leadT1ad

স্ট্রিম এক্সপ্লেইনার/নরসিংদী কেন ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, কী বার্তা দিচ্ছে

বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে সতর্ক করছেন এই বলে যে— বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের দিকে এগোচ্ছে। এটি আর দূরবর্তী সম্ভাবনা নয়—এটি ভূতত্ত্ব, সাম্প্রতিক কম্পন এবং তথ্যের ভিত্তিতে ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা। তাই বলা যায়, শতাব্দীর ভূমিকম্প চক্র অনুযায়ী, ১৯১৮ সালের পর এ অঞ্চল আরেকটি বড় ধাক্কার জন্য অনেকটাই প্রস্তুত।

স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকার ও নারায়ণগঞ্জের পূর্বদিকে অবস্থিত নরসিংদী জেলা সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) নরসিংদীর মাধবদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। কম্পন কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল কাঁপিয়ে তোলে। এটি ছিল অন্তত ২৩ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তিস্থল। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতাতেও কম্পন অনুভূত হয়।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ আশেপাশের অনেক ভবন হেলে পড়েছে, কোনো কোনোটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝারি মাত্রার হলেও এটি আরেকটি বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিনের।

টেকটোনিক প্লেট: কেন নরসিংদী ভূমিকম্পপ্রবণ

নরসিংদী অঞ্চলের ঝুঁকি মূলত ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে। বাংলাদেশ তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের মাঝে অবস্থিত—ভারতীয় প্লেট, ইউরেশীয় প্লেট ও বার্মিজ প্লেট। ভারতীয় প্লেট প্রতি বছর প্রায় ৬ সেন্টিমিটার হারে উত্তর–পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। ইউরেশীয় প্লেট প্রতি বছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে। বার্মিজ প্লেটও বছরে ২ সেন্টিমিটার হারে এগিয়ে আসছে। এই চাপ প্লেটগুলোর ফাঁকে ব্যাপক পরিমাণ শক্তি জমা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিষয়ক গবেষক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি হয়েছে ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে। এ সংযোগস্থল বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওরাঞ্চল হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে চলে গেছে। এটিকে সাবডাকশন জোনও বলা হয়। নরসিংদী মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত জেলা। অবস্থানগত কারণে সেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও বেশি।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৬ সালেই আমাদের গবেষণায় বলেছি যে, এ সাবডাকশন জোনে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়ে আছে।’

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ ড. মাইকেল স্টেকলার ২০১৬ সালের এক গবেষণায় বলেন, ‘শক্তি জমছে এবং যে কোনো সময় তা ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে মুক্ত হবে।’

বাংলাদেশি ভূতাত্ত্বিক হুমায়ুন আখতার বলেন, ডাউকি ফল্ট লাইন আরও দক্ষিণে নেমে আসায় ভূমিকম্পের উৎস ঢাকার আরও কাছে চলে আসে। এই কারণেই নরসিংদী অঞ্চল একটি ভূমিকম্প হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

আঞ্চলিক ফল্টলাইন: কোন কোন ফল্ট নরসিংদীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে

নরসিংদী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। জেলার আশপাশের অঞ্চলের নিচ দিয়ে একাধিক প্রধান ফল্টলাইন অতিক্রম করেছে বা কাছাকাছি রয়েছে। এ কারণে এটি মাঝে মাঝে ভূমিকম্পের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

প্রধান ফল্ট হলো ডাউকি ফল্ট সিস্টেম। এটি শিলং মালভূমির উত্তরপ্রান্ত দিয়ে চলে গেছে। গবেষণায় জানা গেছে, এই অঞ্চলে ছোট ছোট নয় বরং একটি বড় আকারের লুকানো ফল্ট কাজ করছে। ডাউকি ফল্টলাইন দক্ষিণ দিকে সরে আসছে। এর ফলে নরসিংদীর ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফল্ট হলো—মধুপুর ফল্ট, বগুড়া ফল্ট, ত্রিপুরা ফল্ট, আসাম ফল্ট, শিলং প্লেটের বিস্তৃত ভূতাত্ত্বিক কাঠামো। এসব মিলে বাংলাদেশে যে ১৩টি ভূমিকম্প-সংবেদনশীল অঞ্চল চিহ্নিত হয়েছে, তার একটি নরসিংদী।

