leadT1ad

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কি সত্যিই ‘চ্যালেঞ্জিং’

আসন্ন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দজোড় হলো—‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন’। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, সদ্যগঠিত ছাত্রনেতৃত্বাধীন এনসিপি, এমনকি বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ—সব পক্ষই বলছে, এই নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন ও অনিশ্চিত এক পরীক্ষা। কেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ‘চ্যালেঞ্জিং’ হয়ে উঠছে, সেটিই এখন মূল আলোচনার বিষয়।

তুফায়েল আহমদ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কি সত্যিই ‘চ্যালেঞ্জিং’। স্ট্রিম গ্রাফিক

গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেন, ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে গত ২৯ জুলাই নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন।

তবে যত চ্যালেঞ্জই থাকুক না কেন, ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। চলতি বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ নিশ্চয়তা দেন।

এর আগে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের অবস্থানের ভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে বিভেদ থাকলেও সব রাজনৈতিক দলের কণ্ঠেই ছিল এই উদ্বেগ—‘আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং’।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে শুরু করে সদ্যগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি), দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজও বারবার বলে আসছেন—আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। নির্বাচনের কথা উঠলেই কেন বারবার আসছে এই ‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনের’ প্রসঙ্গ?

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে শুরু করে সদ্যগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি), দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজও বারবার বলে আসছেন—আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং।

চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন আসলে কী

চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন বলতে সাধারণত এমন নির্বাচনকে বোঝানো হয়, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আইনগত বা কারিগরি সমস্যা, নিরাপত্তা-সংকট এবং ভোট-প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের অবিশ্বাসের কারণে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়; এসবের প্রভাবে কঠিন হয়ে পড়ে নির্বাচন আয়োজন ও পরিচালনা।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র ও নির্বাচন সহায়তা সংস্থার (আইডিইএ) মতে, ‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন হলো এমন এক নির্বাচন, যখন রাজনৈতিক, আইনগত, নিরাপত্তা বা প্রশাসনিক পরিস্থিতি মুক্ত, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন কঠিন হয়ে পড়ে।’

তবে চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনের ইস্যুতে ভিন্ন আলাপও আছে। এই চ্যালেঞ্জটা আসলে কার জন্য? এমন প্রশ্নও তোলেন অনেক বিশ্লেষক।

‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন’ শুধু প্রার্থীদের নয়, বরং নির্বাচন কমিশন, সরকার, ভোটার ও নাগরিক সমাজসহ সব পক্ষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ব্রিটিশ-আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পিপা নরিসের মতে, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়, যা তাদের নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতাকে বড় পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেয়।

অন্যদিকে, মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ল্যারি ডায়মন্ডের মতে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা কমে গেলে এবং নির্বাচনী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সমান না হলে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।

এ বিষয়ে আইডিইএ দাবি করছে, নির্বাচনের সততা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য প্রত্যেক নাগরিককে প্রভাবিত করে। রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা অনুকূল না হলে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশ নিতে চান না।

‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন’ শুধু প্রার্থীদের নয়, বরং নির্বাচন কমিশন, সরকার, ভোটার ও নাগরিক সমাজসহ সব পক্ষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা কমে যাওয়া, প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সংস্কারের ধীরগতি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিশেষত, দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন দলের অবকাঠামো আজও বহাল তবিয়তে থাকার ফলে দেশের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়েই উদ্বেগ রয়ে গেছে।

এছাড়াও, দীর্ঘদিনের একতরফা ও অস্বচ্ছ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভোটার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাব, পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ মিলিয়ে ‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন’ বিষয়টি আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। চলুন, দেখা যাক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

উনপাঁজুরে অন্তর্বর্তী সরকার

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ‘বৈচিত্র্যে বহুত্বে বাংলার সংস্কৃতি: গ্যাঁড়াকল ও পরিত্রাণ’ শীর্ষক আলোচনায় লেখক ও বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খান মন্তব্য করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বড্ড উনপাঁজুরে সরকার, বড় দুর্বল সরকার।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতির শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সংস্কারের ধীরগতি, পতিত আওয়ামী সরকারের নেতা-কর্মীদের বিচারের সম্মুখীন করতে না পারাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। পাশপাশি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পপুলিস্ট (জনতুষ্টিমূলক) কাজ করতে গিয়ে সমালোচনার শিকার হয় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব শক্ত ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা এই অন্তর্বর্তী সরকার পারবে না বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। জনতুষ্টির ওপর ভর করে চলা উনপাঁজুরে সরকার কি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে—এ নিয়ে সন্দেহ অনেকেরই।

বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে কমিশনের সদস্য পাল্টানোর ঘটনাও ঘটে।

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘এই প্রথম ফেসবুকের দিকে তাকিয়ে সরকার পরিচালনার একটা সংস্কৃতি দেখলাম ও জনতুষ্টিবাদের কাছে বারবার আত্মসমর্পণ করতে দেখলাম।’

দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক লেখায় অর্থনীতিবিদ ও লেখক আনু মুহাম্মদ বলেন, সামগ্রিকভাবে বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়—এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিয়ে আগে থেকে যে সমস্যা ছিল, সেটা এখনো অব্যাহত আছে। সংস্কার, সংস্কার শুনছি শুধু, কিন্তু সংস্কার কোথায়?

টানা অস্বচ্ছ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা

পতিত আওয়ামী সরকারের ১৭ বছরের শাসনামলে দেশে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কোনো নির্বাচনেই ছিল না ভোটার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবাধ অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো এ দেশের মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। এই পরিস্থিতিতেই অল্প কিছু উপরিতলের সংস্কার করে আদৌ এই প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করছেন কেউ কেউ।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হলে ভবিষ্যতের নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ১৫৩ আসনে ভোট ছাড়াই আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এই নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধাদান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের কারণে ‘রাতের ভোট’-এর ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

২০২৪ সালের ২ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল তবিয়তে কাজ করছে বলেই দেশে নতুন করে ষড়যন্ত্র ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।

দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছরের শাসনে প্রশাসনে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে, যার বেশিরভাগই দলীয় বিবেচনায় নেওয়া। এই বিশাল সংখ্যক সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই এখনো দায়িত্বে আছেন। ফলে, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সত্যিকার অর্থেই বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর সমান সুযোগ বা লেভেল ফিল্ড, সাংবাদিক ও ভোটারদের নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য ভোটগ্রহণ পদ্ধতি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি উৎসের একটি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলতি মাসের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি ঘটেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বারবার এই অভিযোগ উঠেছে যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বিশেষত বিভিন্ন ‘মব জাস্টিস’-এর ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বারবার সমালোচিত হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী আচরণ করা পুলিশ বাহিনীতে কোনো বড় ধরনের সংস্কার আনা সম্ভব হয়নি। অনেক ঘটনায় পুলিশের মনোভাব পূর্বতন আওয়ামী সরকারের আমলের মনোভাবের মতোই রয়ে গেছে।

ঢাকা স্ট্রিম অনলাইনে প্রকাশিত এক লেখায় সাংবাদিক সামামা রহমান তুলনা করে দেখান যে, কেবল পোশাকের পরিবর্তন ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের আগের ও পরের পুলিশ বাহিনীর আচরণ ও স্বভাবে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

অনুমেয় ফলাফল

নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়েও তৈরি হয়েছে বহু রকম ভাবনা। সবার মনেই প্রশ্ন—কে জিতবে? কার সঙ্গে হবে নির্বাচনী লড়াই? একদিকে বড় দল বিএনপি, অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না বলেই অনুমান করা যায়।

কর্মী ও সমর্থক মিলিয়ে বিএনপি জনপ্রিয়। ভোটের মাঠে দাপটের সঙ্গে লড়ার সম্ভাবনা আছে। জামায়াতে ইসলামীর বিস্তৃত অনলাইন জনপ্রিয়তা ও মাঠকর্মী থাকলেও নির্বাচনে তা খুব বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না বেশিরভাগ নির্বাচন বিশ্লেষকই। ৎ

অন্যদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির জনপ্রিয়তাও বিএনপির জনপ্রিয়তার সাপেক্ষে বেশ কম। বাকি রাজনৈতিক দলগুলো কখনও সারাদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জিতে আসার সম্ভাবনা রাখে না। অতীতেও এর কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি।

জাতীয় পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলো অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এই নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধাদান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের কারণে ‘রাতের ভোট’-এর ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি ইনোভিশনের এক জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। জামায়াতে ইসলামীকে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দিতে চায় ৪ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চান ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচন-সংক্রান্ত জরিপ, বুদ্ধিজীবী, বিশ্লেষকেরা দাবি করছেন যে বিএনপিই নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করবে। নির্বাচনে এমন নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভাবকে নষ্ট করে এবং একধরনের একতরফা নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন, বিএনপির নিশ্চিত জয় দেখে পরবর্তী সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ নিতে পারেন।

গত ২৪ আগস্ট জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কিছু রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ইস্যুতে বারবার আলোচনায় এসেছে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর-এর কথা। তবে এর বিরুদ্ধে বিএনপি স্পষ্ট অবস্থান নেয়।

এই নিয়ে সংবিধান কমিশনের আলাপ থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এখন অবধি পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও লেখক জাহেদ উর রহমান সাম্প্রতিক এক টিভি টকশোতে দাবি করেছেন, যদি পিআর ইস্যুতে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয়, তবে সত্যিকার অর্থেই অন্তর্বর্তী সরকার বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর সমান সুযোগ বা লেভেল ফিল্ড, সাংবাদিক ও ভোটারদের নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য ভোটগ্রহণ পদ্ধতি। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দুর্ভাগ্যবশত এর অনেক উপাদান নিয়েই প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়ে গেছে। আর তাই বিভিন্ন সমস্যা ও বাধাবিপত্তির সামনে দেখা দিয়েছে ‘চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনের’ উদ্বেগ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত