leadT1ad

দর্শন থেকে রাজনীতি: বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তার ব্যবহারিক বিবর্তনচক্র

আইডিয়া বা ধারণার জন্ম থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণ পর্যন্ত— যা আমাদের জীবনকে পরিচালনা করে— এই পুরো যাত্রা মানব জাতির জ্ঞান অর্জন এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের নিরন্তর প্রয়াস। চিন্তার এই রোমাঞ্চকর অভিযাত্রায়, দর্শনের পর আসে গণিত, তারপর বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ব্যবসা এবং সবশেষে রাজনীতি।

মাহবুবুল আলম তারেক
ঢাকা
বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তার বিবর্তনচক্র। ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

সভ্যতার অগ্রগতিতে বিস্ময়কর এক বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তার ব্যবহারিক বিবর্তনের ধারা সক্রিয় আছে। দর্শনের বিমূর্ত চিন্তা থেকে শুরু করে রাজনীতির বাস্তব সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এই ধারার বিস্তার। এই বিবর্তন সরল বা একরৈখিক নয়। এটি একটি আন্তঃসম্পর্কিত এবং চক্রকার প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি ধাপ আগেরটির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এর মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে এমন এক কাঠামো, যার উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন ও জগত গড়ে উঠে।

আইডিয়া বা ধারণার জন্ম থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণ পর্যন্ত— যা আমাদের জীবনকে পরিচালনা করে— এই পুরো যাত্রা মানব জাতির জ্ঞান অর্জন এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের নিরন্তর প্রয়াস। চিন্তার এই রোমাঞ্চকর অভিযাত্রায়, দর্শনের পর আসে গণিত, তারপর বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ব্যবসা এবং সবশেষে রাজনীতি। এই পথচলায় স্পষ্ট হয়, কীভাবে আমরা নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি আবিষ্কার করি, পুরোনোকে নতুনভাবে গড়ে তুলি এবং কীভাবে এসব মিলে আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিচয় নির্ধারণ করে।

দর্শন: চিন্তা যেখানে তৈরি হয়

সব কিছুর মূলে রয়েছে দর্শন— যা মানব জিজ্ঞাসার জন্মভূমি। এখানেই মানুষ প্রথম সাহস করে বড় প্রশ্ন তোলে। যেমন: বাস্তবতা কী? আমরা কীভাবে জানি যে আমরা জানি? জীবনের উদ্দেশ্য কী?

দর্শন হলো সেই বুদ্ধিবৃত্তিক ল্যাবরেটরি, যেখানে নতুন নতুন ধারণারা জন্ম নেয়। এখানেই আমরা চিন্তার বীজ রোপণ করি, যা পরে যুক্তি বা প্রমাণ দিয়ে বিশ্লেষিত এবং উদঘাটিত হয়।

প্লেটোর কথাই ভাবুন— যিনি কল্পনা করেছিলেন এক পরিপূর্ণ, চিরস্থায়ী রূপজগতের, যা আমাদের চোখে দেখা বিশৃঙ্খল বাস্তবতার ঊর্ধ্বে। আরেকদিকে ছিলেন অ্যারিস্টটল, যিনি বাস্তব জগতকে পর্যবেক্ষণ করে যুক্তির সাহায্যে তাকে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

পরে এলেন দেকার্তে। সতের শতকে আগুনের পাশে বসে তিনি বললেন, ‘Cogito, ergo sum’—“আমি চিন্তা করি, তাই আমি আছি’। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি আত্মসচেতনতার জমিনে দাঁড়িয়ে জ্ঞানের এক নতুন ভিত্তি নির্মাণ করলেন।

এই দার্শনিকেরা কেবল মনগড়া চিন্তা করছিলেন না। তারা এমন এক ভিত্তি তৈরি করছিলেন, যার উপর পরবর্তী সব জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সমাজ-সভ্যতা গড়ে উঠেছে।

দর্শনই মানুষের চিন্তার উৎস। এখান থেকেই জন্ম নেয় সেসব প্রশ্ন, যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। এখানেই আমরা প্রথম ভাবি— ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। দর্শন ছাড়া আমাদের অবস্থা হতো গভীর সমুদ্রের মাঝে পথ হারানো নৌকার মতো। যার হাতে কোনো দিকনির্দেশক কম্পাস নেই— না কৌতূহলের, না নিয়তির।

সক্রেটিস। ছবি: সংগৃহীত
সক্রেটিস। ছবি: সংগৃহীত

গণিত: চিন্তার কাঠামো

কিন্তু ধারণারা একা একা কিছু হতে পারে না। সেগুলো অনেকটা মেঘের মতো— দৃষ্টিনন্দন, কিন্তু ক্ষণস্থায়ী ও অস্পষ্ট। এই মেঘের মতো ভাবনাগুলোকে আকার দিতে হয়, একটি গড়ন দিতে হয়।

