leadT1ad

রাবি শিক্ষার্থী সায়মার মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শিক্ষক-প্রশাসন মতবিরোধ

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৭
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সংগৃহীত ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভেতরেই মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম ‘শিক্ষক লাঞ্ছনা’র অভিযোগ তোলেন। অন্যদিকে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক। তাঁরা এটিকে ‘অসত্য, বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে সিনেট ভবনে সায়মার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন শেষে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার একসঙ্গে ভবন থেকে বের হন।

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দিকে তেড়ে এসেছিলেন। আশপাশের মানুষ না থামালে হয়তো হাতও তুলতেন। এটা কি লাঞ্ছনা নয়? মানুষকে শুধু শারীরিকভাবে আঘাত করলেই লাঞ্ছনা হয় না, আচরণগতভাবেও হতে পারে।’

বাইরে এসে তাঁরা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করছিলেন। একপর্যায়ে অধ্যাপক আমিনুল উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়িয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। এরপর বিষয়টি ‘শিক্ষক লাঞ্ছনা’ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সিসিটিভি ফুটেজে কোনো শারীরিক সংঘর্ষ বা আক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আলোচনার সময় অধ্যাপক আমিনুল কয়েকবার আমার দিকে তেড়ে আসেন। তবে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক তাঁকে শান্ত করেন। কেউ কারও গায়ে হাত তোলেননি। শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়া স্বাভাবিক। বিষয়টিকে লাঞ্ছনা হিসেবে উপস্থাপন করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘তদন্ত নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা হয়েছিল, আমি সবাইকে শান্ত করি। পরে শুনলাম বিষয়টি শিক্ষক লাঞ্ছনা হিসেবে প্রচার হচ্ছে—যা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।’

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে।’

অন্যদিকে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমি কেবল আমার বক্তব্য রাখছিলাম। কিন্তু আমার প্রতি যেভাবে আচরণ করা হয়েছে, তা একজন শিক্ষকের প্রতি অসম্মানজনক।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসেনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই ‘শিক্ষক লাঞ্ছনা’ ইস্যু সামনে আসে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবিতে রাত ১১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত