leadT1ad

দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫২
ভৌগোলিক অবস্থান ও ঘনবসতির কারণে সবচেয়ে বেশি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে বেসরকারি খাতকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়া বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল এবং ভৌগোলিক অবস্থান ও ঘনবসতির কারণে বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে। এই বিশাল ঝুঁকি ও সংকট মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সঠিক নীতিমালা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে কাজে লাগাতে পারলে জলবায়ুজনিত ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।

আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের তৃতীয় ও শেষ দিনে ‘দ্য বে অন ফায়ার: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাজ দ্য নিউ সিকিউরিটি ক্রাইসিস’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেশনে আলোচনায় অংশ নেন পাকিস্তানের ব্লু গ্রিন নেক্সাস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মুহাম্মদ আজিম আলী শাহ, সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম আখন্দ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) গবেষণা ফেলো শাফকাত মুনির, নলেজ ফর ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক পাইরো চুং, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম আর কবির এবং ওইসিডি-এর বিভাগীয় প্রধান জান রিলেন্ডার।

বক্তারা বিশ্বব্যাংকের ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সতর্ক করে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ তীব্র তাপমাত্রার ঝুঁকিতে পড়বে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে জলবায়ু অভিযোজনের প্রধান ভার পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, তিন-চতুর্থাংশের বেশি পরিবার ও প্রতিষ্ঠান আগামী ১০ বছরে বড় ধরনের আবহাওয়া-জনিত বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে। যদিও ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সরকারি সহায়তা বা উন্নত প্রযুক্তির অভাবে তারা কম ব্যয়ের সাধারণ সমাধানের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় ২৫০টি গ্রামের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ৫৭ শতাংশ পরিবারের দীর্ঘমেয়াদে দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতার অভাবে ভুগছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন কেবল পরিবেশগত সমস্যায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা সামাজিক ও মানবিক সংকটে রূপ নিচ্ছে, যার প্রধান শিকার দরিদ্র পরিবার ও কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে বাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণে সরকারি বিনিয়োগ প্রাণহানি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। বেসরকারি খাত যদি জলবায়ু চাপের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত প্রয়োজনীয় স্থানে সম্পদ ও বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে পারে, তবে মোট ক্ষতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব। এজন্য সরকারকে বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো, পরিবহন ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সেশনে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিষয়ক বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, বাংলাদেশের সহনশীলতা ক্রমাগত পরীক্ষার মুখে পড়ছে। জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিযোজন করছে ঠিকই, কিন্তু সংকটের ব্যাপকতা মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারা আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা জাল, জলবায়ু সহনশীল কৃষি এবং অভিযোজন অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বক্তারা আরও বলেন, সরকার, জনগণ ও বেসরকারি খাতের মধ্যে কার্যকর অংশীদারত্ব গড়ে তুললে বাংলাদেশ দ্রুত জলবায়ু-সহনশীল সমাধান গ্রহণ করতে পারবে, যা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত