ফ্রিডম ফ্লোটিলা-২০১০ থেকে গ্লোবাল সুমুদ-২০২৫
স্ট্রিম ডেস্ক
সমুদ্র শুধুই জলরাশি নয়। ছোট জলযান, নিরীহ মানুষ, সঙ্গে সামান্য সাহায্য—এই দৃশ্য যখন বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন প্রতিটি ঢেউই হয়ে ওঠে ইতিহাসের সাক্ষী। আজও সেই সমুদ্রের মঞ্চে মানুষ দাঁড়াচ্ছে। তারা ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র, সাধারণ পেশাজীবী। তাদের কোনো সামরিক অভিজ্ঞতা বা রাজনৈতিক ক্ষমতার আশ্রয় নেই। তাদের হাতে অস্ত্রের বদলে আছে খাদ্য, ওষুধ, বই, খেলনা। তবে তাদের সঙ্গে আছে প্রত্যয়, সংহতি এবং প্রতিরোধের বার্তা। সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতিটি জাহাজ, প্রতিটি যাত্রা মনে করিয়ে দেয়—যদি মানুষ একত্রিত হয়, সাধারণ সাহসও শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।
ফিলিস্তিনের দিকে রওনা হওয়া জাহাজের ইতিহাস শুরু হয়েছিল ইহুদি অভিবাসন প্রত্যাশীদের মাধ্যমে। তখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হব হব করছে। সেই সময়, ১৯৪৭ সালে হাজার হাজার ইহুদি শরণার্থী সমুদ্রপথে প্যালেস্টাইনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। জাহাজের নাম ছিল এক্সোডাস। এতে ছিল প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মানুষ। যাত্রীদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। তারা ছিলেন নাৎসিদের হোলোকাস্টের বেঁচে যাওয়া সন্ত্রস্ত মানুষ। যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ আর পালিয়ে বেড়ানোর দুর্ভোগের পর একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছিল তারা।
সেই সময় আজকের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ছিল ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে। ব্রিটিশ নৌবাহিনী অনুমতি দিল না এক্সোডাসকে তীরে যাওয়ার। জাহাজটি আটক করে যাত্রীদের আবার ইউরোপে ফিরিয়ে পাঠায়। আর ইতিহাসের তীর্যক পরিহাস—একসময় ভুক্তভোগী এই ইহুদিরাই আজ সেই সাহসী ফ্লোটিলাকে আটকে দিচ্ছে। ২০১০ সালের ফ্রিডম ফ্লোটিলা হোক বা ২০২৫ সালের গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, সমুদ্র আজও একই মঞ্চ—যেখানে এক সময় নির্যাতিতরা দাঁড়িয়েছিল মানবতার পক্ষে, আর আজ দাঁড়াচ্ছে শক্তির নামে মানবিক সহায়তা আটকানোর জন্য। প্রতিটি ঢেউ, প্রতিটি নৌকা, প্রতিটি মানুষ এখনও ইতিহাসের এই তীর্যক পুনরাবৃত্তির সাক্ষী।
২০১০ সালের ৩১ মে, ভূমধ্যসাগরের ঢেউ এক ভয়ংকর ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিল। ছয়টি জাহাজের একটি বহর—ফ্রিডম ফ্লোটিলা—গাজার দিকে রওনা হয়েছিল অবরোধ ভাঙতে। গন্তব্য ছিল গাজার তীরে খাদ্য, ওষুধ, স্কুলের বই, খেলনা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
বহরে সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল তুরস্কের মাভি মারমারা। এতে ছিলেন ৬০০-এর বেশি মানুষ। ৩০টিরও বেশি দেশের নাগরিক। কেউ ডাক্তার, কেউ সাংবাদিক, কেউ ছাত্র বা সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। এদের কেউ পেশাদার রাজনীতিক নয়, সামরিক লোকও নয়। সবাই এসেছিলেন কেবল মানবিক দায়ে, অবরুদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর কমান্ডোরা হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ যাত্রা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। নিহত হন ৯ জন তুর্কি নাগরিক, পরে আরও একজন মৃত্যুবরণ করেন। আহত হন অনেকে।
এই রক্তাক্ত ঘটনা শুধু গাজা নয়, বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে আলোড়ন তুলেছিল।
