জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম এবং সংস্কারের জন্য গণভোট দুটিই সমান্তরালে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থান কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম এবং গণভোটকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
জাতীয় কৃষি দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা; জাতীয় অর্থনীতির নতুন শক্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
আখতার হোসেন বলেন, ‘একটি দল কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম চাওয়ার কথা বলে জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কারকে গৌণ করে ফেলেছে। আরেকটি দল “আলু না গণভোট” স্লোগানের মধ্য দিয়ে কৃষকের ন্যায্য পাওনাকে গৌণ করে ফেলেছে। কৃষকের মুক্তির জন্য, এ দেশের জনগণের মুক্তির জন্য সংস্কার দরকার। আমরা সংস্কারকে এবং কৃষকের চাহিদাকে পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের বেঁচে থাকার রসদ কৃষি থেকেই উৎসারিত হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে কৃষির সম্ভাবনার জায়গা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমন্বিতভাবে যদি কৃষি সেক্টর নিয়ে ভাবতে পারতাম, তাহলে উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতাম। অর্থনীতিতেও এটার প্রভাব থাকতো।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে আখতার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং একটা নতুন বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছি। আগের বাংলাদেশ ছিল আওয়ামী বয়ানের উন্নয়নের বাংলাদেশ। সেই উন্নয়নের বাংলাদেশে কৃষকরা বরাবর বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিয়েছে। পক্ষান্তরে, আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেই ফ্যাসিবাদী আমলের বাংলাদেশ আর সামনে প্রত্যাশা করি না।’
বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, মারামারি-কাটাকাটির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে পলিসি নির্ভর বাংলাদেশ গঠন করতে পারব। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে, যেন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কারও কাছে কুক্ষীগত না হয়ে যায়।’
একটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ নিয়ে অনেকগুলো দল যে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখি। ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট এবং পরবর্তী সংসদকে ক্ষমতায়িত করার মধ্য দিয়ে সংবিধানে মৌলিক সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা মোটাদাগে একমত হয়েছি। ইদানীং একটি দলের নেতারা চূড়ান্তভাবে গণভোটের রায়কে প্রত্যাখ্যান করার মত ব্যক্ত করেছেন। তারা গণভোটে ‘না’ দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করেছেন কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সেই ক্যাম্পেইন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও এখন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের রায়কে শ্রদ্ধা দেখাবেন সেরকম কোনো লক্ষ্মণ একটি দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। গণভোটের রায় বাধ্যতামূলক হবে কি না, গণভোটের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানে সংশোধন আনা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন তারা করছেন।’
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক সামান্তা শারমীন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, জাতীয় শ্রমিকশক্তির আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম ফকির প্রমুখ।