leadT1ad

বেক্সিমকো টেক্সটাইল লিজ নিচ্ছে রিভাইভাল, চলতি মাসেই চুক্তি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

বেক্সিমকো টেক্সটাইল বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল বিভাগ। এতে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক ফিরে পাবেন তাদের আগের কর্মসংস্থান, যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় পুনরুদ্ধার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারখানাটি লিজ নিয়ে পরিচালনা করবে জাপান-বাংলাদেশি ইথিক্যাল ফ্যাশন ও সাসটেইনেবিলিটি ভেঞ্চার রিভাইভাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড।

চলতি নভেম্বর মাসেই রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড, বেক্সিমকো ও জনতা ব্যাংকের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোমিলি, যার প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। শুরুতে বিনিয়োগ হবে ২০ মিলিয়ন ডলার; পরে তা ১০০ মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়ানো হবে। রিভাইভাল ও ইকোমিলির শীর্ষ কর্মকর্তারা এ মাসের শেষ দিকে ঢাকায় এসে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। তিন দশক চালু থাকার পর ঋণসংকটে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ বন্ধে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারান; আশপাশের ছোট ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এলাকার অর্থনীতি অস্থির হয়ে পড়ে। রিভাইভালের উদ্যোগ সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার নতুন পথ তৈরি করছে।

রিভাইভাল জানায়, তারা কারখানাটি পুনরায় পুরোপুরি চালু করবে, পুরোনো ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনবে এবং আগের সব কর্মীকে পুনর্বহাল করবে। প্রতিষ্ঠানের জাপান-বাংলাদেশি কাঠামো ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে। জাপান থেকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের এনে কার্যক্রমে আন্তর্জাতিকমানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে একটি বৈশ্বিক বিগ ফোর অডিট ফার্ম।

কারখানা চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ফ্যাশন শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের লক্ষ্যও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা বেক্সিমকোর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে আবার সংযোগ তৈরি করবে এবং নতুন বৈশ্বিক অংশীদার যুক্ত করবে।

কারখানা চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ফ্যাশন শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের লক্ষ্যও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা বেক্সিমকোর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে আবার সংযোগ তৈরি করবে এবং নতুন বৈশ্বিক অংশীদার যুক্ত করবে। শুধু কম খরচে উৎপাদন নয়, বরং বাংলাদেশকে সৃজনশীলতা ও ব্র্যান্ড উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্য রয়েছে রিভাইভালের। থাকবে ‘স্থানীয় ডিজাইন, বৈশ্বিক বাজার’ ধারণাকে সামনে রেখে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন মান আর পরিচিতি যোগ করার প্রয়াস।

রিভাইভাল দেশে উন্নত প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট কোর্স এবং তরুণ ডিজাইনারদের জন্য প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন ইনস্টিটিউট গড়ার পরিকল্পনাও করেছে।

রিভাইভালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এটা শুধু কারখানা চালু করা নয়—হাজারো পরিবারের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। প্রতিটি ফিরে আসা চাকরি নতুন করে আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবে।’

প্রথম ধাপে রিভাইভাল ও ইকোমিলি ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দেবে এবং প্রয়োজনে তা ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

ইকোমিলির প্রেসিডেন্ট ড. ফারহান এস. করিম বলেন, ‘একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আবার চালু করতে সহায়তা করতে পেরে আমি গর্বিত। এটি ব্রেইন ড্রেইনের গল্প নয়—এটি ব্রেইন গেইনের গল্প। আমরা একসঙ্গে মানুষের জীবিকা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের শিল্পখাতকে নতুন প্রাণ দিতে চাই।’

বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, “সরকারের নির্দেশে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের টেক্সটাইল বিভাগ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ চালিয়ে গেছে। ৪২ হাজার কর্মী ও কর্মকর্তার চাকরি রক্ষা করা এবং প্রতি মাসে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ধরে রাখা ছিল আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আর্থিক সংকটের মধ্যেও আমরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো সচল রেখেছি, যাতে যেকোনো মুহূর্তে কারখানা চালু করা যায়। রিভাইভালের উদ্যোগে সেটি এখন সম্ভব হচ্ছে।’

প্রথম ধাপে রিভাইভাল ও ইকোমিলি ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দেবে এবং প্রয়োজনে তা ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজে ফিরতে পারবেন। রিভাইভাল আশা করছে, ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে, যা বকেয়া ঋণ পরিশোধে এবং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত