leadT1ad

যুদ্ধবিরতি আরও এক সপ্তাহ বাড়াতে সম্মত পাকিস্তান-আফগানিস্তান: তুরস্ক

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে গুলাম খান জিরো-পয়েন্ট সীমান্ত ক্রসিংয়ের কাছে একটি রাস্তার ধারে একজন তালেবান নিরাপত্তা কর্মী পাহারা দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান আরও এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার তুরস্কে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সব পক্ষ একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করতে সম্মত হয়েছে, যা শান্তি বজায় রাখবে এবং যেকোনো পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে বিস্ফোরণের পর দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। আফগান সরকার এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায়। পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা ২০০-র বেশি আফগান যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান জানায়, তাদের হাতে নিহত হয়েছে ৫৮ পাকিস্তানি সৈন্য। এটি ছিল ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।

পরে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ১৯ অক্টোবর দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দুই দেশ গত শনিবার ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করে।

তবে বুধবার সেই আলোচনা ভেস্তে যায়, কারণ ইসলামাবাদের মূল দাবি—আফগান সরকার যেন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবান দমন করে—সে বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

আফগান সরকার বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে যে তারা টিটিপিকে আশ্রয় দেয়। তবে বৃহস্পতিবার আলোচনা পুনরায় শুরু হলে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি আরও এক সপ্তাহ বহাল রাখার বিষয়ে একমত হয়।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ আলোচনার সমাপ্তি নিশ্চিত করে জানান, উভয় দেশ ভবিষ্যতেও আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। পাকিস্তান এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও সীমান্ত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সীমান্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

আফগানিস্তানের কান্দাহারে কাপড় ব্যবসায়ী নাজির আহমদ বলেন, ‘দুই দেশই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আমাদের জাতিও ক্লান্ত, তাদের জাতিও ক্লান্ত।’

পাকিস্তানের চামান সীমান্ত শহরের গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার জানান, বাণিজ্য কার্যত থমকে গেছে। তিনি বলেন, ‘উভয় দেশই মুসলিম রাষ্ট্র, তবুও উভয়েরই ক্ষতি হচ্ছে।’

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত। ছবি: আল-জাজিরা।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত। ছবি: আল-জাজিরা।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত। এই ঔপনিবেশিক সীমারেখা দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের উৎস। ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখল করলে দুই দেশের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটে।

পাকিস্তান, যা একসময় ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে তালেবানের বড় সমর্থক ছিল, আশা করেছিল এক বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী পাবে। কিন্তু বর্তমানে ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তান পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যার ফলে পাকিস্তানে হামলা বেড়েছে।

মূল সমস্যা হলো তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যা আফগান তালেবানের মতাদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেও আলাদা সংগঠন। ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে এই গোষ্ঠী। অভিযোগ রয়েছে, তারা পূর্ব আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই পাকিস্তানে টিটিপির হামলায় ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। ২০২৫ সালে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অক্টোবরের শুরুতে পাকিস্তান আফগানিস্তানে টিটিপি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে তালেবান পাল্টা আক্রমণ চালায়, যাতে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়, তাদের মধ্যে ২০ জনের বেশি পাকিস্তানি সেনা ছিল।

এই সহিংসতার পরেই কাতারের দোহায় দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। এরপর ইস্তাম্বুলের বৈঠকের লক্ষ্য ছিল মূল সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান খোঁজা। তবে ১৯৮০-র দশকে পাকিস্তানের আফগান মুজাহিদিনদের প্রতি সমর্থন এবং তালেবান সরকারের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপের অভিযোগ পারস্পরিক অবিশ্বাসকে গভীর করেছে। ফলে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত