leadT1ad

যে কারণে চাকরি হারালেন আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এমডি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ০৮
ফরমান আর চৌধুরী। সংগৃহীত ছবি

আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরীকে অপসারণের জন্য অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম, সিএসআর তহবিলের অপব্যবহার, খেলাপি ঋণ গোপন, নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখে মুনাফা দেখানোসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ এনে তাঁকে অপসারণে অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) সেই অনুমতি পাওয়ার পর চাকরি হারান ফরমান আর চৌধুরী। ব্যাংকটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এপ্রিলে এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এরপর নিরীক্ষায় তাঁর নানা অনিয়ম ওঠে এলে তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, ফরমান আর চৌধুরীকে যেসব কারণে অপসারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো—নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম, সিএসআর তহবিলের অপব্যবহার, খেলাপি ঋণ গোপন, নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখে মুনাফা দেখানো, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় অনিয়ম, অতিরিক্ত বোনাস ও বেতন বৃদ্ধি। এ ছাড়া বেতনের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে ফেরত দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, এমডিকে অপসারণ বিষয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ব্যাংকটি বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের ভাই আবদুস সামাদ। তারা ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকটির নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।

এক নজরে অনিয়মের চিত্র

২০২৩ ও ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত নিরীক্ষার মাধ্যমে গুরুতর পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগের বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল বিভিন্ন অনিয়ম, ত্রুটির কারণ চিহ্নিত করে এমডি ফরমান আর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য গত ২৫ মার্চ একটি চিঠি দেয়।

পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম, সিএসআর তহবিল বিতরণ, খেলাপি ঋণ গোপন, নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে অনিয়ম, এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতি, অতিরিক্ত বোনাস ও বেতন বৃদ্ধি এবং পর্ষদের নির্দেশনা উপেক্ষাসহ আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে এমডিকে চিঠি দেয়।

পরবর্তীতে এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন রিপোর্ট পর্যালোচনার পর পরিচালনা পর্ষত স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে গত ১৩ এপ্রিল এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। এরপর অভিযোগগুলো আরও পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে অভ্যন্তরীণ এবং তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষা উভয়ই চালু করা হয়। এমডি গত ১৯ জুন পর্ষদের কাছে অনিয়মের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। তবে তার ব্যাখ্যা গ্রাহণযোগ্য হয়নি পর্ষদের কাছে।

এর মধ্যে এমডি বেআইনিভাবে ৫২ লাখ টাকা নগদ বোনাস হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর গত ১৩ জানুয়ারি অতিরিক্ত বোনাসের অর্থ নগদেই ফেরত দেন। এরপর অতিরিক্ত আরও ১৮ লাখ টাকা ২৭ জুলাই ফেরত দেন। এমডি প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে যাচাই বাছাই ও পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেন। এছাড়া খেলাপি ঋণ গোপন করার কারণে খেলাপি ঋণের অনুপাত ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ (জুন ২০২৪) থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ (সেপ্টেম্বর ২০২৪) হয়েছে। এসব কারণে তাকে অপসারণ করা হয়।

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও ফরমান আর চৌধুরী কোনো সাড়া দেননি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত