leadT1ad

কেন কানে বাজে ‘নভেম্বর রেইন’

আজ নভেম্বরের প্রথম দিন। অনেক দিন পর ঢাকায় আজ দীর্ঘ, টানা বৃষ্টি নেমেছে। নভেম্বরে বৃষ্টি নামলে অনেকের মনে আসে ‘নভেম্বর রেইন’ শব্দযুগল। ফেসবুকে ঢুঁ মারতেই দেখা যায় কেউ গানটির ভিডিও শেয়ার দিচ্ছে, কেউ আবার লিরিক। নভেম্বরের বৃষ্টিতে কেন কানে বাজে ‘নভেম্বর রেইন’?

স্ট্রিম গ্রাফিক

বৃষ্টি নেমেছে। অনেক দিন পর ঢাকায় এমন দীর্ঘ, টানা বৃষ্টি। বিকেল থেকে জানালার কাচে টুপটাপ শব্দ। ফেসবুকে ঢুঁ মারতেই দেখি টাইমলাইনে চলছে ‘নভেম্বর রেইন’। কেউ ভিডিও শেয়ার দিচ্ছে, কেউ লিরিক, কেউ শুধু লিখছে ‘নাথিং লাস্টস ফরএভার’। মনে পড়ল, আজ নভেম্বরের প্রথম দিন।

নভেম্বরের প্রথম দিনে বৃষ্টি এবার নতুন নয়। গত বেশ কয়েকবছর ধরেই খেয়াল করলাম, এদিনে বৃষ্টি নামে। এরপর নভেম্বরে যতবার বৃষ্টি নামে ‘নভেম্বর রেইন’ অনেকের ফেসবুক স্ট্যাটাস হয়ে যায়। ‘হোয়াটস অন ইয়োর মাইন্ড’? অনেকের মনে বাজে এই গান।

‘নভেম্বর রেইন’ মানে শুধু বৃষ্টি নয়, একরাশ হাহাকারও বটে। গানটি মূলত এক প্রেমিকের অসহায়ত্বের কথা। যেখানে ভালোবাসা আছে, কিন্তু সেই ভালোবাসার স্থায়িত্ব নেই। গানের লিরিকে বারবার ফিরে আসে সেই আশঙ্কা, ‘নাথিং লাস্টস ফরএভার, অ্যান্ড উই বোথ নো হার্টস ক্যান চেঞ্জ।’

নভেম্বর রেইন গানের মিউজিক ভিডিওর একটি দৃশ্য। ইউটিউব থেকে নেওয়া ছবি
নভেম্বর রেইন গানের মিউজিক ভিডিওর একটি দৃশ্য। ইউটিউব থেকে নেওয়া ছবি

প্রেমের উথালপাতাল, ভাঙন, একাকিত্ব—সব কিছুরই এক মৃদু মেলানকোলি ছায়া আছে এই গানে। গানটি শুনলেই মনে পড়ে যায় সেই হারানো কাউকে বা জীবনের কোনো নীরব সময়কে, যখন জানালায় বৃষ্টি ঝরছিল নিঃশব্দে। আর সেটা এখনও আমাদেরকে নস্টালজিক করে দিচ্ছে। এই বৃষ্টির পর কি আশার সূর্য উঠবে?

আসলে, ‘নভেম্বর রেইন’ জনপ্রিয় হয়েছে শুধু এর কথা-সুর বা মিউজিক ভিডিওর কারণে নয়, বরং এর ভেতরকার অনুভবের জন্য। গানটি আমাদের বলে দেয়, ভালোবাসা চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু তার স্মৃতি চিরন্তন। যেমন নভেম্বরের বৃষ্টি আসে, ঝরে পড়ে, থেমে যায়, আবার সূর্য ওঠে।

যেভাবে এল ‘নভেম্বর রেইন’

১৯৯১ সালের কথা। আমেরিকান হার্ডরক ব্যান্ড ‘গানস এন রোজেস’ তখন রকদুনিয়ায় অন্যতম চর্চিত নাম। তাদের দুটি অ্যালবাম ততদিনে বের হয়েছে। দেশে দেশে কনসার্টে ট্যুরে ব্যস্ত সময় পার করছে ব্যান্ডটি। নতুন অ্যালবামের কাজও পুরোদমে চলছে।

ব্যান্ড ঠিক করল, এবার একসঙ্গে দুটি অ্যালবাম বের করবে। নাম হবে ‘ইউজ ইয়োর ইলিউশন ওয়ান’ আর ‘ইউজ ইয়োর ইলিউশন টু’। প্রথম অ্যালবামের জন্য গান বাছাই চলল জোরেশোরে। তখনও নিশ্চিত ছিল না, ‘নভেম্বর রেইন’অ্যালবামে থাকবে কি না। ব্যান্ডের কিছু সদস্যের মনে হয়েছিল, গানটি খুব ধীর আর বিষণ্ন। তাই হয়তো অ্যালবামের সামগ্রিক রকধারার সঙ্গে মানাবে না।

অ্যালবাম প্রকাশের পর রকপ্রেমীরা নতুন এক অভিজ্ঞতা পেল। এক্সেলের পিয়ানো, স্লাশের গিটার, আর পুরো ব্যান্ডের নিখুঁত বাজনা মিলে যেন তৈরি হলো আমাদের অনেকের প্রিয় গান ‘নভেম্বর রেইন’। গানটি খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

কিন্তু ব্যান্ডের ভোকালিস্ট এক্সেল রোজ রাজি হলেন না। তাঁর এক কথা, এই গান রাখতেই হবে। কারণ, এই গান তাঁর জীবনের খুব কাছের। ১৯৮৩ সালে তিনি গানটির প্রথম ডেমো ভার্সন তৈরি করেছিলেন। বছর বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়েছেন এর লিরিক-সুর-গঠন। অনেক ভাবনা-চিন্তা করে কম্পোজ করেছেন। এখন সেটি বাদ যাবে, এটা তিনি মানতে পারলেন না।

শেষে সবাই এক্সেলের জেদের কাছে হার মানলেন। ঠিক হলো, ‘নভেম্বর রেইন’ গানটি অ্যালবামে থাকবে। তবে শর্ত, গানটির দৈর্ঘ্য ছোট করতে হবে। মূল ডেমো অনেক দীর্ঘ ছিল। তখন সেটি কমিয়ে আনা হয় ৯ মিনিটের নিচে। এভাবেই ১৯৯১ সালে পুরো অর্কেস্ট্রাল অ্যারেঞ্জমেন্টসহ রেকর্ড করা হয় গানটি। সেই বছরেই অ্যালবাম দুটি রিলিজ হলেও ‘নভেম্বর রেইন’ গানটি ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গেল গান হিসেবে মুক্তি পায়।

অ্যালবাম প্রকাশের পর রকপ্রেমীরা নতুন এক অভিজ্ঞতা পেল। এক্সেলের পিয়ানো, স্লাশের গিটার, আর পুরো ব্যান্ডের নিখুঁত বাজনা মিলে যেন তৈরি হলো আমাদের অনেকের প্রিয় গান ‘নভেম্বর রেইন’। গানটি খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ড চার্টে উঠে আসে ৩ নম্বরে, যুক্তরাজ্যে ৪ নম্বরে, আর অস্ট্রেলিয়ায় টানা ২২ সপ্তাহ থাকে টপ টেনে। পরের বছর, ১৯৯২ সালে গানটি জেতে এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে দুটি পুরস্কার। এক সময় যে গান অ্যালবামে রাখার ব্যাপারে ব্যান্ড দ্বিধায় ছিল, সেই গানই পরে হয়ে গেল ইতিহাস। আর ‘গানস এন’ রোজেস’ হয়ে উঠল এক প্রজন্মের ভালোবাসা, বৃষ্টির দিনের সাউন্ডট্র্যাক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত