না করেন, তবে জানবেন কীভাবে সেগুলো কাজ করে?’
ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর প্রথম মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডার ‘পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার’ করা হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, ‘আমি এটা করতে চাইনি, কারণ এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এমন যে তা নিয়ে কথা বলতেও ভয় লাগে।’
এই অবস্থান পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। বাইডেন সরকার নিউ স্টার্ট চুক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের মেয়াদে সেটি কার্যত শেষ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এক নতুন পারমাণবিক নীতির যুগে প্রবেশ করে—যেখানে নিয়ন্ত্রণের বদলে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রতিযোগিতাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সক্ষমতা
ট্রাম্পের দাবি মোটামুটি সঠিক হলেও এতে বাড়াবাড়ি রয়েছে। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (এফএএস)-এর ২০২৫ সালের অনুমান অনুযায়ী— যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০, রাশিয়র কাছে প্রায় ৪ হাজার আর চীনের প্রায় ৮০০ পারমাণবিক বোমা আছে।
সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশসহ বর্তমানে বিশ্বের মোট প্রায় ১২ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এসব দিয়ে সভ্যতা বহুবার ধ্বংস করা সম্ভব। প্রিন্সটনের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১০০টি হিরোশিমা-সম শক্তির বোমা ব্যবহারেই পারমাণবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে, যা কোটি কোটি প্রাণহানি ঘটাবে।
ট্রাম্পের ‘১৫০ বার ধ্বংস’ মন্তব্যটি সম্ভবত এসব অস্ত্রের মোট ধ্বংসক্ষমতা হিসাব করে বলা একটি অতিরঞ্জন। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারের মোট শক্তি প্রায় ১ হাজার মেগাটন, যেখানে বৈশ্বিক ধ্বংসের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০০ মেগাটন। সে হিসেবে ১০ বার ধ্বংস করার কথা বলা যেতে পারে।
১৯৯০ সালের পর রাশিয়া এবং ১৯৯৬ সালের পর চীনের পারমাণবিক বিস্ফোরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা সাধারণত অ-বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষা ও সিমুলেশন করে। ট্রাম্পের দাবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হলেও এর কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ নেই।
এদিন ট্রাম্প স্বীকার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রও বেইজিংয়ের কাছে এক ধরনের ‘হুমকি’ এবং চীন সব সময় আমাদের দিকে নজর রাখছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরাও তাদের কাছে হুমকি। অনেক কিছু তারা করে, আমরাও তাদের সঙ্গে তা-ই করি। এটা খুব প্রতিযোগিতামূলক এক বিশ্ব—বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আমরা তাদের দেখি, তারাও আমাদের দেখে। তবুও আমি মনে করি, আমরা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা আরও বড়, ভালো ও শক্তিশালী হতে পারি, একে অপরকে ধ্বংস করার চেয়ে।’
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চীনের বিপক্ষে খুব ভালো অবস্থায় আছি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, বিরল খনিজ পদার্থের কারণে চীনের হাতে এক ধরনের ‘ক্ষমতা’ আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো করছিলাম, হঠাৎ তারা বলল, আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তারা তাদের একমাত্র শক্তি ব্যবহার করল—বিরল খনিজ পদার্থের ক্ষমতা। তারা গত ২৫–৩০ বছর ধরে এই সম্পদ জমা ও সংরক্ষণ করছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ বিশ্বকে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাদের মতে, এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কয়েক দশকের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা সিবিএসের সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই দাবি করেন।
এই অতিরঞ্জিত মন্তব্যটি আসে তাঁর সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশের পক্ষে যুক্তি দেওয়ার সময়। ওই আদেশে ১৯৯২ সালের পর প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ট্রাম্প মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে ‘অবিলম্বে’ মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেন। ট্রাম্পের নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৩ বছর পর আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাবে।
ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো গোপনে এমন পরীক্ষা চালাচ্ছে। তাই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক উত্তেজনা আরও বাড়াবে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য আসে বিশ্ব শক্তিগুলোর পারমাণবিক প্রতিযোগিতা ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে। যদিও ট্রাম্পের দেওয়া সংখ্যা আনুমানিকভাবে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে মিলে (যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় ওয়ারহেড রয়েছে), ‘১৫০ বার ধ্বংস’ মন্তব্যটি মূলত অতিরঞ্জন—যা তাঁর প্রশাসনের আগ্রাসী পারমাণবিক আধুনিকায়ন নীতির প্রতিফলন।
সিবিএসের সংবাদদাতা নোরা ও’ডোনেলের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটি ছিল ট্রাম্পের ২০২০ সালের বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের পর প্রথম মুখোমুখি আলাপ। আলোচনায় উঠে আসে নানা বিষয়—যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, অভিবাসন সংকট ও দেশে চলমান সরকারি অচলাবস্থা।
পারমাণবিক অংশটি শুরু হয় ও’ডোনেলের এক প্রশ্নে, যেখানে তিনি ট্রাম্পের ৩০ অক্টোবরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টের প্রসঙ্গ তোলেন। সেই পোস্টে ট্রাম্প পারমাণবিক পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দেন।
এই আদেশ জারি হয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের ঠিক আগে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ১৯৯২ সালের নেভাদা টেস্ট সাইটে শেষ বিস্ফোরণের পর থেকে চলমান স্বেচ্ছা পরীক্ষা-নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দেয়।
এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা (সাবমেরিন, বোমারু বিমান, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র) শক্তিশালী করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সামরিক ব্যবধান কমানো।
প্রথম মেয়াদে (২০১৭–২০২১) ট্রাম্প পারমাণবিক আধুনিকায়নে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে সে সময় লাইভ বা সরাসরি বিস্ফোরণ পরীক্ষা করা হয়নি।
এই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের সময় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। রাশিয়া সম্প্রতি পারমাণবিক শক্তিচালিত ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে এবং চীনের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো নির্মাণের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অনিচ্ছুক প্রতিযোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
মূল বক্তব্য
নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের কাছে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। রাশিয়া দ্বিতীয়, আর চীন অনেক দূরে। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা সমান হয়ে যাবে। তারা দ্রুত অস্ত্র তৈরি করছে, তাই নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে কিছু করা দরকার। আমি এই বিষয়টি পুতিন ও শি—দুজনের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। আমাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা দিয়ে পৃথিবী ১৫০ বার ধ্বংস করা যায়।’
এরপর তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন যুক্তরাষ্ট্রকে আবার পরীক্ষা চালাতে হবে, ‘আপনাকে জানতে হবে এগুলো কীভাবে কাজ করে। রাশিয়া ও চীন তাদের অস্ত্র পরীক্ষা করছে, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করে না। আমরা একমাত্র দেশ যারা পরীক্ষা করি না, এবং আমি সেটা চাই না।’
তিনি রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানকে গোপন ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘অস্ত্র তৈরি করে যদি পরীক্ষা না করেন, তবে জানবেন কীভাবে সেগুলো কাজ করে?’
ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর প্রথম মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডার ‘পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার’ করা হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, ‘আমি এটা করতে চাইনি, কারণ এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এমন যে তা নিয়ে কথা বলতেও ভয় লাগে।’
এই অবস্থান পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। বাইডেন সরকার নিউ স্টার্ট চুক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের মেয়াদে সেটি কার্যত শেষ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এক নতুন পারমাণবিক নীতির যুগে প্রবেশ করে—যেখানে নিয়ন্ত্রণের বদলে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রতিযোগিতাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সক্ষমতা
ট্রাম্পের দাবি মোটামুটি সঠিক হলেও এতে বাড়াবাড়ি রয়েছে। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (এফএএস)-এর ২০২৫ সালের অনুমান অনুযায়ী— যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০, রাশিয়র কাছে প্রায় ৪ হাজার আর চীনের প্রায় ৮০০ পারমাণবিক বোমা আছে।
সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশসহ বর্তমানে বিশ্বের মোট প্রায় ১২ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এসব দিয়ে সভ্যতা বহুবার ধ্বংস করা সম্ভব। প্রিন্সটনের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১০০টি হিরোশিমা-সম শক্তির বোমা ব্যবহারেই পারমাণবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে, যা কোটি কোটি প্রাণহানি ঘটাবে।
ট্রাম্পের ‘১৫০ বার ধ্বংস’ মন্তব্যটি সম্ভবত এসব অস্ত্রের মোট ধ্বংসক্ষমতা হিসাব করে বলা একটি অতিরঞ্জন। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারের মোট শক্তি প্রায় ১ হাজার মেগাটন, যেখানে বৈশ্বিক ধ্বংসের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০০ মেগাটন। সে হিসেবে ১০ বার ধ্বংস করার কথা বলা যেতে পারে।
১৯৯০ সালের পর রাশিয়া এবং ১৯৯৬ সালের পর চীনের পারমাণবিক বিস্ফোরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা সাধারণত অ-বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষা ও সিমুলেশন করে। ট্রাম্পের দাবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হলেও এর কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ নেই।
এদিন ট্রাম্প স্বীকার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রও বেইজিংয়ের কাছে এক ধরনের ‘হুমকি’ এবং চীন সব সময় আমাদের দিকে নজর রাখছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরাও তাদের কাছে হুমকি। অনেক কিছু তারা করে, আমরাও তাদের সঙ্গে তা-ই করি। এটা খুব প্রতিযোগিতামূলক এক বিশ্ব—বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আমরা তাদের দেখি, তারাও আমাদের দেখে। তবুও আমি মনে করি, আমরা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা আরও বড়, ভালো ও শক্তিশালী হতে পারি, একে অপরকে ধ্বংস করার চেয়ে।’
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চীনের বিপক্ষে খুব ভালো অবস্থায় আছি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, বিরল খনিজ পদার্থের কারণে চীনের হাতে এক ধরনের ‘ক্ষমতা’ আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো করছিলাম, হঠাৎ তারা বলল, আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তারা তাদের একমাত্র শক্তি ব্যবহার করল—বিরল খনিজ পদার্থের ক্ষমতা। তারা গত ২৫–৩০ বছর ধরে এই সম্পদ জমা ও সংরক্ষণ করছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ বিশ্বকে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাদের মতে, এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কয়েক দশকের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
.png)

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আইন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়িফাত টোমার-ইয়েরুশালমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ফাঁস হওয়া ভিডিওকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীর হওয়ায় এই ঘটনা নতুন মোড় নেয়। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করছে।
১৩ মিনিট আগে
চীন গোপনে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে বেইজিং বলেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত অনানুষ্ঠানিক পরমাণু পরীক্ষা স্থগিত রাখার চুক্তি লঙ্ঘন করেনি।
২৫ মিনিট আগে
উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ৭ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রায় এক মাস আগে ‘জেন জি উপদেষ্টা’ নিয়োগের ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা আমিররেজা আহমাদির সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবিও প্রকাশ করেন তিনি, যা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১ দিন আগে