নাহিদ বলেন, 'কোটা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে যাইনি, কারণ তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা ছিলো না। তাই আমরা আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করি।'
স্ট্রিম প্রতিবেদক
কোটা সংস্কার ইস্যুতে আদালতের বদলে রাজপথেই সমাধান চেয়েছিলেন—এমনটাই জানিয়েছেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, 'কোটা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে যাইনি, কারণ তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা ছিলো না। তাই আমরা আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করি।'
গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ বলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, তবে সরকার কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে। তবু আমরা এটিকে আপাতত মীমাংসা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।'
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দি গ্রহণ অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন কোটা সংস্কারের জন্য একটি বড় ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল এই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গিয়ে আক্রমণ করে। এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। এক পর্যায়ে হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এই ঘোষণার পরেও আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের গ্রেফতার শুরু হয় এবং ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করে। পরবর্তীতে সরকার কোটা বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে সরকারের আচরণে আমরা বুঝতে পারি, সরকার আন্দোলন দমনের জন্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোটা বাতিল চায়নি। কিছুদিন পর হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, 'আমি রাগের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছি।' আমরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা করেছিলাম যে, কোটা প্রথা আবার ফিরে আসতে পারে।
হাসিনার আমলে ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। আমি সে নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনে অনিয়মের মাধ্যমে আমাদের জিততে দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ পদে ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন কালচারসহ অন্যান্য অনিয়ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হই।
তিনি জানান, ২০২৩ সালে তারা "গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি" নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর করাই ছিলো এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারের কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলপূর্বক কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে। সেদিনই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করি। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়। আমরা হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দেই। সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে আলটিমেটাম দিই। এর মধ্যে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমরা ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালপূর্বক কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে আন্দোলন শুরু করি, উল্লেখ করেন সাক্ষী।
তিনি জানান, ২, ৩, ৪ জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ছিলো। ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কোটা সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি ও আদেশ প্রদানের কথা থাকলেও সেদিন কোনো শুনানি হয়নি। তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই সরকারের কিছু করার নেই। কোন বক্তব্য থাকলে তা আদালতে গিয়ে যেন বলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার পরিকল্পিতভাবে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করেছে। তাই আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখি। আন্দোলন তীব্রতর করার লক্ষ্যে "বাংলা ব্লকেড" নামে ৭ জুলাই সারাদেশে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করি। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে ১ মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে। আমরা এতে হতাশ হই এবং নিশ্চিত হই যে, বিচার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। অতঃপর আমাদের দাবি কিছুটা পরিবর্তন করে সরকারি চাকরিতে সকল পর্যায়ে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার দাবি করি। আন্দোলনের এ পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ি, বলেন তিনি।
নাহিদের মতে, আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর গেট ছাত্রলীগ বন্ধ করে দেয় যাতে ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। সারাদেশেই এ ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তবু সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখি। সারাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করি। ১৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করেন। তিনি কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা দেওয়া হয়।
সাক্ষী বলেন, আমরা সবসময় দেখেছি, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সমগ্র দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করে। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো হাসিনার এ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এরপর ১৫ জুলাই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, একই দিন ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি ডাকে। সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়, কারণ তারা আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন, সাধারণ সম্পাদক সৈকত এই হামলায় নেতৃত্বদান করে। তারা বাইরে থেকেও সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করেছিলো। এই হামলায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রছাত্রীদের ওপরও তারা নির্যাতন চালায় এবং চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেয়। ১৬ জুলাই এই হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৬ জন সেদিন আন্দোলনে শহীদ হন।
এই হত্যার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করে। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে একজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়। সেদিন বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে। গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল শুরু করলে পুলিশ মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে, যোগ করেন সাক্ষী।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ আমাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। সেদিন ডিজিএফআই আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের চাপ দেয়। হলের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের সঙ্গে সংলাপে আমরা অস্বীকৃতি জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি করি। ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী "কমপ্লিট শাটডাউন" কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের ভাইবোনদের হত্যা করা হয়েছে, বলে আমরা সারা দেশের সকল শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
আমাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই সারাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জীবনের হুমকির মুখে পড়ি এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাই। সেদিন সারাদেশে অনেক ছাত্রজনতা আহত ও নিহত হয়। সেদিন রাতে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্রজনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্রজনতা আহত ও নিহত হয়। ১৯ জুলাই আমরা বুঝতে পারি যে, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলনের এবং আহত ও নিহতদের কোন খবর কোন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিলো না, বলেন নাহিদ।
কোটা সংস্কার ইস্যুতে আদালতের বদলে রাজপথেই সমাধান চেয়েছিলেন—এমনটাই জানিয়েছেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, 'কোটা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে যাইনি, কারণ তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা ছিলো না। তাই আমরা আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করি।'
গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ বলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, তবে সরকার কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে। তবু আমরা এটিকে আপাতত মীমাংসা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।'
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দি গ্রহণ অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন কোটা সংস্কারের জন্য একটি বড় ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল এই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গিয়ে আক্রমণ করে। এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। এক পর্যায়ে হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এই ঘোষণার পরেও আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের গ্রেফতার শুরু হয় এবং ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করে। পরবর্তীতে সরকার কোটা বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে সরকারের আচরণে আমরা বুঝতে পারি, সরকার আন্দোলন দমনের জন্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোটা বাতিল চায়নি। কিছুদিন পর হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, 'আমি রাগের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছি।' আমরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা করেছিলাম যে, কোটা প্রথা আবার ফিরে আসতে পারে।
হাসিনার আমলে ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। আমি সে নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনে অনিয়মের মাধ্যমে আমাদের জিততে দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ পদে ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন কালচারসহ অন্যান্য অনিয়ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হই।
তিনি জানান, ২০২৩ সালে তারা "গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি" নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর করাই ছিলো এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারের কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলপূর্বক কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে। সেদিনই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করি। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়। আমরা হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দেই। সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে আলটিমেটাম দিই। এর মধ্যে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমরা ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালপূর্বক কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে আন্দোলন শুরু করি, উল্লেখ করেন সাক্ষী।
তিনি জানান, ২, ৩, ৪ জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ছিলো। ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কোটা সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি ও আদেশ প্রদানের কথা থাকলেও সেদিন কোনো শুনানি হয়নি। তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই সরকারের কিছু করার নেই। কোন বক্তব্য থাকলে তা আদালতে গিয়ে যেন বলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, তখন আমরা জানতাম বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার পরিকল্পিতভাবে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করেছে। তাই আদালতে না গিয়ে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখি। আন্দোলন তীব্রতর করার লক্ষ্যে "বাংলা ব্লকেড" নামে ৭ জুলাই সারাদেশে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করি। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে ১ মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে। আমরা এতে হতাশ হই এবং নিশ্চিত হই যে, বিচার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। অতঃপর আমাদের দাবি কিছুটা পরিবর্তন করে সরকারি চাকরিতে সকল পর্যায়ে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার দাবি করি। আন্দোলনের এ পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ি, বলেন তিনি।
নাহিদের মতে, আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর গেট ছাত্রলীগ বন্ধ করে দেয় যাতে ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। সারাদেশেই এ ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তবু সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখি। সারাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করি। ১৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করেন। তিনি কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা দেওয়া হয়।
সাক্ষী বলেন, আমরা সবসময় দেখেছি, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সমগ্র দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করে। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো হাসিনার এ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এরপর ১৫ জুলাই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, একই দিন ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি ডাকে। সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়, কারণ তারা আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন, সাধারণ সম্পাদক সৈকত এই হামলায় নেতৃত্বদান করে। তারা বাইরে থেকেও সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করেছিলো। এই হামলায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রছাত্রীদের ওপরও তারা নির্যাতন চালায় এবং চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেয়। ১৬ জুলাই এই হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৬ জন সেদিন আন্দোলনে শহীদ হন।
এই হত্যার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করে। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে একজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়। সেদিন বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে। গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল শুরু করলে পুলিশ মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে, যোগ করেন সাক্ষী।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ আমাদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। সেদিন ডিজিএফআই আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের চাপ দেয়। হলের বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের সঙ্গে সংলাপে আমরা অস্বীকৃতি জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি করি। ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী "কমপ্লিট শাটডাউন" কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের ভাইবোনদের হত্যা করা হয়েছে, বলে আমরা সারা দেশের সকল শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
আমাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই সারাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জীবনের হুমকির মুখে পড়ি এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাই। সেদিন সারাদেশে অনেক ছাত্রজনতা আহত ও নিহত হয়। সেদিন রাতে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্রজনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্রজনতা আহত ও নিহত হয়। ১৯ জুলাই আমরা বুঝতে পারি যে, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলনের এবং আহত ও নিহতদের কোন খবর কোন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিলো না, বলেন নাহিদ।
আরাফাত চৌধুরী তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমরা ভোটার উপস্থিতি তালিকা ও ভোট কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।’
৭ ঘণ্টা আগেতদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।’
১ দিন আগেআবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ৩১টির মধ্যে ২৬টি দল পিআরের পক্ষে। এর মধ্যে কিছু দল শুধু উচ্চকক্ষে, জামায়াতসহ কিছু দল উভয় কক্ষে পিআর চায়।
১ দিন আগেআওয়ামী লীগ যে অপরাধ করেছে, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল একই ধরণের অপরাধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করলেন বা নিষিদ্ধ করলেন, জাতীয় পার্টিকে কেন করলেন না? ১৪ দলকে কেন ক
১ দিন আগে