.png)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, উদারনীতি, বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে ভিত্তি করে বিশ্ব রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই ব্যবস্থা বিশ্বপরিসরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তবে বর্তমান বিশ্বের জটিলতা ও বৈচিত্র্য এই এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থাকে আর টেকসই রাখছে না। এর বিকল্প হিসেবে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠছে।

মাহবুবুল আলম তারেক

বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন ঘটছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক বৈশ্বিক রাজনীতি পরিচালিত হয়েছে দুই মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থায়— যুক্তরাষ্ট্র বনাম সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিয়েছে।
কিন্তু এখন সেই একমেরুকেন্দ্রিক যুগ শেষের পথে। উদীয়মান এক বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা সামনে আসছে। এখানে একটি বা দুটি শক্তি নয়, বরং কয়েকটি শক্তির কেন্দ্র বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস, গ্লোবাল সাউথের শক্তি বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠন। এখন আর বিষয়টি কেবল তত্ত্ব নয়, বাস্তবও বটে। ২০২৫ সালের মিউনিখ সিকিউরিটি রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মাল্টিপোলারাইজেশন’ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার প্রভাব হবে বহুদূরপ্রসারী।
বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে অন্তত চার থেকে পাঁচটি বড় শক্তি থাকবে। তারা সকলেই আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ নির্ণয়ে সক্ষম হবে। এই প্রভাব বিস্তার হবে কখনও জোট গঠনের মাধ্যমে, আবার কখনও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।
এই নতুন ব্যবস্থায় তাদের শক্তি ছড়িয়ে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি, সামরিক ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে। এর ফলে বিশ্বব্যবস্থা একদিকে হতে পারে খণ্ডিত, আবার অন্যদিকে হতে পারে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক।
এই পরিবর্তন এখন ঘটছে কয়েকটি কারণে:
অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস: উদীয়মান অর্থনীতি, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো এখন ক্রয়ক্ষমতার বিচারে জি-সেভেনকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা বিশ্বের ৪০ শতাংশ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন: যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, বিশেষ করে ট্রাম্প আমলে, বৈশ্বিক ব্যবস্থায় নতুন চাপ তৈরি করেছে। শুল্ক আরোপ ও ‘ডিকাপলিং’ নীতির কারণে অনেক দেশ বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েছে।
নতুন জোটের উত্থান: ব্রিকস ও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসওি)-র মতো সংগঠনগুলো তৈরি করছে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প। যেমন— আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের বিপরীতে নিজেদের কাঠামো।
২০২৫ সালের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বিশ্বব্যবস্থা আসছে না— এটা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। অন্তত চারটি প্রধান শক্তি এখন সক্রিয়— যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথের জোটগুলো। যেমন, ব্রিকস, এসসিও।

দ্বিমেরুকেন্দ্রিক যুগ (১৯৪৫–১৯৯১): বিশ্ব তখন বিভক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। প্রক্সি যুদ্ধ ও আদর্শগত সংঘাত ছিল এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
একমেরুকেন্দ্রিক সময় (১৯৯১–২০০০-এর দশকের শুরুর দিক): সোভিয়েত পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে ওঠে। তারা উদার গণতন্ত্র, বিশ্বায়ন এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়। প্রতিরক্ষা খরচ ও বৈশ্বিক জোট ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তার করে।
পরিবর্তনের সময়কাল (২০০০–২০২০-এর দশক): ১৯৮০-র দশক থেকে চীন দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকে। ২০১০ সালের মধ্যে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠে। প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনী সক্ষমতায় চীন এক প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।
রাশিয়ার পুনরুত্থান এবং ভারতের প্রবৃদ্ধিও যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট পশ্চিমা দুর্বলতা প্রকাশ করে। কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ সরবরাহব্যবস্থা ও জ্বালানি নির্ভরতার ঝুঁকি সামনে আনে।
২০২৫ সালের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত: ২০২৪ সালে ব্রিকসের সম্প্রসারণ ঘটে। নতুন সদস্য হয় সৌদি আরব, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই সময়ে এসসিও সম্মেলনগুলো আরও গতি পায়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিয়ানজিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ‘আধিপত্যবাদ’-এর বিপরীতে ‘নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা’ গঠনের আহ্বান জানান। এ ঘটনাকে ‘গ্লোবাল সাউথ’-কেন্দ্রিক প্রকৃত বহুপাক্ষিকতার অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে এসসিও জোটে আরও রয়েছে ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ।
চীন: অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাশক্তি। ডলার-নির্ভরতা কমানোর বিকল্প তৈরি করছে। এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিং একটি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রস্তাব দেন। ঘোষণা করেন ১.৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং একটি এআই সহযোগিতা কেন্দ্র। গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য প্রতিবছর ৫.৯% হারে বাড়ছে।
রাশিয়া: সামরিক ও জ্বালানি খাতের প্রভাবশালী শক্তি। নিষেধাজ্ঞার চাপ এড়িয়ে অ-পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এসসিও ও ব্রিকস-এ নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনকে উৎসাহ দিচ্ছেন। তিনি ইউরেশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোকে পশ্চিম থেকে স্বাধীন করার পক্ষে।
ভারত: দ্রুত বিকাশমান ‘সুইং পাওয়ার’। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করছে। ভারতের জিডিপি ২০২৯ সালের মধ্যে ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করছে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়াচ্ছে।

গ্লোবাল সাউথ (ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার দেশসমূহ): উদীয়মান অর্থনীতি। বহুমুখী কূটনীতি চালাচ্ছে। ১৩০টিরও বেশি দেশ, যা বিশ্বের ৬০% জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.২%, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর হার মাত্র ১.৯%। ২০৩৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এ দেশগুলো বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে ‘সংযোগকারী’ হিসেবে কাজ করছে।
ব্রিকস প্লাস: জি৭-এর পাল্টা অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। উন্নয়ন ব্যাংক ও ডি-ডলারাইজেশনে মনোযোগী। বিশ্ব জিডিপির ৪০% এরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে। সম্প্রসারণের মাধ্যমে তারা বহুমেরুকেন্দ্রিক অর্থনীতির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে।
এসসিও (শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন): নিরাপত্তা ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক আঞ্চলিক জোট। চীন, রাশিয়া, ভারত এখানে মূল সদস্য। তিয়ানজিন সম্মেলনে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বায়ন’-এর ডাক দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন: এখনও সামরিক ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তবে একক আধিপত্য হারাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ৮০% মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও বড় শক্তি হিসেবে দেখে। তবে শুল্কনীতি ও সীমিত কৌশলগত সুযোগ তাদের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তবে এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে।
প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: শক্তির সংখ্যা বাড়লে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়ে। এর ফলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বা সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হয়। গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদী শাসনের মতো আদর্শগত বিভাজন বৈশ্বিক সহযোগিতাকে কঠিন করে তোলে। বর্তমানে বিশ্বের ৭১% মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনে বাস করছে।
অর্থনৈতিক খণ্ডিতকরণ: বাণিজ্যযুদ্ধ ও ‘ডি-রিস্কিং’ নীতি সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে প্রয়োজন ভূরাজনৈতিক সক্ষমতা।
বৈশ্বিক সুশাসন ঘাটতি: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নেতৃত্বের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ফলে সহযোগিতার বদলে অবরোধমূলক অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ মেরুকরণ: গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ভেতরে বিভাজন বাড়ছে। এর কারণে বৈদেশিক নীতিতে ঐক্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
নৈরাশ্যবাদীরা সতর্ক করছেন যে, বহুমেরুকেন্দ্রিক যুগ অরাজকতা এবং ‘দণ্ডহীনতার যুগ’ ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে আশাবাদীরা মনে করেন, এই পরিবর্তন অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে:
অর্থনীতি: গ্লোবাল সাউথে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে। তবে বাণিজ্য খণ্ডিত হবে। দক্ষিণ-দক্ষিণ চুক্তি বাড়বে এবং ডলারের বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝোঁক দেখা দেবে।
নিরাপত্তা: নতুন জোট যেমন এসসিও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। তবে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের ঝুঁকিও থাকবে।
শাসন ব্যবস্থা: জাতিসংঘের সংস্কারের ডাক বাড়ছে। বহুমেরুকেন্দ্রিকতার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো প্রয়োজন।
সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি: স্থিতিশীলতা আনার জন্য সম্ভবত এক প্রজন্মের সময় লাগবে। তবু গ্লোবাল সাউথের উত্থান শক্তি বিতরণকে আরও সমতল করছে। ২০৩০ সালের দিকে এটি ‘প্যাক্স মাল্টিপোলারিস’— একটি খণ্ডিত, তবে যৌথ ঝুঁকি যেমন জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা চালিত বিশ্বব্যবস্থা— হিসেবে প্রতিফলিত হতে পারে।
এই পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অরাজকতা আনবে না। বিচ্ছিন্নতা কমানো ও সহযোগিতার মাধ্যমে এটি একটি ন্যায্য বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিং শহরে গত ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। ‘গ্লোবাল সাউথ মিডিয়া অ্যান্ড থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম ২০২৫’ নামের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ১১০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ২৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি। ফোরামের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্লোবাল সাউথকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো।
এটি কোনো সাধারণ সম্মেলন নয়। এর প্রথম আয়োজন হয়েছিল গত বছর ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। তখন প্রকাশিত হয়েছিল ‘সাও পাওলো ঘোষণা’। গ্লোবাল সাউথের মিডিয়া ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জুলাই ২০২৫-এ ব্রাজিল ও চীনে ব্রিকস এবং এসসিও মিডিয়া ফোরামের মাধ্যমে এ উদ্যোগ আরও বিস্তার পেয়েছে।
ফোরামে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বশীলদের পাশাপাশি চিন্তাবিদরা শান্তি, নতুন উন্নয়ন এবং সভ্যতার মধ্যে সংলাপ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। কুনমিং ফোরামে প্রকাশিত ‘ইউনান কনসেনসাস’ যৌথ সংবাদ উৎপাদন বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছে। এছাড়া গ্লোবাল সাউথ জয়েন্ট কমিউনিকেশন পার্টনারশিপ নেটওয়ার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে ৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের ১ হাজারের বেশি গণমাধ্যম সংযুক্ত থাকবে।
সবমিলিয়ে বিশ্ব এখন একক আধিপত্যের যুগ থেকে বহুমেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে গ্লোবাল সাউথের সম্মিলিত কণ্ঠ নতুন বৈশ্বিক ভারসাম্য গড়ে তুলছে।

বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন ঘটছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক বৈশ্বিক রাজনীতি পরিচালিত হয়েছে দুই মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থায়— যুক্তরাষ্ট্র বনাম সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিয়েছে।
কিন্তু এখন সেই একমেরুকেন্দ্রিক যুগ শেষের পথে। উদীয়মান এক বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা সামনে আসছে। এখানে একটি বা দুটি শক্তি নয়, বরং কয়েকটি শক্তির কেন্দ্র বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস, গ্লোবাল সাউথের শক্তি বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠন। এখন আর বিষয়টি কেবল তত্ত্ব নয়, বাস্তবও বটে। ২০২৫ সালের মিউনিখ সিকিউরিটি রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মাল্টিপোলারাইজেশন’ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার প্রভাব হবে বহুদূরপ্রসারী।
বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে অন্তত চার থেকে পাঁচটি বড় শক্তি থাকবে। তারা সকলেই আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ নির্ণয়ে সক্ষম হবে। এই প্রভাব বিস্তার হবে কখনও জোট গঠনের মাধ্যমে, আবার কখনও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।
এই নতুন ব্যবস্থায় তাদের শক্তি ছড়িয়ে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি, সামরিক ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে। এর ফলে বিশ্বব্যবস্থা একদিকে হতে পারে খণ্ডিত, আবার অন্যদিকে হতে পারে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক।
এই পরিবর্তন এখন ঘটছে কয়েকটি কারণে:
অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস: উদীয়মান অর্থনীতি, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো এখন ক্রয়ক্ষমতার বিচারে জি-সেভেনকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা বিশ্বের ৪০ শতাংশ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন: যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, বিশেষ করে ট্রাম্প আমলে, বৈশ্বিক ব্যবস্থায় নতুন চাপ তৈরি করেছে। শুল্ক আরোপ ও ‘ডিকাপলিং’ নীতির কারণে অনেক দেশ বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েছে।
নতুন জোটের উত্থান: ব্রিকস ও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসওি)-র মতো সংগঠনগুলো তৈরি করছে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প। যেমন— আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের বিপরীতে নিজেদের কাঠামো।
২০২৫ সালের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বিশ্বব্যবস্থা আসছে না— এটা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। অন্তত চারটি প্রধান শক্তি এখন সক্রিয়— যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথের জোটগুলো। যেমন, ব্রিকস, এসসিও।

দ্বিমেরুকেন্দ্রিক যুগ (১৯৪৫–১৯৯১): বিশ্ব তখন বিভক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। প্রক্সি যুদ্ধ ও আদর্শগত সংঘাত ছিল এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
একমেরুকেন্দ্রিক সময় (১৯৯১–২০০০-এর দশকের শুরুর দিক): সোভিয়েত পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে ওঠে। তারা উদার গণতন্ত্র, বিশ্বায়ন এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়। প্রতিরক্ষা খরচ ও বৈশ্বিক জোট ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তার করে।
পরিবর্তনের সময়কাল (২০০০–২০২০-এর দশক): ১৯৮০-র দশক থেকে চীন দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকে। ২০১০ সালের মধ্যে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠে। প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনী সক্ষমতায় চীন এক প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।
রাশিয়ার পুনরুত্থান এবং ভারতের প্রবৃদ্ধিও যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট পশ্চিমা দুর্বলতা প্রকাশ করে। কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ সরবরাহব্যবস্থা ও জ্বালানি নির্ভরতার ঝুঁকি সামনে আনে।
২০২৫ সালের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত: ২০২৪ সালে ব্রিকসের সম্প্রসারণ ঘটে। নতুন সদস্য হয় সৌদি আরব, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই সময়ে এসসিও সম্মেলনগুলো আরও গতি পায়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিয়ানজিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ‘আধিপত্যবাদ’-এর বিপরীতে ‘নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা’ গঠনের আহ্বান জানান। এ ঘটনাকে ‘গ্লোবাল সাউথ’-কেন্দ্রিক প্রকৃত বহুপাক্ষিকতার অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে এসসিও জোটে আরও রয়েছে ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ।
চীন: অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাশক্তি। ডলার-নির্ভরতা কমানোর বিকল্প তৈরি করছে। এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিং একটি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রস্তাব দেন। ঘোষণা করেন ১.৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং একটি এআই সহযোগিতা কেন্দ্র। গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য প্রতিবছর ৫.৯% হারে বাড়ছে।
রাশিয়া: সামরিক ও জ্বালানি খাতের প্রভাবশালী শক্তি। নিষেধাজ্ঞার চাপ এড়িয়ে অ-পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এসসিও ও ব্রিকস-এ নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনকে উৎসাহ দিচ্ছেন। তিনি ইউরেশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোকে পশ্চিম থেকে স্বাধীন করার পক্ষে।
ভারত: দ্রুত বিকাশমান ‘সুইং পাওয়ার’। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করছে। ভারতের জিডিপি ২০২৯ সালের মধ্যে ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করছে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়াচ্ছে।

গ্লোবাল সাউথ (ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার দেশসমূহ): উদীয়মান অর্থনীতি। বহুমুখী কূটনীতি চালাচ্ছে। ১৩০টিরও বেশি দেশ, যা বিশ্বের ৬০% জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.২%, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর হার মাত্র ১.৯%। ২০৩৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এ দেশগুলো বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে ‘সংযোগকারী’ হিসেবে কাজ করছে।
ব্রিকস প্লাস: জি৭-এর পাল্টা অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। উন্নয়ন ব্যাংক ও ডি-ডলারাইজেশনে মনোযোগী। বিশ্ব জিডিপির ৪০% এরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে। সম্প্রসারণের মাধ্যমে তারা বহুমেরুকেন্দ্রিক অর্থনীতির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে।
এসসিও (শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন): নিরাপত্তা ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক আঞ্চলিক জোট। চীন, রাশিয়া, ভারত এখানে মূল সদস্য। তিয়ানজিন সম্মেলনে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বায়ন’-এর ডাক দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন: এখনও সামরিক ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তবে একক আধিপত্য হারাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ৮০% মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও বড় শক্তি হিসেবে দেখে। তবে শুল্কনীতি ও সীমিত কৌশলগত সুযোগ তাদের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তবে এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে।
প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: শক্তির সংখ্যা বাড়লে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়ে। এর ফলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বা সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হয়। গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদী শাসনের মতো আদর্শগত বিভাজন বৈশ্বিক সহযোগিতাকে কঠিন করে তোলে। বর্তমানে বিশ্বের ৭১% মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনে বাস করছে।
অর্থনৈতিক খণ্ডিতকরণ: বাণিজ্যযুদ্ধ ও ‘ডি-রিস্কিং’ নীতি সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে প্রয়োজন ভূরাজনৈতিক সক্ষমতা।
