leadT1ad

রাজশাহীতে মাইকে স্লোগান দিয়ে খানকা ভাঙচুর, দাঁড়িয়ে ছিলেন ওসি

আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি অভিযোগ করব না। আমি মানবধর্ম করি, আমার কাছে সবাই আসে। সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন। তারা ভেঙে খুশি হয়েছে, হোক।’

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৮
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ০০
রাজশাহীর পবায় মাইকে স্লোগান দিয়ে এক ‘পীরের’ খানকা শরিফ ভাঙচুর করেছে ‘বিক্ষুব্ধ লোকজন’। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহীতে পবায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই মাইকে স্লোগান দিয়ে এক ‘পীরের’ খানকা শরিফ ভাঙচুর করেছে ‘বিক্ষুব্ধ লোকজন’।

আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজের পর শতাধিক মুসল্লি ওই খানকা শরিফে গিয়ে এই ভাঙচুর চালান।

উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান ভান্ডারি প্রায় ১৫ বছর আগে বাড়ির পাশেই নিজের জায়গায় ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারি গাউছিয়া পাক দরবার শরিফ’ নামে খানকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ভক্তদের কাছে তিনি ‘পীর’ হিসেবে সম্মানিত। হামলার সময় তাঁর বাড়িঘর লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে।

আজিজুর রহমান দাবি করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা হামলায় এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাও ছিলেন।

জানা গেছে, ‘হক বাবা’ খানকায় প্রতিবছর আড়ম্বরভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে শিল্পীরা ভান্ডারি ও মুর্শিদী গান পরিবেশ করছেন। এতে নারী শিল্পীদের উপস্থিতি নিয়ে আগে থেকেই উত্তেজনা ছিল। বৃহস্পতিবার থানায়ও গিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতাসহ কয়েকজন।

এদিকে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর হামলার শঙ্কায় দুই গাড়ি পুলিশ সদস্য নিয়ে চন্দ্রপুকুর গ্রামে খানকা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। তবে হামলার সময় পুলিশ সদস্যরা ছিলেন নিষ্ক্রিয়। উত্তেজিত জনতার কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি তাঁদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক মুসল্লি খানকা শরিফে আক্রমণ করেছেন। তারা টিন দিয়ে ঘেরা খানকায় বার বার আঘাত করছেন। দূর থেকেই এর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে হামলার সময় বাড়ি থেকে বের হননি খানকা শরিফের ‘পীর’ আজিজুর রহমান ভান্ডারি। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই এলাকার কিছু লোক আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দিচ্ছিল। অনুষ্ঠান বন্ধ করতে গত রাতে (বৃহস্পতিবার) তাঁরা পবা থানায়ও গিয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে, জানি না। জুমার নামাজের পর তারা একত্রিত হয়ে খানকা শরিফে হামলা চালায়। ভক্তরা আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তাই তারা আমার বাড়ি লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে।’

খানকায় ভাঙচুরে সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাকে গতরাতে থানা থেকে ডেকেছিল। সে জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ হামলার সময় আমি ছিলাম না। পরে এসে শুনছি যে এমন ঘটনা ঘটে গেছে।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন, ‘গোলাম মোস্তাফা বিএনপির পুরোনো লোক। তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, তা আমার জানা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘খানকা ভাঙার দরকার কি? যার যেটা বিশ্বাস, সে সেটা করবে। বিএনপি হলেও কারও ছাড় নেই।’

ভাঙচুরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান জামায়াতে ইসলামীর পবা উপজেলার আমির আযম আলী। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের লোকের কাজ নাই তো, তারা গেছে খানকা ভাঙতে! আমরা নিজেদের কাজই করে শেষ করতে পারছি না।’

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গতরাতে থানায় অনেক মানুষই এসেছিল খানকার বিষয়ে। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছিলাম। তারপরও একটু উৎকণ্ঠা থাকায় খানকা এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। পুলিশ একটু দূরেই ছিল। তখনই উত্তেজিত জনতা এটা করে ফেলে। মানুষ এত বেশি, অল্প কয়েকজন পুলিশের কিছু করার ছিল না। এখন কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে দেখা হবে।’

ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন ‘পীর’ আজিজুর রহমান ভান্ডারি। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ছিল, ডিবি ছিল, ওসি নিজেই ছিলেন। সেখানে থেকেও তাঁরা রক্ষা করেন না, অভিযোগ করব কার কাছে?’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি অভিযোগ করব না। আমি মানবধর্ম করি, আমার কাছে সবাই আসে। সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন। তারা ভেঙে খুশি হয়েছে, হোক।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত