গত কয়েক দশক যাবৎ অভিন্ন নদী বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি-নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভারত তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। বিগত সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে, উজানের দেশগুলোর স্বার্থপরতা এবং অন্যায় আচরণের কারণে কোনো অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যাই বাংলাদেশ আদায় করতে পারেনি।
মো. খালেকুজ্জামান
গত কয়েক দশক যাবৎ অভিন্ন নদী বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি-নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভারত তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। বিগত সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে, উজানের দেশগুলোর স্বার্থপরতা এবং অন্যায় আচরণের কারণে কোনো অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যাই বাংলাদেশ আদায় করতে পারেনি। এমনকি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি থাকার পরও বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যার পানি বেশিরভাগ সময়েই বুঝে পায়নি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের গড়িমসি ও অন্যায় আচরণ অভিন্ন নদী বিষয়ক বিদ্যমান ও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ের চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ে বিগত সরকার চীন সরকারের শরণাপন্ন হয়; অনুরোধ করে যেন দেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যাতে করে শুকনো মৌসুমে পানি সমস্যার সমাধান হয়। সেই লক্ষ্যে চীনের একটি সংস্থা তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে তিস্তা নদীর বর্তমান প্রশস্ততা ৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে এক কিলোমিটারেরও কম করা হবে। পাশাপাশি খনন করে নদীর গভীরতা ৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১০ মিটার করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী সংকুচিত করে আনার কারণে নদীর দুই পাড়ে প্রায় ১৭০ বর্গ কিলোমিটার জমি উদ্ধার করে বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বিজ্ঞানসম্মত নয়, একই সঙ্গে প্রকৃতিবিরোধী। এই প্রকল্পের ফলে সরু নদীতে বর্ষাকালে স্রোতের তীব্রতা অনেক বেড়ে যাবে, নদী-ভাঙন ও বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ব্যাপক পলি ভরণের ফলে সরু ও সরলীকৃত নদীটির নাব্যতাও হ্রাস পাবে।
বিগত সরকারের আমলে ভারত চীনের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। শুধু তা-ই নয়, ন্যায্য পানি হিস্যার বিষয় পুরোপুরি অবজ্ঞা করে চীনের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা তারা নিজেরাই করে দিবে বলে ঘোষণা করে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবার চীনের কাছেই ফেরত গিয়েছে তাদের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে। সেই লক্ষ্যে এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে আবারও গণমাধ্যমে আলোচনা দেখা যাচ্ছে, সরকারও গণশুনানির আয়োজন করেছে।
যেহেতু প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং কার্যকারিতার ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে প্রস্তাবিত এই মহাপরিকল্পনার বিপরীতে অন্য কোনো স্থায়িত্বশীল ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধান আছে কিনা। বর্তমান লেখক মহাপরিকল্পনার বিকল্প পরিকল্পনা হিসাবে দশ দফার একটি প্রস্তাব সর্বসাধারণের মতামত ব্যক্ত করার জন্য এবং সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করছে।
১. সরকার তিস্তা নদীর ভারত ও সিকিমের অংশে গাজলডোবা এবং অন্যান্য প্রবাহ-নিয়ন্ত্রণকারী স্থাপনা নির্মাণের পূর্বের ঐতিহাসিক প্রবাহের ভিত্তিতে পানির ন্যায্য হিস্যার দীর্ঘ-মেয়াদি এবং বছরের ১২ মাসব্যাপী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অংশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখার জন্য, জলজ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পানি প্রাপ্যতার চুক্তি করার সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রচলিত আইনের আওতায় স্থায়ী সমাধান করতে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই উদ্যোগ নিবে।
২. গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতির ক্ষেত্রে পানি-কূটনীতিকে সমস্ত কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে; প্রয়োজনে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার বিনিময়ে ট্র্যানজিট ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার শর্ত আরোপ করবে।
৩. তিস্তা নদীর প্রাকৃতিক ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ বজায় রেখে পানি ও পলি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন কাজ চালাতে হবে এবং খননকৃত পলিবালি যাতে করে আবার নদীবক্ষে ফেরত যেতে না পারে সেই লক্ষ্যে পলিবালির অন্যান্য ব্যবহার-উপযোগিতা যাচাই করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নদীপাড়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। খননকৃত পলিবালির খনিজ উপাদান নিরীক্ষা করে এবং বিভিন্ন কণার আকার অনুযায়ী নির্মাণ সামগ্রী ও নদীপাড় ভাঙন রক্ষার জন্য ব্যবহৃত জিও-ব্যাগ (geo-bag) ভর্তি করে নদীভাঙন এলাকায় ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য দেশজ পদ্ধতির মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ করা উদ্যোগ গ্রহণ করবেব এবং নদীর প্রতিবেষ্টনী পদ্ধতির বদলে নদী-প্লাবনভূমির জৈবিক সংযোগ স্থাপনকারী পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করবে।
৪. যেহেতু জিও-ব্যাগ ব্যবহার অনেক বেশি প্রকৃতি-বান্ধব ও কার্যকর বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এ যাবতকালে ব্যবহৃত নদীপাড়ে বাঁধ নির্মাণ ও গ্রোয়ান নির্মাণের মতো বেষ্টনী পদ্ধতির মাধ্যমে নদীপাড় ভাঙন রোধের প্রকল্প থেকে সরে এসে জিও-ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে নদীপাড় ভাঙন রোধের ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং এই কাজে খননকৃত পলিবালি ব্যবহার করতে হবে।
৫. তিস্তা সেচ-অঞ্চলে বিদ্যমান সমস্ত মজে যাওয়া খাল পুনরোদ্ধার করে খননের মাধ্যমে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে প্রয়োজনীয় সেচের কাজে পরবর্তী সময় এই পানি ব্যবহার করা যায়।
৬. তিস্তা নদীবক্ষে যে সমস্ত চর রয়েছে -- যেখানে ইতোমধ্যেই কৃষিকাজ ও বসতি গড়ে উঠেছে সেইসব মানুষের জীবনমান উন্নত করার সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চরে অবস্থিত বাড়িঘর রক্ষার লক্ষ্যে ভিটার উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থলে পলিভরণের মাধ্যমে নদীটি সংকুচিত হয়ে মাত্র ৭০০ মিটার প্রস্থে পরিণত হয়েছে। যেহেতু নদীর উজানের সমস্ত পানি এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই প্রবাহ ধারণের প্রয়োজন অনুযায়ী এখানকার প্রস্থ বৃদ্ধিকল্পে খনন করতে হবে।
৮. তিস্তা অববাহিকার সেচ-নির্ভর এলাকার আকার বাস্তবসম্মত রাখতে হবে। বর্তমানে ও নিকট অতীতে প্রাপ্য পানির মাধ্যমে সম্ভাব্য সেচপ্রকল্পের আকারের তুলনায় প্রস্তাবিত সেচপ্রকল্পের আকার অনেক বড়। পানি প্রাপ্যতা বাড়াতে না পারলে প্রস্তাবিত সেচ-অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম চালু রাখা বাস্তবসম্মত হবেনা। প্রয়োজনে কৃষি ফলনের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে।
৯. বুড়ি তিস্তাসহ তিস্তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য উপনদী ও শাখা নদীসমূহকেও প্রয়োজনীয় খননের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সমস্ত নদী যাতে পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত ও নির্ভরশীল থাকে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে হড়কা বন্যা কিংবা অন্যান্য বন্যার সময় বন্যার পানি সারা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বন্যার ক্ষতি সীমাবদ্ধ হয়ে না পড়ে।
১০. তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলে ভূমির ধরণ আমলে নিয়ে কৃষিশিল্প ও নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারক শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার হার ও গড় আয়ের তুলনায় তিস্তা অববাহিকার মানুষও জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়। অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে সারা দেশেই যেন সাম্যের ভিত্তিতে ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
গত কয়েক দশক যাবৎ অভিন্ন নদী বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি-নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভারত তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। বিগত সরকারগুলোর নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে, উজানের দেশগুলোর স্বার্থপরতা এবং অন্যায় আচরণের কারণে কোনো অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যাই বাংলাদেশ আদায় করতে পারেনি। এমনকি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি থাকার পরও বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যার পানি বেশিরভাগ সময়েই বুঝে পায়নি। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের গড়িমসি ও অন্যায় আচরণ অভিন্ন নদী বিষয়ক বিদ্যমান ও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ের চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়ে বিগত সরকার চীন সরকারের শরণাপন্ন হয়; অনুরোধ করে যেন দেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যাতে করে শুকনো মৌসুমে পানি সমস্যার সমাধান হয়। সেই লক্ষ্যে চীনের একটি সংস্থা তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে তিস্তা নদীর বর্তমান প্রশস্ততা ৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে এক কিলোমিটারেরও কম করা হবে। পাশাপাশি খনন করে নদীর গভীরতা ৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১০ মিটার করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী সংকুচিত করে আনার কারণে নদীর দুই পাড়ে প্রায় ১৭০ বর্গ কিলোমিটার জমি উদ্ধার করে বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বিজ্ঞানসম্মত নয়, একই সঙ্গে প্রকৃতিবিরোধী। এই প্রকল্পের ফলে সরু নদীতে বর্ষাকালে স্রোতের তীব্রতা অনেক বেড়ে যাবে, নদী-ভাঙন ও বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ব্যাপক পলি ভরণের ফলে সরু ও সরলীকৃত নদীটির নাব্যতাও হ্রাস পাবে।
বিগত সরকারের আমলে ভারত চীনের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। শুধু তা-ই নয়, ন্যায্য পানি হিস্যার বিষয় পুরোপুরি অবজ্ঞা করে চীনের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা তারা নিজেরাই করে দিবে বলে ঘোষণা করে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবার চীনের কাছেই ফেরত গিয়েছে তাদের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে। সেই লক্ষ্যে এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে আবারও গণমাধ্যমে আলোচনা দেখা যাচ্ছে, সরকারও গণশুনানির আয়োজন করেছে।
যেহেতু প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং কার্যকারিতার ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে প্রস্তাবিত এই মহাপরিকল্পনার বিপরীতে অন্য কোনো স্থায়িত্বশীল ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধান আছে কিনা। বর্তমান লেখক মহাপরিকল্পনার বিকল্প পরিকল্পনা হিসাবে দশ দফার একটি প্রস্তাব সর্বসাধারণের মতামত ব্যক্ত করার জন্য এবং সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করছে।
১. সরকার তিস্তা নদীর ভারত ও সিকিমের অংশে গাজলডোবা এবং অন্যান্য প্রবাহ-নিয়ন্ত্রণকারী স্থাপনা নির্মাণের পূর্বের ঐতিহাসিক প্রবাহের ভিত্তিতে পানির ন্যায্য হিস্যার দীর্ঘ-মেয়াদি এবং বছরের ১২ মাসব্যাপী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অংশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখার জন্য, জলজ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পানি প্রাপ্যতার চুক্তি করার সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রচলিত আইনের আওতায় স্থায়ী সমাধান করতে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই উদ্যোগ নিবে।
২. গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতির ক্ষেত্রে পানি-কূটনীতিকে সমস্ত কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে; প্রয়োজনে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার বিনিময়ে ট্র্যানজিট ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার শর্ত আরোপ করবে।
৩. তিস্তা নদীর প্রাকৃতিক ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ বজায় রেখে পানি ও পলি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন কাজ চালাতে হবে এবং খননকৃত পলিবালি যাতে করে আবার নদীবক্ষে ফেরত যেতে না পারে সেই লক্ষ্যে পলিবালির অন্যান্য ব্যবহার-উপযোগিতা যাচাই করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নদীপাড়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। খননকৃত পলিবালির খনিজ উপাদান নিরীক্ষা করে এবং বিভিন্ন কণার আকার অনুযায়ী নির্মাণ সামগ্রী ও নদীপাড় ভাঙন রক্ষার জন্য ব্যবহৃত জিও-ব্যাগ (geo-bag) ভর্তি করে নদীভাঙন এলাকায় ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য দেশজ পদ্ধতির মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ করা উদ্যোগ গ্রহণ করবেব এবং নদীর প্রতিবেষ্টনী পদ্ধতির বদলে নদী-প্লাবনভূমির জৈবিক সংযোগ স্থাপনকারী পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করবে।
