ভাষা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, উনসত্তরের অভ্যুত্থান থেকে স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পাঁচটি দশকের রাজনৈতিক জীবনী লিখে গেছেন লেখক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর। আমাদের নানা উত্থান-পতন, গণ-আন্দোলন আর গণ-অভ্যুত্থানের নিবিড়ি পর্যবেক্ষক তিনি। ইতিহাসের পাটাতনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে কী ছিল তাঁর পর্যবেক্ষণ?
ফারুক ওয়াসিফ
আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘আমি বদরুদ্দীন উমরের যুগে বাস করি বলে গর্বিত।’ মহাশয় মানুষের কথা আমাদের মতো দুরাশয়েরাও মানতে বাধ্য। গত শতকের ৬০ দশক থেকে এই শতকের অনেক নবীনও বলতে পারেন, আমরা বদরুদ্দীন উমরের সময়ে বেঁচে ছিলাম। উমরের সময় ১৯৫২ থেকে এই ২০২৫ সালতক বিস্তারিত। কেমন করে তা হয়? উমর নিজের জীবনকে তাঁর সময়ের জনজীবনের ইতিহাসের সঙ্গে লেখা ও কাজে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তাঁর মত মানি বা না মানি, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অবধি এই কয়েক শ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাঠ বদরুদ্দীন উমরকে ছাড়া পূর্ণ হওয়ার নয়।
সেই বদরুদ্দীন উমর ৯৪ বছর বয়সে অনন্তে যাত্রা করলেন। এই যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশভাগের শিকার হয়ে, ১৯৫০ সালের দাঙ্গায় পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার জমিদারির ভগ্নাবশেষ ছেড়ে চলে এলেন সেকালের পূর্ব পাকিস্তানে। এই পা-জোড়া পশ্চিম বাংলা থেকে কৃষক সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তর-একাত্তর পেরিয়ে বাংলাদেশ অবধি হেঁটেছে। এই পা জোড়া একজন দেশান্তরীর। মস্তিষ্কটা মার্কসবাদীর। হৃদয় ইতিহাসের অন্তঃসলিলা ধারায় অবগাহিত।
জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা যখন দেশের যুগান্তকারী আন্দোলনগুলোকে ভক্তির শামিয়ানায় মুড়ে রাখছিলেন, উমর তখন ঢাকনা খুলে দেখান কিসের তরে মানুষের এত বিদ্রোহ; জনগণের কোন অংশ তাতে শক্তি জোগাল; দুর্বলতাটা কোথায় ছিল বলে আজও মুক্তি আসেনি। ভাষা আন্দোলন থেকে আজ অবধি তাঁকে কেউ ক্ষমতার তাপে গলে যেতে দেখেনি, লাভের আশায় নুইয়ে পড়তে দেখেনি। বার্ধক্য অনেকের শরীর ও মনের শিরদাঁড়া বাঁকা করে ফেলে। অথচ আমৃত্য ইতিহাসের সামনে সততা ও মনীষা নিয়ে দাঁড়ানো ছিলেন। বুদ্ধিজীবীর কাজ কেবল বিজয়ের জয়গান গাওয়া নয়। পরাজয়টা কোথায় ভেতর থেকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তা মনে করিয়ে দেওয়া তাঁদের কর্তব্য। ইতিহাসের কাছে মানুষের হয়ে সেই জরুরি জবাবদিহির কাজ উমর হয়তো একাই করে গেলেন।
আপনি বদরুদ্দীন উমরের তত্ত্ব না মানতে পারেন, কিন্তু এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বুঝ মেলাতে তাঁকে লাগবেই। উমর এই জরুরি কাজেরই সাধক।
সংষ্কৃতির রাজনীতি
বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় বগুড়া শহরের ফুটপাতে। ১৯৯৩ সালের দিকে। শহরের সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাখানা এশিয়া হোটেল। এর ঠিক সামনের ফুটপাতে মাসুদ রানা, শ্রীকান্ত, দস্যু বনহুরের সঙ্গে পেয়ে গেলাম উমরের বিখ্যাত ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বইটা। বইয়ের ভেতরকার সিলছাপ্পর দেখে আন্দাজ হয়েছিল, বইটা প্রথম কেনা হয় সান্তাহার রেলস্টেশনের বুকস্টল থেকে, ১৯৬৮ সালে। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত বইটা দুই বছরের মধ্যে চলে এসেছিল সেই দুর্গম দেশে! বাংলাদেশে মফসসলের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক উত্থানের সময় ছিল ষাটের দশক। উমরের সংস্কৃতি ট্রিলজি দেশের অনেক ভেতরতক সেই উত্থানের সঙ্গী হয়েছিল। সংস্কৃতির সংঘাত যে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে, তা আগে তিনিই দেখান। বাঙালিত্বের সঙ্গে মুসলমানত্বের বিরোধ যে বানোয়াট, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বলে যাকে দাগানো হয়, তা যে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার, জাতীয়তাবাদ কীভাবে জাতিকেই গ্রাস করে, জনবিচ্ছিন্ন প্রগতিশীলতা যে আসলে শ্রেণিগত পিছুটানেরই রকমফের; এসব তিনিই দেখালেন। উপমহাদেশে শ্রেণিবৈষম্যের সমস্যা যে জাতপ্রথা আর সাম্প্রদায়িকতা আকারে টিকে আছে, এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম সাংষ্কৃতিক রাজনীতি দিয়ে হবার নয়; এটা উমরের অন্যতম অবদান।
নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চারও আগে
এই দেশে তখনো নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা কিংবা উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের ঝকমারির আগমন হয়নি। আসছিল উমরের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের একেকটি খণ্ড। জানা হচ্ছিল, কীভাবে ঢাকাই মধ্যবিত্তের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে মফসসলের উঠতি মধ্যবিত্ত ও খোরাকি-খাওয়া কৃষকের শ্রেণিসংগ্রাম এক লক্ষ্যে বাঁধা পড়ে গেছে। একাত্তরের জাতীয় ঐক্যের ঢালাই যে ১৯৪৮-৫২-তেই শুরু হয়েছে, ভাষা আন্দোলনের কর্মী উমর তা সমকালেই বুঝতে পেরেছিলেন। সমকালের মধ্যে ভবিষ্যতের রূপরেখা দেখতে পাওয়া বিরাট মনীষা আর গভীর দেশপ্রেম ছাড়া হয় না। উমরের মতো এমন দূরদর্শনের ক্ষমতা সত্যিই বিরল।
কলোনিয়াল মধ্যবিত্তের ‘দেশে-ফেরা’
ঢাকা হয়তো মহাপুরুষ দিতে পারেনি। কিন্তু ভাষা আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মতো বিপ্লবী আন্দোলনের ঢেউ মহাপুরুষদের চেয়েও বড় অবদান রেখে গেছে। একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী ও তার রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। একেকটি আন্দোলন জনগণের চেতনা ও জীবনে যে গতিবেগ এনেছিল, কলকাতা কসমোপলিটনের কোনো মহাপুরুষের পক্ষেই তা সম্ভব হতো না। হয়ওনি। বাংলাদেশ মহাপুরুষের প্রতি ভক্তিভাব দিয়ে নয়, ভক্তির বিরুদ্ধে স্বাধিকারের চেতনায় ঘটিয়েছে তার নিজস্ব রেনেসাঁ। বদরুদ্দীন উমর আমাদের সেই ষাটদশকীয়া রেনেসাঁর বড় সন্তান। ছোটো সন্তানেরা যদি সেটা অস্বীকার করেন, তবে নিজেদের কীর্তিকেই নাকচ করলেন। উনিশ শতকে কলকাতা যে ধরনের স্বাধীন মনীষা জন্ম দিতে গিয়েও পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশে উমর সেটাই করে গেছেন।
রাজনৈতিক সাহিত্য
বদরুদ্দীন উমরের এক জীবনের গবেষণা ও লেখালেখি কয়েক জীবনের সমান। উমর তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অনেক ধারণা ও চিন্তাকে ঝাঁকি দিয়েছিলেন। উনিশ শতকের কলকাত্তাই রেনেসাঁ ও তার মহাপুরুষদের নিয়ে মোহ কাটানোয় ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলার কৃষক’ এবং ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ’ বই দুটি এখনো দিশারি। বঙ্গভঙ্গ ও ভারতভাগের দায় যে কংগ্রেসের নেতাদের, উমর তা প্রমাণ করেন ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ ও ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’ বইয়ে। তখনো জয়া চ্যাটার্জির ‘বেঙ্গল পার্টিশনড’ অথবা পেরি অ্যান্ডারসনের ‘দি ইন্ডিয়ান আইডিওলজি’ লেখা হতে অনেক দেরি। ভাষা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, উনসত্তরের অভ্যুত্থান থেকে স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পাঁচটি দশকের রাজনৈতিক জীবনী উমরই লিখেছেন। তাঁর ‘যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ’ ও ‘যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ’ আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের আন্দোলন ও শাসনের চরিত্রবিচারে দিশারি গ্রন্থ। ‘একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ভূমিকা’ হয়ে সাম্প্রতিক ‘বাঙলাদেশের অভ্যুদয়’ বইটি মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী-ভারতীয় ন্যারেটিভের দুর্দান্ত খণ্ডন। তাঁর প্রতিটি নতুন গ্রন্থ আগের চিন্তাগুলোকে আরও বিকশিত করে, ধরে রাখে চিন্তার সংগতি। বাংলাদেশের বিগত দেড় শ বছরের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাকরণ বুঝতে উমরকে লাগবেই।
অক্সফোর্ডের স্নাতক উমর ষাটের শেষে আইয়ুব খানের শাসানি পাত্তা না দিয়ে ছেড়ে দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। স্বাধীনতার আগে সম্পাদনা করেছেন অমস্কোপন্থি মার্কসবাদী পত্রিকা ‘গণশক্তি’। স্বাধীনতার পরেও কয়েক বছর তা চালিয়ে গেলেন। শেখ মুজিবের স্বৈরশাসনের সময়ে সিকানদার আবু জাফর প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দমনপীড়নের বিরুদ্ধে গঠন করলেন নাগরিক কমিটি। ৪৩ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পাদনা করছেন মাসিক ‘সংস্কৃতি’ পত্রিকা। বাংলা রাজনৈতিক গদ্যে উমর তুলনাহীন। এই গদ্য বাদামের মতো শুকনা হলেও আচারের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাদ দেয়। তাঁর সমাজতাত্ত্বিক চিন্তা আন্তোনিও গ্রামসির ধারার। উমরীয় তাত্ত্বিক বীক্ষা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও চিন্তক আহমদ ছফার বুদ্ধির মজ্জায় রস দিয়েছিল। তাঁদের বাইরে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, মঞ্জু সরকার থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ও সাহিত্য তাত্ত্বিক আজফার হোসেন কমবেশি উমরের সঙ্গে পথ হেঁটেছিলেন। যদিও বদরুদ্দীন উমর সত্য কথাটা যেভাবে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে এবং স্বচ্ছভাবে উচ্চারণ করতে পারেন, তা অনেকেই পারেন না। এ জন্যই হয়তো আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘আমি বদরুদ্দীন উমরের যুগে বাস করি বলে গর্বিত।’
বৃহৎ ভারতীয় (আওয়ামী) মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস
বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আওয়ামী-ভারতীয় মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস। উমরের গণ-অভ্যুত্থান ভাবনার জন্ম বাংলাদেশের বিশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতায়। এ রকম দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জনগণের মুক্তি নেই; অতএব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের শত্রুদের পরাস্ত করে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরে নির্বাচন। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘নির্বাচন না গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ে এই চিন্তা তিনি স্পষ্ট করেন। তিনি মনে করতেন, গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও উমরই প্রথম আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁর আজীবন গবেষণায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে দেখান, এটি আদতে ভারতীয় আধিপত্যবাদী জাতীয়তাবাদের অধীনস্ত। তিনি মনে করতেন, ভারতকে মোকাবিলা না করে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। উমরের বিশ্লেষণ, যা তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে আর সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত, তা সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বোঝার জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
বদরুদ্দীন উমরকে বলা যায় আওয়ামী-ভারতীয় মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস। এ প্রস্তাবের পক্ষে দুটি প্রমাণ দেব। এক. উমরের গণ-অভ্যুত্থান তত্ত্বই কামিয়াব হলো চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে। উমর বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় গণ-অভ্যুত্থানে গণবিরোধীদের পরাস্ত না করে কোনো নির্বাচন সুফল দেবে না। প্রমাণ ১৯৬৯ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচন। প্রতিবিপ্লবী ১/১১-এর পরের নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের পত্তন হয়েছিল, গণতন্ত্র নয় (দেখুন: ফারুক ওয়াসিফ/জরুরি অবস্থার আমলনামা: বাংলাদেশের সিভিকো মিলিটারি কর্পোরেট গণতন্ত্র, ২০০৯)।
বিএনপি যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের ভোট বর্জন করেছিল, সেটাও ওই লাইনেরই চিন্তা। কিন্তু উমর আরও এগিয়ে বলেছিলেন, কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানালেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অভ্যুত্থানে বিজয়ীদের নিয়ে সংবিধানসভা গঠন করে, নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন না করলে পুরোনো বন্দোবস্তই ফিরে আসবে। এটা তাঁর ওই ‘নির্বাচন না গণ-অভ্যুত্থান’ বইয়ে বিস্তারিত আছে।
দ্বিতীয় প্রমাণ: আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে প্রথম উমরই চিহ্নিত করেন এবং সেই দিশাতেই তিনি গত ১৭ বছর লিখে গেছেন। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদের খণ্ডন উমর করে গেছেন সারা জীবনের কাজে হিসেবে। ভাষা আন্দোলনের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবকে বসানো যায় না উমরের অকাট্য গবেষণা পুস্তক ও লেখালেখির জন্য। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অধীনস্ত, সেটাও তিনি মনে করতেন। দেশভাগের দায় যে মুসলমানদের না, বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বইয়ে তা দেখান জয়া চ্যাটার্জিদেরও অনেক আগে।
৭ মার্চে মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, ২৫ মার্চে মুজিব আত্মসমর্পণ করেছেন, আওয়ামী লীগের বড় অংশই মুক্তিযুদ্ধে অনুপস্থিত, আওয়ামী লীগ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বাহন, এসব উমর ১৯৭২ সাল থেকেই বলে আসছেন।
বদরুদ্দীন উমর নাকি জাতীয়তাবাদী?
বড় অদ্ভুত কথা তো! কোনো কোনো সমালোচক বলার দায় নিচ্ছেন যে বদরুদ্দীন উমর নাকি জাতীয়তাবাদী? ১৯৭২ সালে তিনি নিবন্ধ লিখেন, ‘বাঙলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’। তখনো বিএনপি জন্মাবে, এমন কল্পনাও কারও ছিল না। এই লেখায় তিনি বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ বলে চিনিয়ে দেন। বলেন, এটা আসলে নতুন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ=বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ=বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ; এই সমীকরণ উমর ১৯৭২ সালেই লিখে দেখিয়ে দিয়েছেন।
ভারতকে মোকাবিলা না করে বাংলাদেশ যে এগোতে পারবে না, এ ব্যাপারে উমর কট্টর ছিলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জোর ভারতের মতো মৌলিক না। তবে তাঁর ভাষায় ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা আছে। সুতরাং তাঁকে বাঙালিবাদী বলা অন্যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে গড়ন হয়েছে, তা হয়েছে ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হাতে, উমর সে দিক থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ—দুটোরই ঘোরতর বিরোধী। তবে তাঁকে আমৃত্যু বাংলাদেশপন্থি লড়াকু চিন্তানায়ক বলা যায়।
১৯৭২ সালের ওই লেখায় উমর প্রশ্ন তুলেছিলেন, অর্ধেক বাংলা নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ কী কারণে সফল হতে পারে? তাঁর মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ। তাঁর কথা ধরে বলা যায়, বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত কী করে রবিঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ হয়, যা বাংলাকে যুক্ত রাখার দাবিতে সৃষ্ট। এটা তখনই সার্থক হবে, যখন দুই বাংলা এক হবে।
যে তাত্ত্বিক তাঁর ষাট বছরের সংগ্রামী জীবনে মুসলিম জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের একরোখা সমালোচনা করে গেছেন, তিনি জাতীয়তাবাদী হবেন কী করে? শ্রেণি প্রশ্নে যিনি মারাত্মকরকম অনাপসী, মুক্তিযুদ্ধকে যিনি শ্রেণির নিরিখে বিচার করেন, আওয়ামী জাতীয়তাবাদী দাবি ও তার ইতিহাসকে যিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে গেছেন, তাঁকে জাতীয়তাবাদী বলা আসলে উমরকে পাঠ না করার সমস্যা।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে তিনি জাতীয়তাবাদীদের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে বাঁচিয়েছেন তাঁর তিন খণ্ড বই দিয়ে। বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিগুলোর পক্ষে থেকেছেন লেখায় ও আন্দোলনে, চর্চা করে গেছেন সাম্যবাদী আন্তর্জাতিকতাবাদের, তাই তাঁকে জাতীয়তাবাদী ঠাউরানো আর ‘সীতা রামের মাসি’ বলা সমান হয়ে যায়।
জুলাইয়ের সত্যদ্রষ্টা
২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন যে গণ-অভ্যুত্থান এবং এটা যে ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান কেন উপমহাদেশের সব গণ-অভ্যুত্থানের চাইতে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা, এই জ্ঞান উমরই প্রথম ‘বণিক বার্তা’র আনিকা মেহজাবীনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন ২৪ সালের ২৮ জুলাই, যা পেয়েছিল প্রকাশ ২৯ জুলাই। এরপরে ৩ আগস্টেও আমাকে দেওয়া ‘সমকাল’-এর সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পরিণতি নিয়ে তিনি যা বলেন, তা দুদিন পরে সঠিক প্রমাণিত হয়। এমনকি জুলাইয়ের নেতৃত্বের ভুল ও সুবিধাবাদ, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা দেখিয়ে দিতেও তিনি কসুর করেননি।
নাম ও বদনাম
সাম্প্রদায়িকতার বুঝ তৈরি করা কিংবা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের সমালোচনা করা বা জাহানারা ইমামের সঙ্গে গণআদালত সংগঠনে কাজ করা মানে তো জাতীয়তাবাদী না। বাকশালকে যিনি ফ্যাসিবাদী বলে থাকেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি যিনি গঠন করেন, তাঁকে চিনতে পারা তো কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। অবশ্য তাঁর এত এত বই পড়া আসলেই সমস্যা। আরও সমস্যা হলো, না পড়ে কথা বলা।
আরেকটা কথা শুনলাম, উমর নাকি দেশভাগের জন্য কেবল মুসলিম লীগকে দায়ী করেছেন। জয়া চ্যাটার্জির বইয়েরও বহু আগে লেখা হয় তাঁর ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ সেখানে তিনি কংগ্রেস ও হিন্দু ভদ্রলোকদের রাজনীতিকেই বঙ্গভঙ্গের জন্য দায়ী করে দেখান। তাঁর ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন বইটাও ওই অভিযোগের উল্টা সাক্ষ্য দেবে। আমরা উপেক্ষা করতে পারি তাঁকে, কিন্তু বদনাম দিতে পারি না।
সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বোঝার প্রাথমিক বোধ উমরের বই থেকে আজকের তরুণেরা পেতে পারেন। উমরের বইগুলোর মধ্যে যেগুলো বারবারই আমাদের পড়তে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ’, ‘যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ’, ‘বাঙলাদেশের সমাজ বিকাশের ধারা’, ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সাংষ্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংষ্কৃতির সংকট’, ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তৎকালীন সমাজ’, ‘ভারত প্রসঙ্গে’, ‘নির্বাচন না গণঅভ্যুত্থান’, ‘ পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ প্রভৃতি ।
এই আজীবন বিপ্লবী, সাহসী ও নিরাপস মানুষটিকে আবারও বিপ্লবী সালাম জানাই। জানাই অন্তিম অভিবাদন।
লেখক: কবি; প্রাবন্ধিক
আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘আমি বদরুদ্দীন উমরের যুগে বাস করি বলে গর্বিত।’ মহাশয় মানুষের কথা আমাদের মতো দুরাশয়েরাও মানতে বাধ্য। গত শতকের ৬০ দশক থেকে এই শতকের অনেক নবীনও বলতে পারেন, আমরা বদরুদ্দীন উমরের সময়ে বেঁচে ছিলাম। উমরের সময় ১৯৫২ থেকে এই ২০২৫ সালতক বিস্তারিত। কেমন করে তা হয়? উমর নিজের জীবনকে তাঁর সময়ের জনজীবনের ইতিহাসের সঙ্গে লেখা ও কাজে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তাঁর মত মানি বা না মানি, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অবধি এই কয়েক শ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাঠ বদরুদ্দীন উমরকে ছাড়া পূর্ণ হওয়ার নয়।
সেই বদরুদ্দীন উমর ৯৪ বছর বয়সে অনন্তে যাত্রা করলেন। এই যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশভাগের শিকার হয়ে, ১৯৫০ সালের দাঙ্গায় পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার জমিদারির ভগ্নাবশেষ ছেড়ে চলে এলেন সেকালের পূর্ব পাকিস্তানে। এই পা-জোড়া পশ্চিম বাংলা থেকে কৃষক সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তর-একাত্তর পেরিয়ে বাংলাদেশ অবধি হেঁটেছে। এই পা জোড়া একজন দেশান্তরীর। মস্তিষ্কটা মার্কসবাদীর। হৃদয় ইতিহাসের অন্তঃসলিলা ধারায় অবগাহিত।
জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা যখন দেশের যুগান্তকারী আন্দোলনগুলোকে ভক্তির শামিয়ানায় মুড়ে রাখছিলেন, উমর তখন ঢাকনা খুলে দেখান কিসের তরে মানুষের এত বিদ্রোহ; জনগণের কোন অংশ তাতে শক্তি জোগাল; দুর্বলতাটা কোথায় ছিল বলে আজও মুক্তি আসেনি। ভাষা আন্দোলন থেকে আজ অবধি তাঁকে কেউ ক্ষমতার তাপে গলে যেতে দেখেনি, লাভের আশায় নুইয়ে পড়তে দেখেনি। বার্ধক্য অনেকের শরীর ও মনের শিরদাঁড়া বাঁকা করে ফেলে। অথচ আমৃত্য ইতিহাসের সামনে সততা ও মনীষা নিয়ে দাঁড়ানো ছিলেন। বুদ্ধিজীবীর কাজ কেবল বিজয়ের জয়গান গাওয়া নয়। পরাজয়টা কোথায় ভেতর থেকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তা মনে করিয়ে দেওয়া তাঁদের কর্তব্য। ইতিহাসের কাছে মানুষের হয়ে সেই জরুরি জবাবদিহির কাজ উমর হয়তো একাই করে গেলেন।
আপনি বদরুদ্দীন উমরের তত্ত্ব না মানতে পারেন, কিন্তু এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বুঝ মেলাতে তাঁকে লাগবেই। উমর এই জরুরি কাজেরই সাধক।
সংষ্কৃতির রাজনীতি
বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় বগুড়া শহরের ফুটপাতে। ১৯৯৩ সালের দিকে। শহরের সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাখানা এশিয়া হোটেল। এর ঠিক সামনের ফুটপাতে মাসুদ রানা, শ্রীকান্ত, দস্যু বনহুরের সঙ্গে পেয়ে গেলাম উমরের বিখ্যাত ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বইটা। বইয়ের ভেতরকার সিলছাপ্পর দেখে আন্দাজ হয়েছিল, বইটা প্রথম কেনা হয় সান্তাহার রেলস্টেশনের বুকস্টল থেকে, ১৯৬৮ সালে। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত বইটা দুই বছরের মধ্যে চলে এসেছিল সেই দুর্গম দেশে! বাংলাদেশে মফসসলের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক উত্থানের সময় ছিল ষাটের দশক। উমরের সংস্কৃতি ট্রিলজি দেশের অনেক ভেতরতক সেই উত্থানের সঙ্গী হয়েছিল। সংস্কৃতির সংঘাত যে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে, তা আগে তিনিই দেখান। বাঙালিত্বের সঙ্গে মুসলমানত্বের বিরোধ যে বানোয়াট, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বলে যাকে দাগানো হয়, তা যে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার, জাতীয়তাবাদ কীভাবে জাতিকেই গ্রাস করে, জনবিচ্ছিন্ন প্রগতিশীলতা যে আসলে শ্রেণিগত পিছুটানেরই রকমফের; এসব তিনিই দেখালেন। উপমহাদেশে শ্রেণিবৈষম্যের সমস্যা যে জাতপ্রথা আর সাম্প্রদায়িকতা আকারে টিকে আছে, এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম সাংষ্কৃতিক রাজনীতি দিয়ে হবার নয়; এটা উমরের অন্যতম অবদান।
নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চারও আগে
এই দেশে তখনো নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা কিংবা উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের ঝকমারির আগমন হয়নি। আসছিল উমরের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের একেকটি খণ্ড। জানা হচ্ছিল, কীভাবে ঢাকাই মধ্যবিত্তের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে মফসসলের উঠতি মধ্যবিত্ত ও খোরাকি-খাওয়া কৃষকের শ্রেণিসংগ্রাম এক লক্ষ্যে বাঁধা পড়ে গেছে। একাত্তরের জাতীয় ঐক্যের ঢালাই যে ১৯৪৮-৫২-তেই শুরু হয়েছে, ভাষা আন্দোলনের কর্মী উমর তা সমকালেই বুঝতে পেরেছিলেন। সমকালের মধ্যে ভবিষ্যতের রূপরেখা দেখতে পাওয়া বিরাট মনীষা আর গভীর দেশপ্রেম ছাড়া হয় না। উমরের মতো এমন দূরদর্শনের ক্ষমতা সত্যিই বিরল।
কলোনিয়াল মধ্যবিত্তের ‘দেশে-ফেরা’
ঢাকা হয়তো মহাপুরুষ দিতে পারেনি। কিন্তু ভাষা আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মতো বিপ্লবী আন্দোলনের ঢেউ মহাপুরুষদের চেয়েও বড় অবদান রেখে গেছে। একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী ও তার রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। একেকটি আন্দোলন জনগণের চেতনা ও জীবনে যে গতিবেগ এনেছিল, কলকাতা কসমোপলিটনের কোনো মহাপুরুষের পক্ষেই তা সম্ভব হতো না। হয়ওনি। বাংলাদেশ মহাপুরুষের প্রতি ভক্তিভাব দিয়ে নয়, ভক্তির বিরুদ্ধে স্বাধিকারের চেতনায় ঘটিয়েছে তার নিজস্ব রেনেসাঁ। বদরুদ্দীন উমর আমাদের সেই ষাটদশকীয়া রেনেসাঁর বড় সন্তান। ছোটো সন্তানেরা যদি সেটা অস্বীকার করেন, তবে নিজেদের কীর্তিকেই নাকচ করলেন। উনিশ শতকে কলকাতা যে ধরনের স্বাধীন মনীষা জন্ম দিতে গিয়েও পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশে উমর সেটাই করে গেছেন।
রাজনৈতিক সাহিত্য
বদরুদ্দীন উমরের এক জীবনের গবেষণা ও লেখালেখি কয়েক জীবনের সমান। উমর তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অনেক ধারণা ও চিন্তাকে ঝাঁকি দিয়েছিলেন। উনিশ শতকের কলকাত্তাই রেনেসাঁ ও তার মহাপুরুষদের নিয়ে মোহ কাটানোয় ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলার কৃষক’ এবং ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ’ বই দুটি এখনো দিশারি। বঙ্গভঙ্গ ও ভারতভাগের দায় যে কংগ্রেসের নেতাদের, উমর তা প্রমাণ করেন ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ ও ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’ বইয়ে। তখনো জয়া চ্যাটার্জির ‘বেঙ্গল পার্টিশনড’ অথবা পেরি অ্যান্ডারসনের ‘দি ইন্ডিয়ান আইডিওলজি’ লেখা হতে অনেক দেরি। ভাষা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, উনসত্তরের অভ্যুত্থান থেকে স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পাঁচটি দশকের রাজনৈতিক জীবনী উমরই লিখেছেন। তাঁর ‘যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ’ ও ‘যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ’ আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের আন্দোলন ও শাসনের চরিত্রবিচারে দিশারি গ্রন্থ। ‘একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ভূমিকা’ হয়ে সাম্প্রতিক ‘বাঙলাদেশের অভ্যুদয়’ বইটি মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী-ভারতীয় ন্যারেটিভের দুর্দান্ত খণ্ডন। তাঁর প্রতিটি নতুন গ্রন্থ আগের চিন্তাগুলোকে আরও বিকশিত করে, ধরে রাখে চিন্তার সংগতি। বাংলাদেশের বিগত দেড় শ বছরের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাকরণ বুঝতে উমরকে লাগবেই।
অক্সফোর্ডের স্নাতক উমর ষাটের শেষে আইয়ুব খানের শাসানি পাত্তা না দিয়ে ছেড়ে দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। স্বাধীনতার আগে সম্পাদনা করেছেন অমস্কোপন্থি মার্কসবাদী পত্রিকা ‘গণশক্তি’। স্বাধীনতার পরেও কয়েক বছর তা চালিয়ে গেলেন। শেখ মুজিবের স্বৈরশাসনের সময়ে সিকানদার আবু জাফর প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দমনপীড়নের বিরুদ্ধে গঠন করলেন নাগরিক কমিটি। ৪৩ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পাদনা করছেন মাসিক ‘সংস্কৃতি’ পত্রিকা। বাংলা রাজনৈতিক গদ্যে উমর তুলনাহীন। এই গদ্য বাদামের মতো শুকনা হলেও আচারের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাদ দেয়। তাঁর সমাজতাত্ত্বিক চিন্তা আন্তোনিও গ্রামসির ধারার। উমরীয় তাত্ত্বিক বীক্ষা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও চিন্তক আহমদ ছফার বুদ্ধির মজ্জায় রস দিয়েছিল। তাঁদের বাইরে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, মঞ্জু সরকার থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ও সাহিত্য তাত্ত্বিক আজফার হোসেন কমবেশি উমরের সঙ্গে পথ হেঁটেছিলেন। যদিও বদরুদ্দীন উমর সত্য কথাটা যেভাবে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে এবং স্বচ্ছভাবে উচ্চারণ করতে পারেন, তা অনেকেই পারেন না। এ জন্যই হয়তো আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘আমি বদরুদ্দীন উমরের যুগে বাস করি বলে গর্বিত।’
বৃহৎ ভারতীয় (আওয়ামী) মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস
বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আওয়ামী-ভারতীয় মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস। উমরের গণ-অভ্যুত্থান ভাবনার জন্ম বাংলাদেশের বিশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতায়। এ রকম দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জনগণের মুক্তি নেই; অতএব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের শত্রুদের পরাস্ত করে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের পরে নির্বাচন। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘নির্বাচন না গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ে এই চিন্তা তিনি স্পষ্ট করেন। তিনি মনে করতেন, গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও উমরই প্রথম আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁর আজীবন গবেষণায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে দেখান, এটি আদতে ভারতীয় আধিপত্যবাদী জাতীয়তাবাদের অধীনস্ত। তিনি মনে করতেন, ভারতকে মোকাবিলা না করে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। উমরের বিশ্লেষণ, যা তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে আর সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত, তা সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বোঝার জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
বদরুদ্দীন উমরকে বলা যায় আওয়ামী-ভারতীয় মতাদর্শের অ্যান্টিথিসিস। এ প্রস্তাবের পক্ষে দুটি প্রমাণ দেব। এক. উমরের গণ-অভ্যুত্থান তত্ত্বই কামিয়াব হলো চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে। উমর বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় গণ-অভ্যুত্থানে গণবিরোধীদের পরাস্ত না করে কোনো নির্বাচন সুফল দেবে না। প্রমাণ ১৯৬৯ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচন। প্রতিবিপ্লবী ১/১১-এর পরের নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের পত্তন হয়েছিল, গণতন্ত্র নয় (দেখুন: ফারুক ওয়াসিফ/জরুরি অবস্থার আমলনামা: বাংলাদেশের সিভিকো মিলিটারি কর্পোরেট গণতন্ত্র, ২০০৯)।
বিএনপি যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের ভোট বর্জন করেছিল, সেটাও ওই লাইনেরই চিন্তা। কিন্তু উমর আরও এগিয়ে বলেছিলেন, কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানালেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অভ্যুত্থানে বিজয়ীদের নিয়ে সংবিধানসভা গঠন করে, নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন না করলে পুরোনো বন্দোবস্তই ফিরে আসবে। এটা তাঁর ওই ‘নির্বাচন না গণ-অভ্যুত্থান’ বইয়ে বিস্তারিত আছে।
দ্বিতীয় প্রমাণ: আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে প্রথম উমরই চিহ্নিত করেন এবং সেই দিশাতেই তিনি গত ১৭ বছর লিখে গেছেন। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদের খণ্ডন উমর করে গেছেন সারা জীবনের কাজে হিসেবে। ভাষা আন্দোলনের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবকে বসানো যায় না উমরের অকাট্য গবেষণা পুস্তক ও লেখালেখির জন্য। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অধীনস্ত, সেটাও তিনি মনে করতেন। দেশভাগের দায় যে মুসলমানদের না, বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বইয়ে তা দেখান জয়া চ্যাটার্জিদেরও অনেক আগে।
৭ মার্চে মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, ২৫ মার্চে মুজিব আত্মসমর্পণ করেছেন, আওয়ামী লীগের বড় অংশই মুক্তিযুদ্ধে অনুপস্থিত, আওয়ামী লীগ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বাহন, এসব উমর ১৯৭২ সাল থেকেই বলে আসছেন।
বদরুদ্দীন উমর নাকি জাতীয়তাবাদী?
বড় অদ্ভুত কথা তো! কোনো কোনো সমালোচক বলার দায় নিচ্ছেন যে বদরুদ্দীন উমর নাকি জাতীয়তাবাদী? ১৯৭২ সালে তিনি নিবন্ধ লিখেন, ‘বাঙলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’। তখনো বিএনপি জন্মাবে, এমন কল্পনাও কারও ছিল না। এই লেখায় তিনি বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ বলে চিনিয়ে দেন। বলেন, এটা আসলে নতুন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ=বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ=বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ; এই সমীকরণ উমর ১৯৭২ সালেই লিখে দেখিয়ে দিয়েছেন।
ভারতকে মোকাবিলা না করে বাংলাদেশ যে এগোতে পারবে না, এ ব্যাপারে উমর কট্টর ছিলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জোর ভারতের মতো মৌলিক না। তবে তাঁর ভাষায় ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা আছে। সুতরাং তাঁকে বাঙালিবাদী বলা অন্যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে গড়ন হয়েছে, তা হয়েছে ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হাতে, উমর সে দিক থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ—দুটোরই ঘোরতর বিরোধী। তবে তাঁকে আমৃত্যু বাংলাদেশপন্থি লড়াকু চিন্তানায়ক বলা যায়।
১৯৭২ সালের ওই লেখায় উমর প্রশ্ন তুলেছিলেন, অর্ধেক বাংলা নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ কী কারণে সফল হতে পারে? তাঁর মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ। তাঁর কথা ধরে বলা যায়, বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত কী করে রবিঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ হয়, যা বাংলাকে যুক্ত রাখার দাবিতে সৃষ্ট। এটা তখনই সার্থক হবে, যখন দুই বাংলা এক হবে।
যে তাত্ত্বিক তাঁর ষাট বছরের সংগ্রামী জীবনে মুসলিম জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের একরোখা সমালোচনা করে গেছেন, তিনি জাতীয়তাবাদী হবেন কী করে? শ্রেণি প্রশ্নে যিনি মারাত্মকরকম অনাপসী, মুক্তিযুদ্ধকে যিনি শ্রেণির নিরিখে বিচার করেন, আওয়ামী জাতীয়তাবাদী দাবি ও তার ইতিহাসকে যিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে গেছেন, তাঁকে জাতীয়তাবাদী বলা আসলে উমরকে পাঠ না করার সমস্যা।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে তিনি জাতীয়তাবাদীদের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে বাঁচিয়েছেন তাঁর তিন খণ্ড বই দিয়ে। বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিগুলোর পক্ষে থেকেছেন লেখায় ও আন্দোলনে, চর্চা করে গেছেন সাম্যবাদী আন্তর্জাতিকতাবাদের, তাই তাঁকে জাতীয়তাবাদী ঠাউরানো আর ‘সীতা রামের মাসি’ বলা সমান হয়ে যায়।
জুলাইয়ের সত্যদ্রষ্টা
২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন যে গণ-অভ্যুত্থান এবং এটা যে ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান কেন উপমহাদেশের সব গণ-অভ্যুত্থানের চাইতে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা, এই জ্ঞান উমরই প্রথম ‘বণিক বার্তা’র আনিকা মেহজাবীনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন ২৪ সালের ২৮ জুলাই, যা পেয়েছিল প্রকাশ ২৯ জুলাই। এরপরে ৩ আগস্টেও আমাকে দেওয়া ‘সমকাল’-এর সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পরিণতি নিয়ে তিনি যা বলেন, তা দুদিন পরে সঠিক প্রমাণিত হয়। এমনকি জুলাইয়ের নেতৃত্বের ভুল ও সুবিধাবাদ, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা দেখিয়ে দিতেও তিনি কসুর করেননি।
নাম ও বদনাম
সাম্প্রদায়িকতার বুঝ তৈরি করা কিংবা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের সমালোচনা করা বা জাহানারা ইমামের সঙ্গে গণআদালত সংগঠনে কাজ করা মানে তো জাতীয়তাবাদী না। বাকশালকে যিনি ফ্যাসিবাদী বলে থাকেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি যিনি গঠন করেন, তাঁকে চিনতে পারা তো কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। অবশ্য তাঁর এত এত বই পড়া আসলেই সমস্যা। আরও সমস্যা হলো, না পড়ে কথা বলা।
আরেকটা কথা শুনলাম, উমর নাকি দেশভাগের জন্য কেবল মুসলিম লীগকে দায়ী করেছেন। জয়া চ্যাটার্জির বইয়েরও বহু আগে লেখা হয় তাঁর ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ সেখানে তিনি কংগ্রেস ও হিন্দু ভদ্রলোকদের রাজনীতিকেই বঙ্গভঙ্গের জন্য দায়ী করে দেখান। তাঁর ‘ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন বইটাও ওই অভিযোগের উল্টা সাক্ষ্য দেবে। আমরা উপেক্ষা করতে পারি তাঁকে, কিন্তু বদনাম দিতে পারি না।
সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বোঝার প্রাথমিক বোধ উমরের বই থেকে আজকের তরুণেরা পেতে পারেন। উমরের বইগুলোর মধ্যে যেগুলো বারবারই আমাদের পড়তে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ’, ‘যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ’, ‘বাঙলাদেশের সমাজ বিকাশের ধারা’, ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সাংষ্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংষ্কৃতির সংকট’, ‘বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তৎকালীন সমাজ’, ‘ভারত প্রসঙ্গে’, ‘নির্বাচন না গণঅভ্যুত্থান’, ‘ পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ প্রভৃতি ।
এই আজীবন বিপ্লবী, সাহসী ও নিরাপস মানুষটিকে আবারও বিপ্লবী সালাম জানাই। জানাই অন্তিম অভিবাদন।
লেখক: কবি; প্রাবন্ধিক
উজ্জ্বল নক্ষত্র বদরুদ্দীন উমর (১৯৩১) আর নেই। তিনি কেবল উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলাদেশের একজন মার্কসবাদী ইতিহাসবিদই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী তাত্ত্বিক এবং রাজনীতিবিদও। লেখালেখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে শ্রেণিসংগ্রাম, জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রচলিত ধারণাকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নিজের
২১ ঘণ্টা আগেঅধ্যাপক উমরের সাথে আমার দীর্ঘদিনের সখ্যতা। তাঁর শেষ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তিনি ছিলেন অসম্ভব রসবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। বাইরে থেকে তাঁকে কিছুটা কাঠখোট্টা মনে হলেও, তাঁর ভেতরের সূক্ষ্ম রসবোধ ছিল অসাধারণ। প্রায়ই তিনি মজা করে বলতেন, ‘আমি তো ইয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছি, আজরাইল আমার
১ দিন আগেবদরুদ্দীন উমরের কাজগুলো কেউ মুছে দিতে পারবে না। তিনি ১১৫টি বই লিখেছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাঁর এতগুলো বই পড়েননি। কিছু কিছু সাক্ষাৎকার হয়তো পড়েছে। কিন্তু তারা সমালোচনা করার ব্যাপারে খুব তৎপর। যাইহোক, আমি তাঁর প্রধান প্রধান বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। ফলে আমি তার সমগ্র কাজকে বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি, বাংলা
১ দিন আগেজুলাই অভ্যুত্থানের পর নয় মাস গত হয়েছে। এই সময়ে বাঙলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির মধ্যে অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটানা পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের যে পরিচয় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ প
১ দিন আগে