মাভি মারমারার হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইস্তানবুল, লন্ডন, কায়রো, নিউইয়র্ক, ঢাকা—বিশ্বের নানা শহরে ফুঁসে ওঠে বিক্ষোভ। জাতিসংঘ তৎক্ষণাৎ এক তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন বলেছিল, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই হামলা ছিল অবৈধ। প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে সেখানে।
ঘটনার জেরে তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নেওয়ার দাবিও ওঠে। যদিও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ইসরায়েলের পক্ষে ছিল, তবু জনমতের আদালতে ইসরায়েল কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ে।
অনেক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, ফ্লোটিলা ছিল এক ধরনের সমুদ্রপথে নাগরিক অবাধ্যতা। এই আকই কায়দায় আন্দোলন করেছিলেন মোহনদাস গান্ধী উপমহাদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। নাম ছিল অসহযোগ আন্দোলন। সমুদ্রপথের এই আন্দোলনও মানবিক কারণে ন্যায্যতা পেয়েছিল। এভাবেই ফ্রিডম ফ্লোটিলা হয়ে উঠেছিল বিশ্ব রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে।
২০১০ সালে জাহাজগুলো গাজায় পৌঁছাতে পারেনি। শুধু নির্যাতিতদের পক্ষে থাকার কারণে প্রাণ দিয়েছিলেন কিছু সাহসী মানুষ। তবু বিশ্ব দেখেছিল ভিন্ন এক ছবি—সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে। ত্রাণ আটকানো গেলেও প্রতিরোধ আটকানো যায়নি।
একজন তুর্কি সাংবাদিক পরে লিখেছিলেন, ‘মাভি মারমারা বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি, কিন্তু পৌঁছে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।’ সত্যিই তাই। ২০১০-এর ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক মিডিয়া কাভারেজে গাজাকে এমনভাবে তুলে ধরেছিল, যা কেবল বক্তৃতা বা রিপোর্ট দিয়ে সম্ভব হতো না।
প্রথম ফ্লোটিলার পর ১৫ বছর কেটে গেছে। কিন্তু গাজার অবরোধ ভাঙেনি। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবার সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেছে এক নতুন বহর—গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ২০২৫।
আরবি শব্দ সুমুদ মানে হলো অটলতা, দৃঢ় প্রতিরোধ। এ নামেই গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক উদ্যোগ। এই ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা থেকে আসা শত শত মানুষ। চিকিৎসক, শিক্ষক, কৃষক, শিল্পী, ছাত্র, সাংবাদিক—সবাই আছেন এখানে। আছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিও।
তাদের সঙ্গে রয়েছে খাবার, ওষুধ, শিশুদের জন্য বই-খেলনা। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে আরেকটি অদৃশ্য কার্গো—সংহতির বার্তা। তারা হয়তো গাজায় নামতে পারবেন না। হয়তো আবারো আটকানো হবে। হয়তো এবারও ঘটবে প্রাণহানি। কিন্তু এর পর? এই যাত্রা মানেই প্রতিরোধের ঘোষণা।
ফ্লোটিলার আন্দোলনে সমুদ্রের ভূমিকা কেবল ভৌগোলিক নয়, প্রতীকীও। স্থলপথে দেয়াল, চেকপোস্ট, কাগুজে অনুমতি—সবই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সমুদ্র এখনো উন্মুক্ততার প্রতীক।
যখন ছোট নৌকা এক বিশাল যুদ্ধজাহাজকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সেটি হয়ে ওঠে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের আধুনিক কাহিনি। পাশাপাশি সমুদ্রপথের যাত্রা চাক্ষুষ নাটকীয়—ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রাণ না পৌঁছালেও প্রতিরোধের ছবি কোটি মানুষের মনে পৌঁছে যায়।
২০১০ সালের ফ্লোটিলা ছিল রক্তাক্ত কিন্তু অনুপ্রেরণাদায়ী এক অধ্যায়। এর পরও বিভিন্ন সময় ছোট ছোট কনভয় সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করেছে। কারও যাত্রা সফল হয়েছে, অনেকগুলো আবার আটকানো হয়েছে।
২০২৫ সালের গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সেই উত্তরাধিকারের উত্তরসূরি। মাভি মারমারার শহীদরা হয়তো নেই, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রাণিত করছে নতুন প্রজন্মকে। সমুদ্র কেবল সাম্রাজ্যের টহলদারির মঞ্চ নয়, বরং সাধারণ মানুষের ইতিহাস লেখার মঞ্চও হতে পারে।
গাজার শিশুরা হয়তো এখনো অবরোধের দেয়ালের ভেতর বন্দি। কিন্তু প্রতিটি ফ্লোটিলা সেই দেয়ালে আঘাত করে যাচ্ছে। হয়তো আগামী কোনো ভোরে, ঢেউয়ের সঙ্গে সেই দেয়ালও ভেঙে পড়বে।
খৃষ্টপূর্ব ৭১ সালে রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে প্রাণদণ্ড হয়েছিল স্পার্টাকাসের। দণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে স্পার্টাকাস বলেছিলেন, ‘যতদিন দাস ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন বার বার স্পার্টাকাসের জন্ম হবে। কিন্তু সাম্রাজ্যের পতন হলে আর সম্রাটের জন্ম হবে না।’
যতদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন না হবে, ঘাতকদের পরাজয় না ঘটবে—ততদিন বার বার ফ্লোটিলা ভাসবে সমুদ্রে।
সমুদ্র শুধুই জলরাশি নয়। ছোট জলযান, নিরীহ মানুষ, সঙ্গে সামান্য সাহায্য—এই দৃশ্য যখন বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন প্রতিটি ঢেউই হয়ে ওঠে ইতিহাসের সাক্ষী। আজও সেই সমুদ্রের মঞ্চে মানুষ দাঁড়াচ্ছে। তারা ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র, সাধারণ পেশাজীবী। তাদের কোনো সামরিক অভিজ্ঞতা বা রাজনৈতিক ক্ষমতার আশ্রয় নেই। তাদের হাতে অস্ত্রের বদলে আছে খাদ্য, ওষুধ, বই, খেলনা। তবে তাদের সঙ্গে আছে প্রত্যয়, সংহতি এবং প্রতিরোধের বার্তা। সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতিটি জাহাজ, প্রতিটি যাত্রা মনে করিয়ে দেয়—যদি মানুষ একত্রিত হয়, সাধারণ সাহসও শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।
ফিলিস্তিনের দিকে রওনা হওয়া জাহাজের ইতিহাস শুরু হয়েছিল ইহুদি অভিবাসন প্রত্যাশীদের মাধ্যমে। তখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হব হব করছে। সেই সময়, ১৯৪৭ সালে হাজার হাজার ইহুদি শরণার্থী সমুদ্রপথে প্যালেস্টাইনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। জাহাজের নাম ছিল এক্সোডাস। এতে ছিল প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মানুষ। যাত্রীদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। তারা ছিলেন নাৎসিদের হোলোকাস্টের বেঁচে যাওয়া সন্ত্রস্ত মানুষ। যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ আর পালিয়ে বেড়ানোর দুর্ভোগের পর একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছিল তারা।
সেই সময় আজকের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ছিল ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে। ব্রিটিশ নৌবাহিনী অনুমতি দিল না এক্সোডাসকে তীরে যাওয়ার। জাহাজটি আটক করে যাত্রীদের আবার ইউরোপে ফিরিয়ে পাঠায়। আর ইতিহাসের তীর্যক পরিহাস—একসময় ভুক্তভোগী এই ইহুদিরাই আজ সেই সাহসী ফ্লোটিলাকে আটকে দিচ্ছে। ২০১০ সালের ফ্রিডম ফ্লোটিলা হোক বা ২০২৫ সালের গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, সমুদ্র আজও একই মঞ্চ—যেখানে এক সময় নির্যাতিতরা দাঁড়িয়েছিল মানবতার পক্ষে, আর আজ দাঁড়াচ্ছে শক্তির নামে মানবিক সহায়তা আটকানোর জন্য। প্রতিটি ঢেউ, প্রতিটি নৌকা, প্রতিটি মানুষ এখনও ইতিহাসের এই তীর্যক পুনরাবৃত্তির সাক্ষী।
২০১০ সালের ৩১ মে, ভূমধ্যসাগরের ঢেউ এক ভয়ংকর ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিল। ছয়টি জাহাজের একটি বহর—ফ্রিডম ফ্লোটিলা—গাজার দিকে রওনা হয়েছিল অবরোধ ভাঙতে। গন্তব্য ছিল গাজার তীরে খাদ্য, ওষুধ, স্কুলের বই, খেলনা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
বহরে সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল তুরস্কের মাভি মারমারা। এতে ছিলেন ৬০০-এর বেশি মানুষ। ৩০টিরও বেশি দেশের নাগরিক। কেউ ডাক্তার, কেউ সাংবাদিক, কেউ ছাত্র বা সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। এদের কেউ পেশাদার রাজনীতিক নয়, সামরিক লোকও নয়। সবাই এসেছিলেন কেবল মানবিক দায়ে, অবরুদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর কমান্ডোরা হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ যাত্রা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। নিহত হন ৯ জন তুর্কি নাগরিক, পরে আরও একজন মৃত্যুবরণ করেন। আহত হন অনেকে।
এই রক্তাক্ত ঘটনা শুধু গাজা নয়, বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে আলোড়ন তুলেছিল।
মাভি মারমারার হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইস্তানবুল, লন্ডন, কায়রো, নিউইয়র্ক, ঢাকা—বিশ্বের নানা শহরে ফুঁসে ওঠে বিক্ষোভ। জাতিসংঘ তৎক্ষণাৎ এক তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন বলেছিল, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই হামলা ছিল অবৈধ। প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে সেখানে।
ঘটনার জেরে তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নেওয়ার দাবিও ওঠে। যদিও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ইসরায়েলের পক্ষে ছিল, তবু জনমতের আদালতে ইসরায়েল কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ে।
অনেক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, ফ্লোটিলা ছিল এক ধরনের সমুদ্রপথে নাগরিক অবাধ্যতা। এই আকই কায়দায় আন্দোলন করেছিলেন মোহনদাস গান্ধী উপমহাদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। নাম ছিল অসহযোগ আন্দোলন। সমুদ্রপথের এই আন্দোলনও মানবিক কারণে ন্যায্যতা পেয়েছিল। এভাবেই ফ্রিডম ফ্লোটিলা হয়ে উঠেছিল বিশ্ব রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে।
২০১০ সালে জাহাজগুলো গাজায় পৌঁছাতে পারেনি। শুধু নির্যাতিতদের পক্ষে থাকার কারণে প্রাণ দিয়েছিলেন কিছু সাহসী মানুষ। তবু বিশ্ব দেখেছিল ভিন্ন এক ছবি—সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে। ত্রাণ আটকানো গেলেও প্রতিরোধ আটকানো যায়নি।
একজন তুর্কি সাংবাদিক পরে লিখেছিলেন, ‘মাভি মারমারা বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি, কিন্তু পৌঁছে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।’ সত্যিই তাই। ২০১০-এর ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক মিডিয়া কাভারেজে গাজাকে এমনভাবে তুলে ধরেছিল, যা কেবল বক্তৃতা বা রিপোর্ট দিয়ে সম্ভব হতো না।
প্রথম ফ্লোটিলার পর ১৫ বছর কেটে গেছে। কিন্তু গাজার অবরোধ ভাঙেনি। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবার সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেছে এক নতুন বহর—গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ২০২৫।
আরবি শব্দ সুমুদ মানে হলো অটলতা, দৃঢ় প্রতিরোধ। এ নামেই গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক উদ্যোগ। এই ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা থেকে আসা শত শত মানুষ। চিকিৎসক, শিক্ষক, কৃষক, শিল্পী, ছাত্র, সাংবাদিক—সবাই আছেন এখানে। আছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিও।
তাদের সঙ্গে রয়েছে খাবার, ওষুধ, শিশুদের জন্য বই-খেলনা। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে আরেকটি অদৃশ্য কার্গো—সংহতির বার্তা। তারা হয়তো গাজায় নামতে পারবেন না। হয়তো আবারো আটকানো হবে। হয়তো এবারও ঘটবে প্রাণহানি। কিন্তু এর পর? এই যাত্রা মানেই প্রতিরোধের ঘোষণা।
ফ্লোটিলার আন্দোলনে সমুদ্রের ভূমিকা কেবল ভৌগোলিক নয়, প্রতীকীও। স্থলপথে দেয়াল, চেকপোস্ট, কাগুজে অনুমতি—সবই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সমুদ্র এখনো উন্মুক্ততার প্রতীক।
যখন ছোট নৌকা এক বিশাল যুদ্ধজাহাজকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সেটি হয়ে ওঠে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের আধুনিক কাহিনি। পাশাপাশি সমুদ্রপথের যাত্রা চাক্ষুষ নাটকীয়—ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রাণ না পৌঁছালেও প্রতিরোধের ছবি কোটি মানুষের মনে পৌঁছে যায়।
২০১০ সালের ফ্লোটিলা ছিল রক্তাক্ত কিন্তু অনুপ্রেরণাদায়ী এক অধ্যায়। এর পরও বিভিন্ন সময় ছোট ছোট কনভয় সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করেছে। কারও যাত্রা সফল হয়েছে, অনেকগুলো আবার আটকানো হয়েছে।
২০২৫ সালের গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সেই উত্তরাধিকারের উত্তরসূরি। মাভি মারমারার শহীদরা হয়তো নেই, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রাণিত করছে নতুন প্রজন্মকে। সমুদ্র কেবল সাম্রাজ্যের টহলদারির মঞ্চ নয়, বরং সাধারণ মানুষের ইতিহাস লেখার মঞ্চও হতে পারে।
গাজার শিশুরা হয়তো এখনো অবরোধের দেয়ালের ভেতর বন্দি। কিন্তু প্রতিটি ফ্লোটিলা সেই দেয়ালে আঘাত করে যাচ্ছে। হয়তো আগামী কোনো ভোরে, ঢেউয়ের সঙ্গে সেই দেয়ালও ভেঙে পড়বে।
খৃষ্টপূর্ব ৭১ সালে রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে প্রাণদণ্ড হয়েছিল স্পার্টাকাসের। দণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে স্পার্টাকাস বলেছিলেন, ‘যতদিন দাস ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন বার বার স্পার্টাকাসের জন্ম হবে। কিন্তু সাম্রাজ্যের পতন হলে আর সম্রাটের জন্ম হবে না।’
যতদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন না হবে, ঘাতকদের পরাজয় না ঘটবে—ততদিন বার বার ফ্লোটিলা ভাসবে সমুদ্রে।
জেন গুডঅল নামটি কানে এলেই যে ছবিটি চোখে সামনে ভেসে ওঠে, তা একজন স্বর্ণকেশী তরুণীর। আলগোছে বসে সামনের দিকে একটি হাত আলতো বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁর মুখমণ্ডল খুব একটা দৃশ্যমান নয়। তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া হাত ছোঁয়ার জন্য একটি আবেগী হাত ইতস্তত বাড়িয়ে দিয়েছে অপরপ্রান্ত থেকে এক শিশু শিম্পাঞ্জি।
৭ ঘণ্টা আগেকফি আবিষ্কার নিয়ে যে গল্পটি এখন বলা হবে, সেটি একজন সুফি সাধকের। বলা হয়ে থাকে, গোতুল আকবর নুরুদ্দিন আবু আল হাসান আল শাদিলি নামের এক সুফি–দরবেশ এতটাই নিষ্কলঙ্ক ছিলেন যে, তাঁর প্রার্থনার কারণে কেউ কেউ আরোগ্য লাভ করতেন।
১ দিন আগেবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিভিন্ন অঙ্গ ও অনুষঙ্গের মধ্যে কুমারী পূজা অন্যতম। এ পূজায় সাধারণত অরজঃস্বলা কুমারী কন্যাকে সাক্ষাৎ দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। মৃন্ময়ী প্রতিমার পাশাপাশি চিন্ময়ী কুমারীর মধ্যে দেবীর দর্শন এই পূজার একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
২ দিন আগেবাংলায় একদম আদিকাল থেকে দুর্গাপূজার চল ছিল, এমন কিন্তু নয়। শোনা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে দিনাজপুর অথবা মালদার জমিদারেরা বাংলায় দুর্গাপূজার সূচনা করেন। কিন্তু এ-ও শোনা যায়, মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই নাকি বাংলায় খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হতো।
৩ দিন আগে