leadT1ad

নারীদের প্রার্থী করা নিয়ে দোটানায় জামায়াত

স্ট্রিম গ্রাফিক

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ভিন্নধর্ম থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তবে নিজ দলের নারীদের প্রার্থী করার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

সূত্রের দাবি, এই ইস্যুতে দলের অভ্যন্তরে দুই ধরনের মত এসেছে। একাংশ নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যরা আগের মতো নারীদের সংরক্ষিত আসনে আনার কথা বলেছেন। পরে এ বিষয়ে উভয়পক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

‘ইনক্লুসিভ’ প্রার্থী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমবার সরাসরি নারীদের মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জামায়াত।

এ ব্যাপারে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্ট্রিমকে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার বিষয়ে দলে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে পর্যন্ত সময় থাকে। আমাদেরও প্রার্থী মনোনয়নে পরিবর্তন হতে পারে।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার গঠন করলে শরিক দল জামায়াতের চার নারী সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ১৯৯৬ সালেও দুই নারী সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সংসদ নির্বাচনে কখনো সরাসরি নারীরা প্রার্থী না হলেও ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত ৩৬ নারী ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দলীয় ফোরামে আলোচনার পর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াত থেকে প্রার্থী করা হচ্ছে– এমন কয়েকজনের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য, জামায়াতের মহিলা বিভাগের দায়িত্বশীল, আইনজীবী, লেখক ও টকশোর আলোচক রয়েছে।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মহিলা বিভাগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক নুরুন্নিসা সিদ্দিকা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম, আইনজীবী সাবিকুন্নাহার মুন্নী, লেখক ও শিক্ষক মারদিয়া মমতাজ ও আমির শফিকুর রহমানের স্ত্রী আমিনা রহমান রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাবিকুন্নাহার মুন্নী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য। আমিনা রহমান ২০০১-০৬ মেয়াদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রকৌশলী মারদিয়া মমতাজ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। টকশোতে তাঁর সাবলীল বক্তৃতা আলোচনায় এসেছে। ঢাকা-১৮ আসনে নিজের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন নাকচ করেছেন মারদিয়া মমতাজ। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের কেউ আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেননি। আমার নিজেরও কোনো পরিকল্পনা নেই।’

অধ্যাপক নুরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, ‘নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে মজলিসে শূরায় আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমিরকে দেওয়া হয়েছে। উনি নির্বাহী পরিষদে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা অনুমাননির্ভর বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিন্ন ধর্ম, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও নারীদের নিয়ে প্যানেল করে সফল হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নেও একই ‘কৌশল’ নিচ্ছে জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচনী স্লোগান ঠিক করেছে– ‘চলো একসাথে গড়ি বাংলাদেশ’।

শুধু রুকন বা শপথধারী সদস্যদের প্রার্থী করার অবস্থান থেকে সরে ইতোমধ্যে খুলনা-১ আসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনেও আরেকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জামায়াতের সেক্রেটারি স্ট্রিমকে বলেন, নিজ সম্প্রদায়কে রিপ্রেজেন্ট করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে অনেকে আমাদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, আমাদেরও আগ্রহ আছে নির্বাচন ইনক্লুসিভ করার। এরই অংশ হিসেবে খুলনায় হিন্দু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি।

গত ২৮ ও ২৯ নভেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। জামায়াত সূত্র জানায়, অধিবেশনে উপস্থিত নারী কর্মীদের কাছে সরাসরি মতামত চান আমির শফিকুর রহমান। নারী প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে প্রায় সমান মতামত আসে। ফলে সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিষয়টি এখন দলের নির্বাহী পরিষদে আলোচনা হবে। এরপর জামায়াতের আমির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। জামায়াতের মহিলা বিভাগ আমিরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘আমরা ইনক্লুসিভ প্রার্থী দিচ্ছি। ইনক্লুসিভ মানে নারী-পুরুষ, ভিন্ন ধর্ম, নানা পেশার মানুষ থাকবেন। জামায়াতের নারীনেত্রীরা আগেও সংসদে ছিলেন, এবারও থাকবেন। নারীদের সরাসরি প্রার্থী করার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। উপযুক্ত প্রার্থী হলে তাদের সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করতে কোনো সমস্যা আমি দেখি না।’

নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে নারী ছয় কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২, যা মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। নারী ভোটারদের টানতে জামায়াতের মহিলা বিভাগও মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অন্যদের মতো নয়। এ কারণে রাজনীতি করলেও কোনো নারী নিজে থেকে প্রার্থী হতে না চাইলে আমরা তাঁকে ঠেলে দিতে পারি না। কেউ আগ্রহী হলে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় সম্ভাবনা থাকলে জামায়াত অবশ্যই বিবেচনা করবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত