মারুফ বরকত
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) থেকে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতি বিষয়ে অগ্রগতি জানানোর জন্য। এলডিসি উত্তরণ ঘটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়নি চিঠিটা। চিঠি পাবার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ফাঁসির রায় হয়ে গেছে। যেকোনো উপায়ে এখনি এলডিসি গ্রাজুয়েশন না করতে পারলে বোধহয় আর উপায় নেই।
জাতিসংঘের সিডিপি’র চেয়ার হোসে এন্টোনিও ওকাম্পো স্বাক্ষরিত গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারকে পাঠানো ওই চিঠিতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে উন্নয়নের প্রস্তুতির ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। উক্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতিসংঘ একটা সভা করবে। সে সভার এজেন্ডা, তারিখ এবং সভায় কারা থাকবে সেসব পরে জানানো হবে। উক্ত চিঠির ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা মণ্ডলির সভায় এলডিসি উত্তরণের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তারপর থেকে উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শোনা যায়। কেউ বলেছেন, এখনও আমরা প্রস্তুত নই। কেউ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না, নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আবার কেউ বলেছেন, উত্তরণ পেছানোর কোনো কারণ নেই।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর মূলত যাঁদের ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হবে সেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়েরই সায় নেই এতে। তাঁরা চাইছেন অন্তত ৫ বছর পিছিয়ে দিতে। তাঁদের যুক্তি পরিষ্কার, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি খাত যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে তা রাতারাতি ১২% থেকে ১৮% শুল্কের মুখোমুখি হবে এই এক সিদ্ধান্তের ফলে। এখনও পর্যন্ত সে সিদ্ধান্তের ফলে তেমন কোনো আর্থিক লাভের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং রপ্তানি কমে যাবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘এলডিসি উত্তরণে অনীহা জানানোর কি গ্রহণযোগ্য কারণ আছে? এমন কোনো শক্তিশালী যুক্তি আছে কি?’ তাঁর কাছে আমার পাল্টা প্রশ্ন, বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নযাত্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হ্রাস কি কারণ হিসেবে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য নয়?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার (দেশের রপ্তানির ৪৮% ইইউতে যায়)। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার সুবিধা হিসেবে আমাদের প্রায় ৯৩% রপ্তানি পণ্য সেখানে বিনা শুল্কে প্রবেশ করে। গ্রাজুয়েশনের পর এই শুল্ক হবে সদ্য উন্নয়নশীল দেশের সুবিধা অনুযায়ী ৯.৬% অথবা আমদানিকারক দেশের নীতি অনুযায়ী সাধারণ শুল্ক হার ১২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। গ্রাজুয়েশনের পর কানাডায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ হবে ১৬-১৮%, যেখানে এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার ০%। জাপানে বাংলাদেশের পোশাকের ওপর শুল্ক এলডিসি হিসেবে ০% থেকে বেড়ে ৭.৪ থেকে ১২.৮% পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৬ সালে জাতিসংঘ হিসাব করে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কেবল জি-২০ দেশগুলোতে প্রায় ৭% হ্রাস পাবে। ২০১৮ সালের একটি বিশ্লেষণে অনুমান করা হয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে ইইউ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৯.৮% হ্রাস পাবে। ২০১৮ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ৮.৭% হ্রাস পাবে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে) সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থনীতির ওপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। গত তিন বছরে দারিদ্র বেড়ে প্রায় ২৮% হয়েছে (২০২২ সালে যা ছিল ১৮.৭%)। এটা কি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর-যাত্রায় যথেষ্ট বড় বাধা নয়?
আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। এই খাতটি কি যথেষ্ট শক্ত ভূমির ওপর দাঁড়াতে পেরেছে? রপ্তানি ঘাটতি ও শুল্কজনিত বাধার অভিঘাত সামাল দেবার মতো ভিত্তি কি আছে? এই খাত এখনও অনেকাংশে সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এখনও শ্রমিকের বেতন তারা দিতে পারে না সরকারি সহায়তা না হলে। ঈদে-চাঁদে রাস্তায় তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনাই বলে দেয় আমরা কতটা এগোতে পেরেছি।
চৌধুরী সাহেব আরো বলেছেন, ‘আমাদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা তৈরির দিকে নজর দেওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পণ্য রপ্তানিতে সব দেশের জন্য শ্রমমান, পরিবেশসহ বিভিন্ন সূচকের একই মানদণ্ড ঠিক করছে। তাই দেশের উন্নয়ন টেকসই করতে জ্বালানি, করব্যবস্থা ও লজিস্টিক ঠিক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
জ্বি জনাব। আপনি ঠিকই বলেছেন। এ জন্যই আমাদের সময় দরকার। আপনাদের দিক থেকে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পেছনে একমাত্র শক্ত যুক্তি হলো, নেপাল-লাওস পারলে আমরা কেন পারব না? আমার কথা হলো, এটা কোনো যুক্তিই হতে পারে না। আমরা পারছি কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য। এর একমাত্র উত্তর হচ্ছে, না। বিষয়টা যত লজ্জারই হোক, সত্য হলো আমরা সময় পেয়েও প্রস্তুত হইনি। জাতিসংঘ চায় বলেই, প্রেস্টিজের ব্যাপার বলেই, প্রস্তুতি না নিয়ে এই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার কোনো যুক্তি আমি অন্তত দেখি না।
এলডিসি উত্তরণে অপারগতা প্রকাশ করে সময় নেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। সম্প্রতি সলোমন আইল্যান্ড আর এঙ্গোলাও সময় নিয়েছে। উন্নত দেশ হিসেবে বহুদিন ধরে সব যোগ্যতা অর্জনের পরেও সিঙ্গাপুর এখনও উন্নয়নশীল দেশ হয়েই আছে, নানা ছুতোয় তারা গ্রাজুয়েশন পিছিয়ে দিচ্ছে বাস্তবতা বিবেচনায়। শুধু মর্যাদা দিয়ে তাদের পেট ভরবে না।
নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে--অন্যের কোর্টে বল পাস করে দেওয়ার এই নীতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। লজ্জার হলেও সাহস করে এখনই বলতে হবে, আমাদের সময় দরকার। সময় পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে।
আমরা গরিব দেশ হয়ে থাকতে চাই না। উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই, আমরা হয়তো এক সময় উন্নত দেশও হব। তবে সেই উত্তরণ হতে হবে টেকসই। ঝোঁকের বশে মর্যাদার লোভে অপরিণত অবস্থায় এই উত্তরণের পথে পা বাড়ানো হবে মস্ত বড় ভুল। ক্ষতি জেনেও আগুনে ঝাঁপ দেওয়া আত্মঘাতীই বটে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পাবলিক ফোরাম ২০২৫, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে।
লেখক: গবেষক ও ডব্লিউটিও পর্যবেক্ষক
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) থেকে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতি বিষয়ে অগ্রগতি জানানোর জন্য। এলডিসি উত্তরণ ঘটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়নি চিঠিটা। চিঠি পাবার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ফাঁসির রায় হয়ে গেছে। যেকোনো উপায়ে এখনি এলডিসি গ্রাজুয়েশন না করতে পারলে বোধহয় আর উপায় নেই।
জাতিসংঘের সিডিপি’র চেয়ার হোসে এন্টোনিও ওকাম্পো স্বাক্ষরিত গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারকে পাঠানো ওই চিঠিতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে উন্নয়নের প্রস্তুতির ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। উক্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতিসংঘ একটা সভা করবে। সে সভার এজেন্ডা, তারিখ এবং সভায় কারা থাকবে সেসব পরে জানানো হবে। উক্ত চিঠির ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা মণ্ডলির সভায় এলডিসি উত্তরণের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তারপর থেকে উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শোনা যায়। কেউ বলেছেন, এখনও আমরা প্রস্তুত নই। কেউ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না, নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আবার কেউ বলেছেন, উত্তরণ পেছানোর কোনো কারণ নেই।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর মূলত যাঁদের ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হবে সেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়েরই সায় নেই এতে। তাঁরা চাইছেন অন্তত ৫ বছর পিছিয়ে দিতে। তাঁদের যুক্তি পরিষ্কার, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি খাত যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে তা রাতারাতি ১২% থেকে ১৮% শুল্কের মুখোমুখি হবে এই এক সিদ্ধান্তের ফলে। এখনও পর্যন্ত সে সিদ্ধান্তের ফলে তেমন কোনো আর্থিক লাভের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং রপ্তানি কমে যাবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘এলডিসি উত্তরণে অনীহা জানানোর কি গ্রহণযোগ্য কারণ আছে? এমন কোনো শক্তিশালী যুক্তি আছে কি?’ তাঁর কাছে আমার পাল্টা প্রশ্ন, বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নযাত্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হ্রাস কি কারণ হিসেবে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য নয়?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার (দেশের রপ্তানির ৪৮% ইইউতে যায়)। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার সুবিধা হিসেবে আমাদের প্রায় ৯৩% রপ্তানি পণ্য সেখানে বিনা শুল্কে প্রবেশ করে। গ্রাজুয়েশনের পর এই শুল্ক হবে সদ্য উন্নয়নশীল দেশের সুবিধা অনুযায়ী ৯.৬% অথবা আমদানিকারক দেশের নীতি অনুযায়ী সাধারণ শুল্ক হার ১২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। গ্রাজুয়েশনের পর কানাডায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ হবে ১৬-১৮%, যেখানে এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার ০%। জাপানে বাংলাদেশের পোশাকের ওপর শুল্ক এলডিসি হিসেবে ০% থেকে বেড়ে ৭.৪ থেকে ১২.৮% পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৬ সালে জাতিসংঘ হিসাব করে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কেবল জি-২০ দেশগুলোতে প্রায় ৭% হ্রাস পাবে। ২০১৮ সালের একটি বিশ্লেষণে অনুমান করা হয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে ইইউ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৯.৮% হ্রাস পাবে। ২০১৮ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ৮.৭% হ্রাস পাবে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে) সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থনীতির ওপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। গত তিন বছরে দারিদ্র বেড়ে প্রায় ২৮% হয়েছে (২০২২ সালে যা ছিল ১৮.৭%)। এটা কি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর-যাত্রায় যথেষ্ট বড় বাধা নয়?
আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। এই খাতটি কি যথেষ্ট শক্ত ভূমির ওপর দাঁড়াতে পেরেছে? রপ্তানি ঘাটতি ও শুল্কজনিত বাধার অভিঘাত সামাল দেবার মতো ভিত্তি কি আছে? এই খাত এখনও অনেকাংশে সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এখনও শ্রমিকের বেতন তারা দিতে পারে না সরকারি সহায়তা না হলে। ঈদে-চাঁদে রাস্তায় তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনাই বলে দেয় আমরা কতটা এগোতে পেরেছি।
চৌধুরী সাহেব আরো বলেছেন, ‘আমাদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা তৈরির দিকে নজর দেওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পণ্য রপ্তানিতে সব দেশের জন্য শ্রমমান, পরিবেশসহ বিভিন্ন সূচকের একই মানদণ্ড ঠিক করছে। তাই দেশের উন্নয়ন টেকসই করতে জ্বালানি, করব্যবস্থা ও লজিস্টিক ঠিক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
জ্বি জনাব। আপনি ঠিকই বলেছেন। এ জন্যই আমাদের সময় দরকার। আপনাদের দিক থেকে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পেছনে একমাত্র শক্ত যুক্তি হলো, নেপাল-লাওস পারলে আমরা কেন পারব না? আমার কথা হলো, এটা কোনো যুক্তিই হতে পারে না। আমরা পারছি কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য। এর একমাত্র উত্তর হচ্ছে, না। বিষয়টা যত লজ্জারই হোক, সত্য হলো আমরা সময় পেয়েও প্রস্তুত হইনি। জাতিসংঘ চায় বলেই, প্রেস্টিজের ব্যাপার বলেই, প্রস্তুতি না নিয়ে এই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার কোনো যুক্তি আমি অন্তত দেখি না।
এলডিসি উত্তরণে অপারগতা প্রকাশ করে সময় নেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। সম্প্রতি সলোমন আইল্যান্ড আর এঙ্গোলাও সময় নিয়েছে। উন্নত দেশ হিসেবে বহুদিন ধরে সব যোগ্যতা অর্জনের পরেও সিঙ্গাপুর এখনও উন্নয়নশীল দেশ হয়েই আছে, নানা ছুতোয় তারা গ্রাজুয়েশন পিছিয়ে দিচ্ছে বাস্তবতা বিবেচনায়। শুধু মর্যাদা দিয়ে তাদের পেট ভরবে না।
নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে--অন্যের কোর্টে বল পাস করে দেওয়ার এই নীতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। লজ্জার হলেও সাহস করে এখনই বলতে হবে, আমাদের সময় দরকার। সময় পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে।
আমরা গরিব দেশ হয়ে থাকতে চাই না। উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই, আমরা হয়তো এক সময় উন্নত দেশও হব। তবে সেই উত্তরণ হতে হবে টেকসই। ঝোঁকের বশে মর্যাদার লোভে অপরিণত অবস্থায় এই উত্তরণের পথে পা বাড়ানো হবে মস্ত বড় ভুল। ক্ষতি জেনেও আগুনে ঝাঁপ দেওয়া আত্মঘাতীই বটে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পাবলিক ফোরাম ২০২৫, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে।
লেখক: গবেষক ও ডব্লিউটিও পর্যবেক্ষক
হাসিনাশাহির পতনের পর আমাদের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র-যাত্রা। জুলাই সনদ ইত্যাদির পর এমন রাষ্ট্রের দিকে বাংলাদেশ যাত্রা করবে, যেখানে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। কিন্তু সেই জায়গা থেকে আমরা মনে হয় অনেক দূরে সরে এসেছি।
৬ ঘণ্টা আগেআসামে বছর ঘুরলেই নির্বাচন এবং পশ্চিমবঙ্গেও ভোট প্রায় একইসময়ে। এবার নির্বাচনে বিরোধীরা যখন বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনী বা এসআইআর-কে নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে সবার উপরে রাখছেন, তখন গেরুয়া শিবিরের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হলো ‘অনুপ্রবেশ’।
৯ ঘণ্টা আগেআজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের খোঁজে ১৯৪৭ থেকে বহুবার রক্ত দিয়েছে এই বাংলার মানুষ। আদর্শ ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের দেখা কখনোই পায়নি। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও মানুষ গণতন্ত্রের জন্য পথ চেয়ে আছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা কেন বারবার হোঁচট খায়?
২ দিন আগেআজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের খোঁজে ১৯৪৭ থেকে বহুবার রক্ত দিয়েছে এই বাংলার মানুষ। আদর্শ ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের দেখা কখনোই পায়নি। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও মানুষ গণতন্ত্রের জন্য পথ চেয়ে আছে। এই লেখায় স্লাভয় জিজেক দেখানোর চেষ্টা করেছেন, উদারতাবাদী বৈশ্বিক গণতন্
২ দিন আগে