বৈশ্বিক সুশাসন ঘাটতি: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নেতৃত্বের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ফলে সহযোগিতার বদলে অবরোধমূলক অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ মেরুকরণ: গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ভেতরে বিভাজন বাড়ছে। এর কারণে বৈদেশিক নীতিতে ঐক্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
নৈরাশ্যবাদীরা সতর্ক করছেন যে, বহুমেরুকেন্দ্রিক যুগ অরাজকতা এবং ‘দণ্ডহীনতার যুগ’ ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে আশাবাদীরা মনে করেন, এই পরিবর্তন অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে:
অর্থনীতি: গ্লোবাল সাউথে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে। তবে বাণিজ্য খণ্ডিত হবে। দক্ষিণ-দক্ষিণ চুক্তি বাড়বে এবং ডলারের বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝোঁক দেখা দেবে।
নিরাপত্তা: নতুন জোট যেমন এসসিও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। তবে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের ঝুঁকিও থাকবে।
শাসন ব্যবস্থা: জাতিসংঘের সংস্কারের ডাক বাড়ছে। বহুমেরুকেন্দ্রিকতার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো প্রয়োজন।
সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি: স্থিতিশীলতা আনার জন্য সম্ভবত এক প্রজন্মের সময় লাগবে। তবু গ্লোবাল সাউথের উত্থান শক্তি বিতরণকে আরও সমতল করছে। ২০৩০ সালের দিকে এটি ‘প্যাক্স মাল্টিপোলারিস’— একটি খণ্ডিত, তবে যৌথ ঝুঁকি যেমন জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা চালিত বিশ্বব্যবস্থা— হিসেবে প্রতিফলিত হতে পারে।
এই পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অরাজকতা আনবে না। বিচ্ছিন্নতা কমানো ও সহযোগিতার মাধ্যমে এটি একটি ন্যায্য বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিং শহরে গত ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। ‘গ্লোবাল সাউথ মিডিয়া অ্যান্ড থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফোরাম ২০২৫’ নামের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ১১০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ২৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি। ফোরামের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্লোবাল সাউথকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো।
এটি কোনো সাধারণ সম্মেলন নয়। এর প্রথম আয়োজন হয়েছিল গত বছর ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। তখন প্রকাশিত হয়েছিল ‘সাও পাওলো ঘোষণা’। গ্লোবাল সাউথের মিডিয়া ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জুলাই ২০২৫-এ ব্রাজিল ও চীনে ব্রিকস এবং এসসিও মিডিয়া ফোরামের মাধ্যমে এ উদ্যোগ আরও বিস্তার পেয়েছে।
ফোরামে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বশীলদের পাশাপাশি চিন্তাবিদরা শান্তি, নতুন উন্নয়ন এবং সভ্যতার মধ্যে সংলাপ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। কুনমিং ফোরামে প্রকাশিত ‘ইউনান কনসেনসাস’ যৌথ সংবাদ উৎপাদন বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছে। এছাড়া গ্লোবাল সাউথ জয়েন্ট কমিউনিকেশন পার্টনারশিপ নেটওয়ার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে ৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের ১ হাজারের বেশি গণমাধ্যম সংযুক্ত থাকবে।
সবমিলিয়ে বিশ্ব এখন একক আধিপত্যের যুগ থেকে বহুমেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে গ্লোবাল সাউথের সম্মিলিত কণ্ঠ নতুন বৈশ্বিক ভারসাম্য গড়ে তুলছে।
.png)

নিউইয়র্কের মেয়র পদে জিতেছেন জোহরান মামদানি। এর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে চায়ের টং, সবখানেই তাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে। আধুনিক সময়ে নিউইয়র্কের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র হওয়ার পাশাপাশি মামদানি প্রথম মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় মেয়রও বটে।
৬ ঘণ্টা আগে
মামদানির সমাজতান্ত্রিক নীতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিজম আসলে কী, আর কী নয়। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। জুন মাসে এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মামদানি সরাসরি বলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই।’
১৪ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ অক্টোবর মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন ‘অবিলম্বে’ পুনরায় পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে। এর মাধ্যমে তিনি ১৯৯২ সালে শুরু হওয়া ৩৩ বছরের স্বেচ্ছা-নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটান।
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে রেকর্ড ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন স্বঘোষিত গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানি। মামদানি শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম ভারতীয়-উগান্ডান বংশোদ্ভূত এবং সবচেয়ে তরুণ মেয়র। এই বিজয় ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরেও একটি নতুন ধারা সূচিত করেছে।
১ দিন আগে