শহিদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)। ২০১৯ সালের এইদিন গভীর রাতে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করে তৎকালীন সংগঠন ছাত্রলীগ। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ কৌশল বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছিল। আবরার ফাহাদের স্মরণে স্ট্রিমের এই আয়োজন।
হুমায়ূন শফিক
বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘বীর’ শব্দটি এক বিশেষ অর্থ বহন করে। এর অর্থ হচ্ছে, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও মানবিক ন্যায়ের জন্য লড়েছেন, তাঁরাই বীর। কিন্তু সময় বদলে গেছে। কখনো কখনো অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করেও কেউ ‘জাতীয় বীর’ হতে পারেন। যদি তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। নির্বিঘ্নে সত্য বলতে পারেন।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আবরার ফাহাদ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের এক জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসের উত্তরাধিকার।
২০১৯ সালের অক্টোবরের এক রাত। ঢাকা শহরের পুরোনো ধারার রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় রাজত্বের কুয়াশার ভেতর, বুয়েটের একটি হলরুমে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ২১ বছর বয়সী তরুণ আবরার ফাহাদকে। তাঁর ‘অপরাধ’, নিজের ফেসবুকে দেশের নীতি, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
মাত্র কয়েকটি বাক্য—তখনকার বাস্তবতায় যেগুলো হয়তো কোনো সংবাদ সম্মেলনেও কেউ বলার সাহস পেত না—আবরার সেসব সোজাসাপ্টা ভাষায় নিজের মতো করে লিখেছিলেন।
গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, আবরারের ওপর ওই রাতের ভয়াল নির্যাতন অন্তত চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। পরে ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়, তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
দেশের প্রশ্নে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের বীরেরা সবসময় অকুতভয়। এর প্রমাণ আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যেমন পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পাকিস্তানি শাসকের বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে সেদিন আমাদের পূর্ব পুরুষের বুক একটুও কাঁপেনি। একইভাবে গত ১৫ বছরের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে যখন ভারতীয় আধিপত্যবাদ জেকে বসেছিল, অসীম সাহসে তখন এর বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবরার ফাহাদ। তাই তাঁকে আমরা ‘বীর’ হিসেবে সম্মান জানাই। তিনি আমাদের লড়াইয়ের ইতিহাসের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারও বটেন।
আসলে একটি মৃত্যু একদিনে কোনো বীরকে তৈরি করে না; তবে কোনো কোনো মৃত্যু এমন, যা দেশের তরুণ প্রজন্মকে এক নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়—‘সত্য বলার জন্য যদি মরতে হয়, তাহলে কি নীরব থাকাই নিরাপদ?’
আবরার ফাহাদ সেই প্রশ্ন আমাদের সামনে ছুড়ে দিতে পেরেছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই প্রশ্নই তাঁকে বীর বানিয়েছে।
আবরারের মৃত্যুর পর বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেটি কোনো একক ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়; এটি ছিল একটি বিস্ফোরণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে খুলনা—সব জায়গায় তরুণরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়েছে: ‘আমরা সবাই আবরার’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই সরব হয়েছিলেন এই অন্যায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা আমাদের তখন দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ইতিহাসের এমন এক ধারাবাহিকতার সামনে, যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা হয়তো অনুভব করতে পেরেছিলাম ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মতিউর ও আসাদকে। ওই সময় মতিউর আর আসাদের আত্মদান নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন কবিরা। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখি আবরার ফাহাদ শহীদ হওয়ার পরেও। আবরার স্মরণে কবি-লেখকেরা লিখেছিলেন কবিতাসহ নানান প্রতিবাদী লেখা। ওই সময়ে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের পরে আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হলো, তা সবচেয়ে বড়।’
বস্তুত এই আন্দোলন শুধু ন্যায়বিচারের দাবি ছিল তা নয়, বরং এটি ছিল ভয়ের বিরুদ্ধে এক জাতির নৈতিক অবস্থান। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি ভয় ও চাপে পরিচালিত হচ্ছিল, সেখানে এই তরুণের আত্মত্যাগ হাজারো তরুণকে শক্তি জুগিয়েছিল যে ‘ভয় পেও না বন্ধু…’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ তখন বলেছিলেন, ‘আবরারের মৃত্যুর পর আমরা একটি নৈতিক ঐক্য দেখি—যা রাজনৈতিক দলের নয়, বিবেকের ঐক্য।’
একজন বীরকে শুধু মানুষের চোখে নয়, রাষ্ট্রের চোখেও স্বীকৃতি পেতে হয়। আবরারের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার আবরার ফাহাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, যা সাধারণত জাতীয় অবদান ও ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়।
এই স্বীকৃতিই প্রমাণ করে—রাষ্ট্র তাঁকে কেবল ‘শিকার’ নয়, বরং বীর হিসেবে গণ্য করেছে। এটি একটি সমাজের স্মৃতি ও মূল্যবোধকে স্থায়ী করে। আবরারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে—তিনি হয়ে উঠেছেন নতুন প্রজন্মের নৈতিক মানদণ্ড।
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একবার বলেছিলেন, ‘বীরত্বের ধারণা সময়ের সঙ্গে পাল্টায়। মুক্তিযুদ্ধের বীররা অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন; নতুন যুগের বীররা সত্য হাতে লড়ে।’
আমাদের এই যুগের আবরার ফাহাদ কি তাই-ই করেননি? ফলে এই ‘সত্য হাতে লড়া’ মানুষদের আমরা আজ রাজপথে, লেখায়, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি। বলা ভালো, আবরার ফাহাদ হয়তো এখানে প্রথম সারিতে থাকবেন।
কোনো দলের পতাকা তিনি তোলেননি, কোনো ক্ষমতার আশ্রয় নেননি। তবু তার কয়েকটি বাক্য দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, জাতীয় নীতি ও তরুণদের মনস্তত্ত্বে গভীর দাগ রেখে গেছে।
এই দাগই তো ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ প্রমাণ করেছে, বীরত্ব মানে শত্রুকে হত্যা নয়; বরং অন্যায়ের সামনে মাথা না নোয়ানো।
ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আবরার ফাহাদ আজও মানুষের স্মৃতিতে অমলিন। বুয়েট ক্যাম্পাসে তাঁর নামে স্মারক ফলক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে হাজারো পোস্ট—সবই বলে দেয়, তিনি কেবল একজন ছাত্র নন, পরিণত হয়েছেন এক প্রতীকে।
আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর মানবাধিকারকর্মীরা তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আবরার প্রমাণ করেছেন, একটি নীরব প্রজন্মেরও কণ্ঠস্বর থাকতে পারে।’ এমন কণ্ঠস্বরই ইতিহাসে বেঁচে থাকে।
তবে আবরার আদতে ‘বীর’ কি না, তা নিয়েও সমালোচনা আছে। কেউ কেউ বলেন, আবরার তো কোনো সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেননি। তাঁকে জাতীয় বীর বলা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।
কিন্তু বীরত্বের মূল সংজ্ঞা কি কেবল যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ?
যখন একজন নাগরিক নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আর সেই প্রশ্নের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেন, তখন সেটি বীরত্বই। এই বীর আবরার ফাহাদের আত্মবিসর্জন যে পরে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শক্তি জুগিয়েছে, তা বিশদ করে না বললেও চলে।
রাষ্ট্র আবরার ফাহাদকে স্বীকৃতি দিয়েছে, জনগণ তাঁকে স্মরণ করে, তরুণেরা তাঁর নাম উচ্চারণ করে—এই তিনটি বিষয়ই প্রমাণ করে যে সময়ের প্রয়োজনেই ২১ বছরের এই তরুণ বাংলাদেশের জাতীয় বীর হয়ে উঠেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের ‘নিরস্ত্র সৈনিক’, যাঁর হাতে ছিল না অস্ত্র, ছিল কেবল কয়েকটি সত্য বাক্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘বীর’ শব্দটি এক বিশেষ অর্থ বহন করে। এর অর্থ হচ্ছে, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও মানবিক ন্যায়ের জন্য লড়েছেন, তাঁরাই বীর। কিন্তু সময় বদলে গেছে। কখনো কখনো অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করেও কেউ ‘জাতীয় বীর’ হতে পারেন। যদি তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। নির্বিঘ্নে সত্য বলতে পারেন।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আবরার ফাহাদ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের এক জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসের উত্তরাধিকার।