৪. যেহেতু জিও-ব্যাগ ব্যবহার অনেক বেশি প্রকৃতি-বান্ধব ও কার্যকর বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এ যাবতকালে ব্যবহৃত নদীপাড়ে বাঁধ নির্মাণ ও গ্রোয়ান নির্মাণের মতো বেষ্টনী পদ্ধতির মাধ্যমে নদীপাড় ভাঙন রোধের প্রকল্প থেকে সরে এসে জিও-ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে নদীপাড় ভাঙন রোধের ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং এই কাজে খননকৃত পলিবালি ব্যবহার করতে হবে।
৫. তিস্তা সেচ-অঞ্চলে বিদ্যমান সমস্ত মজে যাওয়া খাল পুনরোদ্ধার করে খননের মাধ্যমে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে প্রয়োজনীয় সেচের কাজে পরবর্তী সময় এই পানি ব্যবহার করা যায়।
৬. তিস্তা নদীবক্ষে যে সমস্ত চর রয়েছে -- যেখানে ইতোমধ্যেই কৃষিকাজ ও বসতি গড়ে উঠেছে সেইসব মানুষের জীবনমান উন্নত করার সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চরে অবস্থিত বাড়িঘর রক্ষার লক্ষ্যে ভিটার উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থলে পলিভরণের মাধ্যমে নদীটি সংকুচিত হয়ে মাত্র ৭০০ মিটার প্রস্থে পরিণত হয়েছে। যেহেতু নদীর উজানের সমস্ত পানি এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই প্রবাহ ধারণের প্রয়োজন অনুযায়ী এখানকার প্রস্থ বৃদ্ধিকল্পে খনন করতে হবে।
৮. তিস্তা অববাহিকার সেচ-নির্ভর এলাকার আকার বাস্তবসম্মত রাখতে হবে। বর্তমানে ও নিকট অতীতে প্রাপ্য পানির মাধ্যমে সম্ভাব্য সেচপ্রকল্পের আকারের তুলনায় প্রস্তাবিত সেচপ্রকল্পের আকার অনেক বড়। পানি প্রাপ্যতা বাড়াতে না পারলে প্রস্তাবিত সেচ-অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম চালু রাখা বাস্তবসম্মত হবেনা। প্রয়োজনে কৃষি ফলনের ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে।
৯. বুড়ি তিস্তাসহ তিস্তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য উপনদী ও শাখা নদীসমূহকেও প্রয়োজনীয় খননের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সমস্ত নদী যাতে পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত ও নির্ভরশীল থাকে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে হড়কা বন্যা কিংবা অন্যান্য বন্যার সময় বন্যার পানি সারা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বন্যার ক্ষতি সীমাবদ্ধ হয়ে না পড়ে।
১০. তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলে ভূমির ধরণ আমলে নিয়ে কৃষিশিল্প ও নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারক শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার হার ও গড় আয়ের তুলনায় তিস্তা অববাহিকার মানুষও জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়। অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে সারা দেশেই যেন সাম্যের ভিত্তিতে ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
এইচএসসি ২০২৫ ফলাফল আসলে একটি আয়না, যেখানে আমরা নিজেদের ব্যর্থতাকেই স্পষ্ট দেখতে পাই। পরিবার, শিক্ষক, সমাজ — সবাই কোনো না কোনোভাবে এই বিপর্যয়ের অংশ। প্রযুক্তির ভিড়ে মনোযোগ হারানো, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরসা হারানো এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা — সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা দিকহারা হয়ে পড়েছে।
৭ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ অক্টোবর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি জুলাই সনদ স্বাক্ষর দিন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজ একে একে এই সনদে স্বাক্ করছে। নিঃসন্দেহে এটি দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যেহেতু একটি সনদ প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাই এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। জুলাই সনদ কেবল একটি দলীয় উদ্
২১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ অক্টোবর, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজ একে একে এই সনদে সাক্ষর করছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সনদে সাক্ষর করছে না। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, কেন আমরা অংশ নিইনি।
১ দিন আগেআজ জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই সনদে সাক্ষর করে একে গণতন্ত্রের পুনর্গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু সনদটি আমি যেভাবে দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে, এটি ইতিহাসকে খণ্ডিতভাবে দেখার প্রচেষ্টা মাত্র।
১ দিন আগে