leadT1ad

ভালোবেসে ‘ভালো’ হয়ে যাওয়া: আইরিস মারডক, নৈতিকতা ও প্রেম

নৈতিকতার মূলে কী আছে? মানবতা? সামাজিক-ধর্মীয় রীতিনীতি? কোনো আধ্যাত্মিক দর্শন? বোধিপ্রাপ্তি? লেখক-দার্শনিক আইরিস মারডকের মতে নৈতিকতার চালিকাশক্তি এসব কিছুই নয়, বরং ভালবাসা। ভালবাসা অপরজনকে আপনজন বানায়, ‘অন্য’-কে বুঝতে শেখায়। কঠিন পোলারিটির যুগে ফিরে দেখা মারডকের ভাবনাকে। কলিকালে মারডকের চিন্তা আদৌ কি সেকেলে?

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৩১
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১১
ভালোবেসে ‘ভালো’ হয়ে যাওয়া: আইরিস মারডক, নৈতিকতা ও প্রেম। স্ট্রিম গ্রাফিক

প্রেমে পড়ার মত ইন্টেন্স অভিজ্ঞতা জীবনে খুব কমই হয়। এটা আমাদের ভেতরটা এমনভাবে নাড়িয়ে দেয় যে নিজেকে, অন্যকে, এমনকি পুরো দুনিয়াকে আমরা নতুন চোখে দেখতে শুরু করি।

সিনেমা-সাহিত্যে প্রায়ই দেখবেন, ভালোবাসা কীভাবে মানুষের জীবন ওলটপালট করে দেয় (রোমিও-জুলিয়েটের কথাই ভাবুন না)। তবে এই ব্যাপারটা শুধু প্রেমের ক্ষেত্রেই খাটে না। যেমন, অনেক বাবা-মা বলেন, সন্তানকে প্রথমবার দেখার সাথে সাথেই তারা তীব্র ভালোবাসায় ভেসে গিয়েছিলেন।

আপাতদৃষ্টিতে, এই অনুভূতির সাথে নৈতিকতার কোনো লেনাদেনা নেই। ইমানুয়েল কান্ট দ্বারা প্রভাবিত অনেক চিন্তাবিদের মতে, নৈতিকতার জগতে আবেগের কোনো জায়গা নেই। তাদের কাছে নৈতিকতা অর্থ অন্যকে সাহায্য করা। এই ‘অন্য’ কে, তাকে আপনি পছন্দ করেন কি না, বা তার সাথে আপনার কোনো মনের টান আছে কি না—এসব কোনো বিষয় না। এই ভাবধারা অনুযায়ী, নৈতিকতা হলো অন্যের প্রতি আমাদের দায়িত্ব, বা আমাদের কাছে তাদের পাওনা।

অন্যদিকে ভালোবাসা (সেটা প্রেম, বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন যেটাই হোক) বড়ই খামখেয়ালি এবং ব্যক্তিগত। এর মতিগতি বোঝা কঠিন। আমরা যে কোনো কারণে প্রেমে পড়তে পারি—রোমিও আর জুলিয়েটের লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। এটা কেউ জোর করে চাইতেও পারে না, কারণ এর ওপর আমাদের কোনো হাত নেই।

এ কারণেই লোকে ভাবে, ভালোবাসা (যা কিনা ব্যক্তিগত ও খামখেয়ালি) আর নৈতিকতা (যা সবার জন্য সমান) দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। ভালোবাসা মানেই তো একজনকে আলাদা চোখে দেখা। আর নৈতিকতা হলো সবাইকে সমান চোখে দেখা। তাই মনে হতেই পারে, এ দুটো জিনিস আসলে একে অপরের উল্টো। সত্যি বলতে, আজকের দিনের খুব কম নীতিবিদই তাদের লেখায় ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেন।

ভালোবাসা মানেই তো একজনকে আলাদা চোখে দেখা। আর নৈতিকতা হলো সবাইকে সমান চোখে দেখা। তাই মনে হতেই পারে, এ দুটো জিনিস আসলে একে অপরের উল্টো। সত্যি বলতে, আজকের দিনের খুব কম নীতিবিদই তাদের লেখায় ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেন।