এখানেই এগিয়ে আসে গণিত— মহাবিশ্বের নিজস্ব ভাষা। গণিত দর্শনের বিমূর্ত চিন্তাগুলোকে ধরে রাখে এক সুসংগঠিত রূপে। এটি আমাদের দেয় পরিমাপ করার উপায়, বিশ্লেষণের হাতিয়ার। যে চিন্তাগুলো অস্পষ্ট ও কল্পনামাত্র, গণিত সেগুলোকে করে তোলে নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য।

উদাহরণস্বরূপ, জ্যামিতি আমাদের শেখায় কীভাবে স্থান বা পরিসরকে বোঝা যায়। এটি আর শুধু একটি দার্শনিক ধারণা থাকে না; রূপ নেয় রেখা, কোণ এবং প্রমাণের মাধ্যমে ব্যাখ্যায়।

অন্যদিকে, ক্যালকুলাস, যা বিকশিত হয়েছে ইবন আল-হায়থাম, নিউটন ও লাইবনিজের হাতে,
তা আমাদের পরিবর্তনের ধারণাকে করে তোলে নির্ভুল ও পরিমাপযোগ্য। এই গণিতের মাধ্যমেই আমরা নির্ণয় করতে পারি গ্রহ-উপগ্রহ কিংবা জনসংখ্যা বাড়া-কমার গতিপথ।

গণিত হলো চিন্তার পর্বতশৃঙ্গ। এটি কেবল সংখ্যা নয়— এটি এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি। এটি জগতকে দেখার এমন এক কাঠামো, যা বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা এনে দেয়।

গণিত এমন এক যন্ত্র, যা আমাদের কল্পনাপ্রসূত ভাবনাগুলোকে বাস্তব রূপ দেয়। এটি এমন এক ভিত্তি, যার উপর অন্যান্য জ্ঞানের শাখা নির্মিত হতে পারে। গণিত না থাকলে দর্শন কেবল আমাদের কল্পনার জগতে ঘুরপাক খেতো— বাস্তব জগতে তার ঠাঁই মিলতো না।

তাত্ত্বিক বিজ্ঞান: জ্ঞানের দিগন্ত বিস্তার

গণিতের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমরা অগ্রসর হই তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের দিকে। এই পর্যায়ে এসে আমাদের চিন্তাগুলো পাখা মেলে উড়তে শেখে।

তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা দর্শনের প্রশ্ন ও গণিতের কাঠামোর সমন্বয়ে গড়ে তোলেন মহাজাগতিক তত্ত্ব। তারা অনুসন্ধান করেন— এই মহাবিশ্ব কেমন করে কাজ করে, তার অন্তর্নিহিত নিয়মগুলো কী।

আইজ্যাক নিউটনের কথাই ভাবুন। আকাশে ছুটে চলা ধূমকেতুকে দেখে তিনি ভাবেন— এটি চলছে কীভাবে? এর পেছনের নিয়মটাই বা কী? তিনি ক্যালকুলাস ব্যবহার করে পৃথিবীকে আকাশের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেন— যা আলো ফেলে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন সূত্রে।

আবার ভাবুন আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা। তিনি লিখে চলেছেন এমন সব সমীকরণ, যা স্থান ও সময়কে বাঁকিয়ে দেয়। ইউক্লিডবহির্ভূত জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে তিনি মহাবিশ্বের এমন এক চিত্র তৈরি করেন, যা আগে কেউ কল্পনাও করেনি।

তাত্ত্বিক বিজ্ঞান আসলে জ্ঞানের দিগন্ত বিস্তারের বিজ্ঞান। এখানে দর্শন থেকে নেওয়া হয় ভাবনার বীজ, গণিত থেকে কাঠামো। আর সেগুলোকে একত্র করে তৈরি করা হয় বাস্তবতার তত্ত্ব।

এই বিজ্ঞানীরা কল্পনায় বলেন, ‘কি হতো যদি……?’ তারপর সেই কল্পনাকে প্রমাণের জন্য ব্যবহার করেন গণিতের নির্ভরযোগ্য ভাষা। এ এক মহাজাগতিক পর্যায়ের আবিষ্কার— যা আমাদের চিন্তার সম্ভাবনার সীমাকে বারবার ঠেলে দেয় আরও দূর পর্যন্ত।

নিউটন। ছবি: সংগৃহীত।
নিউটন। ছবি: সংগৃহীত।

প্রায়োগিক বিজ্ঞান: সত্য যাচাইয়ের ক্ষেত্র

তত্ত্বও একা যথেষ্ট নয়। যে কোনও ধরনের তত্ত্বই হোক না কেন, তা বাস্তবে সত্য কি না সেটা যাচাই না করে দেখা পর্যন্ত তা শুধু বিমূর্ত কল্পনাই থেকে যায়। এখানেই এগিয়ে আসে প্রয়োগিক বিজ্ঞান— যেখানে হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখা হয় তাত্ত্বিক চিন্তাগুলোর বাস্তবতা।

প্রয়োগিক বিজ্ঞানীরা তৈরি করেন বাস্তব পরীক্ষণ-পদ্ধতি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা সলিড তথ্য সংগ্রহ করেন, আর সেই উজ্জ্বল তাত্ত্বিক ভাবনাগুলোকে বাস্তবের আলোয় তুলে ধরেন।

যেমন, হিগস-বোসন কণার অস্তিত্ব প্রথমে ছিল কেবল একটি তাত্ত্বিক পূর্বাভাস। কিন্তু ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’ নামক বিশাল যন্ত্রে কণাকে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে পেষার মাধ্যমে তার অস্তিত্ব বাস্তব রুপে প্রমাণিত হয়।

আবার, জীববিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব নতুন ওষুধে রূপ নেয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে। এই গবেষণাগুলো সরাসরি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।

প্রয়োগিক বিজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাই সেই মুহূর্ত, যেখানে তত্ত্বের চাকা বাস্তবতার রাস্তায় গড়াতে শুরু করে। শুধু কোনও সত্যের কাঠামোর তত্ত্ব নির্মাণ করাই যথেষ্ট নয়। তাকে পরীক্ষা করতে হয়, ভাঙতে হয়, আবার গড়ে তুলতে হয়— আরও নিখুঁতভাবে।

এই পর্যায়েই বাস্তবতা মুখোমুখি হয় আবিষ্কারের। এখানেই আমরা নতুন করে বোঝার চেষ্টা করি, কোন ধারণা টিকে থাকবে আর কোনটা হারিয়ে যাবে।

প্রকৌশল: সত্য থেকে উপযোগে

কোনো তত্ত্ব যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তখন প্রকৌশলীরা আসেন সেই সত্যকে কাজে লাগাতে। প্রকৌশল সেই স্তর, যেখানে বিমূর্ত ধারণা রূপ নেয় বাস্তব বস্তুতে।

এখানেই বৈজ্ঞানিক নীতিগুলো রূপ পায় সেতু, বিমান বা স্মার্টফোনের মতো উদ্ভাবনে। প্রকৌশলীরা পদার্থবিদ্যার সূত্র ব্যবহার করে তৈরি করেন আকাশছোঁয়া ভবন। ফলে সেগুলো মাধ্যাকর্ষণকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

তারা রসায়নের সাহায্যে বানান শক্তিশালী ব্যাটারি, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সচল রাখে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে তারা গোটা পৃথিবীকে একটি যন্ত্রে ভরে তুলে দেন আপনার হাতের মুঠোয়।

তবে প্রকৌশলের বিপদের দিকও আছে। এটি আমাদের বাঁচাতে পারে— যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র বা জীবনরক্ষার প্রযুক্তি তৈরি করে। আবার এটি ধ্বংসও ডেকে আনতে পারে— যেমন পারমাণবিক বোমা কিংবা যুদ্ধের মারণাস্ত্র।

প্রকৌশল মানেই উদ্ভাবনের বাস্তব প্রয়োগ। এখানে সত্যকে রূপান্তর করা হয় কার্যকর যন্ত্রে। আর যন্ত্র তৈরি হলে তা কল্যাণ অথবা অকল্যাণ উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হতে পারে।

মার্কিন ব্যবসায়ী ও উদ্ভাবক ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন ব্যবসায়ী ও উদ্ভাবক ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসা: উদ্ভাবনের বাজার

ধরা যাক, এখন আমাদের হাতে অসাধারণ সব পণ্য ও সেবা তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এগুলো এখন কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাবে? এই পর্যায়ে আসে ব্যবসা। প্রকৌশলীরা যা নির্মাণ করেন, ব্যবসায়ীরা তা সমাজে ছড়িয়ে দেন। এখানেই উদ্ভাবন বাণিজ্যিক রূপ নেয়।

ব্যবসা ছাড়া, কারও পক্ষে সহজে কোনও প্রযুক্তি বা পণ্য ব্যবহার করে জীবন উন্নত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যাপল বা টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু পণ্য বানায় না। তারা সেই পণ্যগুলোকে করে তোলে সহজপ্রাপ্য, আকর্ষণীয় এবং জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাজারের প্রতিযোগিতা উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে। ফলে আমরা পাই আরও সাশ্রয়ী সৌর প্যানেল, উন্নত বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট।

