leadT1ad

ইসরায়েলের হাতে আটকের পর যা বললেন গ্রেটা থুনবার্গ

স্ট্রিম ডেস্ক
ফেসবুক বার্তায় অপহরণে কথা জানালেন গ্রেটা। ছবি: সংগৃহীত।

গাজাগামী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বুধবার রাতে আটক হয়েছেন সুইডেনের জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। আটকের পর আজ দুপুর ১২ টার দিকে ফেসবুকে তার ভ্যারিফায়েড পেজ থেকে একটি রিল ভিডিও শেয়ার দেওয়া হয়। ভিডিওটি সম্ভবত আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল।

ভিডিওতে গ্রেটাকে কথা বলতে দেখা যায়। গ্রেটা বলেন, ‘আমার নাম গ্রেটা থুনবার্গ। আমি সুইডেনের নাগরিক। আপনি যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন, তাহলে জানিয়ে দেন যে ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে অপহরন করেছে। তারা আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।’

গ্রেটা আরও বলেন, ‘আমাদের মিশন শান্তিপূর্ণ ছিল এবং আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। দয়াকরে আমাদের দেশের সরকারকে বলবেন, তারা যেন আমার ও আমার সঙ্গে আরও যারা আটক হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য দাবি জানায়।’

ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজামুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের গতিরোধ করে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ জন বা আরও বেশি অ্যাকটিভিস্টকে আটক করেছে। বুধবার রাতে আটকের এই ঘটনা ঘটে গাজা উপত্যকা থেকে ৭০-৭৫ নটিকাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক পানিসীমায়। এতে ফ্লোটিলার আয়োজকরাসহ কয়েকটি দেশের সরকার নিন্দা জানিয়েছে।

বহরে ছিল প্রায় ৪৪ থেকে ৪৭টি নৌযান। এতে অংশ নেয় ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ কর্মী। তারা খাদ্য, ওষুধ ও পানি পরিশোধকসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য নিয়ে গাজায় যাচ্ছিল। সংগঠকরা একে শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগ বলে আখ্যা দেন। তারা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল ২০০৭ সাল থেকে গাজার ওপর আরোপিত ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা।

যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন স্পেন ও ইতালির ইউরোপীয় সংসদ সদস্যরা। এছাড়া ছিলেন আইনজীবী, সাংবাদিক এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পী শহীদুল আলম, সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা। এছাড়া ছিলেন ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

বুধবার (১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে তাদের উপর অভিযান চালানো হয়। ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১৩টি নৌযান আটক করে। এর মধ্যে ছিল ডেইর ইয়াসিন/মালি, হুগা, স্পেকট্রা, আদারা, আলমা এবং সিরিয়াস। কয়েকটি নৌযানে পানি কামান ও ধাক্কার মতো আক্রমণও চালানো হয়।

আটক করা হয় গ্রেটা থুনবার্গসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ জন বা আরও বেশি অ্যাকটিভিস্টকে। গ্লোবাল সুমুদ বহরের মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক জানিয়েছেন, আটক নৌযানগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জনের বেশি মানুষ ছিলেন। এর মধ্যে স্পেন থেকে ৩০ জন, ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন ছিলেন।

এখনও অবশিষ্ট নৌযানগুলো এগোচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়ে গেছে। আবারও আটক অভিযান হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি নৌযান গাজার পথে অগ্রসর হচ্ছিল। তারা এখন গাজা থেকে ৪৫ নটিকাল মাইল দূরে রয়েছে।

এর আগেও ২০২৫ সালের জুনে ইসরায়েলি বাহিনী মাদলিন নামের নৌযান থেকে গ্রেটা থুনবার্গসহ কয়েকজনকে আটক করেছিল। ফলে এবার গ্রেটা থুনবার্গকে দ্বিতীয়বারের মতো আটক করা হল।

সমর্থকরা এটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবিক সহায়তার অধিকারের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। জাতিসংঘের প্রস্তাবের উল্লেখ করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, এই অবরোধ মানবিক আইনের পরিপন্থী।

আটকের আগের দিন (৩০ সেপ্টেম্বর) এক ভিডিওতে গ্রেটা বলেন, ‘আমরা যতই গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েই চলেছে। আমরা এবার গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে একটি মানবিক করিডোর তৈরি করব এবং আমাদের ত্রাণ সাহাজ্য পৌঁছে দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজার মানুষেরা জানিয়েছে তারা আমাদের সাহাজ্যের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা কোনও অস্ত্র নয়, বরং খাদ্য, ওষুধ ও শিশুখাদ্য সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসি নিয়ে যাচ্ছি। ইসরায়েল বলেছে তারা আমাদের গাজায় প্রবেশ করতে দেবেনা। কিন্তু তারা যদি তা করে তাহলে সেটা হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন এবং আরেকটি যুদ্ধাপরাধ।’

এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভিডিওতে গ্রেটা বলেছিলেন, ‘আমি ইসরায়েলকে ভয় পাই না। আমি সেই পৃথিবীকে ভয় পাই যেখানে মানবতার অনুভূতি হারিয়ে গেছে।’

‘সুমুদ’ শব্দটি আরবী, যার অর্থ ‘অটলতা’ বা প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনের গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা এর আয়োজন করেন। এর অংশ হিসেবেই একটি মিডিয়া ফ্লোটিলারও আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পী শহীদুল আলমও যোগ দেন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তিউনিসিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। এর আগে বহরটি গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে ছেড়ে আসে। পরে ৭ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়ার সিদি বু সাঈদ বন্দরে থামে। সেখান থেকে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিবার-সন্তানরাও এতে যুক্ত হন।

মিশনটি শুরু হয় ৫০টির বেশি নৌযান নিয়ে। এগুলো অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছিল। নৌযানগুলোতে ছিল শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী এবং সংসদ সদস্য। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন মার্কিন নাগরিক, যাদের মধ্যে কয়েকজনই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।

বহরটির লক্ষ্য হলো গাজায় খাদ্যসঙ্কটে ভোগা মানুষের জন্য জরুরি সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে সেখানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে রয়েছেন।

আর মিডিয়া ফ্লোটিলার লক্ষ্য মূলত তথ্যের অবরোধ ভাঙা। ইসরায়েল অধিকাংশ বিদেশি সাংবাদিককে গাজায় প্রবেশে বাধা দেয়। ২০০৭ সাল থেকেই ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় আন্তর্জাতিক পর্যযবেক্ষকদের প্রবেশ কার্যত সীমিত।

অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি উপকূলে পৌঁছে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এর মধ্যে রয়েছে মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও অবরুদ্ধ মানুষের দৈনন্দিন জীবন। এই মিশনগুলো সমন্বয় করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এএফসি), যা বিভিন্ন নাগরিক সমাজের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত