leadT1ad

প্রতিক্রিয়া

জুলাই সনদের প্রত্যাশা পূরণে দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

আরিফ খান
আরিফ খান

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৩
স্ট্রিম গ্রাফিক

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি প্রদান করেছে। এই আদেশ অনুযায়ী চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এই গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা এই চারটি বিষয়ে একটিমাত্র প্রশ্নের মাধ্যমে তাদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত জানাবেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে, সংবিধান অনুযায়ী সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, যেকোনো নতুন আদেশ বা অধ্যাদেশ জারি করার একমাত্র প্রক্রিয়া হলো রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তা জারি করা। সেই আইন মেনেই রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করেছেন, যা আইনগতভাবে সঠিক।

সংবিধানে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা সংবিধানের ৭২ এবং ১২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, দুটি পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে: প্রথমত, যদি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হয় এবং দ্বিতীয়ত, যদি সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

আদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, সংসদের উচ্চকক্ষ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে গঠন করা হবে। এটি একটি স্থির সিদ্ধান্ত, এবং যদিও ভবিষ্যতে পরিবর্তনের সুযোগ থাকতে পারে, বর্তমানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই বিষয়ে একটি ঐক্যমত্য রয়েছে বলে মনে হয়।

গণভোট চারটি ভিন্ন প্রশ্নের উপর অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত, গণভোটে একটিমাত্র সরল প্রশ্ন রাখা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ, শিক্ষিত বা নিরক্ষর নির্বিশেষে, সহজে তাদের মতামত জানাতে পারে। তবে এবারের বিষয়গুলো সংবিধান এবং এর পরিবর্তনসংক্রান্ত হওয়ায় তা বেশ জটিল। তাই বিষয়গুলোকে চারটি প্রশ্নে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা একটি যৌক্তিক প্রক্রিয়া। যে প্রশ্নগুলোতে সবচেয়ে বেশি ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়বে, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এই প্রক্রিয়াটি একটি কার্যকরী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

জুলাই সনদের প্রত্যাশাগুলো এই আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্য। যখন ২০-৩০টি ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী কোনো বিষয়ে আলোচনা করে, তখন মূল বিষয়গুলোতে একমত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি সব পক্ষ এটি মেনে না নেয়, তবে ভালো উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে।

বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই; তারা আন্তরিকভাবে পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করছে। এখন বাকি দলগুলোর দায়িত্ব হলো নিজেদের ইচ্ছায় ঐক্যমত্য পোষণ করে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া। এর অন্যথা হলে দেশে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা কারোই কাম্য নয়।
লেখক: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল

Ad 300x250

সম্পর্কিত