leadT1ad

লাঠি হাতে বৃদ্ধকে উচ্ছেদের চেষ্টা: বিতর্কের পর ‘মাঠ ছাড়ার’ ঘোষণা সর্বমিত্রের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

‘উচ্ছেদ অভিযান’ চালাচ্ছেন সর্বমিত্র চাকমা। ছবি: ভিডিও থেকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ‘অবৈধ দোকান, উদ্বাস্তু, ভবঘুরে ও নেশাগ্রস্তদের উচ্ছেদ’ অভিযান ঘিরে নানারকম সমালোচনা আগে থেকেই চলছে। নতুন করে আবার সেই সমালোচনা উঠে এসেছে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও নিয়ে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সদস্য সর্ব মিত্র চাকমাকে দেখা গেছে লাঠি হাতে এক বৃদ্ধকে শাসাতে। এই ভিডিও নিয়ে সমালোচনার মুখে আর মাঠে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন এই ডাকসু নেতা। তবে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন আমিনুল হক অভি নামে এক শিক্ষার্থী। যার ফেসবুক পেজে পরিচয় দেওয়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ভিডিওটির ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘চলে এসেছে ঢাকা সিটির নতুন শিবির মনোনীত প্রশাসক।’ ভিডিও ধারণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন বার্ন ইউনিটের ১ নম্বর গেটের বিপরীতের ফুটপাতে। তবে ঘটনাটি কবেকার, তা উল্লেখ করেননি অভি।

ভিডিওটি ধারণের সময় প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের একাধিক সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, এক বৃদ্ধ হাতে বোচকা-পোটলা এবং ক্র্যাচ নিয়ে সর্বমিত্রের সঙ্গে টানাটানি করছেন। এক পর্যায়ে তিনি বস্তাগুলো বৃদ্ধের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এসময় সর্বমিত্রকে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মিটিং করেই তুলতেছি (উচ্ছেদ করছেন), এগুলো নাও।’

পরে প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য এসে সর্বমিত্রের হাত থেকে লাঠি নিয়ে বৃদ্ধের বস্তায় কয়েকটি আঘাত করেন। আর বলতে থাকেন, ‘এই বাড়িডা যদি তোরে দেই।’ বৃদ্ধ তখন বলতে থাকেন, ‘আমি মইরা যামু বাপ।’

পরে আবার লাঠি হাতে নিয়ে সর্বমিত্র ওই বৃদ্ধকে বলছেন, ‘আর দেখবো এখানে?’ জবাবে ‍বৃদ্ধ বলছেন, না বাবা। তখন সর্বমিত্র বলছেন, ‘কয়বার উঠাবো আর, কালকেও বলছে না একই কথা?’

আমিনুল হক অভি করা ভিডিও পোস্টের কমেন্টের এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৮ শতাধিক কমেন্ট পড়েছে। যার অধিকাংশই সর্বমিত্রের সমালোচনা করে। হাসিবুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের আচরণ এমন কেন?’ আবির হাসান নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এদেরকে গুন্ডা বললেও ভুল হবে না।’

এমন সমালোচনার পর গভীর রাতে একটি পোস্ট দেন সর্বমিত্র চাকমা। যেখানে আমিনুল হক অভির পোস্ট ও আগে জাহিদ হাসান শুভ নামে এক ব্যক্তি করা একটি পোস্টের স্ক্রিনশট জুড়ে দেন সর্বমিত্র। আগের পোস্টটি খুঁজে দেখা যায়, এই বৃদ্ধ ব্যক্তি আগেও একবার ‘মাদক নিয়ে’ সড়কে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে টানা হেঁচড়া করছিলেন।

সর্বমিত্র তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছেন, আমি শুরুর দিন থেকে এই লোকটাকে সেই মেট্রো স্টেশন থেকে তুলছি প্রতিরাতে। লোকটা ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়-ই না। উনার সঙ্গে আরেকজন আরো বৃদ্ধ, উনিও মাদকাসক্ত। এই লোকের কাছে এর আগে একবার গাঁজা পাওয়া গেছিল। এই লোকগুলোকে তোলাটা অত্যন্ত কঠিন, তুললে আগায় ৪ কদম। তাই লাঠিসোটা ছাড়া বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে তাদের তোলা যায়ই না।’

এমন উচ্ছেদ কাজে নিজের কোনো ‘স্বার্থ নেই’ উল্লেখ করে সর্বমিত্র লেখেন, ‘আমি আমার ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে-পাগল-গাঁজাখোর মুক্ত দেখতে চেয়েছিলাম শুধু। আজ আমাদের দুজন নারী শিক্ষার্থী হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন। আমার চাওয়া, এই ভবঘুরে-পাগল-হ্যারাসারমুক্ত ক্যাম্পাস গড়া। কিন্তু, এরকম প্রতিনিয়ত বিতর্ক আমার ব্যক্তিগত জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। এভাবে প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে রাতে পাহারা দিয়ে উচ্ছেদ করাটা ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্যের কাজ না, আবার আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ছে না এমনটাও না।’

তিনি লেখেন, ‘কিছুদিন আগে তিনজন মাদকাসেবীকে তুলতে গিয়েছিলাম। একইভাবে পোস্ট করে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। এদের তাড়ানোর জন্য লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, যারা মাঠে কাজ করে তারাই জানে এটা কতটুকু কঠিন।’

আর মাঠে না থাকার ঘোষণা দিয়ে সর্বমিত্র লেখেন, ‘একজন সদস্য হিসেবে আমি নিশ্চয়ই নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে আমার তরফ থেকে কাজ করবো। কিন্তু মাঠে আমি আর থাকছি না। ধন্যবাদ।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত