ইরাককে বোমাবর্ষণ করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, লিবিয়াকে অস্ত্রমুক্ত করা হয়, ইরানকে শ্বাসরোধ করে রাখা হয়েছে। ইসরায়েলের ‘সুরক্ষা’র অজুহাতে হামলার পরবর্তী লক্ষ্য কি তবে পাকিস্তান?
স্ট্রিম ডেস্ক
গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মুসলিম বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে এখনই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে ‘সবার পালা আসবে’। খাজা আসিফের এই বার্তা যত না ‘কূটনৈতিক আহাজারি’, তার চেয়েও বেশি ইঙ্গিতে তাদের বাঁচানোর আহ্বান।
গত জুনে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার পরপরই পশ্চিমা গণমাধ্যম ও নেতারা ইসরায়েলের হামলার বাস্তবতাকে উল্টো ব্যাখ্যা করে ইরানকেই হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রশ্ন ওঠে ইরানের পর কার পালা।
এমন চিন্তাভাবনাকে হয়তো অনেকে ‘পাগলামি’ বলে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব প্রথমে বিভিন্ন দেশকে ‘খলনায়ক’ বানায়। তারপর তাদের অধিকার কেড়ে নেয়। সবশেষ ‘বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে তাদের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই পদ্ধতি এখন সবার জানা।
পশ্চিমা বিশ্ব এখন আর আগের মতো ট্যাংক, যুদ্ধবিমান বা জাতিসংঘের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে না। সেই পুরোনো পদ্ধতি এখন নতুনভাবে ফিরে এসেছে। এখন গণমাধ্যমের প্রচারণা, অর্থনৈতিক চাপ ও বয়ান-ভিত্তিক যুদ্ধের মাধ্যমে সার্বভৌম দেশকে ধ্বংস করা। এই প্রচলিত পদ্ধতি কাজ না করলে ইসরায়েলকে ‘সুরক্ষা’র অজুহাতে আগাম হামলা চালানো হয়।
এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘কৃতিত্ব’ দিতেই হবে। নেতানিয়াহুর মধ্যে রাখঢাক কম। অনেক সময় তিনি খোলাখুলি সেই কথাটাই বলে ফেলেন, যা অন্যেরা মুখে না বললেও অন্তরে ঠিকই লালন করেন। দশকের পর দশক ধরে নেতানিয়াহু মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখতে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন।
ইরাককে বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। লিবিয়াকে করা হয় অস্ত্রমুক্ত। ইরানকে শ্বাসরোধ করে রাখা হয়েছে। আদর্শ, কৌশল ও প্রযুক্তিগতভাবে পশ্চিমা ও জায়নবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে ‘প্রতীকী প্রতিরোধী’ পাকিস্তানই এখন পশ্চিমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান এমন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে যা যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
সন্দেহ উসকে দিতে এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের দরকারও পড়ে না। পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য এই ইঙ্গিতই যথেষ্ট।
এখন আর ২০০১ সালের ‘ঝাপসা স্যাটেলাইট’ ছবির ওপর ভিত্তি করে কেউ ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের’ গল্প বিক্রি করতে আসে না। কিন্তু উদ্দেশ্য কিন্তু সেই একই, পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতাকে বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে তুলে ধরা।
পাকিস্তান উগ্রপন্থার ঝুঁকিতে আছে এবং যেকোনো সময় পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আলোচনা ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণমূলক প্রতিষ্ঠানের রোজকার অভ্যাস। পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে তাদের চেষ্টার কমতি নেই।
ডেইলি মেইলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সেই পুরোনো বয়ানই উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই যুদ্ধ যুক্তি বা অন্য কোনো কারণে নয়, বরং ধর্মীয় উন্মাদনার ফলে।
আর ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা তো প্রায়ই আওয়াজ তোলেন, পাকিস্তান একটি উগ্র ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
অথচ কেউ যদি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটু চোখ রাখেন, তবে দেখবেন এত সংকটের মধ্যেও গত সাত দশকে পাকিস্তানে কখনো কোনো ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। সাধারণ মানুষ সব সময়ই প্রত্যক্ষ ধর্মীয় শাসনের বিরোধিতা করেছে।
অন্যদিকে, ২০০২ সালের গুজরাট ‘গণহত্যার’ সময় চোখ বুজে থাকা পরোক্ষ সাহায্যকারী সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। যার মূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন এবং মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অপরায়ন করে রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
তবুও ব্রিটিশ ও পশ্চিমা গণমাধ্যমে ভারত ‘আধুনিক’, ‘যুক্তিবাদী’, ‘গণতান্ত্রিক’।
এই দ্বিচারিতার হাস্যকর হলেও এর বিপদ বিবেচনায় উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এপ্রিল মাসে পাহেলগামে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর মর্মান্তিক হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি নয়াদিল্লি। তা সত্ত্বেও সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়েছে ভারত।
পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই ক্ষেত্রে দিল্লির দাবিকে চোখ বুজে বিশ্বাস করে। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বারবার প্রশ্ন করেছে সন্ত্রাসবাদের দায় নিয়ে। এই ধরনের পরিস্থিতি এখন দুঃখজনকভাবে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমাদের কাছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ যত সহিংসই হোক না কেন, সেটা রাজনৈতিক মতবাদ। হিন্দু জাতীয়তাবাদ হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ, কিন্তু বৈধ। আর ইসলামপন্থা যত দূরেই থাকুক না কেন তা ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের এমন আচরণ কেবল নিছক পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতা বা দায়মুক্তিকে উৎসাহিত করা নয়। এ আচরণ বরং সেই বয়ান তৈরিরই অংশ।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে পাকিস্তান সব সময়ই উসকানিদাতা, আর ভারত তার স্বৈরাচারী প্রবণতা সত্ত্বেও ‘নিরীহ’।
এক রাষ্ট্রের আগ্রাসনকে ছোট করে দেখে এবং অন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই হুমকি হিসেবে তুলে ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় কি আদৌ শান্তি আসতে পারে? এই প্রশ্ন শুধু ন্যায্যতার নয়, বরং এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি।
পশ্চিমা গণমাধ্যম যদি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়, তাহলে ক্ষমতা ও পক্ষপাতের চশমা খুলে ঘটনাগুলোকে দেখতে হবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রধারণ অনেক দিন ধরেই ইসরায়েল, ভারত ও আমেরিকার নিরাপত্তা নীতির জন্য এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা। ‘ইরানকে থামানো হয়ে গেলে এবার পাকিস্তানকে পরমাণু অস্ত্রহীন করতে হবে’—এমন চিন্তাই পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মডার্ন ডিপ্লোমেসি (আন্তর্জাতিক অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম)-এর মতো প্রকাশনাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তারই ইঙ্গিত দেয়।
এই চিত্র কেবল ভূরাজনৈতিক নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিকও। চীনের সঙ্গে কৌশলগত বন্ধুত্ব আছে এমন একটি পারমাণবিক শক্তিধর ইসলামি প্রজাতন্ত্র এখন আর পশ্চিমাদের কাছে ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র’ নয়, বরং বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি। সিপেক প্রকল্পের মাধ্যমে ইসলামাবাদ বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে। ২১ শতকের সব রাস্তা এখন বেইজিংয়ের দিকেই যাচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরায়েলও তা জানে। নতুন ‘সিল্করুট’-এর কারণে পাকিস্তান আর কেবল বিরক্তিকর প্রতিবেশী নয়, বরং বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুও বটে।
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—বন্ধুত্ব? সতর্কবার্তা? নাকি নতুন করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা?
যা-ই হোক না কেন, এটি প্রমাণ করে যে আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় পাকিস্তানের অবস্থান এক অদ্ভুত জটিলতায় ঘেরা। একদিকে পাকিস্তানকে দরকার, অন্যদিকে রয়েছে অযথা ভয়।
পশ্চিমা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড মূল সমস্যা নয়, বরং পাকিস্তান কিসের প্রতীক হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, সেটাই আসল সমস্যা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ও চীনের কৌশলগত মিত্র—এই তিনে মিলে বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় এক চূড়ান্ত ‘অস্বস্তি’।
মিডিল ইস্ট আই-এ প্রকাশিত সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের বিশ্লেষক ফয়সাল হানিফের মতামত অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ।
গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মুসলিম বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে এখনই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে ‘সবার পালা আসবে’। খাজা আসিফের এই বার্তা যত না ‘কূটনৈতিক আহাজারি’, তার চেয়েও বেশি ইঙ্গিতে তাদের বাঁচানোর আহ্বান।
গত জুনে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার পরপরই পশ্চিমা গণমাধ্যম ও নেতারা ইসরায়েলের হামলার বাস্তবতাকে উল্টো ব্যাখ্যা করে ইরানকেই হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রশ্ন ওঠে ইরানের পর কার পালা।
এমন চিন্তাভাবনাকে হয়তো অনেকে ‘পাগলামি’ বলে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব প্রথমে বিভিন্ন দেশকে ‘খলনায়ক’ বানায়। তারপর তাদের অধিকার কেড়ে নেয়। সবশেষ ‘বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে তাদের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই পদ্ধতি এখন সবার জানা।
পশ্চিমা বিশ্ব এখন আর আগের মতো ট্যাংক, যুদ্ধবিমান বা জাতিসংঘের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে না। সেই পুরোনো পদ্ধতি এখন নতুনভাবে ফিরে এসেছে। এখন গণমাধ্যমের প্রচারণা, অর্থনৈতিক চাপ ও বয়ান-ভিত্তিক যুদ্ধের মাধ্যমে সার্বভৌম দেশকে ধ্বংস করা। এই প্রচলিত পদ্ধতি কাজ না করলে ইসরায়েলকে ‘সুরক্ষা’র অজুহাতে আগাম হামলা চালানো হয়।
এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘কৃতিত্ব’ দিতেই হবে। নেতানিয়াহুর মধ্যে রাখঢাক কম। অনেক সময় তিনি খোলাখুলি সেই কথাটাই বলে ফেলেন, যা অন্যেরা মুখে না বললেও অন্তরে ঠিকই লালন করেন। দশকের পর দশক ধরে নেতানিয়াহু মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখতে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন।
ইরাককে বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। লিবিয়াকে করা হয় অস্ত্রমুক্ত। ইরানকে শ্বাসরোধ করে রাখা হয়েছে। আদর্শ, কৌশল ও প্রযুক্তিগতভাবে পশ্চিমা ও জায়নবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে ‘প্রতীকী প্রতিরোধী’ পাকিস্তানই এখন পশ্চিমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান এমন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে যা যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
সন্দেহ উসকে দিতে এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের দরকারও পড়ে না। পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য এই ইঙ্গিতই যথেষ্ট।
এখন আর ২০০১ সালের ‘ঝাপসা স্যাটেলাইট’ ছবির ওপর ভিত্তি করে কেউ ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের’ গল্প বিক্রি করতে আসে না। কিন্তু উদ্দেশ্য কিন্তু সেই একই, পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতাকে বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে তুলে ধরা।
পাকিস্তান উগ্রপন্থার ঝুঁকিতে আছে এবং যেকোনো সময় পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আলোচনা ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণমূলক প্রতিষ্ঠানের রোজকার অভ্যাস। পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে তাদের চেষ্টার কমতি নেই।
ডেইলি মেইলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সেই পুরোনো বয়ানই উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই যুদ্ধ যুক্তি বা অন্য কোনো কারণে নয়, বরং ধর্মীয় উন্মাদনার ফলে।
আর ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা তো প্রায়ই আওয়াজ তোলেন, পাকিস্তান একটি উগ্র ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
অথচ কেউ যদি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটু চোখ রাখেন, তবে দেখবেন এত সংকটের মধ্যেও গত সাত দশকে পাকিস্তানে কখনো কোনো ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। সাধারণ মানুষ সব সময়ই প্রত্যক্ষ ধর্মীয় শাসনের বিরোধিতা করেছে।
অন্যদিকে, ২০০২ সালের গুজরাট ‘গণহত্যার’ সময় চোখ বুজে থাকা পরোক্ষ সাহায্যকারী সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। যার মূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন এবং মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অপরায়ন করে রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
তবুও ব্রিটিশ ও পশ্চিমা গণমাধ্যমে ভারত ‘আধুনিক’, ‘যুক্তিবাদী’, ‘গণতান্ত্রিক’।
এই দ্বিচারিতার হাস্যকর হলেও এর বিপদ বিবেচনায় উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এপ্রিল মাসে পাহেলগামে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর মর্মান্তিক হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি নয়াদিল্লি। তা সত্ত্বেও সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়েছে ভারত।
পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই ক্ষেত্রে দিল্লির দাবিকে চোখ বুজে বিশ্বাস করে। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বারবার প্রশ্ন করেছে সন্ত্রাসবাদের দায় নিয়ে। এই ধরনের পরিস্থিতি এখন দুঃখজনকভাবে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমাদের কাছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ যত সহিংসই হোক না কেন, সেটা রাজনৈতিক মতবাদ। হিন্দু জাতীয়তাবাদ হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ, কিন্তু বৈধ। আর ইসলামপন্থা যত দূরেই থাকুক না কেন তা ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের এমন আচরণ কেবল নিছক পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতা বা দায়মুক্তিকে উৎসাহিত করা নয়। এ আচরণ বরং সেই বয়ান তৈরিরই অংশ।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে পাকিস্তান সব সময়ই উসকানিদাতা, আর ভারত তার স্বৈরাচারী প্রবণতা সত্ত্বেও ‘নিরীহ’।
এক রাষ্ট্রের আগ্রাসনকে ছোট করে দেখে এবং অন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই হুমকি হিসেবে তুলে ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় কি আদৌ শান্তি আসতে পারে? এই প্রশ্ন শুধু ন্যায্যতার নয়, বরং এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি।
পশ্চিমা গণমাধ্যম যদি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়, তাহলে ক্ষমতা ও পক্ষপাতের চশমা খুলে ঘটনাগুলোকে দেখতে হবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রধারণ অনেক দিন ধরেই ইসরায়েল, ভারত ও আমেরিকার নিরাপত্তা নীতির জন্য এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা। ‘ইরানকে থামানো হয়ে গেলে এবার পাকিস্তানকে পরমাণু অস্ত্রহীন করতে হবে’—এমন চিন্তাই পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মডার্ন ডিপ্লোমেসি (আন্তর্জাতিক অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম)-এর মতো প্রকাশনাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তারই ইঙ্গিত দেয়।
এই চিত্র কেবল ভূরাজনৈতিক নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিকও। চীনের সঙ্গে কৌশলগত বন্ধুত্ব আছে এমন একটি পারমাণবিক শক্তিধর ইসলামি প্রজাতন্ত্র এখন আর পশ্চিমাদের কাছে ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র’ নয়, বরং বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি। সিপেক প্রকল্পের মাধ্যমে ইসলামাবাদ বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে। ২১ শতকের সব রাস্তা এখন বেইজিংয়ের দিকেই যাচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরায়েলও তা জানে। নতুন ‘সিল্করুট’-এর কারণে পাকিস্তান আর কেবল বিরক্তিকর প্রতিবেশী নয়, বরং বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুও বটে।
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—বন্ধুত্ব? সতর্কবার্তা? নাকি নতুন করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা?
যা-ই হোক না কেন, এটি প্রমাণ করে যে আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় পাকিস্তানের অবস্থান এক অদ্ভুত জটিলতায় ঘেরা। একদিকে পাকিস্তানকে দরকার, অন্যদিকে রয়েছে অযথা ভয়।
পশ্চিমা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড মূল সমস্যা নয়, বরং পাকিস্তান কিসের প্রতীক হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, সেটাই আসল সমস্যা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ও চীনের কৌশলগত মিত্র—এই তিনে মিলে বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় এক চূড়ান্ত ‘অস্বস্তি’।
মিডিল ইস্ট আই-এ প্রকাশিত সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের বিশ্লেষক ফয়সাল হানিফের মতামত অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ।
কিছু ক্ষেত্রে, দারিদ্র্য এবং চরমপন্থার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, তাদের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার পেছনে আছে সম্প্রসারণবাদী আচরণ।
৬ দিন আগেবাংলাদেশ নদী ও বন্যার দেশ হিসেবে পরিচিত। যদিও দেশটির পানির উৎসের প্রায় পুরোটাই দেশের বাইরে। এ দেশের মোট নদীর ৮০ শতাংশের উৎসমুখ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। ফলে মিঠাপানির প্রাপ্যতার সংকট নিত্যদিনের ঘটনা। আর নগরায়ণ, কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এ সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
৭ দিন আগেভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বার্থ পরস্পর জড়িত, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ফরেন পলিসি সার্ভে ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেনারেল...
৯ দিন আগেএ প্লাস যারা পেয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস আর যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বহু যুগ আগে, তাঁদেরও স্ট্যাটাস। এমনকি, যাদের পরীক্ষা দেয়ার বয়স হয়নি, তারাও লিখছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, জিপিএ-৫’। এই যে এক সম্মিলিত জুনুন বা গণ-উন্মাদনা—এর মনস্তত্ত্বটা কী?
১০ দিন আগে