leadT1ad

বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করেছে শহীদুল আলম ও গ্রেটা থুনবার্গদের ফ্লোটিলা

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২৬
পূর্বে এরকম অভিযানে ড্রোন হামলা ও নৌ-আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ এখন গাজার উপকূল থেকে মাত্র ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে। বহরটিতে ৫০টির বেশি জাহাজ রয়েছে। এর যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শিল্পী শহীদুল আলম ও সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গসহ প্রায় ৪৫টি দেশের ৫০০-র বেশি কর্মী অংশ নিয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী বহরটি আটকানোর হুমকি দিয়েছে। পূর্বে এরকম অভিযানে ড্রোন হামলা ও নৌ-আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

‘সুমুদ’ শব্দটি আরবী, যার অর্থ ‘অটলতা’ বা প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনের গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা এর আয়োজন করেন। এর অংশ হিসেবেই একটি মিডিয়া ফ্লোটিলারও আয়োজন করা হয়, যেখানে শহীদুল আলমও যোগ দেন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তিউনিসিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। এর আগে বহরটি স্পেনের বার্সেলোনা থেকে ছেড়ে আসে। পরে ৭ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়ার সিদি বু সাঈদ বন্দরে থামে। সেখান থেকে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবার-সন্তানরাও এতে যুক্ত হন। বহরটির লক্ষ্য হলো গাজায় খাদ্যসঙ্কটে ভোগা মানুষের জন্য জরুরি সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে সেখানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে রয়েছেন।

আর মিডিয়া ফ্লোটিলার লক্ষ্য মূলত তথ্যের অবরোধ ভাঙা। ইসরায়েল অধিকাংশ বিদেশি সাংবাদিককে গাজায় প্রবেশে বাধা দেয়। ২০০৭ সাল থেকেই ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় আন্তর্জাতিক পর্যযবেক্ষকদের প্রবেশ কার্যত সীমিত।

অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি উপকূলে পৌঁছে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এর মধ্যে রয়েছে মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও অবরুদ্ধ মানুষের দৈনন্দিন জীবন। এই মিশনগুলো সমন্বয় করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এএফসি), যা বিভিন্ন নাগরিক সমাজের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় গ্রেটা থুনবার্গ ও মানবাধিকার কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় গ্রেটা থুনবার্গ ও মানবাধিকার কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত।

বহরটি যাত্রাপথ নানা বাধা ও হামলার শিকার হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর সিদি বু সাঈদে নোঙর করা অবস্থায় ‘ফ্যামিলি’ ও ‘আলমা’ নামের দুটি জাহাজে সন্দেহভাজন ড্রোন হামলা হয়। একটি জাহাজে আঘাতের ভিডিও প্রকাশ করা হয়। কেউ আহত হয়নি, তবে যাত্রা বিলম্বিত হয়। আয়োজকেরা একে ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেন।

২৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ক্রিট দ্বীপের কাছে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। ৫১টি জাহাজ একযোগে বিস্ফোরণ, ড্রোন হামলা, সাউন্ড গ্রেনেড-বোমা ও সন্দেহভাজন রাসায়নিক আক্রমণের মুখে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রেডিও সংকেত দখল করে এবিবিএ ব্যান্ডের গান বাজানো হয়, যা থুনবার্গের সুইডিশ পরিচয়ের প্রতি বিদ্রূপ হিসেবে দেখা হয়। ‘আলমা’ জাহাজের মানবাধিকারকর্মী ইয়াসেমিন আকার বলেন, আন্তর্জাতিক জলসীমা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রোসেত্তো এসব আক্রমণের নিন্দা জানান। তিনি বহরটির সুরক্ষায় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠান। ফ্লোটিলার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ইসরায়েল এসব হামলা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বহরটিকে ‘সহিংস প্রচেষ্টা’ আখ্যা দিয়েছে এবং হামাসকে সহায়তার অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে, চাইলে সাহায্য ইসরায়েলের আশকেলন বন্দরে নামানো যেতে পারে। কিন্তু আয়োজকেরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গ্রেটা থুনবার্গ এর আগে জুন মাসে ‘ম্যাডলিন’ নামের ইয়টে সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করলে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে আটক করেছিল। এবারও তিনি সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গ্রিস উপকূলে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইসরায়েলের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। ইসরায়েল এই বহরকে ‘সেলফি ইয়ট’ বা প্রচারণামূলক আয়োজন বলেছিল। থুনবার্গ বলেন, ‘প্রচারণার জন্য কেউ নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে না।’ তিনি কর্মকর্তাদের ‘আইনবহির্ভূত হুমকি’র অভিযোগ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি গাজার এক ফিলিস্তিনি মায়ের করুণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। থুনবার্গের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বহরের লক্ষ্য শুধু সাহায্য পৌঁছানো নয়; এটি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে সরকারগুলোর ব্যর্থতার জবাবও।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ফ্লোটিলার অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ফ্লোটিলার অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত।

গত সপ্তাহে যাত্রায় নতুন বাধা আসে। ২৭ সেপ্টেম্বর আবহাওয়াজনিত কারণে গ্রিসে মেরামতের জন্য বহর থামে। পরে যাত্রা পুনরায় শুরু হলেও ২৯ সেপ্টেম্বর এক জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষে গুরুতর লিক দেখা দেয়। ফলে জাহাজটি সমুদ্রে আটকা পড়ে। আয়োজকেরা জানান, সমস্যাটি সমুদ্রে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে ভেতরকার মতবিরোধের খবর ছড়ায়। দ্য জেরুজালেম পোস্ট দাবি করে, যোগাযোগসংক্রান্ত সমস্যার কারণে থুনবার্গকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।

বুধবার পর্যন্ত বহরটির যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তবে ইতালি ঘোষণা করেছে, তারা আর নৌ-সুরক্ষা দেবে না। ইতালি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে— সাহায্য সাইপ্রাসে নামিয়ে দেওয়া হোক, যাতে সংঘর্ষ এড়ানো যায়। কিন্তু আয়োজকেরা বলেছে, ‘ইতালির এই সিদ্ধান্ত মিশনকে থামাতে পারবে না। অবরোধ ভাঙার মানবিক দাবি আর পেছনে নেওয়া যাবে না।’ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পুনর্ব্যক্ত করেছে যে তারা ‘যে কোনো পদক্ষেপ’ নেবে অবরোধ কার্যকর রাখতে। একই সঙ্গে তারা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছে। এতে সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এক-দুদিনের মধ্যেই বহরটি গাজার উপকূলে পৌঁছে যাবে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখে মনে হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী বহরটি আটকাবে। যেমন ২০২৫ সালের মে মাসে মাল্টার কাছে ‘কনশায়েন্স’ জাহাজে আক্রমণ হয়েছিল। বর্তমানে স্পেন ও পর্তুগালসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এ যাত্রা নজরদারি করছেন। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের দাবিও বাড়ছে। অংশগ্রহণকারীদের মতে, এই মিশন কেবল সাহায্য পৌঁছানোর প্রচেষ্টা নয়, বরং ‘অবৈধ অবরোধ’ এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধের প্রতীক।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত