leadT1ad

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা: আ.লীগ নেতা ও পুলিশকে দায়ী করলেন গুলিবিদ্ধ সাক্ষী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৯
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজন হত্যা মামলায় ২২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সেদিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ শাহরিয়ার হোসেন সজীব। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা রনি ভূঁইয়া তাঁর বন্ধু শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলকে ধরে রাখেন। পরে সজলকে ছেড়ে দিয়ে তাঁকে (শাহরিয়ার) ধরার পরই গুলির শব্দ শোনেন এবং নিজে গুলিবিদ্ধ হন।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দিতে গিয়ে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন শাহরিয়ার হোসেন সজীব। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শাহরিয়ার হোসেন সজীব বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল থেকে বাইপাইল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিই। দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর খবর পেয়ে আমরা বিজয় মিছিল করছিলাম। তখন আশুলিয়া থানার দিক থেকে গুলির আওয়াজ শুনে আমরা এগিয়ে যাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার বন্ধু সজলকে রনি ভূঁইয়া নামে একজন (আওয়ামী লীগ নেতা) ধরে আছে। আমি সজলকে ছেড়ে দিতে বলি। রনি ভূঁইয়া সজলকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ধরেন। তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বন্দুক লোড করতে দেখি। আমি বন্ধু সজলকে সরে যেতে বলি। এরপর গুলির শব্দ শুনে কিছুদূর যাওয়ার পর আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। দেখি আমার পায়ে গুলি লেগেছে।’

এসময় সজীবের সামনে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল বলেও জবানবন্দিতে জানান। তিনি বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে সামনের গেট খোলা একটি বাসায় যাই। আনুমানিক এক ঘণ্টা গুলির শব্দ পাই। ওই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি সেখানেই মারা যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হয়ে একটি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে কয়েকটি লাশ পোড়ানো দেখি। পরের দিন খবর পাই, আমার বন্ধু সজলের লাশ থানার সামনে পাওয়া গেছে।’ তিনি এই ঘটনার জন্য রনি ভূঁইয়া, তৎকালীন এমপি সাইফুল ইসলাম এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন।

আসামিপক্ষের জেরায় ‘আপত্তিকর প্রশ্নে’ আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালের সতর্কবার্তা

সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষে জেরা শুরু হয়। ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফীর পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান সাক্ষী সজীবকে প্রশ্ন করেন, ‘দুপুর আড়াইটা থেকে ৬টা পর্যন্ত আপনারা থানা এবং ঘরবাড়ি ডাকাতি করেছেন বা লুটপাট করেছেন?’

এ সময় সাক্ষী এর তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আপনি এরকম প্রশ্ন করছেন কেন? আপনি তো মনে হয় তদন্ত রিপোর্টটা ভালো মতো পড়েননি। আপনার এই প্রশ্নে আমি অপমানবোধ করছি। আপনি তো আমাকে ডাকাত বানিয়ে দিলেন।’

এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আসামিপক্ষের আইনজীবীর এই প্রশ্নকে ‘মানহানিকর’ (ডিফেমেটরি) হিসেবে মন্তব্য করে তাকে সতর্ক করেন। পরে ৮, ১০, ১৩ ও ১৬ নম্বর আসামিসহ উপস্থিত কয়েকজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন জেরা করেন। অন্যান্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করা থেকে বিরত থাকেন।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৫ তরুণ নিহত ও একজন আহত হন। পরে লাশের সঙ্গে ওই আহত তরুণকেও একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুন দেওয়া হয়। নৃশংস ওই ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। চলতি বছরের ২ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিলের পর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট বিচার শুরু হয়।

মামলায় আসামিদের মধ্যে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক। আর কারাগারে আছেন-ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত