leadT1ad

নেপালে বিক্ষোভকারীদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে কারা গুলি করল, তদন্ত চাইলেন অলি

স্ট্রিম ডেস্ক
কে পি শর্মা অলি। ছবি: সংগৃহীত

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভে পুলিশকে গুলি করার কোনো নির্দেশ দেয়নি সরকার। আবার গুলিগুলো করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে, যা পুলিশের কাছে নেই। তাই বিক্ষোভে কারা গুলি করেছে তার তদন্ত চেয়েছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। তিনি এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন।

আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে নেপালের সংবিধান দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে অলি বলেন, ‘ভাই ও বোনেরা, আজ সংবিধান দিবস। এদিন নেপালি জনগণ দীর্ঘ ৭০ বছর লড়াইয়ের পর নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যদের প্রণীত সংবিধান পেয়েছিল। এইদিনে নেপালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কেন্দ্রীয় অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা এবং নেপালি জনগণের অধিকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের এই খসড়া করতে গিয়ে আমরা যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলাম তা আপনাদের স্মৃতিতে এখন অম্লান। বাধা এবং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জকে পেরিয়ে এই সংবিধান জারি করা হয়েছিল। তাই, নেপালি জনগণের জন্য এই সংবিধান হলো তাদের নিজেদের লেখা এক ভবিষ্যত রেখা।

সংবিধান প্রণয়নের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরে অলি বলেন, ‘সংবিধান প্রণয়নের পর কেউ যেন নেপালের ওপর অবরোধ তৈরি করতে না পারে সেজন্য আমরা স্থলবেষ্টিত দেশকে স্থলবেষ্টিত করতে দেশের উত্তর অংশের সঙ্গে দক্ষিণ অংশের সংযোগ স্থাপনে পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ করি। এছাড়া আমরা উত্তরের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটি পরিবহন চুক্তিও করি। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা প্রসারিত করেছি। আমরা আমাদের উন্নয়ন কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছি। আমাদের অর্থনীতি ছিল সংকটে।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণ জেন-জি বিক্ষোভে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে—যেমনটা আয়োজকরা বলছিলেন। অনুপ্রবেশকারীরা সহিংসতা উসকে দিয়েছিল এবং আমাদের তরুণরা প্রাণ হারায়। সরকার বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক কোনো গুলির নির্দেশও দেয়নি। আর গুলি করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে। কিন্তু পুলিশের কাছে এমন অস্ত্র নেই। বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। আমি আবারও ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি এবং নিহত তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আর আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।’

বিক্ষোভ চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে অলি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান এখন বড় ধরনের আক্রমণের কবলে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার পদত্যাগের পর সিংহ দরবার পুড়েছে, নেপালের মানচিত্র পুড়েছে এবং দেশের প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টাও করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি সংস্থার কার্যালয়, আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, তাদের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে যে ষড়যন্ত্র আছে তা নিয়ে আজ বেশি কিছু বলবো না। সময়ই অনেক কিছু বলবে। আমাদের দেশ কি গড়ে উঠছিল, নাকি ভেঙে পড়ছিল? নাকি শুধু দেশের অবনতির এক কাল্পনিক বয়ান তৈরি করে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল? আমাদের নতুন প্রজন্ম এসব কিছু নিজেই উপলব্ধি করবে। বিদেশে যাওয়া-আসার ভিড়কে নেতিবাচক বলে অভিহিত করা আজকের সমাজই বিদেশগমনের অনুমতি বন্ধের বিষয়টি কীভাবে দেখবে—সময়ই তা আমাদের বলে দেবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেই বুঝবে।’

শেষ তিনি বলেন, ‘সময় থাকতেই এটি বুঝতে হবে, না হয় আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব শুধু ইতিহাসে থাকবে। আমাদের তরুণরা নিশ্চয় কাজী ভীম মল্লার মৃত্যুদণ্ডের ইতিহাস পড়েছে। দেশের সীমা সম্প্রসারণের পর ফিরে আসা ভীম মল্লাকে হত্যার পর একমাত্র অনুশোচনাই বিকল্প ছিল। বাস্তবতার বাইরে গিয়ে অসন্তোষ ছড়ানোর পরিণতি শুধু অনুতাপেই কাজে লাগে এবং সেই অনুতাপ দেশের ইতিহাসকে আরও অন্ধকারময় করে তুলবে।

আক্রমণের মুখোমুখি হওয়া আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানকে রক্ষা করতে আমাদের নেপালের সব প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদি সার্বভৌমত্ব আমাদের অস্তিত্ব হয়, সংবিধান হলো আমাদের স্বাধীনতার ঢাল। একমাত্র আমাদের ঐক্যই পারে দেশের অকল্পনীয় এই সংকট থেকে উত্তরণ ও রক্ষা করতে। সবার কাছে আমার আবেদন— চলুন সংবিধান রক্ষা করি, সার্বভৌমত্বে রক্ষা করি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত