leadT1ad

বুয়েট শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, দাবি কী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৪০
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৫০
শাহবাগ অবরোধ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। স্ট্রিম ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল মঙ্গলবার শাহবাগ অবরোধের পর আজ ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বুধবার সকাল ১০টা থেকে শাহবাগে জমায়েত শুরু হয়েছে। এদিন সারা দেশের সব প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

মূলত শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ে গভীর অসন্তোষ থেকেই তাদের এই আন্দোলন। আন্দোলনের মূল কারণ হলো ডিপ্লোমাধারীদের সঙ্গে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগে অসমতা, ‘প্রকৌশলী’ উপাধির অপব্যবহার এবং আন্দোলনের এক কর্মীকে হত্যার হুমকি। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, তাদের যোগ্যতা ও অধিকার রক্ষায় সরকারের সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দরকার।

দাবিগুলো কী

বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কাউকে ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে না দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ব্লকেড’ শিরোনামে আন্দোলন করছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো—

১. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেডে (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) প্রবেশের জন্য সবার ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোটার মাধ্যমে কিংবা অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করে কোনো পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।

তাদের অভিযোগ, ডিপ্লোমাধারীদেরও সরকারি চাকরির ৯ম গ্রেডে (সহকারী ইঞ্জিনিয়ার বা সমমান) সরাসরি নিয়োগ এবং কোটা প্রমোশন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের চার বছরের কঠোর শিক্ষা অবমূল্যায়িত হচ্ছে।

২. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) নিয়োগ পরীক্ষা বিএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব ঘুচাতে চাকরির সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই দাবি করা হয়।

৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া নন-অ্যাক্রিডেটেড বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইইবি-বিএইটিই-এর আওতায় আনতে হবে।

শাহবাগে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবরোধ। স্ট্রিম ছবি
শাহবাগে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবরোধ। স্ট্রিম ছবি

শিক্ষার্থীদের মতে, শুধু ডিপ্লোমাধারীরাও ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করলে বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে অসমতা তৈরি হয়। এতে তাদের মেধা ও পরিশ্রমের অবমূল্যায়ন করা হয়।

আন্দোলন কতদিন ধরে চলছে

গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে বুয়েটসহ দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি রংপুরে এক তাদের আন্দোলনের কর্মী এক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এবার রাস্তায় নেমে এসেছেন।

প্রকৌশলী অধিকার আন্দেোলনের সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ জানান, মঙ্গলবার তিনি সারা দিন সচিবালয়ে কাটিয়েছেন কিন্তু কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। দীর্ঘদিনের অবহেলায় সরকার তাদের ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে’ বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে কারণে এবার তারা এবার লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।

আন্দোলনের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ ইকবাল জানান, তারা পাঁচ মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই সময়ে ১০০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।

তিনি আরও জানান, এবার আন্দোলনের সূত্রপাত হয় রংপুরের একটি ঘটনায়। গত সোমবার সেখানে নেসকোতে কর্মরত বুয়েটের প্রাক্তন এক শিক্ষানবিশ প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

শাকিল অভিযোগ করেন, রংপুরে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি প্রকৌশলী রোকনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কারণ তিনি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জমা দিয়েছিলেন।

তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান।

আন্দোলনকারীরা জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এবং স্নাতক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এই আন্দোলন বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশায় বিদ্যমান গভীর সংকটকে প্রতিফলিত করছে। ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বিভাজন এখনো বড় বিতর্কের বিষয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকৌশল পেশার যোগ্যতা ও মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া শিক্ষার্থীরা অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত