.png)
আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন
আজ ১৩ নভেম্বর বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তিনি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক; একই সঙ্গে নিখাদ যুক্তিবাদী ও পর্যবেক্ষক। কিন্তু তাঁর কল্পনার জগৎ এই যুক্তিবাদের সীমানা পেরিয়ে প্রবেশ করেছে এমন এক বিস্ময়বোধে ভরা 'ম্যাজিক্যাল রিয়ালিজমে'-এ, যেখানে বাস্তবতার সঙ্গে কুসংস্কার, যুক্তির সঙ্গে অযৌক্তিকতার সহাবস্থান ঘটে।

নাহিদা নাহিদ

যুক্তিহীন ও অনৈতিক সামাজিক আচার-আচরণকেই কুসংস্কার হিসেবে ধরা হয়। সাহিত্যে ধর্মীয় আচার, যজ্ঞ, দেবদেবীর পূজা, আত্মা ও পুনর্জন্মের বিশ্বাস থেকে এ বিষয়টির উদ্ভব। প্রাচীন যুগের রামায়ণে সীতার অপহরণের আগে ও মহাভারতে দুর্যোধনের জন্মের সময় অশুভ লক্ষণ বিচার থেকে শুরু করে মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যের দেব-দেবীর বর-দান, মুনি-ঋষির অভিশাপ, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানের স্বপ্ন, ভবিষ্যদ্বাণী, গায়েবী পরামর্শ, ভাগ্যের লিখন; এসবের উত্তরাধিকার হিসেবেই হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে কুসংস্কারের অনুপ্রবেশ।
হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক; একই সঙ্গে নিখাদ যুক্তিবাদী ও পর্যবেক্ষক। কিন্তু তাঁর কল্পনার জগৎ এই যুক্তিবাদের সীমানা পেরিয়ে প্রবেশ করেছে এমন এক বিস্ময়বোধে ভরা 'ম্যাজিক্যাল রিয়ালিজমে'-এ, যেখানে বাস্তবতার সঙ্গে কুসংস্কার, যুক্তির সঙ্গে অযৌক্তিকতার সহাবস্থান ঘটে। টি এস এলিয়ট ও জেমস জয়েস দার্শনিক সত্তা থেকে মানুষের ‘স্পিরিচ্যুয়ালি এম্পটি’ ধারনা পাওয়া যায়। এই আধ্যাত্মিক শূন্যতার জায়গা পূরণ করে কুসংস্কার। যা মানুষকে বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে অলৌকিক হওয়ার সুযোগ করে দেয়। হুমায়ূনের চরিত্ররা যুক্তিবাদী হলেও গভীরভাবে আধ্যাত্মিক; তারা প্রমাণ চায় না, চায় আশ্বাস। সেই আশ্বাসই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের কার্যকর উপশম। মিসির আলি ও হিমুকে ঘিরে যে দুই বিপরীতধর্মী বিশ্ব তিনি নির্মাণ করেছেন—সেখানে একদিকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ, অন্যদিকে অচেতন মনের অদৃশ্য বিশ্বাস; যা আসলে বাঙালি মনস্তত্ত্বের দ্বৈততারই শিল্পরূপ।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর দ্য ফিউচার অব এন ইলিউশন (১৯২৭) গ্রন্থে বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস বা কুসংস্কার আসলে একধরনের ‘কালেকটিভ নিউরোসিস’; যেখানে মানুষ ভয় ও অজানার প্রতিক্রিয়ায় বাস্তবতার বিকল্প কল্পনা তৈরি করে। এছাড়া তাঁর ‘ডিফেন্স মেকানিজম’ তত্ত্ব অনুযায়ী—যখন কোনো ব্যক্তি নিজের দুর্বলতা বা ব্যর্থতার বাস্তবতা মেনে নিতে পারে না, তখন সে ‘প্রজেকশন’ বা ‘রেশনালাইজেশন’-এর মাধ্যমে কারণ খোঁজে বাহ্যিক কোনো অদৃশ্য শক্তিতে। হুমায়ূনের চরিত্রদের কুসংস্কারও এই নিউরোটিক প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ। যেখানে তারা প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ হারানো জীবনের বিপরীতে কোনো প্রতীকী নিয়ন্ত্রণ খোঁজে; যেমন তাবিজ, পীর, গণক, মন্ত্র বা শুভদিন। এ সংক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি লেখার উদাহরণ এখানে বিশ্লেষণযোগ্য। জনম জনম, আশাবরী, অপেক্ষা উপন্যাসে দেখা যায় পরিবারের স্বামী, সন্তান ভাই নিরুদ্দেশ। তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান লাভের সহজ উপায় এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও আশাব্যঞ্জক নয়, তাই জনম জনম উপন্যাসের হিরু যখন বলে ‘পুলিশে-ফুলিশে হবে না। পীর সাহেবের কাছে যেতে হবে।’ তখন হুমায়ূন উপন্যাসের সব নিরুদ্দেশ ব্যক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য হয়ে যায়।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যাক্তিদের দুরারোগ্য ব্যাধি সারাইয়েও এই তত্ত্বই প্রযোজ্য। দ্বৈরথ উপন্যাসে কামালের বাচ্চাকাচ্চা নেই বলে তার মামা তাকে বলে: ‘তোর বাচ্চা হয় না কেন? অসুবিধাটা কি? ... পীর ফকিরের কাছে যা।’ নন্দিত নরকে উপন্যাসে রাবেয়ার পাগলামি ভালো করার প্রসঙ্গে রাবেয়ার মা খোকাকে প্রস্তাব করেন, ‘শুভাপুরে যাবি এক বার? শুভাপুরে এক পীর সাহেব থাকেন। পাগল ভালো করতে পারেন বলে খ্যাতি।’ আবার অচিনবৃক্ষ নামের গল্পে দেখা যায়, এই অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস পীরের কাছ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে গাছের প্রতি সমর্পিত হয়েছে। স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধিতে মান্যবর অতিথি যখন সান্ত্বনা বাক্য শোনায়: ‘আপনি ভাববেন না, আপনার স্ত্রী আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ তখন তিনি জড়ানো গলায় বললেন, ‘একটু দোয়া করবেন স্যার। ফুলটা যেন তাড়াতাড়ি ফুটে।’

এই ফুল হচ্ছে লোককথায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠা হাজার বছর বয়সী অচিনবৃক্ষের ফুল, যা অক্ষমের সব প্রার্থনা পূরণে সক্ষম।
পরীক্ষা পাসের ব্যাপারেও একই পরিস্থিতি হুমায়ূনের সাহিত্যে। ইস্টিশন উপন্যাসে দেখা যায় রঞ্জুর পরীক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কমে নিন্দালিশের পীর সাহেবের কারণে। রঞ্জুর ছোটভাই টগরের ভাষায়, ‘নিন্দালিশের পীরসাহেব সবাইকে এই তাবিজ দেন না। পীর সাহেবের এক মুরিদের হাতে পায়ে ধরে ভাইয়া তাবিজ জোগাড় করেছে। পরীক্ষা নিয়ে ভাইয়ার মনে সামান্য দুশ্চিন্তা ছিল। তাবিজ পাওয়ার পর দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। পীরের প্রতি এমন নির্ভরশীলতার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কার্ল ইয়ুংয়ের কালেকটিভ আনকনসাস তত্ত্ব প্রযোজ্য। ইয়ুং বলেন, মানুষ আদিকাল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু ‘আর্কিটাইপিক ইমেজ’ বহন করে। যেমন দেবতা, অশুভ আত্মা, অলৌকিক শক্তি; যা মানবমনে ‘শেয়ার্ড ইমাজিনেশন’-এর মাধ্যমে বারবার ফিরে আসে।
কুসংস্কারের সঙ্গে সব সময় শিক্ষা এবং শ্রেণির বিষয় জড়িত থাকে এমন নয়। আজ আমি কোথাও যাব না উপন্যাসে রাহেলার স্বামী ব্যবসায় মন্দা চলছে বলে জ্যোতিষীর কাছে যায়। উপন্যাসে বর্ণিত তার বক্তব্য, ‘লাক ফেবার করছে না। এক জ্যোতিষীকে হাত দেখিয়েছিলাম; সে বলল, আরও দুই বছর এই অবস্থা যাবে। তৃতীয় বছর থেকে পালে বাতাস লাগবে।’ বৃষ্টিবিলাস উপন্যাসের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মন্টু টাইফয়েড হওয়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করতে পারে না। মন্টুর ধারণা এবছরও তার সঙ্গে কোনো অঘটন ঘটবে। স্বপ্নে সে এমনটাই ইঙ্গিত পেয়েছে। আবার ময়ূরাক্ষী উপন্যাসে বাদলের নার্ভাস ব্রেক ডাউনের সমস্যায় সে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা নিয়ে সমস্যায় পড়ে। তার চিকিৎসায় ডাক্তারের ঔষধপত্রের সঙ্গে তাবিজ-কবচে বিশ্বাসী হয় বাদলের উচ্চশিক্ষিত মা-বাবা। বাদলের গলায়, হাতে কোমরে নানান মাপের তাবিজ ঝুলতে থাকে। এর মধ্যে একটা তাবিজ কোহকাফ নগরী থেকে জিনকে দিয়ে আনানো। বাদলের বাবা নাস্তিক ধরনের মানুষ এবং বেশ ভালো ডাক্তার। তিনিও কিছু বলেন না। কারণ, পুত্রের ব্যর্থতার কাছে তিনি অসহায়।
আবার হিমুর রূপালি রাত্রি উপন্যাসে হিমু তার ফাতেমা খালার জন্য গাবতলী থেকে একটা সাধারণ পাথর এনে দিয়ে তাকে বলে, এটা ইচ্ছেপূরণ পাথর। ফাতেমা খালা তা বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে। এবং কিছুদিন পর হিমুকে বলে, ‘পাথর নিয়ে শুরুতে তোর একটা কথাও আমি বিশ্বাস করিনি। ব্যবহার করে আমি হতভম্ব। [...] আমার তো রাতে ঘুম হতো না। পাথরটার কাছে ঘুম চাইলাম। এখন কোনো ওষুধ ছাড়া মরার মতো ঘুমুচ্ছি। রাত দশটায় বিছানায় যাই। পুরনো অভ্যাসমতো ভেড়া গুণতে শুরু করি। বললে বিশ্বাস করবি না চল্লিশটা ভেড়া গোনার আগেই ঘুম।’ এ প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক এমিল ডুরখেইম এলিমেন্টারি ফরমস অব দ্য রিলিজিয়াস লাইফ (১৯১২)-এ বলা, ‘সুপারস্টিশন ইজ আ সোশ্যাল ফ্যাক্ট’ কথাটা প্রযোজ্য। তাঁর মতে সমাজই ধর্মীয় বা কুসংস্কারমূলক আচরণ কাঠামো তৈরি করে। সেখানে শ্রেণি কোনো বিশেষ বিষয় হয়ে ওঠে না। এ ছাড়াও সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের ডিজএনচেন্টমেন্ট অব অব দ্য ওয়ার্ড ধারণা অনুযায়ী, আধুনিকতা মানুষের জগৎ থেকে অলৌকিকতাকে সরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মানসিকভাবে মানুষ কখনোই অলৌকিক বিশ্বাস হতে ‘ফুললি ডিজএজচ্যান্টেড’ হয়নি। তাই আধুনিক শিক্ষিত মানুষও সংকটে পড়লে প্রাচীন বিশ্বাসে ফিরে যায়—যেমন গিয়েছেন, মন্টু, রাহেলার স্বামী, বাদলের বাবা-মা কিংবা হিমুর ফাতেমা খালা।
হুমায়ূনের চরিত্ররা যখন, লক্ষণ, নজর, শুভ, অশুভ, লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী বিচার করে তখন তারা বাঙালি সংস্কৃতির ‘ ফোক রিলিজিওন’-এর পরিসরভুক্ত হয়ে যায়। আহমদ শরীফ যেমন বলেছেন, বাঙালির সংস্কৃতির উৎস অস্ট্রিক-দ্রাবিড়-আর্য মিশ্র ঐতিহ্যে নিহিত, যেখানে সর্বপ্রাণবাদ, জড়বাদ ও তন্ত্র-সাধনার প্রবল প্রভাব। বৃক্ষ, প্রাণী, নদী, মন্ত্র, দিন-ক্ষণ—সবই এই লোকবিশ্বাসের রূপ। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসেও এই লোকরূপই প্রত্যক্ষ। তাঁর উপন্যাসে তন্ত্র, মন্ত্র, লক্ষণের আবার রয়েছে বিচিত্র রূপ। আমিই মিসির আলি উপন্যাসে লিলিকে তার নানির কাছ থেকে শেখা মন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। সে প্রায় কুড়িটার মতো রান্নার মন্ত্র জানো। হুমায়ূন আহমেদের মীরার গ্রামের বাড়ি উপন্যাসে পাওয়া যায় মাছ ধরার জন্য ‘মাছমন্ত্র’ :
আয় জলি বায় জলি
জলির নামে মন্ত্র বলি ।
হাঁটু পানিতে রক্ষাকালী ।
রক্ষাকালীর নয় দরজা ।
মাছের রাজা জামজা ।
মীর পীরের দোহাই লাগে
সুতার আগায় মাছ লাগে ।
শুভ-অশুভ বোধের ব্যাপারেও হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখায় প্রচলিত লোক বিশ্বাসগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন। অপেক্ষা উপন্যাসে সুরাইয়া বেগম স্বামীকে হারায় বলে মেয়কে অপয়া ভেবে দেবরকে বলেন: 'মেয়েটা হচ্ছে অপয়া। ও পেটে আসার পর থেকে যত সমস্যা। আমার আর ভালো লাগে না।’ এছাড়া বিধবাদের যে সামাজিকভাবে অলক্ষ্মী বা অপয়া শ্রেণিতে গণ্য করার কুসংস্কার বাঙালি সমাজে বিদ্যমান, তা মধ্যাহ্ন উপন্যাসে দৃশ্যমান। এ উপন্যাসে দেখা যায় এককড়ি মন্দির নির্মাণ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করে। সেখানে এককড়ির মা নিজে বিধবা হয়েও মেয়ের দল দেখলেই খনখনে গলায় চিৎকার করে ওঠেন, ‘সাবধান বিধবারা কেউ কাছে যাবা না। সাবধান বিধবারা দূরে।’ মানুষের মতো পশু-পাখিকেও লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী ভাবার উদাহরণ রয়েছে হুমায়ূন সাহিত্যে।
হুমায়ূন আহমেদের এই শুভ্র এই উপন্যাসে শুভ্রর মায়ের মধ্যে শুভ-অশুভের বিষয়টি খুব প্রকট। তিনি শুভ্রর ঘরে আসা একটা কাক সম্পর্কে তার স্বামী মোতাহারকে বলেন, ‘কাকের বেশ ধরে অন্য কিছু আসছে। খারাপ জিনিস। কাকটা আসা শুরু করার পর থেকে শুভ্র কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে লক্ষ করছ না।’ আজ আমি কোথাও যাব না উপন্যাসে জয়নালের কাছে প্রতিটা দিনের বিপরীতে রয়েছে ভালো-মন্দের হিসাব, ‘সোমবার জয়নালের জন্য খুব ভালো দিন। তার জীবনে ভালো কিছু ঘটেনি। তারপরেও যা কিছু শুভ তা ঘটেছে সোমবারে। সর্বশেষ আমেরিকান ভিসা এটাও সোমবারে পাওয়া।’ এইসব দিনরাত্রি উপন্যাসের রফিক বিশ্বাস করে সপ্তাহের মধ্যে বুধবার তার জন্য লাকি ডে; বহুব্রীহি উপন্যাসে মনসুর মনে করে তিন তারিখটা তার জন্য খুব শুভ। কারণ, ‘মিলির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল তিন তারিখ। প্রথম যেদিন মিলি তাকে ডাক্তার হিসেবে তাদের বাড়িতে ডাকে ঐ দিনও ছিল তিন তারিখ।’ জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাস থেকে জানা যায় ‘বিয়ের শাড়ি বিয়ে ব্যতীত অন্য সময় পরা অলক্ষণ।’ আবার নীল মানুষ উপন্যাসের চরিত্রদের মুখেও বলতে শোনা যায়,‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মৃত মালিকের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখার রেওয়াজ নেই। এতে ব্যবসা কমে যায়।’
মূলত হুমায়ূন আহমেদের কুসংস্কারনির্ভর বাস্তবতা কোনো ‘অন্ধবিশ্বাসের’ প্রশ্রয় নয়, বরং একধরনের মানবিক আত্মসম্বোধন। চরিত্রেরা যখন অলৌকিকতায় আস্থা রাখে, তখন তারা নিজের ভেতরের শূন্যতার সঙ্গেই কথা বলে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘সাজেস্টিবিলিটি’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সহজ প্রবণতা’; যা দুর্বল মানসিক অবস্থায় মানুষকে সহজেই অলৌকিক আশ্বাসে প্রভাবিত করে। হুমায়ূন আহমেদ মানুষের এই বিশ্বাসকে তুচ্ছ করেন না; তিনি সেটিকে মানবমনের সৌন্দর্য হিসেবে দেখেন, যার ফলে তাঁর সাহিত্য যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বাসের কেন্দ্রভূমি হয়ে পড়ে।
লেখক: হুমায়ূন গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তিহীন ও অনৈতিক সামাজিক আচার-আচরণকেই কুসংস্কার হিসেবে ধরা হয়। সাহিত্যে ধর্মীয় আচার, যজ্ঞ, দেবদেবীর পূজা, আত্মা ও পুনর্জন্মের বিশ্বাস থেকে এ বিষয়টির উদ্ভব। প্রাচীন যুগের রামায়ণে সীতার অপহরণের আগে ও মহাভারতে দুর্যোধনের জন্মের সময় অশুভ লক্ষণ বিচার থেকে শুরু করে মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যের দেব-দেবীর বর-দান, মুনি-ঋষির অভিশাপ, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানের স্বপ্ন, ভবিষ্যদ্বাণী, গায়েবী পরামর্শ, ভাগ্যের লিখন; এসবের উত্তরাধিকার হিসেবেই হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে কুসংস্কারের অনুপ্রবেশ।
হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক; একই সঙ্গে নিখাদ যুক্তিবাদী ও পর্যবেক্ষক। কিন্তু তাঁর কল্পনার জগৎ এই যুক্তিবাদের সীমানা পেরিয়ে প্রবেশ করেছে এমন এক বিস্ময়বোধে ভরা 'ম্যাজিক্যাল রিয়ালিজমে'-এ, যেখানে বাস্তবতার সঙ্গে কুসংস্কার, যুক্তির সঙ্গে অযৌক্তিকতার সহাবস্থান ঘটে। টি এস এলিয়ট ও জেমস জয়েস দার্শনিক সত্তা থেকে মানুষের ‘স্পিরিচ্যুয়ালি এম্পটি’ ধারনা পাওয়া যায়। এই আধ্যাত্মিক শূন্যতার জায়গা পূরণ করে কুসংস্কার। যা মানুষকে বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে অলৌকিক হওয়ার সুযোগ করে দেয়। হুমায়ূনের চরিত্ররা যুক্তিবাদী হলেও গভীরভাবে আধ্যাত্মিক; তারা প্রমাণ চায় না, চায় আশ্বাস। সেই আশ্বাসই হয়ে ওঠে তাদের জীবনের কার্যকর উপশম। মিসির আলি ও হিমুকে ঘিরে যে দুই বিপরীতধর্মী বিশ্ব তিনি নির্মাণ করেছেন—সেখানে একদিকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ, অন্যদিকে অচেতন মনের অদৃশ্য বিশ্বাস; যা আসলে বাঙালি মনস্তত্ত্বের দ্বৈততারই শিল্পরূপ।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর দ্য ফিউচার অব এন ইলিউশন (১৯২৭) গ্রন্থে বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস বা কুসংস্কার আসলে একধরনের ‘কালেকটিভ নিউরোসিস’; যেখানে মানুষ ভয় ও অজানার প্রতিক্রিয়ায় বাস্তবতার বিকল্প কল্পনা তৈরি করে। এছাড়া তাঁর ‘ডিফেন্স মেকানিজম’ তত্ত্ব অনুযায়ী—যখন কোনো ব্যক্তি নিজের দুর্বলতা বা ব্যর্থতার বাস্তবতা মেনে নিতে পারে না, তখন সে ‘প্রজেকশন’ বা ‘রেশনালাইজেশন’-এর মাধ্যমে কারণ খোঁজে বাহ্যিক কোনো অদৃশ্য শক্তিতে। হুমায়ূনের চরিত্রদের কুসংস্কারও এই নিউরোটিক প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ। যেখানে তারা প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ হারানো জীবনের বিপরীতে কোনো প্রতীকী নিয়ন্ত্রণ খোঁজে; যেমন তাবিজ, পীর, গণক, মন্ত্র বা শুভদিন। এ সংক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি লেখার উদাহরণ এখানে বিশ্লেষণযোগ্য। জনম জনম, আশাবরী, অপেক্ষা উপন্যাসে দেখা যায় পরিবারের স্বামী, সন্তান ভাই নিরুদ্দেশ। তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান লাভের সহজ উপায় এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও আশাব্যঞ্জক নয়, তাই জনম জনম উপন্যাসের হিরু যখন বলে ‘পুলিশে-ফুলিশে হবে না। পীর সাহেবের কাছে যেতে হবে।’ তখন হুমায়ূন উপন্যাসের সব নিরুদ্দেশ ব্যক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য হয়ে যায়।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যাক্তিদের দুরারোগ্য ব্যাধি সারাইয়েও এই তত্ত্বই প্রযোজ্য। দ্বৈরথ উপন্যাসে কামালের বাচ্চাকাচ্চা নেই বলে তার মামা তাকে বলে: ‘তোর বাচ্চা হয় না কেন? অসুবিধাটা কি? ... পীর ফকিরের কাছে যা।’ নন্দিত নরকে উপন্যাসে রাবেয়ার পাগলামি ভালো করার প্রসঙ্গে রাবেয়ার মা খোকাকে প্রস্তাব করেন, ‘শুভাপুরে যাবি এক বার? শুভাপুরে এক পীর সাহেব থাকেন। পাগল ভালো করতে পারেন বলে খ্যাতি।’ আবার অচিনবৃক্ষ নামের গল্পে দেখা যায়, এই অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস পীরের কাছ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে গাছের প্রতি সমর্পিত হয়েছে। স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধিতে মান্যবর অতিথি যখন সান্ত্বনা বাক্য শোনায়: ‘আপনি ভাববেন না, আপনার স্ত্রী আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ তখন তিনি জড়ানো গলায় বললেন, ‘একটু দোয়া করবেন স্যার। ফুলটা যেন তাড়াতাড়ি ফুটে।’

এই ফুল হচ্ছে লোককথায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠা হাজার বছর বয়সী অচিনবৃক্ষের ফুল, যা অক্ষমের সব প্রার্থনা পূরণে সক্ষম।
পরীক্ষা পাসের ব্যাপারেও একই পরিস্থিতি হুমায়ূনের সাহিত্যে। ইস্টিশন উপন্যাসে দেখা যায় রঞ্জুর পরীক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কমে নিন্দালিশের পীর সাহেবের কারণে। রঞ্জুর ছোটভাই টগরের ভাষায়, ‘নিন্দালিশের পীরসাহেব সবাইকে এই তাবিজ দেন না। পীর সাহেবের এক মুরিদের হাতে পায়ে ধরে ভাইয়া তাবিজ জোগাড় করেছে। পরীক্ষা নিয়ে ভাইয়ার মনে সামান্য দুশ্চিন্তা ছিল। তাবিজ পাওয়ার পর দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। পীরের প্রতি এমন নির্ভরশীলতার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কার্ল ইয়ুংয়ের কালেকটিভ আনকনসাস তত্ত্ব প্রযোজ্য। ইয়ুং বলেন, মানুষ আদিকাল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু ‘আর্কিটাইপিক ইমেজ’ বহন করে। যেমন দেবতা, অশুভ আত্মা, অলৌকিক শক্তি; যা মানবমনে ‘শেয়ার্ড ইমাজিনেশন’-এর মাধ্যমে বারবার ফিরে আসে।
কুসংস্কারের সঙ্গে সব সময় শিক্ষা এবং শ্রেণির বিষয় জড়িত থাকে এমন নয়। আজ আমি কোথাও যাব না উপন্যাসে রাহেলার স্বামী ব্যবসায় মন্দা চলছে বলে জ্যোতিষীর কাছে যায়। উপন্যাসে বর্ণিত তার বক্তব্য, ‘লাক ফেবার করছে না। এক জ্যোতিষীকে হাত দেখিয়েছিলাম; সে বলল, আরও দুই বছর এই অবস্থা যাবে। তৃতীয় বছর থেকে পালে বাতাস লাগবে।’ বৃষ্টিবিলাস উপন্যাসের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মন্টু টাইফয়েড হওয়ার কারণে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করতে পারে না। মন্টুর ধারণা এবছরও তার সঙ্গে কোনো অঘটন ঘটবে। স্বপ্নে সে এমনটাই ইঙ্গিত পেয়েছে। আবার ময়ূরাক্ষী উপন্যাসে বাদলের নার্ভাস ব্রেক ডাউনের সমস্যায় সে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা নিয়ে সমস্যায় পড়ে। তার চিকিৎসায় ডাক্তারের ঔষধপত্রের সঙ্গে তাবিজ-কবচে বিশ্বাসী হয় বাদলের উচ্চশিক্ষিত মা-বাবা। বাদলের গলায়, হাতে কোমরে নানান মাপের তাবিজ ঝুলতে থাকে। এর মধ্যে একটা তাবিজ কোহকাফ নগরী থেকে জিনকে দিয়ে আনানো। বাদলের বাবা নাস্তিক ধরনের মানুষ এবং বেশ ভালো ডাক্তার। তিনিও কিছু বলেন না। কারণ, পুত্রের ব্যর্থতার কাছে তিনি অসহায়।
আবার হিমুর রূপালি রাত্রি উপন্যাসে হিমু তার ফাতেমা খালার জন্য গাবতলী থেকে একটা সাধারণ পাথর এনে দিয়ে তাকে বলে, এটা ইচ্ছেপূরণ পাথর। ফাতেমা খালা তা বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে। এবং কিছুদিন পর হিমুকে বলে, ‘পাথর নিয়ে শুরুতে তোর একটা কথাও আমি বিশ্বাস করিনি। ব্যবহার করে আমি হতভম্ব। [...] আমার তো রাতে ঘুম হতো না। পাথরটার কাছে ঘুম চাইলাম। এখন কোনো ওষুধ ছাড়া মরার মতো ঘুমুচ্ছি। রাত দশটায় বিছানায় যাই। পুরনো অভ্যাসমতো ভেড়া গুণতে শুরু করি। বললে বিশ্বাস করবি না চল্লিশটা ভেড়া গোনার আগেই ঘুম।’ এ প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক এমিল ডুরখেইম এলিমেন্টারি ফরমস অব দ্য রিলিজিয়াস লাইফ (১৯১২)-এ বলা, ‘সুপারস্টিশন ইজ আ সোশ্যাল ফ্যাক্ট’ কথাটা প্রযোজ্য। তাঁর মতে সমাজই ধর্মীয় বা কুসংস্কারমূলক আচরণ কাঠামো তৈরি করে। সেখানে শ্রেণি কোনো বিশেষ বিষয় হয়ে ওঠে না। এ ছাড়াও সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের ডিজএনচেন্টমেন্ট অব অব দ্য ওয়ার্ড ধারণা অনুযায়ী, আধুনিকতা মানুষের জগৎ থেকে অলৌকিকতাকে সরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মানসিকভাবে মানুষ কখনোই অলৌকিক বিশ্বাস হতে ‘ফুললি ডিজএজচ্যান্টেড’ হয়নি। তাই আধুনিক শিক্ষিত মানুষও সংকটে পড়লে প্রাচীন বিশ্বাসে ফিরে যায়—যেমন গিয়েছেন, মন্টু, রাহেলার স্বামী, বাদলের বাবা-মা কিংবা হিমুর ফাতেমা খালা।
হুমায়ূনের চরিত্ররা যখন, লক্ষণ, নজর, শুভ, অশুভ, লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী বিচার করে তখন তারা বাঙালি সংস্কৃতির ‘ ফোক রিলিজিওন’-এর পরিসরভুক্ত হয়ে যায়। আহমদ শরীফ যেমন বলেছেন, বাঙালির সংস্কৃতির উৎস অস্ট্রিক-দ্রাবিড়-আর্য মিশ্র ঐতিহ্যে নিহিত, যেখানে সর্বপ্রাণবাদ, জড়বাদ ও তন্ত্র-সাধনার প্রবল প্রভাব। বৃক্ষ, প্রাণী, নদী, মন্ত্র, দিন-ক্ষণ—সবই এই লোকবিশ্বাসের রূপ। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসেও এই লোকরূপই প্রত্যক্ষ। তাঁর উপন্যাসে তন্ত্র, মন্ত্র, লক্ষণের আবার রয়েছে বিচিত্র রূপ। আমিই মিসির আলি উপন্যাসে লিলিকে তার নানির কাছ থেকে শেখা মন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। সে প্রায় কুড়িটার মতো রান্নার মন্ত্র জানো। হুমায়ূন আহমেদের মীরার গ্রামের বাড়ি উপন্যাসে পাওয়া যায় মাছ ধরার জন্য ‘মাছমন্ত্র’ :
আয় জলি বায় জলি
জলির নামে মন্ত্র বলি ।
হাঁটু পানিতে রক্ষাকালী ।
রক্ষাকালীর নয় দরজা ।
মাছের রাজা জামজা ।
মীর পীরের দোহাই লাগে
সুতার আগায় মাছ লাগে ।
শুভ-অশুভ বোধের ব্যাপারেও হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখায় প্রচলিত লোক বিশ্বাসগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন। অপেক্ষা উপন্যাসে সুরাইয়া বেগম স্বামীকে হারায় বলে মেয়কে অপয়া ভেবে দেবরকে বলেন: 'মেয়েটা হচ্ছে অপয়া। ও পেটে আসার পর থেকে যত সমস্যা। আমার আর ভালো লাগে না।’ এছাড়া বিধবাদের যে সামাজিকভাবে অলক্ষ্মী বা অপয়া শ্রেণিতে গণ্য করার কুসংস্কার বাঙালি সমাজে বিদ্যমান, তা মধ্যাহ্ন উপন্যাসে দৃশ্যমান। এ উপন্যাসে দেখা যায় এককড়ি মন্দির নির্মাণ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করে। সেখানে এককড়ির মা নিজে বিধবা হয়েও মেয়ের দল দেখলেই খনখনে গলায় চিৎকার করে ওঠেন, ‘সাবধান বিধবারা কেউ কাছে যাবা না। সাবধান বিধবারা দূরে।’ মানুষের মতো পশু-পাখিকেও লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী ভাবার উদাহরণ রয়েছে হুমায়ূন সাহিত্যে।
হুমায়ূন আহমেদের এই শুভ্র এই উপন্যাসে শুভ্রর মায়ের মধ্যে শুভ-অশুভের বিষয়টি খুব প্রকট। তিনি শুভ্রর ঘরে আসা একটা কাক সম্পর্কে তার স্বামী মোতাহারকে বলেন, ‘কাকের বেশ ধরে অন্য কিছু আসছে। খারাপ জিনিস। কাকটা আসা শুরু করার পর থেকে শুভ্র কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে লক্ষ করছ না।’ আজ আমি কোথাও যাব না উপন্যাসে জয়নালের কাছে প্রতিটা দিনের বিপরীতে রয়েছে ভালো-মন্দের হিসাব, ‘সোমবার জয়নালের জন্য খুব ভালো দিন। তার জীবনে ভালো কিছু ঘটেনি। তারপরেও যা কিছু শুভ তা ঘটেছে সোমবারে। সর্বশেষ আমেরিকান ভিসা এটাও সোমবারে পাওয়া।’ এইসব দিনরাত্রি উপন্যাসের রফিক বিশ্বাস করে সপ্তাহের মধ্যে বুধবার তার জন্য লাকি ডে; বহুব্রীহি উপন্যাসে মনসুর মনে করে তিন তারিখটা তার জন্য খুব শুভ। কারণ, ‘মিলির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল তিন তারিখ। প্রথম যেদিন মিলি তাকে ডাক্তার হিসেবে তাদের বাড়িতে ডাকে ঐ দিনও ছিল তিন তারিখ।’ জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাস থেকে জানা যায় ‘বিয়ের শাড়ি বিয়ে ব্যতীত অন্য সময় পরা অলক্ষণ।’ আবার নীল মানুষ উপন্যাসের চরিত্রদের মুখেও বলতে শোনা যায়,‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মৃত মালিকের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখার রেওয়াজ নেই। এতে ব্যবসা কমে যায়।’
মূলত হুমায়ূন আহমেদের কুসংস্কারনির্ভর বাস্তবতা কোনো ‘অন্ধবিশ্বাসের’ প্রশ্রয় নয়, বরং একধরনের মানবিক আত্মসম্বোধন। চরিত্রেরা যখন অলৌকিকতায় আস্থা রাখে, তখন তারা নিজের ভেতরের শূন্যতার সঙ্গেই কথা বলে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘সাজেস্টিবিলিটি’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সহজ প্রবণতা’; যা দুর্বল মানসিক অবস্থায় মানুষকে সহজেই অলৌকিক আশ্বাসে প্রভাবিত করে। হুমায়ূন আহমেদ মানুষের এই বিশ্বাসকে তুচ্ছ করেন না; তিনি সেটিকে মানবমনের সৌন্দর্য হিসেবে দেখেন, যার ফলে তাঁর সাহিত্য যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বাসের কেন্দ্রভূমি হয়ে পড়ে।
লেখক: হুমায়ূন গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.png)

আজ ১৩ নভেম্বর বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। কাগজে-কলমে, সাহিত্যে, কথায়, কৌতুক ও গল্পে বারবার তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন জাদু।
১ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণের চমৎকার শহর উসুয়াইয়া এসে পৌঁছেছি। আর্জেন্টিনার শেষ প্রান্তে পৃথিবীর দক্ষিণতম এই শহরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো যেন এক অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জগতে প্রবেশ করলাম। চারপাশে চোখ পৌঁছাচ্ছে না এমন বিস্তৃত দৃশ্য: পাহাড়, বরফ, সমুদ্র এবং সবুজের এক অনন্য মিশেল।
১৭ ঘণ্টা আগে
আগামীকাল (১৩ নভেম্বর) হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন। হিমুর পাগলামি, মিসির আলীর যুক্তিবাদ আর শুভ্রর নীরবতায় আমরা তাঁকে চিনি। কিন্তু তাঁর ভেতরে ছিল আরও অনেক অচেনা রূপ। আজ আমরা খুঁজব সেই অচেনা হুমায়ূনকে।
২০ ঘণ্টা আগে
১৯৫৬ সালের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকের ১৬তম আসর বসেছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। ২২ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা সেই অলিম্পিকের একটি ওয়াটার পোলো ম্যাচ ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। এই ম্যাচটি রাজনৈতিকভাবেও বেশ উত্তাপ ছড়ায় এবং অলিম্পিকের ইতিহাসে এই ঘটনাটি ‘ব্লাড ইন দ্য ওয়াটার’ নামে পরিচিত।
১ দিন আগে