জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের চিঠির জবাব এখন দেয়নি ভারত। খুব তাড়াতাড়ি জবাব আসবে বলেও আশা করেন না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে– সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নোট ভারবাল (চিঠি) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোনো উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশা করি না আমরা।’
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তাঁকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ দুই দফায় চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি ভারত।
এর মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ওই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠিতে বলা হয়, বিস্তারিত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে পুনরায় অনুরোধ জানাচ্ছে।
এই চিঠির কোনো জবাব নয়াদিল্লি না দিলেও শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর একটি বিবৃতি দিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছিল, একটি নিকটপ্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তো আগের চিঠিরই উত্তর পাইনি এখনো। কাজেই এটা একেবারে কালকে বা এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দেবে তারা, এটি আমি প্রত্যাশা করি না।’
মিয়ানমারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা– জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কেন পাঠাব? এই নির্বাচন দিয়ে আমাদের কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি না। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তারা নির্বাচন করুক। আমাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর মতো কিছু নেই।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমাদের কাছ থেকে কোনো চাপ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সফরে কমনওয়েলথ মহাসচিব অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে কিছু বলেছেন কিনা– প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন কেমন হবে না হবে– এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন। বাকিটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়।’
এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘ভুয়া কাগজপত্রের কারণে আসল শিক্ষার্থীরাও ভিসা পাচ্ছেন না।’ এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটি ঠেকানোর একটাই উপায়, নিজেদের ঘর সামলানো। আমাদের দেখতে হবে, আমরা যেন এমন মিথ্যা কাগজপত্র না দিই। প্রতিটি দেশে আমাদের একই সমস্যা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় আসার পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় ও আদালত এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। কারণ আমার এখতিয়ার নেই।’
এয়ারবাস কেনার ক্ষেত্রে কোনো চাপ আছে কিনা– প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি অন্তত এমন কোনো চাপ বোধ করছি না।’