.png)


স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বিদেশ সফর সাধারণত বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পাঁচ দিনের পূর্ব এশিয়া সফরও ছিল মূলত তার ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রদর্শন। তবে এবার একই সঙ্গে, সেই ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথম চার দিনে ট্রাম্প মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। এসব দেশ ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। কারণ, এক কলমে তিনি এমন শুল্ক বা বাণিজ্যনীতি চাপিয়ে দিতে পারেন, যা তাদের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক ছিল একেবারেই ভিন্ন। এটি ছিল দুই পরাশক্তির নেতাদের মধ্যে এক সমমর্যাদার সাক্ষাৎ। উভয় দেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও জনগণের কল্যাণ—সবকিছুই এই বৈঠকের ওপর নির্ভর করছিল। চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরিণতি এবং মূল্যও বিশাল।
সফরের প্রথম চার দিন ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগ বেশ মসৃণভাবে এগোয়। প্রতিটি সফরেই তিনি বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক জোরদার করার নানা ইঙ্গিত পান। অনেক সময় সেই আনুগত্যের প্রকাশও অতি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি ঘটান। তিনি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তিও তদারক করেন—যা তিনি নিজের নেতৃত্বে অর্জিত এক ‘শান্তি চুক্তি’ হিসেবে তুলে ধরেন।
জাপানে পৌঁছালে টোকিও টাওয়ার লাল, সাদা ও নীল আলোয় আলোকিত হয়—এর শীর্ষে ছিল ট্রাম্পের পছন্দের সোনালি রঙ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। তিনি ট্রাম্পকে উপহার দেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫০টি চেরি গাছ, একটি গলফ ক্লাব ও ব্যাগ—যা ছিল প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের। ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে শিনজোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাকাইচি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়ন দেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় রাজকীয় আয়োজনের মধ্য দিয়ে। কামান থেকে ২১ বার সম্মানসূচক গোলা ছোঁড়া হয় এবং সামরিক ব্যান্ড ‘হেল টু দ্য চিফ’ ও ট্রাম্পের সমাবেশে জনপ্রিয় গান ‘ওয়াইএমসিএ’ পরিবেশন করে।
প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক এবং প্রাচীন রাজবংশীয় মুকুটের প্রতিরূপ উপহার দেন। মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করা হয় ‘পিসমেকারস ডেজার্ট’ নামের সোনায় মোড়ানো ব্রাউনি। পরে এপেক সম্মেলনের ছয় নেতার উপস্থিতিতে এক নৈশভোজেও ট্রাম্পকে সম্মানিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ‘নো কিংস’ আন্দোলনকারীরা তার অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহারের সমালোচনা করেন, পূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্পকে সত্যিকারের রাজা হিসেবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাজাদের মতোই তিনি কোরিয়ায় ‘খাজনা’ দাবি করেন। দক্ষিণ কোরিয়া বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার করে ১০ বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তির ফলে কোরীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশে নেমে আসে।
তবে সফরের মূল আকর্ষণ ছিল শেষ দিনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির নেতাদের এই সাক্ষাতে পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বের জাঁকজমক, সামরিক ব্যান্ড বা সম্মানসূচক কুচকাওয়াজ—কিছুই ছিল না। বরং বুসানের বিমানবন্দরের পাশে একটি সাধারণ সামরিক ভবনের দীর্ঘ সাদা টেবিল ঘিরে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা বসেছিলেন এক গম্ভীর আলোচনায়।
বুসানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের করমর্দনের সময় উত্তেজনার আবহ স্পষ্ট ছিল। আগের দিন ট্রাম্প যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন যে বৈঠকটি ভালোই হবে বলে তিনি আশাবাদী—সেই নির্ভার ভাব তখন আর দেখা যায়নি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে আগেই কথা বলেছি। তাই আমি হঠাৎ কোনো অজানা আলোচনায় যাচ্ছি না।’
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়াতে, অন্যদিকে চীনের বাজার খুলতে ও ফেন্টানিল তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন।
তবে অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের মতো চীন নতি স্বীকার করেনি। বরং পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য কেনা স্থগিত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাব দেয়। এসব খনিজের ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় প্রযুক্তি শিল্পগুলো।
বৈঠক শেষে ট্রাম্পের মনোভাব ছিল বেশ প্রফুল্ল। তিনি আলোচনাকে ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন এবং ১ থেকে ১০-এর মধ্যে ১২ নম্বর দেন। বিমানে ফেরার সময় তীব্র বায়ুপ্রবাহে প্লেন কাঁপলেও তার মেজাজ ছিল উৎফুল্ল।
তবে এই বৈঠক ছিল মূলত দুই দেশের ইচ্ছাশক্তির লড়াই—যার পেছনে ছিল অর্থনৈতিক ক্ষতির দীর্ঘ ছায়া। অবশেষে উভয় পক্ষই উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, আর চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার সহজ করে এবং মার্কিন কৃষিপণ্য ও তেল-গ্যাস আমদানি পুনরায় শুরু করার অঙ্গীকার করে।
এটি বড় কোনো অগ্রগতি না হলেও উভয় দেশ স্বীকার করেছে যে বর্তমান পরিস্থিতি টেকসই নয়। তবে এই সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ভারসাম্য কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। বৈঠকের শুরুতে শি জিনপিং নিজেই বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সব সময় একমত হয় না, এটি স্বাভাবিক।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির মাঝে সময় সময় কিছু সংঘাত থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার।’ এ বক্তব্য কিছুটা ইতিবাচক সুরে দেওয়া হলেও ইঙ্গিত দেয় যে এসব উত্তেজনা সহজে শেষ হবে না।
চীনের এখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তারা সেই পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। তিনি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মিত্র ও প্রতিপক্ষ—দুপক্ষের ওপরই চাপ সৃষ্টি করছেন।
ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মার্কিন মিত্র দেশগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা ট্রাম্পকে খুশি রাখতে নানা উপায়ে আপোস করছে। উপহার ও সম্মানসূচক ভোজ আয়োজন সহজ, কিন্তু শত শত কোটি ডলারের অর্থপ্রদান, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী শুল্কের চাপ দীর্ঘমেয়াদে কষ্টদায়ক হয়ে উঠছে। এসবের ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না—যা চীনের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজা-সুলভ অভ্যর্থনা পেলেও তার বিদায়ের ঠিক পরেই সেখানে পৌঁছান শি জিনপিং। কোরীয় কর্তৃপক্ষ জানান, তারা চীনা নেতাকেও সমান মর্যাদার কূটনৈতিক অভ্যর্থনা দেবে।
শি পুরোপুরি অংশ নিচ্ছেন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কনফারেন্স (এপেক) নেতাদের বৈঠকে—যা ট্রাম্প উপেক্ষা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক শূন্যতা পূরণে চীন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত ও আগ্রহী বলে মনে হয়।
ট্রাম্প হয়তো এই সফর থেকে নিজের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করে দেশে ফিরছেন। কিন্তু রোলিং স্টোনসের গানটির মতোই প্রশ্ন রয়ে যায়—তিনি হয়তো ‘যা চেয়েছেন’ তা পেয়েছেন, কিন্তু আমেরিকা ‘যা প্রয়োজন’ তা পেয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
(ট্রাম্পের সফরসঙ্গী বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্থনি জুরখারের প্রতিবেদনের কিছুটা সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাহবুবুল আলম তারেক)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বিদেশ সফর সাধারণত বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পাঁচ দিনের পূর্ব এশিয়া সফরও ছিল মূলত তার ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রদর্শন। তবে এবার একই সঙ্গে, সেই ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথম চার দিনে ট্রাম্প মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। এসব দেশ ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। কারণ, এক কলমে তিনি এমন শুল্ক বা বাণিজ্যনীতি চাপিয়ে দিতে পারেন, যা তাদের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক ছিল একেবারেই ভিন্ন। এটি ছিল দুই পরাশক্তির নেতাদের মধ্যে এক সমমর্যাদার সাক্ষাৎ। উভয় দেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও জনগণের কল্যাণ—সবকিছুই এই বৈঠকের ওপর নির্ভর করছিল। চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরিণতি এবং মূল্যও বিশাল।
সফরের প্রথম চার দিন ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগ বেশ মসৃণভাবে এগোয়। প্রতিটি সফরেই তিনি বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক জোরদার করার নানা ইঙ্গিত পান। অনেক সময় সেই আনুগত্যের প্রকাশও অতি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি ঘটান। তিনি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তিও তদারক করেন—যা তিনি নিজের নেতৃত্বে অর্জিত এক ‘শান্তি চুক্তি’ হিসেবে তুলে ধরেন।
জাপানে পৌঁছালে টোকিও টাওয়ার লাল, সাদা ও নীল আলোয় আলোকিত হয়—এর শীর্ষে ছিল ট্রাম্পের পছন্দের সোনালি রঙ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। তিনি ট্রাম্পকে উপহার দেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫০টি চেরি গাছ, একটি গলফ ক্লাব ও ব্যাগ—যা ছিল প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের। ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে শিনজোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাকাইচি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়ন দেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় রাজকীয় আয়োজনের মধ্য দিয়ে। কামান থেকে ২১ বার সম্মানসূচক গোলা ছোঁড়া হয় এবং সামরিক ব্যান্ড ‘হেল টু দ্য চিফ’ ও ট্রাম্পের সমাবেশে জনপ্রিয় গান ‘ওয়াইএমসিএ’ পরিবেশন করে।
প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক এবং প্রাচীন রাজবংশীয় মুকুটের প্রতিরূপ উপহার দেন। মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করা হয় ‘পিসমেকারস ডেজার্ট’ নামের সোনায় মোড়ানো ব্রাউনি। পরে এপেক সম্মেলনের ছয় নেতার উপস্থিতিতে এক নৈশভোজেও ট্রাম্পকে সম্মানিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ‘নো কিংস’ আন্দোলনকারীরা তার অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহারের সমালোচনা করেন, পূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্পকে সত্যিকারের রাজা হিসেবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাজাদের মতোই তিনি কোরিয়ায় ‘খাজনা’ দাবি করেন। দক্ষিণ কোরিয়া বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার করে ১০ বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তির ফলে কোরীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশে নেমে আসে।
তবে সফরের মূল আকর্ষণ ছিল শেষ দিনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির নেতাদের এই সাক্ষাতে পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বের জাঁকজমক, সামরিক ব্যান্ড বা সম্মানসূচক কুচকাওয়াজ—কিছুই ছিল না। বরং বুসানের বিমানবন্দরের পাশে একটি সাধারণ সামরিক ভবনের দীর্ঘ সাদা টেবিল ঘিরে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা বসেছিলেন এক গম্ভীর আলোচনায়।
বুসানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের করমর্দনের সময় উত্তেজনার আবহ স্পষ্ট ছিল। আগের দিন ট্রাম্প যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন যে বৈঠকটি ভালোই হবে বলে তিনি আশাবাদী—সেই নির্ভার ভাব তখন আর দেখা যায়নি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে আগেই কথা বলেছি। তাই আমি হঠাৎ কোনো অজানা আলোচনায় যাচ্ছি না।’
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়াতে, অন্যদিকে চীনের বাজার খুলতে ও ফেন্টানিল তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন।
তবে অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের মতো চীন নতি স্বীকার করেনি। বরং পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য কেনা স্থগিত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাব দেয়। এসব খনিজের ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় প্রযুক্তি শিল্পগুলো।
বৈঠক শেষে ট্রাম্পের মনোভাব ছিল বেশ প্রফুল্ল। তিনি আলোচনাকে ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন এবং ১ থেকে ১০-এর মধ্যে ১২ নম্বর দেন। বিমানে ফেরার সময় তীব্র বায়ুপ্রবাহে প্লেন কাঁপলেও তার মেজাজ ছিল উৎফুল্ল।
তবে এই বৈঠক ছিল মূলত দুই দেশের ইচ্ছাশক্তির লড়াই—যার পেছনে ছিল অর্থনৈতিক ক্ষতির দীর্ঘ ছায়া। অবশেষে উভয় পক্ষই উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, আর চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার সহজ করে এবং মার্কিন কৃষিপণ্য ও তেল-গ্যাস আমদানি পুনরায় শুরু করার অঙ্গীকার করে।
এটি বড় কোনো অগ্রগতি না হলেও উভয় দেশ স্বীকার করেছে যে বর্তমান পরিস্থিতি টেকসই নয়। তবে এই সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ভারসাম্য কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। বৈঠকের শুরুতে শি জিনপিং নিজেই বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সব সময় একমত হয় না, এটি স্বাভাবিক।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির মাঝে সময় সময় কিছু সংঘাত থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার।’ এ বক্তব্য কিছুটা ইতিবাচক সুরে দেওয়া হলেও ইঙ্গিত দেয় যে এসব উত্তেজনা সহজে শেষ হবে না।
চীনের এখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তারা সেই পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। তিনি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মিত্র ও প্রতিপক্ষ—দুপক্ষের ওপরই চাপ সৃষ্টি করছেন।
ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মার্কিন মিত্র দেশগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা ট্রাম্পকে খুশি রাখতে নানা উপায়ে আপোস করছে। উপহার ও সম্মানসূচক ভোজ আয়োজন সহজ, কিন্তু শত শত কোটি ডলারের অর্থপ্রদান, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী শুল্কের চাপ দীর্ঘমেয়াদে কষ্টদায়ক হয়ে উঠছে। এসবের ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না—যা চীনের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজা-সুলভ অভ্যর্থনা পেলেও তার বিদায়ের ঠিক পরেই সেখানে পৌঁছান শি জিনপিং। কোরীয় কর্তৃপক্ষ জানান, তারা চীনা নেতাকেও সমান মর্যাদার কূটনৈতিক অভ্যর্থনা দেবে।
শি পুরোপুরি অংশ নিচ্ছেন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কনফারেন্স (এপেক) নেতাদের বৈঠকে—যা ট্রাম্প উপেক্ষা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক শূন্যতা পূরণে চীন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত ও আগ্রহী বলে মনে হয়।
ট্রাম্প হয়তো এই সফর থেকে নিজের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করে দেশে ফিরছেন। কিন্তু রোলিং স্টোনসের গানটির মতোই প্রশ্ন রয়ে যায়—তিনি হয়তো ‘যা চেয়েছেন’ তা পেয়েছেন, কিন্তু আমেরিকা ‘যা প্রয়োজন’ তা পেয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
(ট্রাম্পের সফরসঙ্গী বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্থনি জুরখারের প্রতিবেদনের কিছুটা সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাহবুবুল আলম তারেক)
.png)

দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের পরিবর্তিত শক্তির ভারসাম্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। উভয় নেতা বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন।
৩ ঘণ্টা আগে
পাপুয়া নিউগিনির দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের একটি গ্রামে ভূমিধসে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মধ্যরাতে এঙ্গা প্রদেশের কুকাস গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
৫ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান আরও এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার তুরস্কে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ দপ্তরকে পুনরায় পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ট্রাম্পের এই নির্দেশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইরান। দেশটি বলছে, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার পর এই নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি।
১০ ঘণ্টা আগে