তবে ব্যবসা সবসময় ইতিবাচক নাও হতে পারে। ব্যবসা আমাদের শোষণ করতে পারে, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং মুনাফার জন্য পরিবেশ বা মানুষের কল্যাণকে উপেক্ষা করতে পারে। এটি এক দু-ধারী তলোয়ার। একদিকে এটি আমাদের জীবনের ধারা বদলে দেয়, অন্যদিকে কখনো কখনো আমাদের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে।

তবে ব্যবসাই সেই পর্যায়, যেখানে ‘ব্যবহারযোগ্য’ জিনিস হয়ে ওঠে ‘সার্বজনীন’। ভালো হোক বা মন্দ— এখানে উদ্ভাবন প্রবেশ করে জনজীবনের মূল স্রোতে।

রাজনীতি: ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক

সবশেষে আমরা এসে দাঁড়াই রাজনীতির মঞ্চে। এই সেই চূড়ান্ত পর্যায় যেখান থেকে পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। রাজনীতিবিদরাই ঠিক করেন নিয়মকানুন। তারাই সিদ্ধান্ত নেন: কী কী উদ্যোগে অর্থায়ন হবে? কোন কাজ অনুমোদন পাবে? কারা লাভবান হবে?

তারাই সেসব নীতি তৈরি করেন, যা বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে পারেন, আবার জীবাশ্ম জ্বালানিকেও অগ্রাধিকার দিতে পারেন। তারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করতে পারেন, আবার নজরদারির পথও খুলে দিতে পারেন।

এই রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণের মধ্যেই আবার উদ্ভূত হয় দর্শনের বহু নৈতিক প্রশ্ন। ফলে এখানে এসে দর্শন থেকে শুরু হওয়া চিন্তার চক্র শেষ হয় এবং পুনরায় শুরুও হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি বিশৃঙ্খল, অসম্পূর্ণ, কিন্তু ব্যাপক বিস্তৃত এবং গভীরভাবে ক্ষমতাশালী। এখানে উদ্ভাবন ও নিরাপত্তার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। অগ্রগতি ও সামাজিক ন্যায়ের বন্ধন খুঁজতে হয়। রাজনীতিবিদদের হাতে থাকে এমন এক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, যা আমাদের রক্ষাও করতে পারে, আবার ধ্বংসের পথেও ঠেলে দিতে পারে।

এটাই সেই চূড়ান্ত উপলব্ধির স্তর— আমরা যা কিছু সৃষ্টি করেছি, তা কীভাবে ব্যবহার করব, সেই সিদ্ধান্তই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।

পারস্পরিক নির্ভরতার এক জাল

এবার এক কদম পিছিয়ে তাকালে কী দেখা যায়? কোনও সরল রেখা নয় বরং একটি জটিল জালের চক্র। যেখানে দর্শন উদ্ভব ঘটায় গণিতের, গণিত শক্তি যোগায় বিজ্ঞানকে, বিজ্ঞান চালনা করে প্রকৌশলকে, প্রকৌশল জন্ম দেয় ব্যবসার, আর ব্যবসা জবাবদিহি করে রাজনীতির কাছে। রাজনীতিতে তৈরি হয় নতুন প্রশ্ন, যা ফের আমাদের নিয়ে যায় দর্শনে।

আবার রাজনীতি অর্থায়ন করে বিজ্ঞানে। ব্যবসা প্রভাব ফেলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। নতুন নতুন আবিষ্কার উসকে দেয় পুরোনো বা নতুন দার্শনিক বিতর্ক।

এটি চক্রকারে চলমান এক প্রক্রিয়া— যেখানে প্রতিটি পর্যায় বা স্তর নির্ভর করে অপরটির উপর। দর্শন থেকে রাজনীতির এই পরস্পর-নির্ভর শৃঙ্খলেই নিহিত রয়েছে পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলার, কিংবা ধ্বংস করে ফেলার শক্তি।

আমরা যে চিন্তাগুলো তৈরি করি, যে যন্ত্র বা পদ্ধতিগুলোকে নতুনভাবে রূপ দিই, আর যেসব সত্য আবিষ্কার করি— এই সবকিছুই আমাদের হাতিয়ার।

প্রশ্ন হলো, আমরা কোন পথ বেছে নেব? বিশৃঙ্খলা নাকি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার? পতন নাকি সমৃদ্ধির? এই গল্প এখনও লেখা হচ্ছে। আর সেই লেখার কলম আমাদের সবার হাতে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত