leadT1ad

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য

পঙ্গু হাসপাতালে ১৭ জনের এক পা, ৩ জনের এক হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ২৩
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ২৫
ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সিরাজুস সালেহীন। তিনি বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহত ১৭ জনের একটি করে পা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয়েছিল। আর তিনজনের একটি করে হাত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

৪১তম সাক্ষী হিসেবে তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই আমার ডিউটি না থাকায় বাসায় ছিলাম। সেদিন বিকেলে হাসপাতালের পরিচালক আমাকে জানালেন অনেক আহত রোগী হাসপাতালে এসেছে। আমাকে দ্রুত হাসাপাতালে আসতে বলা হয়। হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বিভাগে গিয়ে দেখি অনেক আহত রোগী এসেছে। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ রিকশাচালক, ভ্যান চালক এবং পথচারীও ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাই এবং সেখানে তাদের অস্ত্রোপচার করা হয়।

এ ধরনের আহত রোগীরা ৪ আগস্ট পর্যন্ত এসেছে বলে জানান তিনি। ডা. মোহাম্মদ সিরাজুস সালেহীন বলেন, আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে গত বছরের ১৯ জুলাই হতে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৮ জন রোগী মারা যায়। যাদের মধ্যে দুইজন রোগীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। বাকি ৬ জন অপারেশনের পরে মারা যায়। অস্ত্রোপচার করে ৩ জনের একটি করে হাত এবং ১৭ জনের একটি করে পা কেটে ফেলা হয়।

এ ছাড়া ৪০তম সাক্ষী মো. জাকির হোসাইন বলেন, গত ২৪ মার্চ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ফরোয়ার্ডিংয়ের আলোকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার স্বেচ্ছায় প্রদত্ত দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। এর আলোকে আমি সেদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের উপস্থাপনমতে বেলা সোয়া ১২টার সময় ওই আসামিকে আমার খাস কামরায় গ্রহণ করি। এ সময় তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও ছিলেন।

তিনি জবানবন্দিতে বলেন, আমি আসামি মামুনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও বক্তব্য বিস্তারিত আলাপ আলোচনাক্রমে কম্পিউটারে টাইপ করে লিপিবদ্ধ করি। জবানবন্দি শেষে আসামি পুরো জবানবন্দি নিজে পাঠ করেন এবং সম্পূর্ন শুদ্ধ ও সঠিক স্বীকারে স্বাক্ষর করেন। তিনি তার পুরো নাম লেখেন এবং তারিখসহ সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর প্রদান করেন। জবানবন্দি শেষে আমি এই জবানবন্দির সমর্থনে প্রত্যয়ন করি। আমি তাতে উল্লেখ করি, আসামি সম্পূর্ন সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় তার নিয়োজিত আইনজীবীর উপস্থিতিতে অত্র জবানবন্দি দেন। তিনি সম্পূর্ন স্বেচ্ছায় অনুতপ্ত হয়ে এ জবানবন্দি দেন।

৪২তম সাক্ষী মো. গোলাম ইফতেখার আলম বলেন, আমি পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর পদে সিআইডির আলোকচিত্র শাখায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১১ মার্চ ১২টি ভিডিও সম্বলিত একটি পেনড্রাইভ এআই জেনারেটেড কি না তা পরীক্ষার জন্য আমাদের দপ্তরে প্রেরণ করেন। ভিডিওগুলো পরীক্ষা করে গত ১৩ মার্চ মতামতসহ পেনড্রাইভটি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠাই। পরীক্ষা শেষে প্রাপ্ত ভিডিওসমূহ এআই জেনারেটেড মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ১২টি ভিডিওর বর্ণনা ও হ্যাসট্যাগ ভ্যালুসহ আমার কাছে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পেনড্রাইভটি দিয়েছিলেন।

৪৩তম সাক্ষী শেখ নজরুল ইসলাম বর্তমানে সিআইডি ঢাকার ব্যালিস্টিক শাখায় বিশারদ হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে গত ১০ মার্চ ২টি বুলেট ও ৩টি ধাতব পিলেট পরীক্ষার জন্য পাই। পরীক্ষা শেষে গত ১৯ মার্চ আমার মতামত সম্বলিত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট পাঠাই। আমি মতামত প্রস্তুত করেছিলাম ১৬ মার্চ।

৪৪তম সাক্ষী মো. রুকুনুজ্জামান বর্তমানে পুলিশ পরিদর্শক পদে সিআইডি ঢাকায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে কর্মরত। তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি এই মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি ডিভিডি-আর ও একটি হার্ড ড্রাইভ আলামত হিসেবে গ্রহণ করি। উক্ত আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মতামত দিই। একই সাথে আমি ট্রান্সক্রিপটও সরবরাহ করি।

সাক্ষী বলেন, ডিভিডি আর এ সংরক্ষিত একটি নারী কন্ঠের সাথে হার্ড ড্রাইভটিতে সংরক্ষিত প্রামাণ্য কণ্ঠটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রামাণ্য কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ওই ডিভিডি আর-এ রক্ষিত একটি পুরুষ কণ্ঠস্বরের সাথে হার্ড ড্রাইভে রক্ষিত শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বরের মিল পাওয়া যায়। এই সেই মতামতের সত্যায়িত কপি যা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছিলাম। আরেকটি তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বক্তব্য সম্বলিত একটি প্রামাণ্য ভিডিও ফাইল। ২৩ মার্চ পরীক্ষা করে ওই দিনই রিপোর্ট দিই। রিপোর্টে তর্কিত কণ্ঠস্বরের সাথে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের কণ্ঠস্বরের মিল আছে। এই সেই মতামতের সত্যায়িত কপি যা আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছিলাম।

৪৫তম সাক্ষী মো. শাহেদ জোবায়ের লরেন্স বর্তমানে সাবইন্সপেক্টর পদে সিআইডি ঢাকায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে কর্মরত আছেন। গত ১২ মে মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অত্র মামলার আলামত হিসেবে একটি সিডি ও একটি ডিভিডি পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, সিডিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়ের ভিসি এসএম মাকসুদ কামালের তর্কিত কথোপকথন সংরক্ষিত ছিল। ডিভিডিতে তাদের উভয়ের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বর সংরক্ষিত ছিল। পরীক্ষা শেষে সিডিতে সংরক্ষিত কথোপকথন ফরেনসিক ল্যাবে ব্যবহৃত টুলসের সাহায্যে নারী কণ্ঠস্বর এবং পুরুষ কণ্ঠস্বরকে আলাদা করি। ডিভিডিতে সংরক্ষিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের ভিসি মাকসুদ কামালের নমুনা কন্ঠস্বরের সাথে সিডিতে রক্ষিত নারী কণ্ঠস্বর ও পুরুষ কন্ঠস্বরের সাথে তুলনামূলক যাচাই করি। যাচাই করে নারী কণ্ঠস্বরের সাথে শেখ হাসিনার নমুনা কণ্ঠস্বরের মিল পাওয়া যায় এবং পুরুষ কণ্ঠস্বরের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের ভিসি মাকসুদ কামালের নমুনা কন্ঠস্বরের মিল পাওয়া যায়। এ ছাড়াও উক্ত কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপশন দিই। মতামতটি বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজে এসে আমাদের দপ্তর থেকে নিয়ে যায়।

Ad 300x250

নেপালে আটকে জাতীয় ফুটবল দল, নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সরকারের তৎপরতা

পাঁচ কেন্দ্রের ফল প্রকাশ, ভিপি পদে সাদিক পেলেন ৭৫১৬ ভোট, আবিদ ৩৬৫৩

ঢাবি ঘিরে কঠোর নজরদারি পুলিশের

পঙ্গু হাসপাতালে ১৭ জনের এক পা, ৩ জনের এক হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল

নেপালে সংলাপের আহ্বান সেনাপ্রধানের, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

সম্পর্কিত