.png)

এরিক শাহজার

সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির স্রোতে পাকিস্তান নিজেদের সঠিকভাবে স্থাপন করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে দেশটি সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশের ওপর আক্রমণ হলে তা উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলে এটি নিরাপত্তা সহযোগিতার এক বড় পরিবর্তন।
একই সময়ে ইসলামাবাদ নীরবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিরল খনিজের নমুনা পাঠিয়েছে এবং নতুন রপ্তানি চুক্তির উদ্যোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনও পাকিস্তানকে এখন কেবল ঝামেলাপূর্ণ দেশ হিসেবে নয়, বরং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এসব পদক্ষেপ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন গতির লক্ষণ। ইসলামাবাদ ও রিয়াদের বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের ‘কূটনৈতিক পুনর্জাগরণ’—দেশটির কৌশলগত গুরুত্বের বিলম্বিত স্বীকৃতি। গাজা শান্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপস্থিতি এই ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে, যেন পাকিস্তান আবার মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ফিরে আসছে।
তবে এটি কোনো আকস্মিক পরিবর্তন নয়। এর পেছনে রয়েছে বাস্তব প্রয়োজন, চাপ এবং অস্থিতিশীল অঞ্চলের জোট পরিবর্তনের প্রভাব। বাহ্যিক সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতা।
পাকিস্তানের নতুন কূটনৈতিক সক্রিয়তার প্রথম কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার। হঠাৎ এই প্রস্থান একটি শূন্যতা তৈরি করেছে, যা ওয়াশিংটন এখনো পূরণ করতে পারেনি। শত্রুভাবাপন্ন ইরান ও প্রভাবশালী তালেবানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষায় পাকিস্তান আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভূগোল, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং আফগান রাজনীতিতে দীর্ঘ সম্পৃক্ততা—সবই পাকিস্তানকে অপরিহার্য করে তুলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তালেবানের কাছে বাগরাম বিমানঘাঁটি হস্তান্তরের দাবি করেছেন। পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পথ তৈরি করা চুক্তির পর এটি আমেরিকার নতুন কৌশলগত প্রয়াস। যদি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে পাকিস্তানই হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক বিকল্প। কারণ পাকিস্তানের রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সরবরাহ সক্ষমতা।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অস্বস্তিকর সম্পর্ক। গত এক দশকে ওয়াশিংটন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে নয়াদিল্লিকে গভীরভাবে যুক্ত করেছে। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের কাছে হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বেড়েছে। ভিসা, শুল্ক ও বাণিজ্যিক বিরোধ দীর্ঘায়িত হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ওয়াশিংটনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেইজিং সফরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, ভারত এখন চীনের সঙ্গেও ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। অর্থনৈতিকভাবে মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি পূর্ব এশিয়ার কম খরচের রপ্তানি মডেল অনুসরণ করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের জন্য নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে। তাই ট্রাম্পের কাছে পাকিস্তান আবারও ভারসাম্য রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
তৃতীয় ও সবচেয়ে জটিল কারণ হলো খনিজ কূটনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসলামাবাদের সাম্প্রতিক যোগাযোগের মূল বিষয় হলো বিরল খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া। এসব খনিজের বেশিরভাগই বেলুচিস্তানে অবস্থিত। কাগজে-কলমে এটি উভয়ের জন্যই লাভজনক—পাকিস্তান বিনিয়োগ পাবে, আর যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সম্পদ পাবে। কিন্তু বাস্তবতা আরও কঠিন।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ, যেখানে বহু বছর ধরে সম্পদ আহরণের পরও স্থানীয় উন্নয়ন হয়নি। অনেক অবকাঠামো প্রকল্প অব্যবহৃত, বিমানবন্দরগুলো ফাঁকা, আর বেকারত্ব অনেক বেশি।
২০২৫ সালের মার্চে প্রাদেশিক পরিষদে পাস হওয়া বেলুচিস্তান মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস আইন আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই আইনে ইসলামাবাদকে খনিজ নীতিমালা ও লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয়তাবাদী দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক দল যেমন জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলামও (জেইউআই-এফ) এর বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এই আইন স্থানীয় জনগণকে তাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে বঞ্চিত করছে।
এই প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক প্রবণতা তুলে ধরে। স্থানীয় জনগণকে বাদ দিয়ে সম্পদ আহরণ বিদ্রোহ ও ক্ষোভকে আরও উস্কে দেয়। বিদেশি বিনিয়োগের নামে সামাজিক সুরক্ষা ছাড়া সম্পদ বণ্টন চালিয়ে গেলে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়বে। যা ইসলামাবাদের কাছে উন্নয়ন মনে হলেও কোয়েটার মানুষের কাছে তা বঞ্চনার প্রতীক।
এই তিনটি কারণ মিলিয়ে দেখা যায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি আসলে ‘পুনর্জাগরণ’ নয়, বরং চাপে পড়ে নেওয়া একটি হিসাবি মোড়। আফগানিস্তানে মার্কিন শূন্যতা, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস এবং খনিজ কূটনীতির লোভ—এসবই ইসলামাবাদের নতুন কৌশলের পটভূমি। তবে এসবেই দেশের গভীর দুর্বলতা রয়ে গেছে।
ওয়াশিংটন আবারও পাকিস্তানকে ব্যবহার করে পরে উপেক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে ভারতের গুরুত্ব কমছে না। আর যদি সম্পদ ভাগাভাগিতে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করা যায় তাহলে বেলুচিস্তানের ক্ষোভ আরও গভীর হবে।
রিয়াদে করতালি, গাজা সম্মেলনে উপস্থিতি এবং ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক সৌজন্য—এসবকে কৌশলগত পুনর্জন্ম ভেবে ভুল করা উচিত নয়। পাকিস্তান এখনো চাপের মধ্যে থেকে সাময়িক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।
শেষ পর্যন্ত, কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা খনিজ রপ্তানি সমঝোতা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিকল্প নয়। প্রকৃত পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা, আঞ্চলিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অবিশ্বাস কাটিয়ে সামাজিক চুক্তি পুনর্গঠন করতে পারবে।
লেখক: হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিদ এবং জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস অফিসের প্রতিরোধ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের একজন কন্ট্রিবিউটর।
(আল-জাজিরায় প্রকাশিত ইংরেজি নিবন্ধ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছে মাহবুবুল আলম তারেক)

সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির স্রোতে পাকিস্তান নিজেদের সঠিকভাবে স্থাপন করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে দেশটি সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশের ওপর আক্রমণ হলে তা উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলে এটি নিরাপত্তা সহযোগিতার এক বড় পরিবর্তন।
একই সময়ে ইসলামাবাদ নীরবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিরল খনিজের নমুনা পাঠিয়েছে এবং নতুন রপ্তানি চুক্তির উদ্যোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনও পাকিস্তানকে এখন কেবল ঝামেলাপূর্ণ দেশ হিসেবে নয়, বরং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এসব পদক্ষেপ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন গতির লক্ষণ। ইসলামাবাদ ও রিয়াদের বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের ‘কূটনৈতিক পুনর্জাগরণ’—দেশটির কৌশলগত গুরুত্বের বিলম্বিত স্বীকৃতি। গাজা শান্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপস্থিতি এই ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে, যেন পাকিস্তান আবার মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ফিরে আসছে।
তবে এটি কোনো আকস্মিক পরিবর্তন নয়। এর পেছনে রয়েছে বাস্তব প্রয়োজন, চাপ এবং অস্থিতিশীল অঞ্চলের জোট পরিবর্তনের প্রভাব। বাহ্যিক সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতা।
পাকিস্তানের নতুন কূটনৈতিক সক্রিয়তার প্রথম কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার। হঠাৎ এই প্রস্থান একটি শূন্যতা তৈরি করেছে, যা ওয়াশিংটন এখনো পূরণ করতে পারেনি। শত্রুভাবাপন্ন ইরান ও প্রভাবশালী তালেবানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষায় পাকিস্তান আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভূগোল, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং আফগান রাজনীতিতে দীর্ঘ সম্পৃক্ততা—সবই পাকিস্তানকে অপরিহার্য করে তুলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তালেবানের কাছে বাগরাম বিমানঘাঁটি হস্তান্তরের দাবি করেছেন। পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পথ তৈরি করা চুক্তির পর এটি আমেরিকার নতুন কৌশলগত প্রয়াস। যদি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে পাকিস্তানই হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক বিকল্প। কারণ পাকিস্তানের রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সরবরাহ সক্ষমতা।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অস্বস্তিকর সম্পর্ক। গত এক দশকে ওয়াশিংটন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে নয়াদিল্লিকে গভীরভাবে যুক্ত করেছে। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের কাছে হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বেড়েছে। ভিসা, শুল্ক ও বাণিজ্যিক বিরোধ দীর্ঘায়িত হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ওয়াশিংটনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেইজিং সফরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, ভারত এখন চীনের সঙ্গেও ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। অর্থনৈতিকভাবে মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি পূর্ব এশিয়ার কম খরচের রপ্তানি মডেল অনুসরণ করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের জন্য নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে। তাই ট্রাম্পের কাছে পাকিস্তান আবারও ভারসাম্য রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
তৃতীয় ও সবচেয়ে জটিল কারণ হলো খনিজ কূটনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসলামাবাদের সাম্প্রতিক যোগাযোগের মূল বিষয় হলো বিরল খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া। এসব খনিজের বেশিরভাগই বেলুচিস্তানে অবস্থিত। কাগজে-কলমে এটি উভয়ের জন্যই লাভজনক—পাকিস্তান বিনিয়োগ পাবে, আর যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সম্পদ পাবে। কিন্তু বাস্তবতা আরও কঠিন।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ, যেখানে বহু বছর ধরে সম্পদ আহরণের পরও স্থানীয় উন্নয়ন হয়নি। অনেক অবকাঠামো প্রকল্প অব্যবহৃত, বিমানবন্দরগুলো ফাঁকা, আর বেকারত্ব অনেক বেশি।
২০২৫ সালের মার্চে প্রাদেশিক পরিষদে পাস হওয়া বেলুচিস্তান মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস আইন আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই আইনে ইসলামাবাদকে খনিজ নীতিমালা ও লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয়তাবাদী দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক দল যেমন জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলামও (জেইউআই-এফ) এর বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এই আইন স্থানীয় জনগণকে তাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে বঞ্চিত করছে।
এই প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক প্রবণতা তুলে ধরে। স্থানীয় জনগণকে বাদ দিয়ে সম্পদ আহরণ বিদ্রোহ ও ক্ষোভকে আরও উস্কে দেয়। বিদেশি বিনিয়োগের নামে সামাজিক সুরক্ষা ছাড়া সম্পদ বণ্টন চালিয়ে গেলে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়বে। যা ইসলামাবাদের কাছে উন্নয়ন মনে হলেও কোয়েটার মানুষের কাছে তা বঞ্চনার প্রতীক।
এই তিনটি কারণ মিলিয়ে দেখা যায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি আসলে ‘পুনর্জাগরণ’ নয়, বরং চাপে পড়ে নেওয়া একটি হিসাবি মোড়। আফগানিস্তানে মার্কিন শূন্যতা, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস এবং খনিজ কূটনীতির লোভ—এসবই ইসলামাবাদের নতুন কৌশলের পটভূমি। তবে এসবেই দেশের গভীর দুর্বলতা রয়ে গেছে।
ওয়াশিংটন আবারও পাকিস্তানকে ব্যবহার করে পরে উপেক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে ভারতের গুরুত্ব কমছে না। আর যদি সম্পদ ভাগাভাগিতে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করা যায় তাহলে বেলুচিস্তানের ক্ষোভ আরও গভীর হবে।
রিয়াদে করতালি, গাজা সম্মেলনে উপস্থিতি এবং ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক সৌজন্য—এসবকে কৌশলগত পুনর্জন্ম ভেবে ভুল করা উচিত নয়। পাকিস্তান এখনো চাপের মধ্যে থেকে সাময়িক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।
শেষ পর্যন্ত, কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা খনিজ রপ্তানি সমঝোতা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিকল্প নয়। প্রকৃত পুনর্জাগরণ তখনই সম্ভব, যখন পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা, আঞ্চলিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অবিশ্বাস কাটিয়ে সামাজিক চুক্তি পুনর্গঠন করতে পারবে।
লেখক: হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিদ এবং জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস অফিসের প্রতিরোধ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের একজন কন্ট্রিবিউটর।
(আল-জাজিরায় প্রকাশিত ইংরেজি নিবন্ধ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছে মাহবুবুল আলম তারেক)
.png)

গতকাল ঢাকার ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে একজন মানুষের প্রাণ গেল, আহত হলেন আরও দুজন। ঢাকা শহরে এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। ভবন ধসে পড়া, অগ্নিকাণ্ড, ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, ছিনতাই—নানাভাবে মানুষের জীবন এখানে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
২ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের মূল্য তাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক মাত্র। পাঁচ লাখ টাকা আর পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস—এতেই কি সব দায় চুকে গেল? যারা এখন ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে, তাদের জন্য কি এই ঘোষণা যথেষ্ট?
৪ ঘণ্টা আগে
রেজাউর রহমান (১৯৪৪-২০২৫) স্যারের বক্তৃতা প্রথম শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিকাল অ্যাসোসিয়েশনের কোনো এক জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মশালা অথবা অন্য কোনো অধিবেশনে। ‘যেখানেই জীবন টিকে গেছে, নানা রূপে, নানা কায়দায়, নানা প্রক্রিয়ায় -- সেখানেই জীবন গড়িয়ে গেছে এক জীবন থেকে অন্য জীবনে।
১ দিন আগে
দেশের রাজনীতিতে এখন যা ঘটছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, যেন নতুন মঞ্চে পুরোনো নাটক শুরু হয়েছে। একদিকে ক্ষয়ে যাওয়া দল, অন্যদিকে ক্ষতবিক্ষত বিশ্বাস। মাঝখানে ক্ষমতার হাওয়া যেদিকে বইছে, সেদিকেই দৌড়াচ্ছে সবাই। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে খবর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
১ দিন আগে