খুররম আব্বাস
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মিনিল্যাটারালিজম’ বা ক্ষুদ্র জোটভিত্তিক সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে নতুন এক ধারণা। বিশ্বব্যপী এখন কূটনৈতিক পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এই বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশ এখন কঠোর সামরিক জোটে না গিয়ে বরং সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে নির্দিষ্ট ইস্যুতে একত্রিত হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোয়াড বা মধ্যপ্রাচ্যে আইটু-ইটু তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। এবার পাকিস্তানও একই পথ বেছে নিচ্ছে। আর তা করছে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায়।
পাকিস্তান মে ও জুন মাসে চীনের সহযোগিতায় আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। আফগানিস্তান-চীন-পাকিস্তানের কৌশলগত সংলাপের প্ল্যাটফর্ম এক দশক আগে গড়ে উঠছে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক বাস্তবতায় এটি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। মে মাসে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ফলে কূটনৈতিক সম্পর্কে অগ্রগতি হয় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে। জুনে আবার বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়। আলোচনায় নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মনে হচ্ছে পাকিস্তান হয়তো ভারতের প্রভাবমুক্ত একটি ‘দক্ষিণ এশীয় কোয়াড’ গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে।
কিন্তু পাকিস্তান কেন এত আগ্রহী ক্ষুদ্র জোট তৈরিতে? এর পেছনে কয়েকটি কারণ আছে।
প্রথমত, সার্কের অকার্যকারিতা। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতার এই সংগঠনের শীর্ষ বৈঠক হয়নি। ভারতের বয়কট ও সার্ক পুনর্জীবিত করতে অনীহার ফলে ইসলামাবাদ হতাশ। ভারত যখন বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিমসটেককে এগিয়ে নিতে শুরু করে, তখন পাকিস্তান বিকল্প খোঁজার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র জোটে ফল পাওয়া যায় দ্রুত। বড় আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে জটিলতা বেশি। এসব ছোট প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট বিষয়েই কাজ করে। যেমন আফগানিস্তান-চীন-পাকিস্তান ফোরাম সাম্প্রতিক সময়ে বহু সাফল্য দেখিয়েছে। চীন এখানে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান রেলপথ নির্মাণে রাজি হয়েছে। আবার এই ফোরামের মাধ্যমে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বও অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। এসব সফলতাই পাকিস্তানকে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করেছে।
তৃতীয়ত, চীনকে পাকিস্তান মনে করে স্থিতিশীলতার সহায়ক শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় চীনের উপস্থিতিকে ইসলামাবাদ ইতিবাচক হিসেবে দেখে। গত দশকে চীনের প্রভাব এই অঞ্চলে অনেক বেড়েছে। ভুটান ও ভারত ছাড়া প্রায় সব দক্ষিণ এশীয় দেশই বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে যুক্ত। এসব দেশে চীন শত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। ফলে সার্কে চীনকে আনতে চাইলেও ভারতের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় পাকিস্তান এখন চীনকে সহজেই আঞ্চলিক সমীকরণে টানতে পারছে।
চতুর্থত, আঞ্চলিক রাজনীতির পরিবর্তনে সহায়ক। ২০১৬ সালে সার্ক শীর্ষ বৈঠক বয়কট করে ভারত। তখন আফগানিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশও সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু আজ এসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বদলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বারবার সার্ক পুনর্জাগরণের কথা বলছে। পাকিস্তানের সক্রিয় কূটনীতি, সার্ক ফের চালুর দাবির ব্যাপারে ভারতের অনীহা—সব মিলিয়ে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তবে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি এসব উদ্যোগে অস্বস্তি বোধ করছে। ভারতের কাছে এইসব প্রয়াস ‘কৌশলগত ঘেরাও’ বলেই মনে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াকে ভারত সবসময় নিজের প্রভাববলয় হিসেবে দেখে এসেছে। তাই এখানে চীনের বাড়তি ভূমিকা ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। চাইলে ভারত ছোট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে পারে। কিন্তু চীন-পাকিস্তান জুটির অর্থনৈতিক ও কৌশলগত আকর্ষণ হয়তো অনেকের কাছে অগ্রাহ্য করা কঠিন হয়ে উঠবে।
অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়—এসব ক্ষুদ্র জোট টেকসই হবে কি না। বাংলাদেশে আপাতত অন্তর্বর্তী সরকার আছে। তারা এখন এমন জোটে অংশগ্রহণে আগ্রহী। তবে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার কি একইভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাবে? আবার ভারতের প্রতিক্রিয়াও এ ধরনের ফোরামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবু আপাতত সময় পাকিস্তানের অনুকূলে। আর ইসলামাবাদ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না।
লেখক: ইন্ডিয়া স্টাডি সেন্টার-এর পরিচালক, ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের সম্পাদক
ডন-এ প্রকাশিত ইংরেজির অনুবাদ
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মিনিল্যাটারালিজম’ বা ক্ষুদ্র জোটভিত্তিক সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে নতুন এক ধারণা। বিশ্বব্যপী এখন কূটনৈতিক পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এই বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশ এখন কঠোর সামরিক জোটে না গিয়ে বরং সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে নির্দিষ্ট ইস্যুতে একত্রিত হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোয়াড বা মধ্যপ্রাচ্যে আইটু-ইটু তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। এবার পাকিস্তানও একই পথ বেছে নিচ্ছে। আর তা করছে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায়।
পাকিস্তান মে ও জুন মাসে চীনের সহযোগিতায় আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। আফগানিস্তান-চীন-পাকিস্তানের কৌশলগত সংলাপের প্ল্যাটফর্ম এক দশক আগে গড়ে উঠছে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক বাস্তবতায় এটি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। মে মাসে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ফলে কূটনৈতিক সম্পর্কে অগ্রগতি হয় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে। জুনে আবার বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়। আলোচনায় নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মনে হচ্ছে পাকিস্তান হয়তো ভারতের প্রভাবমুক্ত একটি ‘দক্ষিণ এশীয় কোয়াড’ গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে।
কিন্তু পাকিস্তান কেন এত আগ্রহী ক্ষুদ্র জোট তৈরিতে? এর পেছনে কয়েকটি কারণ আছে।
প্রথমত, সার্কের অকার্যকারিতা। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতার এই সংগঠনের শীর্ষ বৈঠক হয়নি। ভারতের বয়কট ও সার্ক পুনর্জীবিত করতে অনীহার ফলে ইসলামাবাদ হতাশ। ভারত যখন বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিমসটেককে এগিয়ে নিতে শুরু করে, তখন পাকিস্তান বিকল্প খোঁজার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র জোটে ফল পাওয়া যায় দ্রুত। বড় আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে জটিলতা বেশি। এসব ছোট প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট বিষয়েই কাজ করে। যেমন আফগানিস্তান-চীন-পাকিস্তান ফোরাম সাম্প্রতিক সময়ে বহু সাফল্য দেখিয়েছে। চীন এখানে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান রেলপথ নির্মাণে রাজি হয়েছে। আবার এই ফোরামের মাধ্যমে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বও অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। এসব সফলতাই পাকিস্তানকে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করেছে।
তৃতীয়ত, চীনকে পাকিস্তান মনে করে স্থিতিশীলতার সহায়ক শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় চীনের উপস্থিতিকে ইসলামাবাদ ইতিবাচক হিসেবে দেখে। গত দশকে চীনের প্রভাব এই অঞ্চলে অনেক বেড়েছে। ভুটান ও ভারত ছাড়া প্রায় সব দক্ষিণ এশীয় দেশই বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে যুক্ত। এসব দেশে চীন শত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। ফলে সার্কে চীনকে আনতে চাইলেও ভারতের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় পাকিস্তান এখন চীনকে সহজেই আঞ্চলিক সমীকরণে টানতে পারছে।
চতুর্থত, আঞ্চলিক রাজনীতির পরিবর্তনে সহায়ক। ২০১৬ সালে সার্ক শীর্ষ বৈঠক বয়কট করে ভারত। তখন আফগানিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশও সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু আজ এসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বদলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বারবার সার্ক পুনর্জাগরণের কথা বলছে। পাকিস্তানের সক্রিয় কূটনীতি, সার্ক ফের চালুর দাবির ব্যাপারে ভারতের অনীহা—সব মিলিয়ে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তবে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি এসব উদ্যোগে অস্বস্তি বোধ করছে। ভারতের কাছে এইসব প্রয়াস ‘কৌশলগত ঘেরাও’ বলেই মনে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াকে ভারত সবসময় নিজের প্রভাববলয় হিসেবে দেখে এসেছে। তাই এখানে চীনের বাড়তি ভূমিকা ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। চাইলে ভারত ছোট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে পারে। কিন্তু চীন-পাকিস্তান জুটির অর্থনৈতিক ও কৌশলগত আকর্ষণ হয়তো অনেকের কাছে অগ্রাহ্য করা কঠিন হয়ে উঠবে।
অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়—এসব ক্ষুদ্র জোট টেকসই হবে কি না। বাংলাদেশে আপাতত অন্তর্বর্তী সরকার আছে। তারা এখন এমন জোটে অংশগ্রহণে আগ্রহী। তবে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার কি একইভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাবে? আবার ভারতের প্রতিক্রিয়াও এ ধরনের ফোরামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবু আপাতত সময় পাকিস্তানের অনুকূলে। আর ইসলামাবাদ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না।
লেখক: ইন্ডিয়া স্টাডি সেন্টার-এর পরিচালক, ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের সম্পাদক
ডন-এ প্রকাশিত ইংরেজির অনুবাদ
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং দাবি করে দুই হামলাকারী পাকিস্তানের নাগরিক।
২০ ঘণ্টা আগে১৯৬৭ সালের পর থেকে প্রতিটি ইসরায়েলি সরকার দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় বসতি সম্প্রসারণ করেছে এবং ইহুদি নাগরিকদের পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করতে আর্থিক সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নে উৎসাহিত করেছে।
২১ ঘণ্টা আগেফিলিস্তিন কেবল এক যুদ্ধক্ষেত্রই নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্ব এখনো তাদের ঔপনিবেশিক অতীতের সত্য দেখতে পারে এমন শেষ আয়না। তাই এই আয়নাটিকেই ভেঙে ফেলা চাই।
১ দিন আগেএক বছর আগে, এই মাসেই, বাংলাদেশের সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাজারো শিক্ষার্থী অসংখ্য সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমাদের জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। অবশেষে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা ৫ আগস্ট এক স্বৈরাচারীকে দেশত্যাগ
২ দিন আগে