পূর্বদিকে ভারত-বার্মা সাবডাকশন জোনেও শক্তি জমছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লামন্ট-ডহেরটি আর্থ অবজারভেটরির ভূকম্পবিদ লুসিয়ান সিবার বলেন, ‘ফল্ট যত বড়, ভূমিকম্প তত বড় হতে পারে। ডাউকি ফল্ট বিশাল একটি কাঠামো। তাই আমরা একটি বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দেখি।

বাংলাদেশি ভূতাত্ত্বিক হুমায়ুন আখতার বলেন, ডাউকি ফল্ট লাইন আরও দক্ষিণে নেমে আসায় ভূমিকম্পের উৎস ঢাকার আরও কাছে চলে আসে। এই কারণেই নরসিংদী অঞ্চল একটি ভূমিকম্প হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

নরসিংদীতে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা

ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট সম্ভাবনা নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ ভূমিকম্প প্রকৃতিগতভাবে অনিশ্চিত। তবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মডেল উদ্বেগজনক অনুমান তুলে ধরেছে।

সিসমোলজিক্যাল রিসার্চ লেটারস-এ ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রতি দশকে ২৩ শতাংশ করে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান ভূমিকম্প-সক্রিয় অঞ্চলে— যার মধ্যে নরসিংদীর নিকটবর্তী সাবডাকশন জোনও রয়েছে—৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ।

জাতিসংঘের ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়নে নরসিংদী ও আশপাশের জেলা, বিশেষ করে ঢাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর কারণ হলো স্থানগুলো টেকটোনিক প্লেট সীমানার খুব কাছে অবস্থিত। সাম্প্রতিক ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো ইঙ্গিত দেয় যে এ অঞ্চলে চাপ জমছে এবং ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে দেশে অন্তত ১২০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরে। ২০২৪ সালে ১২টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৫ সালে হয় অন্তত ৮টি ভূমিকম্প।

ভলকানো ডিসকভারি ডটকমের তথ্যমতে, ১৯৭০ সাল থেকে নরসিংদীসহ আশেপাশে ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২ থেকে ৫.৫ মাত্রার অন্তত ৮২টি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। গত দশকে নরসিংদীর ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে তিনটি ৫.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বড় ভূমিকম্প কি বকেয়া

বাংলাদেশের ইতিহাস বড় ভূমিকম্পের ঘটনা রয়েছে, তবে সংখ্যায় কম। এ কারণে জনসাধারণ, সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আত্মতুষ্টির অনুভূতি দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায়। এর মাত্রা ছিল ৭.৬। তার আগে ১৮৯৭ সালের আসাম ভূমিকম্প (প্রায় ৮.০ মাত্রা) শিলং ফল্ট বরাবর ঘটে এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের ঢাকায়ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে।

১৭৮৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যমুনা নদী সৃষ্টি হয়েছিল। আগে নদীটি ময়মনসিংহের উপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে বয়ে যেত। ভূমিকম্পে তা সিরাজগঞ্জের দিকে সরে যায় এবং যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়। তার আগে ১৭৬২ সালে আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এটি ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এর ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ফেনী, এমনকি কুমিল্লা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

ভূকম্পবিদরা বলেন, বড় ভূমিকম্পের আগে প্রায়ই ছোট ছোট কম্পন হতে দেখা যায়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে—২০১৭ সালে ২৮টি, ২০২৩ সালে ৪১টি এবং ২০২৪ সালে ৫৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। এসব একটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।

নরসিংদীতে অতীতে একাধিকবার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল চিহ্নিত হয়েছে, যদিও বড় ধরনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। গত অক্টোবরেও নরসিংদীতে ৩.৮ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। কেন্দ্র ছিল ৩৫৬ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে ২০২৩ সালেও মাধবদী এলাকায় একটি কম্পন রেকর্ড করা হয়। এসব মধুপুর ফল্টসহ স্থানীয় সক্রিয় ফল্টলাইনের ছোট ছোট ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতার অংশ।

বাংলাদেশের টেকটোনিক অবস্থান। ছবি: বিবিসি।
বাংলাদেশের টেকটোনিক অবস্থান। ছবি: বিবিসি।

ঢাকার আশপাশে নিকট অতীতে কয়েকটি মাঝারি ভূমিকম্পও ঘটেছে। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ ৪.৫ মাত্রার এবং ২০১৬ সালে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে।

ভলকানো ডিসকভারি ডটকমের তথ্যমতে, ১৯৭০ সাল থেকে নরসিংদীসহ আশেপাশে ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২ থেকে ৫.৫ মাত্রার অন্তত ৮২টি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। গত দশকে নরসিংদীর ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে তিনটি ৫.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলেন, ‘বাংলাদেশ মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি, সুনামি ও বন্যার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু দেশ প্রস্তুত নয়।’ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদেরও অনুমান — শতাব্দী ধরে সঞ্চিত শক্তির মুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার। প্রায় প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছর পরপর এমন ভূমিকম্প ঘটে থাকে।

ভূকম্পবিদ লুসিয়ান সিবার আত্মতুষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবতে পারেন, “আমাদের এখানে তো বড় ভূমিকম্প হয় না, তাহলে দুশ্চিন্তা কেন?” কিন্তু ভূতত্ত্ববিদরা বলেন, এখানে ফল্টলাইন আছে, এটি সক্রিয়। দীর্ঘসময় ধরে বড় ভূমিকম্প না হওয়ার কারণেই এখন আবার বড় ভূমিকম্প হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে সতর্ক করছেন এই বলে যে— বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের দিকে এগোচ্ছে। এটি আর দূরবর্তী সম্ভাবনা নয়—এটি ভূতত্ত্ব, সাম্প্রতিক কম্পন এবং তথ্যের ভিত্তিতে ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা। তাই বলা যায়, শতাব্দীর ভূমিকম্প চক্র অনুযায়ী, ১৯১৮ সালের পর এ অঞ্চল আরেকটি বড় ধাক্কার জন্য অনেকটাই প্রস্তুত।

বাংলাদেশে ভূমিকম্প-ঝুঁকি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়। এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ইতিহাসনির্ভর একটি বাস্তবতা। শুক্রবারের (২১ নভেম্বর) ভূমিকম্প আবারও কঠোর সতর্ক সংকেত দিয়েছে। সম্ভাবনা বাড়ছে, তবে আগাম প্রস্তুতি, যেমন ভবন সংস্কার, সচেতনতা এবং নীতিমালা ক্ষতির মাত্রা অনেক কমিয়ে আনতে পারে। যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অসংখ্য প্রাণ ও সম্পদ হারাতে হবে।

বড় ভূমিকম্প হলে সম্ভাব্য ক্ষতি

নরসিংদী কেন্দ্রীয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে আলগা পলি-মাটি কম্পনের সময় কাঁদার মতো নরম হয়ে যায়, ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বহু গুণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। নরসিংদীর কাছে ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এতে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকায়ও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বিভিন্ন মডেলে অনুমান করা হয়, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকায় প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। ঢাকা শহরে মোট ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ছয় লাখ ভবন ছয়তলার ওপরে। বাকিগুলো ছয়তলার নিচে। বড় ভূমিকম্প হলে এই ছয় লাখ ভবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে।

আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ-বিশেষজ্ঞ রুবায়েত কবীর বলেন, ঢাকার ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এবং মানুষের ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শহরটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নরসিংদীর ক্ষেত্রে এর শিল্পঘন অবস্থান এবং সক্রিয় ফল্টলাইনের কাছাকাছি অবস্থান ঝুঁকি আরও বাড়ায়।

মাটি নরম হয়ে যাওয়া কম্পনকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে পরিস্থিতি ২০১০ সালের হাইতি ভূমিকম্পের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। হাইতিতে ৭ মাত্রার কম্পনে দুই লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। এখানে ৮ মাত্রার কম্পন হলে এর শক্তি ৩২ গুণ বেশি হবে। ভূ-পদার্থবিদ মাইকেল স্টেকলার বলেন, ‘যদি ভূমিকম্পটি ঢাকার কাছে হয়, মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ হতে পারে।’

শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে— ছাদ, দেয়াল ও রেলিং ভেঙে প্রাণহানি ঘটেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) অনুমান— ৬ মাত্রার মাঝারি ধরনের কম্পনেও ১০০-১ হাজার জনের প্রাণহানি এবং ১০ কোটি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে বলেছেন যে ভবন নির্মাণ কোড না মানায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পজনতি ধ্বংসের ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম দেশে পরিণত হয়েছে।’

বাংলাদেশে ভূমিকম্প-ঝুঁকি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়। এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ইতিহাসনির্ভর একটি বাস্তবতা। শুক্রবারের (২১ নভেম্বর) ভূমিকম্প আবারও কঠোর সতর্ক সংকেত দিয়েছে। সম্ভাবনা বাড়ছে, তবে আগাম প্রস্তুতি, যেমন ভবন সংস্কার, সচেতনতা এবং নীতিমালা ক্ষতির মাত্রা অনেক কমিয়ে আনতে পারে। যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অসংখ্য প্রাণ ও সম্পদ হারাতে হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত