মাইদুল ইসলাম
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুনে প্রাণ গেছে ১৬ জনের। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার আগুন গতকাল মঙ্গলবারই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিকের গুদামটি অবৈধ ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির তথ্য বলছে, এই রাসায়নিকের গুদামের মালিকানা আলম ট্রেডার্স নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। আর স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহ আলম (৬০) নামের এক ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠেছে, কে এই শাহ আলম।
মিরপুর উত্তর তথা রূপনগর আবাসিক এলাকার প্রভাবশালী শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁর এই গুদামটি ফায়ার সার্ভিসের অবৈধ গুদামের তালিকায় ছিল। তিনবার নোটিশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া দেয়নি গুদামের মালিকপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই রাসায়নিক গুদাম বা পোশাক কারখানা কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। আগুন লাগলে তা সামলানোর ব্যবস্থাও ছিল না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাসায়নিকের গুদামটি আলম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। এই গুদামটি ফায়ার সার্ভিসের অবৈধ তালিকায় ছিল। তিনবার নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম আরও বলেন, রাসায়নিকের গুদাম হওয়ায় এটির আগুন নেভাতে অনেক সময় লেগেছে। আজ (বুধবার) বেলা ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যেহেতু রাসায়নিকের গুদাম, তাই এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
যখন আগুন লাগে তখন আমি দোকানে ছিলাম না। আমার স্ত্রী ফোন করে আমাকে জানালে এসে দেখি এই এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। মানুষজন ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরাও ছিল। তাপস বিশ্বাস, স্থানীয় পান দোকানি, রূপনগর আবাসিক এলাকা
রূপনগর আবাসিক এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা স্থানীয়দের কাছে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।
রূপনগর শিল্প এলাকায় বেশ কয়েকটি প্লট আছে তাঁর। যে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগেছে, তাঁর ঠিক বিপরীতে রূপনগর আবাসিক এলাকা। এই এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসায় শাহ আলমের প্রতিষ্ঠান ‘আলম ট্রেডার্স’ এর কার্যালয়। কার্যালয়টির দুইটি কক্ষে রাসায়নিকের মজুদ আছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।
কার্যালয়ের কাছেই একটি বাড়িতে সপরিবার থাকেন শাহ আলম। এর বাইরেও কয়েকটি প্লট ও রাসায়নিকের গুদাম আছে তাঁর।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে গাবতলীর দিয়াবাড়িতে তাঁর আরেকটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগেছিল। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির ৪ নম্বর সড়কেও তাঁর আরেকটি গুদাম রয়েছে।
জিল্লুর রহমান নামের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা স্ট্রিমকে বলেন, সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই শাহ আলমের। তবে আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল তাঁর। বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন শাহ আলম।
গতকাল আগুন লাগার পর থেকে গুদামের মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান।
স্থানীয়রা বলছেন, গতকাল আগুন লাগার পর থেকে শাহ আলমকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। এদিকে শাহ আলমের মালিকানাধীন আলম ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক আকরাম খানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বিপরীতে মোট ৭৮টি প্লট নিয়ে গড়ে ওঠা একটি শিল্প এলাকা--‘রূপনগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া’। এই এলাকার একপাশে কয়েকটি প্লট নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)। বাদবাকি এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা, কাপড় ওয়াশের কারখানা, রেস্তোরাঁ, ওষুধের কারখানা, হেলথকেয়ার সার্ভিস সেন্টার, ইন্সট্রুমেন্ট সাপ্লাই কোম্পানি, ডেন্টাল সার্জারির কার্যালয় এমনকি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মিরপুর উত্তর কার্যালয়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে স্থানে আগুন লেগেছে, তার পাশেই আরও কয়েকটি কারখানা, যেগুলোর সবই কাপড়সংশ্লিষ্ট। এ সব কাপড়ের কারখানার কোনোটিতে কাপড় প্রিন্টিং, কোনটি পোশাক তৈরি, কোনটিতে কাপড় ওয়াশের কাজ করা হয়। আর এ সব কাজে প্রয়োজন হয় প্রচুর রাসায়নিকের।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই পুরো শিল্প এলাকা এবং এর আশপাশে যত পোশাক কারখানা আছে, তার সবখানেই এককভাবে রাসায়নিক সরবরাহ করেন শাহ আলম।
স্থানীয় কয়েকজন তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী জানান, গুদামটিতে কাপড় প্রক্রিয়াকরণে বিভিন্ন রাসায়নিক রাখা ছিল। রাসায়নিকগুলো ছিল—কস্টিক সোডা (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), পার-অক্সাইড, ব্লিচিং (সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট), সোডা (সোডা অ্যাশ), পটাশ (পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) বা মেটা। এসব রাসায়নিক দাহ্য বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিকের কারখানা থেকেই আগুনের উৎপত্তি হতে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, গুদামটিতে বিভিন্ন প্রকার মাল্টিপারপাস কেমিক্যাল আছে। আগুন লাগার ফলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিক গ্যাস তৈরি হচ্ছে, যেটা বাতাসের সঙ্গে মিশে গেছে এবং ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হয়েছে। এই গ্যাস মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গেলে ফুসফুস ও হার্টের সমস্যা হতে পারে।’
কাজী নজমুজ্জামান আরও বলেন, ‘এটা জনবসতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বারবার মাইকিং করতেছি, জনগণকে বলতেছি এবং আপনাদেরকেও বলতেছি দূরত্ব বজায় রাখেন। নিজের জীবনকে আগে বাঁচান, তারপরে অন্য কিছু আপনারা করেন।’
কাজী নজমুজ্জামান বলেন, ‘স্টোরেজ নীতিমালা অনুযায়ী রাসায়নিকগুলো গুদামজাত করা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী যদি গুদামজাত না করা হয় তাহলে বিভিন্ন কেমিক্যাল একসাথে হয়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে, বড় ধরনের বিক্রিয়া হতে পারে। ফলে কেমিক্যালের অগ্নিনির্বাপণে সময় লাগে।’
গতকাল বেলা ১১টার পর বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। পরে দেখা যায় একটি কাপড় ওয়াশের কারখানা এবং রাসায়নিকের গুদামে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন ছড়িয়ে সড়কের বিপরীতে থাকা পাঁচতলা একটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আটকে পড়েন। স্থানীয়রা বলছেন, বিস্ফোরণের প্রায় ৪০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ ৯ টি অগ্নিদগ্ধ মরদেহ ওই পোশাক কারখানা থেকে বের করে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়।
অগ্নিকাণ্ড যেখানে ঘটে তাঁর বিপরীতে মূল সড়ক লাগোয়া একটি পানের দোকান। দোকানের মালিক তাপস বিশ্বাস (৪৫)। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, 'যখন আগুন লাগে তখন আমি দোকানে ছিলাম না। আমার স্ত্রী ফোন করে আমাকে জানালে এসে দেখি এই এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। মানুষজন ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরাও ছিল।'
পোশাককর্মীরা জানিয়েছেন, তৈরি পোশাকের যে কারখানার ভবন সেটি পাঁচতলা। মূল ভবন চারতলা হলেও ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে আরেকটি তলা করা হয়েছে। ভবনের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, ভবনের নিচতলায় কিছু নেই। দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামে টি-শার্ট প্রিন্টিংয়ের একটি কারখানা আছে। ভবনটির তিন ও চারতলা মিলিয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানা। আরএন ফ্যাশন নামের এই কারখানায় মূলত গেঞ্জি তৈরি করা হয়। এই কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম নামের দুইজন। পাঁচতলায় আরেকটা প্রিন্টিং কারখানা, নাম বিসমিল্লাহ ফ্যাশন। সেটার মালিক রাজীব নামের একজন। তাঁদের পোশাক কারখানার দুটি তলায় ২০–২৫ জনের মতো কর্মী।
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুনে প্রাণ গেছে ১৬ জনের। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার আগুন গতকাল মঙ্গলবারই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিকের গুদামটি অবৈধ ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির তথ্য বলছে, এই রাসায়নিকের গুদামের মালিকানা আলম ট্রেডার্স নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। আর স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহ আলম (৬০) নামের এক ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠেছে, কে এই শাহ আলম।
মিরপুর উত্তর তথা রূপনগর আবাসিক এলাকার প্রভাবশালী শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁর এই গুদামটি ফায়ার সার্ভিসের অবৈধ গুদামের তালিকায় ছিল। তিনবার নোটিশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া দেয়নি গুদামের মালিকপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই রাসায়নিক গুদাম বা পোশাক কারখানা কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। আগুন লাগলে তা সামলানোর ব্যবস্থাও ছিল না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাসায়নিকের গুদামটি আলম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। এই গুদামটি ফায়ার সার্ভিসের অবৈধ তালিকায় ছিল। তিনবার নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম আরও বলেন, রাসায়নিকের গুদাম হওয়ায় এটির আগুন নেভাতে অনেক সময় লেগেছে। আজ (বুধবার) বেলা ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যেহেতু রাসায়নিকের গুদাম, তাই এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
যখন আগুন লাগে তখন আমি দোকানে ছিলাম না। আমার স্ত্রী ফোন করে আমাকে জানালে এসে দেখি এই এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। মানুষজন ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরাও ছিল। তাপস বিশ্বাস, স্থানীয় পান দোকানি, রূপনগর আবাসিক এলাকা
রূপনগর আবাসিক এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা স্থানীয়দের কাছে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।
রূপনগর শিল্প এলাকায় বেশ কয়েকটি প্লট আছে তাঁর। যে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগেছে, তাঁর ঠিক বিপরীতে রূপনগর আবাসিক এলাকা। এই এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসায় শাহ আলমের প্রতিষ্ঠান ‘আলম ট্রেডার্স’ এর কার্যালয়। কার্যালয়টির দুইটি কক্ষে রাসায়নিকের মজুদ আছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন।
কার্যালয়ের কাছেই একটি বাড়িতে সপরিবার থাকেন শাহ আলম। এর বাইরেও কয়েকটি প্লট ও রাসায়নিকের গুদাম আছে তাঁর।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে গাবতলীর দিয়াবাড়িতে তাঁর আরেকটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগেছিল। মিরপুরের শিয়ালবাড়ির ৪ নম্বর সড়কেও তাঁর আরেকটি গুদাম রয়েছে।
জিল্লুর রহমান নামের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা স্ট্রিমকে বলেন, সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই শাহ আলমের। তবে আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল তাঁর। বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন শাহ আলম।
গতকাল আগুন লাগার পর থেকে গুদামের মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান।
স্থানীয়রা বলছেন, গতকাল আগুন লাগার পর থেকে শাহ আলমকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। এদিকে শাহ আলমের মালিকানাধীন আলম ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক আকরাম খানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বিপরীতে মোট ৭৮টি প্লট নিয়ে গড়ে ওঠা একটি শিল্প এলাকা--‘রূপনগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া’। এই এলাকার একপাশে কয়েকটি প্লট নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)। বাদবাকি এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা, কাপড় ওয়াশের কারখানা, রেস্তোরাঁ, ওষুধের কারখানা, হেলথকেয়ার সার্ভিস সেন্টার, ইন্সট্রুমেন্ট সাপ্লাই কোম্পানি, ডেন্টাল সার্জারির কার্যালয় এমনকি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মিরপুর উত্তর কার্যালয়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে স্থানে আগুন লেগেছে, তার পাশেই আরও কয়েকটি কারখানা, যেগুলোর সবই কাপড়সংশ্লিষ্ট। এ সব কাপড়ের কারখানার কোনোটিতে কাপড় প্রিন্টিং, কোনটি পোশাক তৈরি, কোনটিতে কাপড় ওয়াশের কাজ করা হয়। আর এ সব কাজে প্রয়োজন হয় প্রচুর রাসায়নিকের।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই পুরো শিল্প এলাকা এবং এর আশপাশে যত পোশাক কারখানা আছে, তার সবখানেই এককভাবে রাসায়নিক সরবরাহ করেন শাহ আলম।
স্থানীয় কয়েকজন তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী জানান, গুদামটিতে কাপড় প্রক্রিয়াকরণে বিভিন্ন রাসায়নিক রাখা ছিল। রাসায়নিকগুলো ছিল—কস্টিক সোডা (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), পার-অক্সাইড, ব্লিচিং (সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট), সোডা (সোডা অ্যাশ), পটাশ (পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) বা মেটা। এসব রাসায়নিক দাহ্য বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিকের কারখানা থেকেই আগুনের উৎপত্তি হতে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, গুদামটিতে বিভিন্ন প্রকার মাল্টিপারপাস কেমিক্যাল আছে। আগুন লাগার ফলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিক গ্যাস তৈরি হচ্ছে, যেটা বাতাসের সঙ্গে মিশে গেছে এবং ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হয়েছে। এই গ্যাস মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গেলে ফুসফুস ও হার্টের সমস্যা হতে পারে।’
কাজী নজমুজ্জামান আরও বলেন, ‘এটা জনবসতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বারবার মাইকিং করতেছি, জনগণকে বলতেছি এবং আপনাদেরকেও বলতেছি দূরত্ব বজায় রাখেন। নিজের জীবনকে আগে বাঁচান, তারপরে অন্য কিছু আপনারা করেন।’
কাজী নজমুজ্জামান বলেন, ‘স্টোরেজ নীতিমালা অনুযায়ী রাসায়নিকগুলো গুদামজাত করা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী যদি গুদামজাত না করা হয় তাহলে বিভিন্ন কেমিক্যাল একসাথে হয়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে, বড় ধরনের বিক্রিয়া হতে পারে। ফলে কেমিক্যালের অগ্নিনির্বাপণে সময় লাগে।’
গতকাল বেলা ১১টার পর বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। পরে দেখা যায় একটি কাপড় ওয়াশের কারখানা এবং রাসায়নিকের গুদামে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন ছড়িয়ে সড়কের বিপরীতে থাকা পাঁচতলা একটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আটকে পড়েন। স্থানীয়রা বলছেন, বিস্ফোরণের প্রায় ৪০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ ৯ টি অগ্নিদগ্ধ মরদেহ ওই পোশাক কারখানা থেকে বের করে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়।
অগ্নিকাণ্ড যেখানে ঘটে তাঁর বিপরীতে মূল সড়ক লাগোয়া একটি পানের দোকান। দোকানের মালিক তাপস বিশ্বাস (৪৫)। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, 'যখন আগুন লাগে তখন আমি দোকানে ছিলাম না। আমার স্ত্রী ফোন করে আমাকে জানালে এসে দেখি এই এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। মানুষজন ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরাও ছিল।'
পোশাককর্মীরা জানিয়েছেন, তৈরি পোশাকের যে কারখানার ভবন সেটি পাঁচতলা। মূল ভবন চারতলা হলেও ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে আরেকটি তলা করা হয়েছে। ভবনের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, ভবনের নিচতলায় কিছু নেই। দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামে টি-শার্ট প্রিন্টিংয়ের একটি কারখানা আছে। ভবনটির তিন ও চারতলা মিলিয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানা। আরএন ফ্যাশন নামের এই কারখানায় মূলত গেঞ্জি তৈরি করা হয়। এই কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম নামের দুইজন। পাঁচতলায় আরেকটা প্রিন্টিং কারখানা, নাম বিসমিল্লাহ ফ্যাশন। সেটার মালিক রাজীব নামের একজন। তাঁদের পোশাক কারখানার দুটি তলায় ২০–২৫ জনের মতো কর্মী।
সরকার ও ব্যবসায়ীরা বসে আলোচনার ভিত্তিতে দেশে ভোজ্যতেলের অভিন্ন দাম নির্ধারণ শুরু হয় ২০২১ সালে। এর মধ্যে গত সোমবার ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে সরকার জানায়, তারা নতুন এই দামে সম্মতিই দেয়নি। দুপক্ষের এমন অবস্থান নিয়ে এরপর থেকে চলছে আলোচনা।
১ দিন আগেজামায়াত ইসলামীর নতুন আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চলছে প্রস্তুতি। এরমধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ৩ প্রার্থীর প্যানেল ‘চূড়ান্ত’ করেছে বলে জানা গেছে। ‘গোপন’ এই প্যানেলের প্রার্থীদের নাম পেয়েছে স্ট্রিম।
১ দিন আগেমানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মায় বিলীন দুই গ্রামে ভোটার করা হয়েছে দুজনকে। তবে তাঁরা ভোটার হওয়ার আবেদন করেছিলেন উপজেলার অন্য দুই গ্রামের ঠিকানায়। কিন্তু কোনো ঠিকানায় গিয়েই তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
৩ দিন আগেগত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে আলোচনা থাকলেও প্রথম কয়েক মাস তেমন কার্যক্রম দেখা যায়নি। শুরুতে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির নেতারাই পরবর্তীকালে এনসিপি গঠন করেন।
৬ দিন আগে