২০১৯ সালের অক্টোবরের এক রাত। ঢাকা শহরের পুরোনো ধারার রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় রাজত্বের কুয়াশার ভেতর, বুয়েটের একটি হলরুমে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ২১ বছর বয়সী তরুণ আবরার ফাহাদকে। তাঁর ‘অপরাধ’, নিজের ফেসবুকে দেশের নীতি, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
মাত্র কয়েকটি বাক্য—তখনকার বাস্তবতায় যেগুলো হয়তো কোনো সংবাদ সম্মেলনেও কেউ বলার সাহস পেত না—আবরার সেসব সোজাসাপ্টা ভাষায় নিজের মতো করে লিখেছিলেন।
গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, আবরারের ওপর ওই রাতের ভয়াল নির্যাতন অন্তত চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। পরে ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়, তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
দেশের প্রশ্নে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের বীরেরা সবসময় অকুতভয়। এর প্রমাণ আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যেমন পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পাকিস্তানি শাসকের বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে সেদিন আমাদের পূর্ব পুরুষের বুক একটুও কাঁপেনি। একইভাবে গত ১৫ বছরের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে যখন ভারতীয় আধিপত্যবাদ জেকে বসেছিল, অসীম সাহসে তখন এর বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবরার ফাহাদ। তাই তাঁকে আমরা ‘বীর’ হিসেবে সম্মান জানাই। তিনি আমাদের লড়াইয়ের ইতিহাসের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারও বটেন।
আসলে একটি মৃত্যু একদিনে কোনো বীরকে তৈরি করে না; তবে কোনো কোনো মৃত্যু এমন, যা দেশের তরুণ প্রজন্মকে এক নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়—‘সত্য বলার জন্য যদি মরতে হয়, তাহলে কি নীরব থাকাই নিরাপদ?’
আবরার ফাহাদ সেই প্রশ্ন আমাদের সামনে ছুড়ে দিতে পেরেছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই প্রশ্নই তাঁকে বীর বানিয়েছে।
আবরারের মৃত্যুর পর বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেটি কোনো একক ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়; এটি ছিল একটি বিস্ফোরণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে খুলনা—সব জায়গায় তরুণরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়েছে: ‘আমরা সবাই আবরার’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই সরব হয়েছিলেন এই অন্যায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা আমাদের তখন দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ইতিহাসের এমন এক ধারাবাহিকতার সামনে, যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা হয়তো অনুভব করতে পেরেছিলাম ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মতিউর ও আসাদকে। ওই সময় মতিউর আর আসাদের আত্মদান নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন কবিরা। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখি আবরার ফাহাদ শহীদ হওয়ার পরেও। আবরার স্মরণে কবি-লেখকেরা লিখেছিলেন কবিতাসহ নানান প্রতিবাদী লেখা। ওই সময়ে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের পরে আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হলো, তা সবচেয়ে বড়।’
বস্তুত এই আন্দোলন শুধু ন্যায়বিচারের দাবি ছিল তা নয়, বরং এটি ছিল ভয়ের বিরুদ্ধে এক জাতির নৈতিক অবস্থান। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি ভয় ও চাপে পরিচালিত হচ্ছিল, সেখানে এই তরুণের আত্মত্যাগ হাজারো তরুণকে শক্তি জুগিয়েছিল যে ‘ভয় পেও না বন্ধু…’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ তখন বলেছিলেন, ‘আবরারের মৃত্যুর পর আমরা একটি নৈতিক ঐক্য দেখি—যা রাজনৈতিক দলের নয়, বিবেকের ঐক্য।’
একজন বীরকে শুধু মানুষের চোখে নয়, রাষ্ট্রের চোখেও স্বীকৃতি পেতে হয়। আবরারের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার আবরার ফাহাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, যা সাধারণত জাতীয় অবদান ও ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়।
এই স্বীকৃতিই প্রমাণ করে—রাষ্ট্র তাঁকে কেবল ‘শিকার’ নয়, বরং বীর হিসেবে গণ্য করেছে। এটি একটি সমাজের স্মৃতি ও মূল্যবোধকে স্থায়ী করে। আবরারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে—তিনি হয়ে উঠেছেন নতুন প্রজন্মের নৈতিক মানদণ্ড।
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একবার বলেছিলেন, ‘বীরত্বের ধারণা সময়ের সঙ্গে পাল্টায়। মুক্তিযুদ্ধের বীররা অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন; নতুন যুগের বীররা সত্য হাতে লড়ে।’
আমাদের এই যুগের আবরার ফাহাদ কি তাই-ই করেননি? ফলে এই ‘সত্য হাতে লড়া’ মানুষদের আমরা আজ রাজপথে, লেখায়, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি। বলা ভালো, আবরার ফাহাদ হয়তো এখানে প্রথম সারিতে থাকবেন।
কোনো দলের পতাকা তিনি তোলেননি, কোনো ক্ষমতার আশ্রয় নেননি। তবু তার কয়েকটি বাক্য দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, জাতীয় নীতি ও তরুণদের মনস্তত্ত্বে গভীর দাগ রেখে গেছে।
এই দাগই তো ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ প্রমাণ করেছে, বীরত্ব মানে শত্রুকে হত্যা নয়; বরং অন্যায়ের সামনে মাথা না নোয়ানো।
ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আবরার ফাহাদ আজও মানুষের স্মৃতিতে অমলিন। বুয়েট ক্যাম্পাসে তাঁর নামে স্মারক ফলক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে হাজারো পোস্ট—সবই বলে দেয়, তিনি কেবল একজন ছাত্র নন, পরিণত হয়েছেন এক প্রতীকে।
আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর মানবাধিকারকর্মীরা তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আবরার প্রমাণ করেছেন, একটি নীরব প্রজন্মেরও কণ্ঠস্বর থাকতে পারে।’ এমন কণ্ঠস্বরই ইতিহাসে বেঁচে থাকে।
তবে আবরার আদতে ‘বীর’ কি না, তা নিয়েও সমালোচনা আছে। কেউ কেউ বলেন, আবরার তো কোনো সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেননি। তাঁকে জাতীয় বীর বলা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।
কিন্তু বীরত্বের মূল সংজ্ঞা কি কেবল যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ?
যখন একজন নাগরিক নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আর সেই প্রশ্নের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেন, তখন সেটি বীরত্বই। এই বীর আবরার ফাহাদের আত্মবিসর্জন যে পরে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শক্তি জুগিয়েছে, তা বিশদ করে না বললেও চলে।
রাষ্ট্র আবরার ফাহাদকে স্বীকৃতি দিয়েছে, জনগণ তাঁকে স্মরণ করে, তরুণেরা তাঁর নাম উচ্চারণ করে—এই তিনটি বিষয়ই প্রমাণ করে যে সময়ের প্রয়োজনেই ২১ বছরের এই তরুণ বাংলাদেশের জাতীয় বীর হয়ে উঠেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের সময়ের ‘নিরস্ত্র সৈনিক’, যাঁর হাতে ছিল না অস্ত্র, ছিল কেবল কয়েকটি সত্য বাক্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
২০২৬ সালের এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ গত বছরের এক ব্যাপক আন্দোলনের পর গঠিত এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই আন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হয় এবং তাঁকে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে যেতে হয়।
৪ ঘণ্টা আগেগত রোববার রাতে আফগানিস্তানকে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এদিকে মেয়েদের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ মাত্রই পাকিস্তানকে হারিয়ে দারুণ শুরু করেছে।
৬ ঘণ্টা আগেভাইকে হারানোর পর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও মনে হয়, যেন সেই ভয়াল সকালটা ঠিক গতকালই ছিল। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, ততই মনে হয়, তাঁর অনুপস্থিতি আরও গভীর হয়ে উঠছে। আমার জীবনের প্রতিটি আনন্দ, প্রতিটি প্রাপ্তি, এমনকি প্রতিটি দুঃখের মাঝখানে কোথাও না কোথাও তাঁর ছায়া লেগে আছে।
১৩ ঘণ্টা আগেআবুল হাশিমের রাজনীতি ও ধর্মাচিন্তা নিয়ে পাঠক সমাজে বেশ নীরবতা লক্ষ করা যায়। এই নীরবতার একটা কারণ তাঁর রাজনৈতিক প্রকল্পের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলের তত্ত্ব-কাঠামোয় তিনি আঁটেন না। তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাও হয় কম। অর্থাৎ আবুল হাশিমের চিন্তার সমগ্র অংশ না হলেও বিভিন্ন অংশকে সমকালের জন্
১ দিন আগে