leadT1ad

পুতিন থেকে আফগানিস্তান: ট্রাম্প-স্টারমার বৈঠকের স্পটলাইটে যে ৫ ইস্যু

এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুই নেতা—কখনো একে অপরের সঙ্গে সহমত, কখনো কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া সংবেদনশীল প্রশ্ন। পুতিনের ‘হতাশা’ থেকে গাজার ‘রক্তাক্ত বাস্তবতা’, আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ থেকে আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি—সবই উঠে এসেছে ট্রাম্প-স্টারমার আলোচনায়।

স্ট্রিম ডেস্ক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: আল-জাজিরা

যুক্তরাজ্যে তিন দিনের সফর শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশে ফিরেছেন। সাম্প্রতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে জোটের ওপর জোর দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ট্রাম্প বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যও প্রকাশ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চেকার্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিয়ার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘পুতিন আমাকে হতাশ করেছেন’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আশা করেননি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতের সমাধান করা এত কঠিন হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কারণে কাজটি সবচেয়ে সহজ হবে, কিন্তু পুতিন আমাকে হতাশ করেছেন। তিনি সত্যিই আমাকে হতাশ করেছেন।’

অন্যদিকে, স্টারমার জোর দিয়ে বলেন যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে যুক্তরাজ্য একটি জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে পারি, ইউক্রেনকে আরও সহায়তা করতে পারি এবং পুতিনের ওপর চাপ বাড়িয়ে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তিতে রাজি করাতে পারি।’

‘মানবতার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দিন’

ইসরায়েল যখন গাজায় দুর্ভিক্ষ, গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ট্রাম্প এই সংকট নিয়ে কথা বলার সময় বারবার ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করেন। এমনকি যখন ট্রাম্পকে গাজা শহরের ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখনও তিনি ৭ অক্টোবরের ঘটনায় ফিরে যান। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা ৭ অক্টোবরের ঘটনাটি ভেবে দেখুন – এটি মানবতার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ একটি দিন।’

প্রায় দুই বছর আগের সেই হামলায় হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ১,২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ৬৫ হাজার ১৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘের তদন্তকারী, শিক্ষাবিদ ও শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অভিযানকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েল ও গাজা নিয়ে খুব কঠোরভাবে কাজ করছি। সেখানে যা ঘটছে তা জটিল, তবে এর সমাধান হবে। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’

আশঙ্কা করা হচ্ছিল যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে দুই নেতার মধ্যে বিভেদ তৈরি হতে পারে। কিন্তু সেই আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে এই বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে তিনি যোগ করেন, ‘এটি আমাদের অল্প কয়েকটি মতবিরোধের মধ্যে একটি।’ অন্যদিকে, ট্রাম্পকে শান্ত রাখতে স্টারমার গাজায় ইসরায়েলের সৃষ্ট রক্তপাত ও দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলা পুরোপুরি এড়িয়ে গেছেন। স্টারমার বলেন, ‘হামাস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চায় না। তারা শান্তি চায় না, তারা যুদ্ধবিরতিও চায় না।’ তার এই মন্তব্যের জন্য ট্রাম্প তাঁর পিঠ চাপড়ে দেন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ চুক্তি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের জন্য একটি মাল্টিবিলিয়ন-পাউন্ডের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এই ‘আটলান্টিক পার্টনারশিপ ফর অ্যাডভান্সড নিউক্লিয়ার এনার্জি’ চুক্তির বিষয়েও তাঁরা কথা বলেছেন।

চুক্তিতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ফিউশন, ৬জি ও বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকান কোম্পানি এক্স-এনার্জি এবং ব্রিটিশ কোম্পানি সেন্ট্রিকা যুক্তরাজ্য জুড়ে মডুলার পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তিটি ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি করবে, ২৫০০ পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং ১.৫ মিলিয়ন বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, এই চুক্তিটি সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

ন্যাটোর প্রশংসা

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ন্যাটো ও তার প্রধান মার্ক রুটককে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য।’

ন্যাটো সদস্যদের সামরিক ব্যয় তাদের নিজ নিজ জিডিপির পাঁচ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ন্যাটোকে প্রচুর অস্ত্র পাঠাচ্ছি। ন্যাটো সেই অস্ত্রের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করছে।’

বাগরামে ফেরার ইঙ্গিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের অধীনে ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনা করেন। তবে এবার প্রত্যাহারের সমালোচনা করার সময় ট্রাম্প মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য তালেবানের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা বাগরামে মার্কিন বিমান ঘাঁটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের কাছ থেকে তালেবানের কিছু জিনিস প্রয়োজন। আমরা সেই ঘাঁটিটি ফেরত চাই। কেননা চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির স্থান থেকে জায়গাটি মাত্র এক ঘণ্টা দূরে।’

উল্লেখ্য, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ক্ষমতায় আসা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে ওয়াশিংটন কাবুলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত