ডেসেরেট নিউজে প্রধান উপদেষ্টার লেখা
মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরের সরকারে তিনি নির্বাচিত বা মনোনীত—কোনো পদেই দায়িত্ব নেবেন না। ১৮৫০ সাল থেকে প্রকাশিত মার্কিন অভিজাত পত্রিকা ডেসেরেট নিউজে গতকাল বুধবার স্বনামে লিখেছেন অন্তবর্তী সরকাররে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলা স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো।
মুহাম্মদ ইউনূস
এক বছর আগে, এই মাসেই, বাংলাদেশের সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাজারো শিক্ষার্থী অসংখ্য সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমাদের জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। অবশেষে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা ৫ আগস্ট এক স্বৈরাচারীকে দেশত্যাগে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়, সেখানে শিক্ষার্থী নেতারা আমাকে অনুরোধ করেন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দায়িত্ব নিতে। এই সরকারের কাজ দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পথ নির্ধারণ করা। প্রথমে আমি রাজি হইনি। কিন্তু তাদের আহ্বান ছিল অনড়। শিক্ষার্থীসহ অগণিত তরুণ জীবন দিয়েছে, অঙ্গহানির শিকার হয়েছে, তা ভেবে আমি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারিনি।
আমি শপথ গ্রহণ করি ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট। আমার সঙ্গে শপথ নেন নীতিনির্ধারক বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এক উপদেষ্টা পরিষদ।
আন্দোলন শুরু হয়েছিল আপাতদৃষ্টিতে এক সহজ দাবি নিয়ে—সরকারি চাকরিতে ন্যায্য নিয়োগ নিশ্চিত করা। তা পরিণত হয় বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জি’ বিপ্লবে। এটি এখন এক মডেল হয়ে উঠেছে। এই মডেল আমাদের দেখাতে পারে কীভাবে তরুণেরা সামনে এগিয়ে এসে মানবতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্য।
আমরা সৌভাগ্যবান যে তারা ‘নিজেদের পালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা’ করতে রাজি হয়নি। সভ্যতা যখন নানা দিক থেকে বিপথে যাচ্ছিল, তখন তারা উপলব্ধি করেছিল যে কিছু করতে হলে এখনই করতে হবে।
আমাদের স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণগুলোর একটি প্রকাশ পায় যখন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের ‘কান্ট্রি অব দা ইয়ার’ ঘোষণা করে। আমরা তখন ব্যস্ত ছিলাম অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচন আয়োজন এবং লুট করা বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের কাজে। সেই ব্যস্ততায় বুঝতেই পারিনি বিশ্ব আমাদের অগ্রগতিকে কত গভীরভাবে লক্ষ করেছে। ডেসেরেট নিউজ আমাদের যাত্রাপথের ভালো খবরগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
আগের শাসনামলে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে অনেক মানুষকে। হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ পায়, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া ছিল আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা তাদের শোক অন্তর দিয়ে ধারণ করি। আমরা সেই সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকার ও তাদের দোসরদের লুট করে নেওয়া বিপুল অর্থ উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ অনুমান করেছে, ওই শাসনামলে ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। পরিমাণটাও বিশাল। সেই অর্থ উদ্ধারের লড়াই অত্যন্ত জরুরি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি বিস্মিত হয়েছিলাম দেশে দুর্নীতির ব্যপকতা দেখে। পুলিশ তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিল। অর্থনীতি ছিল ধ্বংসস্তূপে। গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। হাজারো মানুষ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনকেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছিল। বিগত ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য দেখাতে না পারায় পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন।
ধাপে ধাপে আমরা আবার সব গড়ে তুলতে শুরু করেছি। এই কাজে আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও। তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছে ধারণা, উদ্যম আর কর্মপরিকল্পনা। ৫ আগস্ট সশস্ত্র বাহিনীর কাছে প্রতিবাদকারীদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছিল বিগত সরকার। কিন্তু প্রশংসনীয় সংযম দেখিয়েছিল সশস্ত্র বাহিনী। তারা এখনো পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে।
আমি স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী সরকারে আমি নির্বাচিত বা মনোনীত কোনো পদে দায়িত্ব নেব না। আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা—যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারীরাসহ সব যোগ্য নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এখনো এক বিরাট কাজ। এই কাজ সম্পন্ন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নতুনভাবে সাজিয়েছি। এই কাজে আমাদের লক্ষ্য প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক আরও মজবুত করা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। তাই হওয়া উচিত। আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ট্রাম্প প্রশাসন ও সেক্রেটারি রুবিওর প্রতি—যাঁর সঙ্গে সম্প্রতি আমার এক ফলপ্রসূ ও আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উভয় দেশের জন্য লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং জাতিসংঘও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আমরা ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব করেছি। এই প্রস্তাব আমরা গড়ে তুলেছি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের বিশদ পরামর্শের মাধ্যমে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবিধানিক সংস্কার। সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের এক দৃঢ় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, যেন বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারের দিকে ধাবিত না হয়।
আমি বাংলাদেশের তরুণদের, পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমাদের প্রবাসীদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। তাঁরা দেখিয়েছে কীভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যার ও হতাশাকে পুনর্জাগরণ করে রূপান্তরিত করা যায়। তাদের সাহস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে শ্রম ও ত্যাগ না হলে অর্থবহ পরিবর্তন আনা যায় না।
তাদের দৃষ্টান্ত আমাদের একটা আশা জোগায়। আশাটা এই যে, জেনারেশন জি-এর আরও অনেকে—তাদের দাদা-দাদি ও বাবা-মা, অর্থাৎ জেনারেশন এক্স এবং মিলেনিয়াল, আর জেনারেশন আলফার তরুণ ডিজিটাল প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলবে নতুন বিশ্ব—আমি যাকে বলি ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’। শূন্য বেকারত্ব, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণের পৃথিবী।
বাংলাদেশ এমন এক দেশ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার জীবন পাবে। আর তা সম্ভব হবে আগামী মাস ও বছরে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়সংকল্প, সৃজনশীলতা ও সাহসের কারণে।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উটাহ অঙ্গরাজ্যের আমাদের অনেক বন্ধু-সহ যারা আমাদের সঙ্গে আছেন—তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় আশা, আর হয়তো শেষ ভরসাও।
এক বছর আগে, এই মাসেই, বাংলাদেশের সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাজারো শিক্ষার্থী অসংখ্য সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমাদের জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। অবশেষে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা ৫ আগস্ট এক স্বৈরাচারীকে দেশত্যাগে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়, সেখানে শিক্ষার্থী নেতারা আমাকে অনুরোধ করেন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দায়িত্ব নিতে। এই সরকারের কাজ দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পথ নির্ধারণ করা। প্রথমে আমি রাজি হইনি। কিন্তু তাদের আহ্বান ছিল অনড়। শিক্ষার্থীসহ অগণিত তরুণ জীবন দিয়েছে, অঙ্গহানির শিকার হয়েছে, তা ভেবে আমি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারিনি।
আমি শপথ গ্রহণ করি ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট। আমার সঙ্গে শপথ নেন নীতিনির্ধারক বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এক উপদেষ্টা পরিষদ।
আন্দোলন শুরু হয়েছিল আপাতদৃষ্টিতে এক সহজ দাবি নিয়ে—সরকারি চাকরিতে ন্যায্য নিয়োগ নিশ্চিত করা। তা পরিণত হয় বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জি’ বিপ্লবে। এটি এখন এক মডেল হয়ে উঠেছে। এই মডেল আমাদের দেখাতে পারে কীভাবে তরুণেরা সামনে এগিয়ে এসে মানবতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্য।
আমরা সৌভাগ্যবান যে তারা ‘নিজেদের পালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা’ করতে রাজি হয়নি। সভ্যতা যখন নানা দিক থেকে বিপথে যাচ্ছিল, তখন তারা উপলব্ধি করেছিল যে কিছু করতে হলে এখনই করতে হবে।
আমাদের স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণগুলোর একটি প্রকাশ পায় যখন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের ‘কান্ট্রি অব দা ইয়ার’ ঘোষণা করে। আমরা তখন ব্যস্ত ছিলাম অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচন আয়োজন এবং লুট করা বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের কাজে। সেই ব্যস্ততায় বুঝতেই পারিনি বিশ্ব আমাদের অগ্রগতিকে কত গভীরভাবে লক্ষ করেছে। ডেসেরেট নিউজ আমাদের যাত্রাপথের ভালো খবরগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
আগের শাসনামলে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে অনেক মানুষকে। হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ পায়, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া ছিল আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা তাদের শোক অন্তর দিয়ে ধারণ করি। আমরা সেই সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকার ও তাদের দোসরদের লুট করে নেওয়া বিপুল অর্থ উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ অনুমান করেছে, ওই শাসনামলে ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। পরিমাণটাও বিশাল। সেই অর্থ উদ্ধারের লড়াই অত্যন্ত জরুরি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি বিস্মিত হয়েছিলাম দেশে দুর্নীতির ব্যপকতা দেখে। পুলিশ তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিল। অর্থনীতি ছিল ধ্বংসস্তূপে। গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। হাজারো মানুষ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনকেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছিল। বিগত ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য দেখাতে না পারায় পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা ন্যায়বিচার দাবি করছিলেন।
ধাপে ধাপে আমরা আবার সব গড়ে তুলতে শুরু করেছি। এই কাজে আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও। তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছে ধারণা, উদ্যম আর কর্মপরিকল্পনা। ৫ আগস্ট সশস্ত্র বাহিনীর কাছে প্রতিবাদকারীদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছিল বিগত সরকার। কিন্তু প্রশংসনীয় সংযম দেখিয়েছিল সশস্ত্র বাহিনী। তারা এখনো পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে।
আমি স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী সরকারে আমি নির্বাচিত বা মনোনীত কোনো পদে দায়িত্ব নেব না। আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা—যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারীরাসহ সব যোগ্য নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এখনো এক বিরাট কাজ। এই কাজ সম্পন্ন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নতুনভাবে সাজিয়েছি। এই কাজে আমাদের লক্ষ্য প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক আরও মজবুত করা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। তাই হওয়া উচিত। আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ট্রাম্প প্রশাসন ও সেক্রেটারি রুবিওর প্রতি—যাঁর সঙ্গে সম্প্রতি আমার এক ফলপ্রসূ ও আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উভয় দেশের জন্য লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং জাতিসংঘও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আমরা ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব করেছি। এই প্রস্তাব আমরা গড়ে তুলেছি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের বিশদ পরামর্শের মাধ্যমে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবিধানিক সংস্কার। সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের এক দৃঢ় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, যেন বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারের দিকে ধাবিত না হয়।
আমি বাংলাদেশের তরুণদের, পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমাদের প্রবাসীদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। তাঁরা দেখিয়েছে কীভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যার ও হতাশাকে পুনর্জাগরণ করে রূপান্তরিত করা যায়। তাদের সাহস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে শ্রম ও ত্যাগ না হলে অর্থবহ পরিবর্তন আনা যায় না।
তাদের দৃষ্টান্ত আমাদের একটা আশা জোগায়। আশাটা এই যে, জেনারেশন জি-এর আরও অনেকে—তাদের দাদা-দাদি ও বাবা-মা, অর্থাৎ জেনারেশন এক্স এবং মিলেনিয়াল, আর জেনারেশন আলফার তরুণ ডিজিটাল প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলবে নতুন বিশ্ব—আমি যাকে বলি ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’। শূন্য বেকারত্ব, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণের পৃথিবী।
বাংলাদেশ এমন এক দেশ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার জীবন পাবে। আর তা সম্ভব হবে আগামী মাস ও বছরে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়সংকল্প, সৃজনশীলতা ও সাহসের কারণে।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উটাহ অঙ্গরাজ্যের আমাদের অনেক বন্ধু-সহ যারা আমাদের সঙ্গে আছেন—তারাই আমাদের সবচেয়ে বড় আশা, আর হয়তো শেষ ভরসাও।
যেকোনো মুহূর্তে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক ‘উচ্ছেদের নির্দেশ’ আসার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। আমার প্রিয় শহর গাজা ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি সামরিক দখলের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পরিকল্পনা হলো আমাদের ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে সবাইকে দক্ষিণ গাজায় তাঁবুর নিচে নিয়ে যাওয়া।
১ দিন আগেরাশিয়া যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আরও গুরুতর হলো— ইউরোপকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ শেষ করার জন্য কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি।
৩ দিন আগেশামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতা, প্রগতিশীলতার প্রশ্নে আমাদের শহরের কবিদের মধ্যে সূক্ষ্ম একটা ভেদরেখা আছে।
৪ দিন আগেভণিতা না করে, আসুন আমরা দেখি কোন পরিস্থিতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দরকষাকষি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের করা সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নারী সংস্কার কমিশন সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব অর্থপূর্ণভাবে বাড়াতে দুই ধরনের সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল।
৫ দিন আগে