leadT1ad

‘শিবিরের হাতে কবির হত্যাকাণ্ড’, জাকসু নির্বাচনের আগে সামনে আনছে ছাত্রদল

স্ট্রিম সংবাদদাতাজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১০: ৫৬
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০৭
স্ট্রিম গ্রাফিক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে । নির্বাচন কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ব্যানার, লিফলেট, পোস্টার, সভা–সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, আবাসিক ভবন ও বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরামের ব্যানারে পোস্টার লাগানো হয়েছে।

পোস্টারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহত হাবিবুর রহমান কবিরের ছবি ও লেখা আছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ১৫ আগস্ট রাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল নেতা কবিরের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে আক্রমণ চালায়। সেই আক্রমণের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ আগস্ট মারা যান কবির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র হাবিবুর রহমান কবির শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় মসজিদে হাবিবুর রহমান করিবের স্মরণে দোয়া মহফিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরাম’।

তবে জাকসু নির্বাচনের আগে কবির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যানার, পোস্টার লাগানোকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবেই দেখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রসংগঠন। তারা ছাত্রদলের জাকসুর প্রচারণার কৌশলও মনে করছেন অনেকে।

আর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা প্রতিবছরেই হাবিবুর রহমান কবিরের স্মরণে দোয়া মহফিলের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যানার পোস্টার ও আয়োজনের সঙ্গে জাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁদের কার্যক্রমকে তারা প্রাক্তনদের কর্মসূচি ও দোয়া মহফিলকে ধর্মীয় অনূভুতির অংশ হিসেবেই দেখছেন।

শাখা ছাত্রদের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, এখানে জাকসুর আচরণবিধি ভঙ্গের কোনো কারণ দেখি না। আমরা কোনো মিছিল-মিটিং করিনি। শহীদ কবির ভাইয়ের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরাম। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদের সব সময় জোরালো অবস্থান ছিল এবং আছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো রাজনীতি করছি না।

এদিকে কমিটির আত্মপ্রকাশের পরপরই গত বছরের ৩ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে কথা বলেন শিবিরের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আদালত থেকে শিবির নেতারা দায়মুক্তি পেয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। যদিও আইনি প্রক্রিয়ায় এই ‘দায়মুক্তি’ সম্পর্কে জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের আইনি প্রক্রিয়ার দায়মুক্তির ব্যাপারে আমার জানা নেই। ৫ আগস্টের পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করেছে। তবে তাঁরা তাদের ১৪ জনের কমিটির বাইরে বাকি জনশক্তির ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি শুরু করার আগে কবির হত্যাকাণ্ডের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।

অন্যদিকে এতদিন পর কবির হত্যাকাণ্ডের এভাবে প্রচার করা ‘রাজনৈতিক’ ও ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে মনে করছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত আটটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বিচারিক আদালতে মীমাংসিত একমাত্র ঘটনা কবির ভাইয়ের বিষয়টি। বাকি সাতটির বিচার তো হয়ইনি, বরং কোনো চার্জশিটও তৈরি হয়নি। অথচ একটি গ্রুপ এই মীমাংসিত বিষয়টি এখন সামনে এনে জাকসুর পরিবেশকে ঘোলা করার পাঁয়তারা করছে। নির্বাচনী আচরণবিধিতে যেখানে পোস্টারিংয়ের ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে তাঁরা ব্যানার ও পোস্টার টানিয়ে আচরণবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব রাশেদুল আলম বলেন, আজকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দোয়া মহফিল জাকসু নির্বাচনের আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এটা প্রাক্তনদের আয়োজন। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কী ঘটেছিল সেদিন

১৯৮৯ সালের সমসাময়িক সময়ের সংবাদপত্র বিশ্লেষণ, প্রত্যক্ষদর্শী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, ওই বছরের ১৫ আগস্ট ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ও ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দুই দলের নেতা ও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে ঘটনার সমাধানও হয়। এই ঘটনার জেরে শহীদ সালাম–বরকত হলে শিবির ছাত্রদলের সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান কবিরসহ আরও ছয়জন গুরুতর আহত হন। আহত কবিরকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখানে ২৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবির হত্যাকাণ্ডটি ওই সময়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। এই ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর আপত্তির মুখে ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়।

কবিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের নৃশংস হামলায় নিহত ছাত্রনেতা কবিরের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্নস্থানে ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার সর্বশেষ শিকার কবির। তাঁর মৃত্যু একদিকে যেমন দেশের গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রামে জাতিকে প্রেরণা জোগাবে অন্যদিকে একইভাবে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রকামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করবে।

কবির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওই সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, জাকসুর ভিপি এনামুল হক শামীম ও জি এস আজিজুল হাসান চৌধুরী বিবৃতির মাধ্যমে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি ছাত্র সংগঠন কবিরের মৃত্যতে শোক প্রকাশ করে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা। তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কাগজে–কলমে নিষিদ্ধ করা না গেলেও ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো শিবিরকে সামাজিকভাবে বয়কট করে। এরপর শিবির আর প্রকাশ্যে আসতে পারেনি। গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয় শিবির।

Ad 300x250

সম্পর্কিত