কিন্তু দার্শনিক আর ঔপন্যাসিক আইরিস মারডক আবার অন্য কথা বলেন। তাঁর দাবি, ভালোবাসা নৈতিকতার সাথে শুধু আলগাভাবে জড়িত না, বরং এটাই নৈতিকতার একেবারে মূল কথা।

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত দুটো প্রবন্ধের শুরুই হয়েছে এই কথা দিয়ে। ১৯৬২ সালে তার লেখা দ্য আইডিয়া অফ পারফেকশন-এ তিনি বলেন, ‘নৈতিকতার মূল ধারণাই হলো ভালোবাসা’। এরপর ১৯৬৯ সালে‘অন ‘গড’ অ্যান্ড গুড’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘আমাদের এমন এক নৈতিকতার দর্শন দরকার, যেখানে ভালোবাসা আবারও আলোচনার কেন্দ্রে আসবে। অথচ আজকালকার দার্শনিকরা ভালোবাসার কথা ভুলেই গেছেন।’

সোজা কথায়, তিনি বলতে চান, আমাদের বাস্তব জীবনের ভালোবাসা হয়তো সব সময় অতটা খাঁটি হয় না। কিন্তু মন দিয়ে কাউকে ভালোবাসা, বা কারো দিকে মনোযোগ দেওয়া—এটাই হলো নৈতিকতার আসল ভিত্তি।

মারডক কেন ভালোবাসাকে নৈতিকতার মূল বলে মনে করেন, সেটা বুঝতে হলে আগে একটা বড় প্রশ্ন করা দরকার: নৈতিকতা জিনিসটা আসলে কী?

মারডকের উত্তর হলো, আমাদের নৈতিক জীবনের একেবারে কেন্দ্রে আছে দুনিয়াকে দেখার ভঙ্গি, আমাদের ‘দৃষ্টি’। আমরা সারাক্ষণই কোনো না কোনো কিছু দেখছি, কোনো না কোনোভাবে। আর দেখতে গিয়েই আমরা হয় সেটার একটা পরিষ্কার, ন্যায্য আর সত্যিকারের ছবি তৈরি করি, অথবা পুরো ছবিটাকেই ঘেঁটে ফেলি, বিকৃত করে দেখি। এই ঘটনা আমাদের জীবনে চলতেই থাকে।

তিনি মনে করেন, আমরা দুনিয়াটাকে যেভাবে দেখি, আমাদের কাজও ঠিক সেভাবেই নির্ধারিত হয়। যেমন, আমি যদি আপনাকে শত্রু ভাবি, তাহলে আপনার সাথে শত্রুর মতো ব্যবহার করব। কিন্তু আপনাকে যদি বন্ধু ভাবার সুযোগ থাকত, তাহলে আমি নিজে থেকেই আপনার সাথে মন খুলে মিশতাম, আপনার যত্ন নিতাম।

রহস্যময় কন্সপিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করা, অথবা অমূলক কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে থাকা। এগুলো নানাভাবে মানুষের ইগোকে খোরাক জোগাতে পারে। যেমন, তাদের মনে হয়, তারা এমন কিছু জানে যা অন্যেরা জানে না।

এই কারণেই তিনি মনে করেন, নৈতিকতার আসল কাজ কোনো কিছু বেছে নেওয়া বা সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং মনোযোগ দেওয়া। এই ভাবনাটা তিনি পেয়েছেন আরেক দার্শনিক, সিমোন ওয়েল-এর কাছ থেকে। মারডকের মতে, আমাদের সবচেয়ে বেসিক নৈতিক কাজই হলো কোনো কিছুর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। কারণ এই মনোযোগই ঠিক করে দেয়, আমরা দুনিয়াটাকে কেমন চোখে দেখব।

কিন্তু কেন আমরা অন্যদের ভুলভাবে দেখি? কেন তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা প্রায়ই ঠিক হয় না?

মারডক বলেন, এর পেছনের আসল ‘ভিলেন’ হলো আমাদের ‘ইগো’ বা অহং। তাঁর মতে, এই ইগো আমাদেরকে সত্যিটা দেখতে দেয় না। কারণ এটা নিজেকে ধোঁকা দিতে শেখায়, কল্পনার জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই সব আকাশ-কুসুম ভাবনার জন্য আমরা অন্যদের আসল রূপটা দেখতেই পাই না। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা তৈরি হয় সামাজিক রীতিনীতি আর মারডখের ভাষায় ‘নিউরোসিস’ বা মানসিক অস্থিরতার কারণে।

ফ্রয়েডের ধারণার ওপর কিছুটা ভর দিয়ে মারডক মানুষের মনকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইগো একটা অ্যাংশাস এবং আত্মকেন্দ্রিক বস্তু। সে কেবল নিজের মধ্যেই ডুবে থাকে আর যে কোনো মূল্যে নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত।

ফলে, যা কিছু তার নিজের সাথে সরাসরি জড়িত নয় বা তার জন্য অসুবিধাজনক, সেটাকে সে হয় পাত্তা দেয় না, নয়তো নিজের মতো করে বদলে নেয়। এর জন্য যদি বাস্তবতাকেও অস্বীকার করতে হয়, তাতেও তার আপত্তি নেই। ১৯৭০ সালে লেখা দ্য সভরেন্টি অফ গুড ওভার আদার কনসেপ্টস-এ মারডক লেখেন:

আমরা আসলে উদ্বিগ্ন এক প্রাণী। আমাদের মন সারাক্ষণই কিছু না কিছু ভেবে চলেছে। আর তৈরি করছে উদ্বেগের এক পর্দা, যা বেশিরভাগ সময় আত্মকেন্দ্রিক আর মিথ্যা। এই পর্দাটাই আমাদের চোখের সামনের দুনিয়াকে অনেকটুকু আড়াল করে রাখে।

ইগো অন্তর্মুখী। এটা আমাদের নিজেদের ভাবনার গভীরে টেনে নিয়ে যায়। আর তা করতে গিয়ে বাকি সবকিছুকে ঝাপসা করে দেয়।

এভাবেই এটা আমাদের মনোযোগ আর দেখার ক্ষমতা, দুটোকেই নষ্ট করে দেয়। যে জিনিসগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর দিকে আমাদের তাকাতে দেয় না। আবার, যা আমাদের ঠিকভাবে দেখা উচিত (এবং আমরা দেখতে পারতাম), সেটাকে আমাদের চোখে বাঁকা করে তোলে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা আমাদের অন্য মানুষকেও বুঝতে দেয় না।

আইরিস মারডক। ছবি: গ্রাহাম উড/ডেইলি মেইল।
আইরিস মারডক। ছবি: গ্রাহাম উড/ডেইলি মেইল।

মারডক লিখেছেন, নৈতিকতার (এবং শিল্পেরও) পথে সেরা হওয়ার সবচেয়ে বড় বাধা হলো আত্মকেন্দ্রীক খেয়াল: নিজেকে বড় করে দেখানো, সান্ত্বনা দেওয়ার ইচ্ছা আর স্বপ্নের এক জাল, যা আমাদের বাইরের আসল জগৎটা দেখতে দেয় না।

মারডক লিখছেন, কল্পনার জগৎ থেকে আত্মার মুক্তি ঘটে ভালোবাসার ক্ষমতার মাধ্যমে।

এই কল্পনার জগতে থাকার কিছু জলজ্যান্ত উদাহরণ আছে। যেমন, রহস্যময় কন্সপিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করা, অথবা অমূলক কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে থাকা। এগুলো নানাভাবে মানুষের ইগোকে খোরাক জোগাতে পারে। যেমন, তাদের মনে হয়, তারা এমন কিছু জানে যা অন্যরা জানে না। সমাজে তাদের যা অবস্থান, তা নিয়ে তাদের আত্মতুষ্টিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এই যে আমরা নিজেদের ইগোর জালে আটকে থাকি আর অন্যদের ঠিকমতো দেখতে পাই না—এই ভাবনাটা বেশ হতাশাজনক শোনায়। তাহলে কীভাবে আমরা এই ইগোকে জয় করতে পারি আর একে অপরকে ঠিকভাবে দেখতে পারি? এই কল্পনার জগৎ থেকে বেরোতে মারডকের টোটকা কী?

তিনি জোর দিয়ে বলেন, নৈতিকভাবে এগোতে গেলে ভালোবাসাকে নতুন করে চিনতে হবে।

মারডকের মতে, আমাদের নিজেদের স্বার্থের দিকে মন দেওয়ার যে ঝোঁক, তা থেকে বেরোতে হলে এমন কিছু দরকার যা আমাদের বাইরের দিকে টানে, অন্যদের বাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়।

কিন্তু কী সেই জিনিস যা আমাদের এভাবে বাইরের দিকে টানতে পারে?

সেটা হলো, মনোযোগ সহিত ভালোবাসা। মানে, অন্যের দিকে মন দেওয়া—একটু ন্যায্যভাবে, ধৈর্য ধরে, আর উদার মনে। মারডক লিখছেন, কল্পনার জগৎ থেকে আত্মার মুক্তি ঘটে ভালোবাসার ক্ষমতার মাধ্যমে।

যখন আমরা ভালোবেসে অন্যের দিকে মনোযোগ দিই, আমরা তাদের গুরুত্ব দিই তাদের নিজেদের গুণের জন্য, আমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য নয়। মারডক বলেন, এটাই আমাদের কল্পনার জাল থেকে মুক্তি দেয়।দৃষ্টি তো প্রায়ই ইগোর কল্পনায় ঘোলাটে হয়ে থাকে। ভালোবাসার মনোযোগ হলো এমন এক গভীর দৃষ্টি, যা জিনিসগুলোকে তার আসল রূপে দেখতে শেখায়।

এটাই হলো ভালোবাসার মনোযোগের চর্চা—ইগোকে পাশে সরিয়ে রেখে অন্যের বাস্তবতাকে বুঝতে চেষ্টা করা।

উপায়টা হল, অন্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া। যদিও কাজটা কঠিন, তবু আমরা চেষ্টা করে নিজেদের হাজারও কাজ আর ভাবনার ভিড়ে কিছুটা সময় আর শক্তি বের করে এনে অন্যদের দিকে মন দিতে পারি। যেমন ধরুন, কেউ ভীষণ অহংকারী। কিন্তু তার দিকে মনোযোগ দিলে হয়তো আমি বুঝতে পারব যে, তার এই অহংকার আসলে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার লক্ষণ। আর এই বোধই আমাকে তার সাথে আরও গভীর মমতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেবে।

মারডক ভালোবাসার এই শক্তিশালী দিকটাকে গ্রহণ করেছেন। তার মতে, ভালোবাসাকে অনেক শক্তিশালী হতে হয়, যাতে সে আমাদের কল্পনার জগতের তীব্র টানকে হারাতে পারে। আমরা কল্পনার জগতে থাকতে চাই কারণ এটা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক চাহিদা আর ইচ্ছাকে তৃপ্তি দেয়। কিন্তু ভালোবাসা এতটাই শক্তিশালী যে সে এই টানকে হারিয়ে দিতে পারে। সে আমাদের নিজেদের ভেতর থেকে বের করে এনে বাস্তবের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এভাবে আমাদের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে, ভালোবাসা আমাদের অন্যদের আসল রূপে দেখতে আর তাদের সাথে সেভাবে ব্যবহার করতে শেখায়।

আর মারডকের মতে, এটাই হলো নৈতিকতার মূল কথা।

কিন্তু ভালোবাসা কি বিপজ্জনক হতে পারে না? আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে না?

মারডকও মানছেন, হ্যাঁ, তা পারে। রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের কথাই ধরুন না। গল্পের শুরুতে রোমিও তো রোজালিনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। কিন্তু জুলিয়েটকে দেখার সাথে সাথেই সে সব ভুলে গেল।

সাধারণ ভালোবাসা আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় তা হয় অন্ধ আর স্বার্থপর। কিন্তু মারডক বলেন, ভালোবাসা আমাদের ভুল পথে নেয় তখনই, যখন তা কোনো মানুষের দিকে না গিয়ে, একটা ভ্রম বা কল্পনার পেছনে ছোটে। মানে, ভালোবাসা তার আসল লক্ষ্য থেকেই সরে যায়।

যে ভালোবাসা আমাদের ভুল পথে ঠেলে দেয়, তা আসলে ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ ভালোবাসা। অন্যদিকে, মনোযোগ দিয়ে ভালোবাসাই হলো আসল ভালোবাসা। মারডকের মতে, খাঁটি ভালোবাসা মানে হলো অন্যের সঙ্গে সত্যিকারের একটা যোগসূত্র তৈরি করা, কোনো কল্পনার সাথে নয়। যে ভালোবাসায় অন্যের দিকে মনোযোগই নেই, সেটা আসলে ভালোবাসাই নয়।

আর আজকের দিনে শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই যে ‘ভালোবাসাই নৈতিকতার মূল কথা’—এই ধারণাটা হাজার হাজার বছর ধরে অনেক ধর্ম আর সংস্কৃতির একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে। যেমন— ইহুদি, খ্রিস্টান আর বৌদ্ধ ধর্মে।

নৈতিকতার আসল কাজ কোনো কিছু বেছে নেওয়া বা সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং মনোযোগ দেওয়া। এই ভাবনাটা তিনি পেয়েছেন আরেক দার্শনিক, সিমোন ওয়েল-এর কাছ থেকে। মারডকের মতে, আমাদের সবচেয়ে বেসিক নৈতিক কাজই হলো কোনো কিছুর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। কারণ এই মনোযোগই ঠিক করে দেয়, আমরা দুনিয়াটাকে কেমন চোখে দেখব।

এভাবে দেখলে, রোমিও আর জুলিয়েটের ওই দুর্ভাগ্যজনক ভালোবাসাকে শুধু ব্যক্তিগত খামখেয়াল বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বরং একে সেই দুর্লভ মুহূর্তের স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে, যখন কোনো বিকৃতি ছাড়াই আমরা অন্য মানুষের অমূল্য গুরুত্ব বুঝতে পারি।

কিন্তু আজকের দিনে এই কথার মাজেজা কী? আর কীভাবে আমরা এই মনোযোগ দিয়ে ভালোবাসার চর্চা করতে পারি?

মারডক বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, এর কোনো ঝটপট সমাধান নেই, যা দিয়ে এক মুহূর্তে সব হয়ে যাবে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে ভালোবাসার এই চর্চাটা আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারি, একে আরও শক্তিশালী করতে পারি। আমাদের ওপর ইগোর যে দখল, তা চিরস্থায়ী নয়। আমরা একটু একটু করে এর ফাঁসটা আলগা করতে পারি।

উপায়টা হল, অন্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া। যদিও কাজটা কঠিন, তবু আমরা চেষ্টা করে নিজেদের হাজারও কাজ আর ভাবনার ভিড়ে কিছুটা সময় আর শক্তি বের করে এনে অন্যদের দিকে মন দিতে পারি। যেমন ধরুন, কেউ ভীষণ অহংকারী। কিন্তু তার দিকে মনোযোগ দিলে হয়তো আমি বুঝতে পারব যে, তার এই অহংকার আসলে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার লক্ষণ। আর এই বোধই আমাকে তার সাথে আরও গভীর মমতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেবে।

যখন আমরা কোনো নতুন দক্ষতা শিখি বা কোনো শিল্পকর্ম মন দিয়ে দেখি, তখন আমরা নিজেদের বাইরে অন্য কোনো কিছুর ওপর মনোযোগ দিতে শিখি, চেষ্টা করি সেটাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে। এই অবস্থায়, যে নতুন শিখছে, তাকে বিনয়ী হতে হয়। তাকে এটা মানতে হয় যে, তার প্রথম ধারণাগুলো ভুলও হতে পারে এবং তার জানাশোনা এখনও অসম্পূর্ণ।

মারডকের মতে, মনোযোগ দিয়ে ভালোবাসা আমাদের সবার পক্ষেই সম্ভব। দরকার শুধু চর্চার। অতৃপ্ত ইগোটার কাছ থেকে নিজেদের টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে অন্যের কঠিন বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি ঘোরানো।

মূললেখা: হোয়াই লাভ ম্যাটারস মোস্ট—ক্যাথি ম্যাসন

তর্জমা: কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ

Ad 300x250

হেফাজতের হুঁশিয়ারি: সংগীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না হলে আন্দোলন

রূপপুর প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়ম: শাস্তি পেলেন দুই প্রকৌশলী

দুই বছরে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী পেল থাইল্যান্ড

ডাকসু নির্বাচন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘শিক্ষার্থী সংসদ’ গ্রুপের অ্যাডমিনকে তলব

ট্রাভেল ডকুমেন্ট কী, তারেক রহমানের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে আলোচনা কেন

সম্পর্কিত