leadT1ad

‘গাজা প্লান’ প্রস্তাব নয়, হামাসের প্রতি ট্রাম্পের ‘আলটিমেটাম’

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৮
গাজা পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা আদতে কোনো প্রস্তাব নয়, এটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতি তাঁর ‘আলটিমেটাম’। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ২০ দফা গাজা পরিকল্পনা প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প সেখানে এটি নিয়ে কথা বলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যেই এটি যে কোনো প্রস্তাব নয়, আলটিমেটাম—তার ইঙ্গিত মেলে। ট্রাম্প বলেন, গাজা যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে সাড়া দিতে হামাসের হাতে তিন থেকে চার দিন সময় আছে। ইসরায়েল এবং আরব নেতারা ইতিমধ্যে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘হামাস এই পরিকল্পনা হয় গ্রহণ করবে, নয়তো করবে না। যদি গ্রহণ না করে, তবে তাদের দুঃখজনক পরিণতি হতে যাচ্ছে।’ খবর আল জাজিরার।

সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিল, এই প্রস্তাব নিয়ে হামাসের দর কষাকষির কোনো সুযোগ আছে কিনা—উত্তরে তিনি জানান, খুব বেশি সুযোগ নেই। এ সময় তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘এই পরিকল্পনায় রাজি হওয়ায়’ ধন্যবাদ জানান।

‘প্রস্তাব নয়, আলটিমেটাম’

এদিকে, ওয়াশিংট ডিসি থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা মাইক হান্নাও জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মঙ্গলবারের মন্তব্য প্রমাণ করে যে হামাসের জন্য তাঁর গাজা পরিকল্পনা কোনো প্রস্তাব নয়, বরং এটি একটি আলটিমেটাম।

হান্নান উল্লেখ করেন, হামাস যদি এই প্রস্তাবে সম্মত না হয়, তবে কী ঘটবে তার আভাস আমরা শুনেছি।

তিনি বলেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বিশেষভাবে বলেছেন হামাস যদি প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে তাঁকে (নেতানিয়াহু) যা করার দরকার তাই করতে হবে। এটি আসলে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান আরও জোরদারের ‘সবুজ সংকেত’।

অন্যদিকে, কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুলতান বারাকাতও ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে সমস্যাজনক মনে করছেন।

তিনি বলেন, পরিকল্পনার শুরুতেই হামাসকে তার সামর্থ্যের সবটুকু এমন একটি দলের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যাদের তাঁরা বিশ্বাস করে না এবং বিশ্বের কেউ বিশ্বাস করে না।

এছাড়া, নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনাটি ট্রাম্প যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতেও ইঙ্গিত মেলে যে এটি ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে আছে।

প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের মধ্যই গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাসের আলোচক দলের সদস্যরা ট্রাম্পের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছেন। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মত বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানি আল জাজিরাকে বলেছেন, পরিকল্পনার কয়েকটি দফার স্পষ্টীকরণ এবং আলোচনার দরকার আছে। তবে তিনি আশা করেছেন, উভয় পক্ষই এই ‘পরিকল্পনাকে গঠনমূলকভাবে দেখবে এবং যুদ্ধ শেষ করার সুযোগটি কাজে লাগাবে।’

কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামাসের সঙ্গে গতকাল আমাদের বৈঠক চলাকালে আমরা তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছি যে আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ বন্ধ করা। হামাস দায়িত্বশীল আচরণ করেছে এবং পরিকল্পনাটি পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী রাজনৈতিক দল ফাতাহ বলেছে, তারা যুদ্ধের অবসান এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়।

ট্রাম্পের প্রস্তাবকে জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত

অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে একটি চুক্তি করতে এবং তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, এই সংঘাতে সৃষ্ট ভয়াবহ দুর্ভোগ লাঘব করাই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে মহাসচিব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গাজা যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধে ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। পরিকল্পনায় হামাসের কাছে জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়েছে।

এই পরিকল্পনার শর্ত অনুযায়ী হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং গাজা দেখভালে অস্থায়ী ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (ইএসএফ) গঠনে আরব ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

পরিকল্পনায় আরও বলা হয়, গাজা শাসনে হামাসের কোনো হস্তক্ষেপ বা ভূমিকা থাকবে না। হামাসের সদস্যরা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’ রাজি থাকলে তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। আর কোনো সদস্য গাজা ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতে চাইলে তাকে নিরাপদে যেতে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দুই বছরব্যাপী চলা গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধের কারণে গাজা মানবিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে মঙ্গলবারও গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এতে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা উপত্যকার দক্ষিণ ও প্রাণকেন্দ্রের অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি আছেন যারা হন্য হয়ে ত্রাণের সন্ধানে ছুটছিলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত