মারুফ ইসলাম
ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দুটিতে ছবিতে চোখ আটকে গেল। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, মার্কিন প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এক সঙ্গে এক টেবিলে বসে বৈঠক করছেন।
গুগল ইমেজ সার্চে গিয়ে জানা গেল, ছবিটি গেটি ইমেজের ফটোসংবাদিক চিপ সোমোডেভিলার তোলা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন ছবিটি তোলা হয়েছে। বৈঠকের বিষয় ছিল—‘গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী শাসনব্যবস্থার পরিকল্পনা’।
অন্য ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানী উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্যরা দাঁড়িয়ে আছেন।
গুগল ইমেজ সার্চ বলছে, ছবিটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তোলা। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর প্রতিনিধিদল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেওয়ার আগে ছবিটি তোলেন রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের ফটোসাংবাদিক।
ছবি দুটো আসলে কী বার্তা দেয়? একদিকে গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো বিশ্বরাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যুতে ট্রাম্প, এরদোয়ান, জর্ডানের বাদশা, কাতারের আমির, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন শাহবাজ শরিফ। আর অন্যদিকে আমাদের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে পরিষদে ছবি তুলে পাঠাচ্ছেন! আর তাঁর সফরসঙ্গীদের কয়েকজন আবার বিমানবন্দরেই ডিম হামলার শিকার হচ্ছেন। কী চমৎকার দৃশ্য!
অথচ যুদ্ধের ময়দানে এই পাকিস্তানকেই আমরা হারিয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। তাঁরা হয়েছিল পরাজিত। সেই পরাজিত পাকিস্তানই ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে, ট্যাঙ্ক বানিয়েছে, সাবমেরিন বানিয়েছে, যুদ্ধবিমান বানিয়েছে। আর আমরা? নিজস্ব কোনো অস্ত্র-সরঞ্জাম নেই। আমদানি করা অস্ত্র নিয়ে বাহাদুরি দেখাই আর রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে দিন কাটাই।
পাকিস্তান পরাজিত হলেও, একটি রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমরা বিজয়ী হয়েও ডিম ছুড়ে বিপ্লব করছি।
রাজনীতি এখন এ দেশে এতটাই সস্তা। এখানে রাজনীতির সংজ্ঞা হচ্ছে—টক শোতে গলা ফুলিয়ে চিৎকার করা আর বিদেশের মাটিতে ডিম বিপ্লব করা। এ দেশের রাজনীতিকদের একপক্ষ ডিম ছোড়ে, আরেক পক্ষ সেই ডিম ছোড়াকে গণতন্ত্রের বিজয় বলে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে।
স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পর পাকিস্তানের ঠাঁই হয় বিশ্বমঞ্চে আর বাংলাদেশ ঠাঁই পায় ফেসবুকের মিমে! স্বাধীনতার উত্তরসূরি হিসেবে আমরা করি ডিমযুদ্ধ আর পাকিস্তান নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয়। অলিম্পিকে পাকিস্তানের আরশাদ নাদিমরা স্বর্ণপদক গোনে, আর আমরা গুনি ডিম!
শিক্ষাখাতের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়, আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয় লবডঙ্কা।
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের বেসুমার ব্যর্থতা রয়েছে। আজও দেশটির রাজনীতির মাঠ স্থিতিশীল নয়। উর্দির তলে ঘুরপাক খায় ক্ষমতা-কাঠামো। দুর্নীতি সেখানকার মৌলিক সমস্যা। কট্টর উগ্রপন্থীদের উত্থান। প্রায়ই সন্ত্রাসী হামলায় বেঘোরে প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। মালালা ইউসুফজাই আজও দগদগে ক্ষত হয়ে আছে দেশটির নারী স্বাধীনতার ইতিহাসে। দারিদ্র ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা সীমাহীন। তবু এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গুটি গুটি পায়ে দেশটা কোথাও কোথাও চমক দেখানো সাফল্য দেখাচ্ছে। কীভাবে কীভাবে যেন বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছে।
আর আমরা?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের জন্য চেয়ার নয়, বরাদ্দ হচ্ছে ডিমের ঝুড়ি!
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দুটিতে ছবিতে চোখ আটকে গেল। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, মার্কিন প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এক সঙ্গে এক টেবিলে বসে বৈঠক করছেন।
গুগল ইমেজ সার্চে গিয়ে জানা গেল, ছবিটি গেটি ইমেজের ফটোসংবাদিক চিপ সোমোডেভিলার তোলা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন ছবিটি তোলা হয়েছে। বৈঠকের বিষয় ছিল—‘গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী শাসনব্যবস্থার পরিকল্পনা’।
অন্য ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানী উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্যরা দাঁড়িয়ে আছেন।
গুগল ইমেজ সার্চ বলছে, ছবিটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তোলা। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর প্রতিনিধিদল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেওয়ার আগে ছবিটি তোলেন রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের ফটোসাংবাদিক।
ছবি দুটো আসলে কী বার্তা দেয়? একদিকে গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো বিশ্বরাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যুতে ট্রাম্প, এরদোয়ান, জর্ডানের বাদশা, কাতারের আমির, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন শাহবাজ শরিফ। আর অন্যদিকে আমাদের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে পরিষদে ছবি তুলে পাঠাচ্ছেন! আর তাঁর সফরসঙ্গীদের কয়েকজন আবার বিমানবন্দরেই ডিম হামলার শিকার হচ্ছেন। কী চমৎকার দৃশ্য!
অথচ যুদ্ধের ময়দানে এই পাকিস্তানকেই আমরা হারিয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। তাঁরা হয়েছিল পরাজিত। সেই পরাজিত পাকিস্তানই ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে, ট্যাঙ্ক বানিয়েছে, সাবমেরিন বানিয়েছে, যুদ্ধবিমান বানিয়েছে। আর আমরা? নিজস্ব কোনো অস্ত্র-সরঞ্জাম নেই। আমদানি করা অস্ত্র নিয়ে বাহাদুরি দেখাই আর রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে দিন কাটাই।
পাকিস্তান পরাজিত হলেও, একটি রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমরা বিজয়ী হয়েও ডিম ছুড়ে বিপ্লব করছি।
রাজনীতি এখন এ দেশে এতটাই সস্তা। এখানে রাজনীতির সংজ্ঞা হচ্ছে—টক শোতে গলা ফুলিয়ে চিৎকার করা আর বিদেশের মাটিতে ডিম বিপ্লব করা। এ দেশের রাজনীতিকদের একপক্ষ ডিম ছোড়ে, আরেক পক্ষ সেই ডিম ছোড়াকে গণতন্ত্রের বিজয় বলে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে।
স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পর পাকিস্তানের ঠাঁই হয় বিশ্বমঞ্চে আর বাংলাদেশ ঠাঁই পায় ফেসবুকের মিমে! স্বাধীনতার উত্তরসূরি হিসেবে আমরা করি ডিমযুদ্ধ আর পাকিস্তান নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয়। অলিম্পিকে পাকিস্তানের আরশাদ নাদিমরা স্বর্ণপদক গোনে, আর আমরা গুনি ডিম!
শিক্ষাখাতের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়, আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয় লবডঙ্কা।
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের বেসুমার ব্যর্থতা রয়েছে। আজও দেশটির রাজনীতির মাঠ স্থিতিশীল নয়। উর্দির তলে ঘুরপাক খায় ক্ষমতা-কাঠামো। দুর্নীতি সেখানকার মৌলিক সমস্যা। কট্টর উগ্রপন্থীদের উত্থান। প্রায়ই সন্ত্রাসী হামলায় বেঘোরে প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। মালালা ইউসুফজাই আজও দগদগে ক্ষত হয়ে আছে দেশটির নারী স্বাধীনতার ইতিহাসে। দারিদ্র ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা সীমাহীন। তবু এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গুটি গুটি পায়ে দেশটা কোথাও কোথাও চমক দেখানো সাফল্য দেখাচ্ছে। কীভাবে কীভাবে যেন বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছে।
আর আমরা?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের জন্য চেয়ার নয়, বরাদ্দ হচ্ছে ডিমের ঝুড়ি!
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
এই বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সময় প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে ছয় প্রভাবশালী রাজনীতিক নিউ ইয়র্কে উপস্থিত রয়েছেন। অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি বিশেষ বৈঠকেও অংশ নেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রাজনীতির রঙ যেন সীমান্তে আটকে থাকে না। কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির নেতারা বিদেশে গেলে সেখানে জড়ো হতেন বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ করতেন, প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে প্রতিবাদ জানাতেন। এখন একই চিত্রে দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রবাসী শাখাগুলোকেও। সরকারের পালাবদলের স
৮ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের রুদ্ধ শাসনামলে দেশের ভেতর কথা বলা যেত না, রাজনীতি করা যেত না বলেই বিদেশে বসে বা বিদেশে গিয়ে অ্যাক্টিভিজম হয়েছে, রাজনীতি হয়েছে, কূটনীতি হয়েছে, এমনকি সাংবাদিকতা হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে সফরে গেলে বিশেষত লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিএনপিপন্থী প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানাতেন।
১ দিন আগেবাংলাদেশে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ভেঙে পড়েছিল। কোনো কোনো শিক্ষক চেয়েছিলেন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে প্রশ্ন করা যাবে না। একদম হীরক রাজার দেশের আদর্শ শিক্ষক।
১ দিন আগে