মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এখন এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে। মার্কিন ছাতায় ফাঁটল ধরেছে, আর ইসরায়েলি আগ্রাসন মুসলিম বিশ্বকে নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তাহলে কি অবশেষে জন্ম নেবে বহুল আলোচিত ইসলামিক ন্যাটো? নাকি পুরনো বিভাজনই এই ঐক্যকে আবারও আটকে দেবে?
স্ট্রিম ডেস্ক
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ কাতারে। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে কয়েক দশক ধরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও বহু বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা অটল নিরাপত্তার মেকি আবরণ। কাতারের রাজধানী দোহার একটি আবাসিক ভবনে হামাস নেতাদের বৈঠককে লক্ষ্য করে চালানো এ হামলা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। স্থান ও সময় বিবেচনায় নজিরবিহীন এই হামলা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে তীব্র ধাক্কা দিয়েছে। ফলে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা মিত্রতা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে এবং নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত একটি সামরিক জোটের ধারণা।
অনেক বছর ধরে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) দেশগুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের কৌশলগত মিত্রতা রক্ষা করে আসছিল। তাঁদের বিশ্বাস ছিল বিশাল মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তাদেরকে আঞ্চলিক সংঘাত থেকে রক্ষা করবে। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উবেইদ কাতারে অবস্থিত। কাতারকে প্রায়শই ‘ন্যাটোর বাইরে প্রধান মার্কিন মিত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু ইসরায়েলি হামলা এই সুরক্ষার সীমাবদ্ধতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই হামলা রিয়াদ থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত দেশগুলোকে কৌশলগতভাবে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভক্ত আরব অঞ্চলকে এই সামরিক পদক্ষেপ নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকা যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে কে পারবে?
আমেরিকার নিরাপত্তা ছাতার ভাঙন
দোহায় হামলার পরিণতি শুধুমাত্র কূটনৈতিক নিন্দার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আরব মিত্রদের মধ্যকার আস্থার মূলেও আঘাত করেছে। এই অঞ্চলে ধারণা জন্মাচ্ছে যে, মার্কিন নিরাপত্তায় আর গ্যারান্টি নেই। কাতারের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলেছেন, হামলার বিষয়ে মার্কিন সতর্কতা হামলার কয়েক মিনিট পরে দেওয়া হয়েছিল।
এই হামলা তেল ও কৌশলগত সহযোগিতার বিনিময়ে মার্কিন সুরক্ষার পুরনো চুক্তিটি একতরফা হয়ে গেছে, এই ধারণাকেও শক্তিশালী করেছে। কাতারের ওপর এই হামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক নিন্দা না জানানোকে আরব বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের নীরব সমর্থন বা ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক দ্য আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের হুসেইন ইবিশের মতে, আরবের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে বলছে না, বরং ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলছে যাতে তারা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল না করে।
এই হামলা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র সেই দাবি পূরণে ব্যর্থ। আরব দেশগুলো এখন তাদের নিরাপত্তা নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে এবং কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া গতিশীল করেছে।
ইসলামিক ন্যাটো: নতুন করে জেগে ওঠা পুরনো স্বপ্ন
এই হামলার পরপরই ‘ইসলামিক ন্যাটো’ বা একটি সর্ব-ইসলামি সামরিক জোটের ধারণাটি জোরালোভাবে ফিরে এসেছে। ইসলামিক ন্যাটোর ধারণাটি নতুন নয়। ইয়েমেনের যুদ্ধ থেকে শুরু করে আইএসের উত্থান পর্যন্ত আরব বিশ্বের বিভিন্ন সংকটের সময় ইসলামিক ন্যাটোর আলাপ সামনে এসেছে। কিন্তু দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় স্বার্থের কারণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি অবশ্য অন্য যেকোনো সময়ের থেকে আলাদা। আগে এই ধরনের প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য থাকতো ইরানের প্রভাব মোকাবিলা। কিন্তু ইসরায়েলের আগ্রাসন ইরান, মিসর এবং পাকিস্তানের মতো ভিন্ন মতাদর্শের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি বিরল ঐক্যের সুযোগ তৈরি করেছে।
দোহায় অনুষ্ঠিত এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই হামলার নিন্দা করে একটি ঐক্যবদ্ধ সামরিক জোট গঠনের আহ্বান জানান। অন্যদিকে আরব রাজনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি মিসর, কায়রোতে একটি যৌথ আরব সামরিক কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে চাপ দিচ্ছে। একই সময়ে, মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান, ইসরায়েলি সামরিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন এবং সমন্বিত ‘প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক’ কৌশল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। অস্তিত্বের হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আদর্শগত অবস্থান পরিত্যাগ করে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তব কৌশলগত পরিকল্পনার দিকে একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
অস্থিতিশীল অঞ্চলে তুরস্কের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ
যেসব দেশ এই পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে, তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং নিজস্ব বিস্তৃত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা দেশটি কাতারে হামলাকে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের এক ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছে, যা ইতিমধ্যেই সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেনেও দেখা গেছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তাদের দেশও পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। এ কারণে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে দ্রুততা আনা হচ্ছে। ‘স্টিল ডোম’ নামের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘কাআন’ তৈরির প্রকল্প জোরদার করা হচ্ছে।
তুরস্ক একদিকে কাতার ও হামাসের মতো মিত্রদের নীরবে সমর্থন করতে চায় এবং অন্যদিকে পশ্চিমের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন না করেই ইসরায়েলকে জোরালোভাবে প্রতিহত করতে চায়। তুরস্কের হিসাব-নিকাশ বলছে, ইসরায়েলকে সংযত করার ক্ষেত্রে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁরা আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না। ফলস্বরূপ, তুরস্ক নিজেকে একটি নির্ভরযোগ্য সামরিক বিকল্প এবং যেকোনো উদীয়মান আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
ঐক্যের পথে বড় বাধা
একটি সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হলেও বাস্তবায়নের পথ পুরনো ঐতিহাসিক বাধায় পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সুন্নি-নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যকার গভীর সাম্প্রদায়িক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইসরায়েলকে মোকাবিলার জন্য তারা সাময়িকভাবে একজোট হলেও, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে বছরের পর বছর ধরে চলা ‘প্রক্সি যুদ্ধ’-র কারণে সৃষ্ট কাঠামোগত অবিশ্বাস যেকোনো আনুষ্ঠানিক, সম্মিলিত সামরিক কাঠামোর জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুন্নি-শিয়া বিভাজনের বাইরেও, বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। মিসর তুরস্কের নব্য-অটোমান আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সন্দিহান। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার এখনও একটি তিক্ত কূটনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। জাতীয় সার্বভৌমত্বের মৌলিক নীতিটিও একটি বড় বাধা; আরব নেতারা ঐতিহাসিকভাবে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে তুলে দিতে অনিচ্ছুক। এই অভ্যন্তরীণ বিভাজনগুলো রাশিয়া এবং চীনের মতো বাহ্যিক শক্তিগুলোর জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে। এই সুযোগে আমেরিকার ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করতে এবং কম রাজনৈতিক শর্তে অস্ত্র ও অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিচ্ছে চীন-রাশিয়া।
আসন্ন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে। একটি আনুষ্ঠানিক ও চুক্তিভিত্তিক ‘ইসলামিক ন্যাটো’র সম্ভাবনা এখনও অনেক দূরে। তবে, দোহায় হামলা নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরব লীগের ব্যানারে যৌথ সামরিক মহড়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় দেশ, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তির মতো দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা বাড়বে।
একক পরাশক্তির ওপর নির্ভরতার পরিবর্তে বাস্তবসম্মত একটি নতুন নিরাপত্তা কাঠামো ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে গিয়ে ইসরায়েল হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আঞ্চলিক বিরোধী শক্তি তৈরি করে ফেলছে।
তথ্যসূত্র: মিডিল ইস্ট আই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আরব নিউজ, বিবিসি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ কাতারে। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে কয়েক দশক ধরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও বহু বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা অটল নিরাপত্তার মেকি আবরণ। কাতারের রাজধানী দোহার একটি আবাসিক ভবনে হামাস নেতাদের বৈঠককে লক্ষ্য করে চালানো এ হামলা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। স্থান ও সময় বিবেচনায় নজিরবিহীন এই হামলা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে তীব্র ধাক্কা দিয়েছে। ফলে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা মিত্রতা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে এবং নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত একটি সামরিক জোটের ধারণা।
অনেক বছর ধরে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) দেশগুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের কৌশলগত মিত্রতা রক্ষা করে আসছিল। তাঁদের বিশ্বাস ছিল বিশাল মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তাদেরকে আঞ্চলিক সংঘাত থেকে রক্ষা করবে। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উবেইদ কাতারে অবস্থিত। কাতারকে প্রায়শই ‘ন্যাটোর বাইরে প্রধান মার্কিন মিত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু ইসরায়েলি হামলা এই সুরক্ষার সীমাবদ্ধতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই হামলা রিয়াদ থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত দেশগুলোকে কৌশলগতভাবে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভক্ত আরব অঞ্চলকে এই সামরিক পদক্ষেপ নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকা যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে কে পারবে?
আমেরিকার নিরাপত্তা ছাতার ভাঙন
দোহায় হামলার পরিণতি শুধুমাত্র কূটনৈতিক নিন্দার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আরব মিত্রদের মধ্যকার আস্থার মূলেও আঘাত করেছে। এই অঞ্চলে ধারণা জন্মাচ্ছে যে, মার্কিন নিরাপত্তায় আর গ্যারান্টি নেই। কাতারের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলেছেন, হামলার বিষয়ে মার্কিন সতর্কতা হামলার কয়েক মিনিট পরে দেওয়া হয়েছিল।
এই হামলা তেল ও কৌশলগত সহযোগিতার বিনিময়ে মার্কিন সুরক্ষার পুরনো চুক্তিটি একতরফা হয়ে গেছে, এই ধারণাকেও শক্তিশালী করেছে। কাতারের ওপর এই হামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক নিন্দা না জানানোকে আরব বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের নীরব সমর্থন বা ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক দ্য আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের হুসেইন ইবিশের মতে, আরবের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে বলছে না, বরং ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলছে যাতে তারা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল না করে।
এই হামলা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র সেই দাবি পূরণে ব্যর্থ। আরব দেশগুলো এখন তাদের নিরাপত্তা নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে এবং কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া গতিশীল করেছে।
ইসলামিক ন্যাটো: নতুন করে জেগে ওঠা পুরনো স্বপ্ন
এই হামলার পরপরই ‘ইসলামিক ন্যাটো’ বা একটি সর্ব-ইসলামি সামরিক জোটের ধারণাটি জোরালোভাবে ফিরে এসেছে। ইসলামিক ন্যাটোর ধারণাটি নতুন নয়। ইয়েমেনের যুদ্ধ থেকে শুরু করে আইএসের উত্থান পর্যন্ত আরব বিশ্বের বিভিন্ন সংকটের সময় ইসলামিক ন্যাটোর আলাপ সামনে এসেছে। কিন্তু দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় স্বার্থের কারণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি অবশ্য অন্য যেকোনো সময়ের থেকে আলাদা। আগে এই ধরনের প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য থাকতো ইরানের প্রভাব মোকাবিলা। কিন্তু ইসরায়েলের আগ্রাসন ইরান, মিসর এবং পাকিস্তানের মতো ভিন্ন মতাদর্শের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি বিরল ঐক্যের সুযোগ তৈরি করেছে।
দোহায় অনুষ্ঠিত এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই হামলার নিন্দা করে একটি ঐক্যবদ্ধ সামরিক জোট গঠনের আহ্বান জানান। অন্যদিকে আরব রাজনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি মিসর, কায়রোতে একটি যৌথ আরব সামরিক কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে চাপ দিচ্ছে। একই সময়ে, মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান, ইসরায়েলি সামরিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন এবং সমন্বিত ‘প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক’ কৌশল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। অস্তিত্বের হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আদর্শগত অবস্থান পরিত্যাগ করে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তব কৌশলগত পরিকল্পনার দিকে একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
অস্থিতিশীল অঞ্চলে তুরস্কের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ
যেসব দেশ এই পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে, তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং নিজস্ব বিস্তৃত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা দেশটি কাতারে হামলাকে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের এক ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছে, যা ইতিমধ্যেই সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেনেও দেখা গেছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তাদের দেশও পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। এ কারণে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে দ্রুততা আনা হচ্ছে। ‘স্টিল ডোম’ নামের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘কাআন’ তৈরির প্রকল্প জোরদার করা হচ্ছে।
তুরস্ক একদিকে কাতার ও হামাসের মতো মিত্রদের নীরবে সমর্থন করতে চায় এবং অন্যদিকে পশ্চিমের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক ছিন্ন না করেই ইসরায়েলকে জোরালোভাবে প্রতিহত করতে চায়। তুরস্কের হিসাব-নিকাশ বলছে, ইসরায়েলকে সংযত করার ক্ষেত্রে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁরা আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না। ফলস্বরূপ, তুরস্ক নিজেকে একটি নির্ভরযোগ্য সামরিক বিকল্প এবং যেকোনো উদীয়মান আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
ঐক্যের পথে বড় বাধা
একটি সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হলেও বাস্তবায়নের পথ পুরনো ঐতিহাসিক বাধায় পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সুন্নি-নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যকার গভীর সাম্প্রদায়িক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইসরায়েলকে মোকাবিলার জন্য তারা সাময়িকভাবে একজোট হলেও, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে বছরের পর বছর ধরে চলা ‘প্রক্সি যুদ্ধ’-র কারণে সৃষ্ট কাঠামোগত অবিশ্বাস যেকোনো আনুষ্ঠানিক, সম্মিলিত সামরিক কাঠামোর জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুন্নি-শিয়া বিভাজনের বাইরেও, বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। মিসর তুরস্কের নব্য-অটোমান আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সন্দিহান। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার এখনও একটি তিক্ত কূটনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। জাতীয় সার্বভৌমত্বের মৌলিক নীতিটিও একটি বড় বাধা; আরব নেতারা ঐতিহাসিকভাবে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে তুলে দিতে অনিচ্ছুক। এই অভ্যন্তরীণ বিভাজনগুলো রাশিয়া এবং চীনের মতো বাহ্যিক শক্তিগুলোর জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে। এই সুযোগে আমেরিকার ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করতে এবং কম রাজনৈতিক শর্তে অস্ত্র ও অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিচ্ছে চীন-রাশিয়া।
আসন্ন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে। একটি আনুষ্ঠানিক ও চুক্তিভিত্তিক ‘ইসলামিক ন্যাটো’র সম্ভাবনা এখনও অনেক দূরে। তবে, দোহায় হামলা নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরব লীগের ব্যানারে যৌথ সামরিক মহড়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় দেশ, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তির মতো দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা বাড়বে।
একক পরাশক্তির ওপর নির্ভরতার পরিবর্তে বাস্তবসম্মত একটি নতুন নিরাপত্তা কাঠামো ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে গিয়ে ইসরায়েল হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আঞ্চলিক বিরোধী শক্তি তৈরি করে ফেলছে।
তথ্যসূত্র: মিডিল ইস্ট আই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আরব নিউজ, বিবিসি।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন। সফরকালে তিনি রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তা ঘুরে দেখেন এবং শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মুহূর্ত। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন।
৫ ঘণ্টা আগেবিশ্ব ভূ-রাজনীতির সদা পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে কোয়াড উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ফোরাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত নিয়ে গঠিত এই জোটটি শুরুতে মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের একটি দল হিসেবে যাত্রা করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি বহুমুখী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেব্রিটিশ রাজনীতির রীতি অনুযায়ী সেদেশের মন্ত্রী হওয়ার পর দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও আইনগতভাবে অবৈধ নয়। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে— ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি গোপনে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রেখেছিলেন? এর পেছনে ঠিক কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
১ দিন আগে‘বিদেশি সংস্থার এজেন্ট’ শব্দটি শুনলেই জেমস বন্ড সদৃশ কোট-টাই পরা চরিত্রের কথাই মনে পড়ে। থ্রিলার কিংবা এস্পিওনাজ (স্পাই) সিনেমার চরিত্রের নায়কদের কথা মনে পড়ে।
২ দিন আগে